Sanchaita Roy Chowdhury

Inspirational Others

4  

Sanchaita Roy Chowdhury

Inspirational Others

অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা

11 mins
25


অন্যরকম ভালোবাসা

পর্ব - ৩০


সকাল বেলায় ব্রেকফাস্ট টেবিলে ব্রেকফাস্ট করার সময় হঠাৎই অদৃতের মোবাইলে একটা ফোন এলো।

অদৃতের ফোনে কথা বলা হয়ে গেলে সে ফোন রেখে দিয়ে বলল,'মা, আমি আর খাবো না । আমাকে এক্ষুনি বেরাতে হবে।'

শ্রেয়সী বলল,'কেন? কি হয়েছে? আরেকটু কিছু খেয়ে যা, তুই তো সেইভাবে কিছুই খেলিনা দেখছি!'

অদৃত বলল,'হাতে একদম সময় নেই। আজই পত্রলেখার ফটোশ্যুটের ডেট পাওয়া গেছে। আমি আসছি।'

শ্রেয়সী বলল,'পত্রলেখা জানে? আরে শোন তো কিছু খেয়ে নিস ।'

অদৃত যেতে যেতে বলল,'হ্যাঁ জানে, তাও আমি পত্রলেখার বাড়িতে ওকে নিতে যাওয়ার পথে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিচ্ছি । আর আর্য তোমাকে আজকে ড্রাইভার আর্ট গ্যালারিতে দিয়ে আসবে ।'

আর্য বলল,'আচ্ছা । সাবধানে যেও।'










অদৃত পত্রলেখার বাড়িতে পৌঁছে দেখলো পত্রলেখা তখন রান্না করতে ব্যস্ত। 

অদৃত বলল,'একি! তুমি এখানো রেডি হওনি? আমি যে তোমাকে বললাম তাড়াতাড়ি করতে।'

পত্রলেখা বলল,'আমি রেডি হয়েই আছি। তোমার ম্যসেজ পাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আন্টি ফোন করেছিলেন বললেন যে , তুমি ঠিক করে ব্রেকফাস্ট করোনি তাই আমি তাড়াতাড়ি করে পাস্তা বানিয়ে নিচ্ছি।'

অদৃত বলল,'আমি খেয়ে এসেছি আর আমার জন্য আলাদা করে এইসব করার কি আছে? আমি ক্যান্টিনে খেয়ে নিতাম।'

পত্রলেখার মা বলল,'না না ও নিজের জন্যও বানিয়েছে।'

অদৃত বলল,'আর কতক্ষণ?'

পত্রলেখা বলল,'এই তো। রশ্মি দি এই টিফিন বক্সটা অদৃতের গাড়িতে তুলে দিয়ে এসো ।'

পত্রলেখার মা অদৃতকে বলল,'অদৃত একটু কিছু মুখে দিয়ে যাও। '

অদৃত বলল,'না আন্টি, আজকে থাক। আমি অন্য কোনোদিন এসে খাবো।'









অন্যদিকে আর্যকে নিরঞ্জন এসে বলল,'আর্যবাবা তোমার জন্য গাড়ি নীচে অপেক্ষা করছে।' 

আর্য নীচে নেমে গাড়িতে উঠলো। 

গ্যালারিতে গিয়ে সে নিজের মতোন একমনে ছবি আঁকতে থাকলো। কিছু মিনিট পর ত্রিদিব নিজের হাতে আঁকা একটা ছবি নিয়ে আর্যর সামনে এসে বলল,'আর্য?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ দাদা বলো।'

ত্রিদিব বলল,'দ্যাখোতো এই ছবিটা কেমন হয়েছে?'

আর্য বলল,'ভালো হয়েছে। কিন্তু এখানে ধূসর রঙটা আরেকটু গাঢ় করে দিলে ভালো হত।'

ত্রিদিব বলল,'ঠিক তাই। আমি তখন থেকে ভাবছি কোন রঙটা কম পড়েছে। যাইহোক, লাঞ্চ করবে তো?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ।'

ত্রিদিব বলল,'সামনে একটা নতুন ক্যাফে খুলেছে চলো, ওখানে আজকে গিয়ে খাওয়া যাক।'








ত্রিদিব এবং আর্য একসঙ্গে ক্যাফেতে গেল। 

ত্রিদিব ক্যাফেতে বসে আর্যকে জিজ্ঞাসা করল,'আজকে অদৃত এলো না কেন?'

আর্য বলল,'একটা দরকারি কাজ পড়ে গেছে ।'

ত্রিদিব বলল,'আচ্ছা।'

ক্যাফেতে বসে ত্রিদিবের সাথে গল্প করার সময় সে বারবার ফোন চেক করতে থাকলো। 

ত্রিদিব বলল,'বার বার ফোনের দিকে দেখছো কেন? কি ব্যাপার গার্লেফ্রন্ড?'

আর্য স্বল্প হেসে বলল,'না না।'

এরই মধ্যে তাদের টেবিলে খাবার এলো। আর্য ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তখন ঘড়ির কাঁটাতে দুপুর দুটো বাজে। 

সে ভাবলো,'অদৃত এখনো ফোন করছে না কেন? এতোক্ষণে তো ওর লাঞ্চ হয়ে যাওয়ার কথা। আমি আসার পর মিসড কল করলাম কিন্তু একবারও ফোন করল না । তাহলে কি আজ খুব ব্যস্ত? হ্যাঁ, তাই হবে বোধহয়। কিন্তু আমি ফোন করতে ভুলে গেলেও ও তো ফোন করে , তাহলে আজকে কেন ফোন করছে না? একবার আমি ফোন করবো? কিন্তু যদি ব্যস্ত থাকে, তাহলে ফোন করাটা কি ঠিক হবে?'

ত্রিদিব বলল,'এই আর্য খাও। কি ভাবছো এতো?'

আর্য বলল,'কিছু না ।'











অন্যদিকে অদৃত তখন পত্রলেখার ফটোশ্যুট এবং অফিসের মিটিং নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। পত্রলেখার ফটোশ্যুট শেষ হয়ে গেলে, সে তার ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করল,'রিয়াঙ্কা অদৃত কোথায়?'

রিয়াঙ্কা বলল,'ম্যাম , কিছুক্ষণ আগে ওনার অ্যাসিট্যান্টকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম উনি বললেন স্যার একটা মিটিংয়ে আছেন কিছুক্ষণ পর উনি ফাঁকা হবেন।'






এরই মধ্যে অদৃত এসে বলল,'আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল মনে হল।'

পত্রলেখা বলল,'একদমই তাই।'

পত্রলেখা রিয়াঙ্কাকে বলল,'তুমি যাও গিয়ে লাঞ্চ করে নাও।'

রিয়াঙ্কা চলে গেলে পত্রলেখা অদৃতের কাঁধের ওপর মাথাটা রেখে বলল,'অদৃত ভীষণ ক্লান্ত লাগছে আজকে।'

অদৃত পত্রলেখার মাথাটা হাত দিয়ে আলতো করে সরিয়ে দিয়ে বলল,'ঠিক হয়ে বোসো।'

অদৃতের এরূপ আচরণ দেখে পত্রলেখার খুব অদ্ভুত লাগলো ।

সে বলল,'একটু রাখি না তোমার কাঁধের ওপর মাথাটা।প্লিজ! প্লিজ ! প্লিজ!'

অদৃত বলল,'না।'

পত্রলেখা বলল,'কিন্তু কেন? আমি তো আগেও এরকম করেছি তাহলে?'

অদৃত বলল,'এখন আমরা বড় হয়েছি আমাদের চারপাশটা পাল্টেছে আর তাছাড়া আমরাও পাল্টেছি। এটা ঠিক দেখায় না। আর তাছাড়া তুমি একজন সেলিব্রিটি; এখন যদি কেউ দেখে নিয়ে এরকম কোনো ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয় সেটা কি ভালো হবে?'

পত্রলেখা বলল,'না , এটাতো আমি ভেবে দেখিনি ।'

অদৃত বলল,'হুম্ তাহলে।

যাইহোক , খুব ক্ষিদে পেয়েছে পাস্তাটা বের করো। তোমার হাতের পাস্তা বলে কথা।'

পত্রলেখা বলল,'আমার থেকেও তো তোমার হাতের রান্না অনেক ভালো। অনেকদিন খাওয়া হয়নি তোমার হাতের রান্না।'







পত্রলেখা পাস্তা বের করে, অদৃতকে খাওয়াতে গেলে অদৃত বাঁধা দিলো। সে পত্রলেখার হাতে থাকা পাস্তা ভর্তি চামচটি নিজের হাতে তুলে নিয়ে খেলো। পত্রলেখা মুখটা একটু ব্যাজার করে বলল,'এটা কি হল?'

অদৃত বলল,'খাওয়া হল।'

পত্রলেখা বলল,'কিন্তু আমার হাত থেকে খেলে না কেন?'

অদৃত বলল,'আমার হাত থাকতে আমি কেন তোমার হাত থেকে খেতে যাবো? চলো তাড়াতাড়ি খাওয়া যাক্ ।'

এই বলে অদৃত ফোনটা তুলে আর্যকে ফোন করতে যাবে , এমন সময় অফিসের একটি ছেলে এসে বলল,'স্যার মিঃ.সিং এসে গেছেন আপনার সাথে ওনার তিনটের থেকে মিটিং ছিল।'

অদৃত বলল,'ঠিক আছে। তুমি যাও , আমি আসছি।'

অদৃত বলল,'পত্রলেখা আমি এখন উঠলাম তবে। আমি পরে আসছি কেমন।'

পত্রলেখা বলল,'ঠিক আছে। কিন্তু খাবারটা......'

অদৃত পত্রলেখার পুরো কথাটা না শুনেই চলে গেল।







মিটিংয়ের জন্য অদৃত নিজের টেবিল থেকে ফাইল নিতে এসে ভুল করে টেবিলের ওপর তার ফোনটা ফেলে রেখে চলে গেল।

অদৃত মিটিং -এ থাকাকালীন আর্য তাকে অনেকবার ফোনে চেষ্টা করলো , কিন্তু তাকে ফোনে পেল না।






অদৃত সমস্ত মিটিং শেষ করে যখন নিজের টেবিলে এলো তখন দেখলো তার ফোনটা সে তার টেবিলে ফেলে রেখে গেছে। 

ইতিমধ্যে একটি মেয়ে এসে বলল,'স্যার পত্রলেখা ম্যামের আজকের ফটোশ্যুট শেষ। আপনি একটু আসবেন। আসলে অ্যাডভার্টাইসমেন্ট ডিপার্টমেন্টে যারা আছেন তারা আপনার সাথে একবার কথা বলতে চাইছে।'

অদৃত বলল,'ঠিক আছে চলো।'

অদৃত সেখানে গিয়ে বলল,'কি হয়েছে?'

অ্যাডভার্টাইসমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার বললেন,'স্যার বলছিলাম যেটুকু ফটোশ্যুট বাকি আছে সেইটা গোয়াতে গিয়ে করলে ভালো হত। আসলে লোকেশনটা ভালো।'

অদৃত বলল,'গোয়া? ' 

কলকাতায় এতো ভালো ভালো লোকেশন থাকতে গোয়া কেন?'

অ্যাডভার্টাইমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার বললেন,'স্যার ফটোর ব্যাকগ্রাউন্ডটা ভালো হওয়ার দরকার আছে।'

অদৃত বলল,'কতদিন লাগবে?'

অ্যাডভার্টাইসমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার বললেন,' কালকে সকালে গিয়ে রাতেই ফিরে আসবো। একদিনেই হয়ে যাবে।

স্যার বলছিলাম আপনাকেও থাকতে হবে, আপনাকেও তো দেখতে হবে লোকেশনটা ভালো কিনা? তাই আপনাকেও আমাদের সাথে যেতে হবে।'

অদৃত বলল,'আবার আমি কেন? আপনারা তো আছেন ।'

পত্রলেখা বলল,'হ্যাঁ,অদৃত প্লিজ রাজী হয়ে যাও।প্লিজ ! প্লিজ ! প্লিজ!'

অদৃত এক প্রকার বাধ্য হয়ে বলল,'আচ্ছা, ঠিক আছে।'









পত্রলেখা বলল,'আজকে বাইরে কোথাও ডিনার করি?'

অদৃত বলল,'কালকেও অলরেডি বাইরে খেয়েছি আজকে বাড়িতে না খেলে খারাপ হবে। তার থেকে বরং হালকা কিছু খেলে হয় না? আজ থাক অন্য কোনোদিন না হয় বাইরে ডিনার করে নেবো।'

পত্রলেখা মুখটা একটু ব্যাজার করে বলল,'ঠিক আছে।'

অদৃত ভাবলো,'আজ আর্যর একবারও খোঁজ নেওয়া হল না। কি করছে ছেলেটা কি জানি?'







পত্রলেখা বলল,'কি খাবে?'

অদৃত বলল,'তুমি অর্ডার করো।'

পত্রলেখা বলল,'কাবাব নিই?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ।'

খাবার অর্ডার দেওয়া হয়ে গেলে, পত্রলেখা বলল,'আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে ।'

অদৃত ফোন দেখতে দেখতে বলল,'কেন?'

পত্রলেখা বলল,'কালকে আমরা গোয়াতে যাবো। উফ্! ভাবলেই আনন্দ হচ্ছে।'

অদৃত বলল,'আমরা তো কাজে যাচ্ছি আবার তো কালকেই ফিরে আসছি। এতে আনন্দ পাওয়ার কি হল?'

পত্রলেখা বলল,'ওমা আনন্দ পাবো না! এই প্রথমবার তুমি আর আমি একা একা দূরে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছি, নয়তো এর আগে তো সবসময় তোমার পরিবার ও আমার পরিবার একসাথে গিয়েছি।'

অদৃত বলল,'পত্রলেখা আমরা ঘুরতে নয় কাজে যাচ্ছি।'

পত্রলেখা বলল,'হুম্, ওই হল ।'

অদৃত বলল ,'তোমার দিদা এখন কেমন আছেন?'

পত্রলেখা বলল,'আগের থেকে অনেকটাই বেটার। তোমাদের সকলের কথা খুব জিজ্ঞাসা করছিলেন । '

অদৃত বলল,'তাই।'

পত্রলেখা বলল,'হুম্।

এই একদিন চলো না আমরা সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যাই, আর্যও যাবে আমাদের সাথে।'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ, ইচ্ছা আছে। আসলে আর্য এখানে এসে খুব একটা কোথাও যায়নি, সত্যি বলতে আমিও সময় পাইনি । কোথাও ঘুরতে গেলে ভালোই হয়।'

পত্রলেখা বলল,'আচ্ছা আর্য কলকাতায় থাকে?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ ।'

পত্রলেখা বলল,'তোমার মোটামুটি সকল ভালো বন্ধুদের সাথেই আলাপ আছে।কিন্তু আর্যর সাথে........'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ, ওর সাথে আমার পরিচয় খুব বেশিদিনের নয়।'

পত্রলেখা বলল,'ও,তাই। কিন্তু তোমাদের দেখলে বোঝাই যায় না ।'

অদৃত হেসে বলল,' আমারও কখনো মনে হয় না যে আমার ওর সাথে এই সেইদিনের আলাপ। মনে হয় অনেক বছর ধরে আমাদের যোগাযোগ ছিল। আমি জীবনে কম সময়ে খুব কম মানুষকে আপন করে নিয়েছি, আর তাদের মধ্যে ও একজন। ওর সাথে আমি যখন প্রথম কথা বলেছিলাম তখন একবারের জন্যও মনে হয়নি ও আমার কাছে অচেনা কেউ।'

এরই মধ্যে টেবিলে খাবার এলো। 

পত্রলেখা বলল,'ওর সাথে তোমার আলাপ হল কি করে?'

অদৃত বলল,'ওর বাবা একজন ব্যবসায়ী কিন্তু.....'

পত্রলেখা বলল,'কিন্তু কি?'

অদৃত বলল,'কিন্তু সেরকম বড়ো কেউ নন। ওর বাবা একটা কনফারেন্স পার্টিতে ওকে নিয়ে গিয়েছিল, তখনই ওর সাথে আমার আলাপ হয়। আর তারপর .....'

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই অদৃতের ফোনে একটা ফোন এলো।

অদৃত বলল,'তুমি খাও আমি একটু কথা বলেই আসছি।'









কিছুক্ষণ পর অদৃত ফিরে এসে বলল,'পত্রলেখা আমাদের কালকে সকালের ফ্লাইট বুক হয়ে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কালকে আমরা ফিরতে পারবো না, পরশুদিন ভোরের ফ্লাইটে আমরা ফিরবো।'

অদৃত ভাবলো,'আমি লক্ষ্যই করিনি ফোনের চার্জটা শেষ হয়ে গেছে, কথা বলতে বলতেই ফোনটা অফ্ হয়ে গেল। এইবার আর্য ফোন করলে তো বুঝতেও পারবো না।'

পত্রলেখা বলল,'ইয়ে! কি মজা।'

অদৃত হেসে বলল,'তোমার ছেলেমানুষিগুলো আর গেল না।'

পত্রলেখা বলল,'কোথায় ছেলেমানুষি করলাম?'

অদৃত বলল,'এবার খেতে শুরু করো তো ।'

পত্রলেখা বলল,'দাঁড়াও তার আগে খাবারের একটা ছবি তুলে নিই।'

অদৃত বলল,'এই যে এটা ছেলেমানুষি, এইভাবে খাবারের ছবি তোলাটা।'

কথাটা বলে দু'জনেই হেসে উঠলো ।




পত্রলেখা ফোন দেখতে দেখতে বলল,'এই অদৃত এটা আর্য না?'

অদৃত ফোন দেখে বলল,'হ্যাঁ তো। কিন্তু ওর পাশে এই মেয়েটি কে?'

পত্রলেখা বলল,'আমার বন্ধু রুশনা শেঠ। ও ত্রিদিবের গ্যালারি থেকে আর্যর আঁকা সিনারী কিনেছে, ইনস্টাগ্রামে ছেড়েছে। 

কি সুন্দর আঁকে আর্য! আমি তো সেইভাবে কখনো দেখিনি। আজকে প্রথম দেখলাম।'

অদৃত হাসলো ।

পত্রলেখা বলল,'কিন্তু আমার একটা বিষয় নিয়ে খুব খারাপ লাগছে।'

অদৃত বলল,'কি নিয়ে?'

পত্রলেখা বলল,'আমি না জেনে সেদিন ওকে মূল্য নিয়ে কথা বলে ফেলেছি । এখন সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। আমি না বুঝে কথাগুলো বলে ফেলেছিলাম।'

অদৃত বলল,'ঠিক আছে । আমি বুঝতে পেরেছি ।'

পত্রলেখা বলল,' ও এতো ভালো আঁকে যখন, তখন অদৃত ও তো এটা নিয়েও পড়াশোনা করতে পারে বিদেশে গিয়ে। আসলে দ্যাখো অদৃত আমাদের দেশে আর্ট কালচার এইসবের মূল্য খুব কম , তাই আমি সেইদিন ওই কথাটা বলেছিলাম। তুমি বুঝতে পারছো তো আমি কি বলতে চেয়েছিলাম ?'

অদৃত বলল,'হুম্।'

অদৃত বলল,'এই কথাটা আমিও এর আগে একদম যে ভাবিনি তা বলবো না। আমারও এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা হয়েছে।'

পত্রলেখা বলল,' ও যদি বিদেশে গিয়ে এইভাবে আঁকে বা ও এটা নিয়ে পড়াশোনা করে তবে দেখো ও একদিন ঠিক ওর ন্যায্য সম্মান পাবে। আর তাছাড়া আমস্টারডামে আমার এক বন্ধু আছে ও ওখানকার একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, ওর সাথে আর্যর পরিচয় করিয়ে দিলে নিশ্চই ও ভালো কোনো ব্যবস্থা করবে।'

অদৃত বলল,'সবই তো বুঝলাম পত্রলেখা কিন্তু ওতো নিজেই যেতে চায় না ।'

পত্রলেখা বলল,'কি?? কেন????'

অদৃত বলল,'ওর মতে যদি পড়াশোনা করতেই হয়, তাহলে এই দেশেই ও করবে ।'

পত্রলেখা বলল ,'আর্ট কালচার নিয়ে এই দেশে!' অদৃত বলল,' কি বলবো? কিছু করেই বোঝাতে পারিনি। আমিও ওকে বিদেশে যাওয়ার কথা বলেছিলাম কিন্তু ও কিছুতেই রাজী হয়নি।' পত্রলেখা বলল,'দেখো অদৃত ও এখন আমাদের থেকে ছোট। অন্ততপক্ষে তোমার থেকে অনেকটাই ছোট। আর ছোটদের নিজেদের ভালো খারাপ বোঝার ক্ষমতা সেইভাবে থাকে না। ও এখন বুঝতে পারছে না । অদৃত তুমি ওকে বোঝাও। 

আমরা কোনো নতুন জিনিস শুরু করার আগে ভয় পাই ,ও হয়তো কোথাও গিয়ে এরকমই ভয় পাচ্ছে। ও হয়তো নতুন দেশে একা থাকার ভয় পাচ্ছে।' অদৃত বলল,' ঠিক জানিনা । কিন্তু ও বিদেশ যেতে একেবারেই নারাজ।'

পত্রলেখা বলল,' অদৃত ওর ট্যালেন্টটাকে এইভাবে নষ্ট হয়ে যেতে দিও না। অন্ততপক্ষে আমি কোনোভাবেই চাই না ওর এই সুন্দর চিত্রশৈলী এই দেশে পড়ে নষ্ট হোক ।'

অদৃত বলল,' দেখি কি করা যায়।'

পত্রলেখা বলল,' আমি নিশ্চিত তুমি যদি একবার ওকে বোঝাও ভালো মতন ও ঠিক বুঝবে।'

অদৃত বলল,' আমি তো তোমাকে বললাম আমি ওকে বলেছিলাম ও তখন রাজি হয়নি।'

পত্রলেখা বলল,' তুমি ওকে বুঝিয়েছিলে ঠিক করে? ও ভয় পাচ্ছে হয়তো। তুমি ওকে ঠিক করে বোঝাও দেখবে ও ঠিক বুঝবে।'

অদৃত বলল,' ঠিক আছে। দেখছি । '

পত্রলেখা বলল,' তুমি একটা কাজ করো তুমি আর্যর সমস্ত আঁকা ছবি যেগুলো তোমার কাছে আছে ওগুলো আমার ফোনে পাঠিয়ে দাও।'

অদৃত তার কথামতোই নিজের ফোনে থাকা আর্যর হাতে আঁকা যে কটা ছবি ছিল, সেই সমস্ত ছবিগুলো পত্রলেখার ফোনে পাঠিয়ে দিল।

পত্রলেখা বলল,'এগুলো পাঠিয়ে দেখি ও কি বলে।'

অদৃত বলল,'কি বলল আমাকে একবার বোলো।'

পত্রলেখা বলল,'অবশ্যই।'








অন্যদিকে আর্যকে আজও অদৃতের ড্রাইভার নিতে এসেছে ।

আর্য গাড়িতে অন্যমনস্ক থাকার দরুন কখন যে সে বাড়ি পৌছে গেছে সে তা খেয়াল করল না। ড্রাইভার বলল ,'বাড়ি এসে গেছে স্যার ।'

আর্য গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকলো। সেইদিনও অদৃত তার আগে বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি । সে সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে নিজের ঘরে গেল। 

কিছুক্ষণ পর অদৃত এবং পত্রলেখা বাড়িতে ঢুকলো।




আর্য তার ঘরে বসে ছিল, হঠাৎ নীচের থেকে কথা বলার আওয়াজ পেয়ে, সে বাইরে বেরিয়ে দেখলো নীচে অদৃত এবং পত্রলেখা শ্রেয়সীর সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর নিরঞ্জন কাকা আর্যর ঘরে এসে বলল ,'আর্যবাবা নীচে খেতে ডাকছে।'

আর্য নীচে খেতে গিয়ে দেখলো পত্রলেখা এবং অদৃত খাবার টেবিলে বসে আছে। আর্যকে দেখে শ্রেয়শী বলল,' এই তো আর্য এসে গেছে ।'

ইন্দ্রনীল বলল,' এসো, এখানে বসো।'

শ্রেয়সী বলল,' দ্যাখো না আর্য পত্রলেখা এত রাতে না খেয়েই চলে যাচ্ছিল। তাইজন্য আমি পত্রলেখাকে বললাম খেয়ে যেতে। '

আর্য কথাটা শুনে কোন উত্তর করল না ।

পত্রলেখা বলল,' আন্টি এবার কিন্তু আমার অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে বাড়ি ফিরতে। '

অদৃত বলল,' আমি তো বলেছি আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আসবো।'

কথাটা শুনে আর্য অদৃতের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকালো, কিন্তু অদৃত কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় তা খেয়ালই করল না।

খেতে বসে অদৃত এবং পত্রলেখা ঠিক করে খাচ্ছে না দেখে শ্রেয়সী বলল ,'একি তোরা ঠিক করে খাচ্ছিস না কেন? আর অদৃত তুই তো সেই সকালে অল্প একটু মুখে দিয়ে বেরিয়েছিলি তাহলে এখন কেন খাচ্ছিস না?'

অদৃত বলল,' না মা পত্রলেখা লাঞ্চে পাস্তা বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।'

শ্রেয়সী বলল ,'তাই!'

অদৃত বলল,' হ্যাঁ খুব সুন্দর হয়েছিল।'

শ্রেয়সী বলল,' তবে পত্রলেখা অদৃত কিন্তু এটা সবসময় বলে পাস্তা রান্না কারোর হাতে খেতে হলে সেটা কেবল পত্রলেখার হাতে। '

কথাটা শুনে আর্য ছাড়া সকলেই হেসে উঠলো শ্রেয়সী বলল,' সে তো লাঞ্চে খেয়েছিস। তাহলে এখন কেন খাচ্ছিস না ।'

পত্রলেখা বলল,' আসলে আন্টি আমরা অফিস থেকে বেরিয়ে সামনের একটা ক্যাফেতে একটু খাওয়া দাওয়া করেছি ওই কারণে ঠিক করে খেতে পারছি না । ওকে বলেছিলাম ডিনার করতে অদৃত বলল না আজকে না অন্য কোনোদিন ডিনার করবে।'

শ্রেয়সী বলল,' তো ডিনার করেই আসতে পারতিস ভালোই হতো। '

অদৃত লক্ষ্য করলো আর্য ঠিকমতো খাচ্ছে না অদৃত বলল,' একি আর্য তুমি ঠিক করে খাচ্ছ না কেন?' আর্য বলল ,'খাচ্ছি তো।'

শ্রেয়সী বলল ,'সেই দিন ও ঠিক করে খাইনি জানিস। কি করছে ছেলেটা বুঝতে পারছি না? কি কম কম খাচ্ছে আজকাল। এইভাবে খেলে কি করে হবে আর্য?'

সকলের খাওয়া শেষ হয়ে গেলে 

অদৃত বলল ,'আমি পত্রলেখাকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই আসছি।'










অদৃত বাড়ি ফিরে দেখলো,আর্য ঘর অন্ধকার করে বসে আছে। 

অদৃত লাইট জ্বালিয়ে বলল ,'আর্য, এইভাবে ঘরের সমস্ত আলো নিভিয়ে রেখেছো কেন?'

আর্য বলল,' ইচ্ছা করছিল অন্ধকারে বসে থাকতে।'

অদৃত আর্যর পাশে বসে বলল,'অন্ধকারে বসে থাকার ইচ্ছা হচ্ছিল? আমার যদিও অন্ধকারে কেমন গুমোট লাগে।তোমার অস্বস্তিবোধ হয় না?'

আর্য বলল,'যার জীবনটা শুরু থেকেই অন্ধকার তার কি করে অন্ধকারে কষ্ট হবে; তার বরং তখন আলো দেখে কষ্ট হবে।'

অদৃত বলল,'আলো দেখলে একটুও আনন্দ হয় না? একটুও ভালো লাগে না?'

আর্য বলল,' আনন্দ হলেও ভয় লাগে এটা ভেবে আবার কখনো না আমাকে অন্ধকারে চলে যেতে হয়, আবার কখনো না আলোটা মুছে গিয়ে অন্ধকার নেমে আসে। আমি অন্ধকারেই ঠিক আছি, আমি সেখানে থেকেই সমস্তকিছু উপভোগ করতে চাই।কারণ মানুষের জীবনে অন্ধকারটাই তো দীর্ঘস্থায়ী আর আলোটা স্বল্পস্থায়ী।' 

অদৃত বলল,'আর্য জীবনের একটা দিকে বদ্ধ অন্ধকার থাকলেও অন্যদিক উন্মুক্ত থাকে আলো প্রবেশ করার জন্য । সেখানে আমাদের চাওয়া না চাওয়া নির্ভর করে না। পৃথিবীর বুকে যেমন রাত নামে তেমনি ভোরের আলোও ফোঁটে।'

অদৃত দেখলো আর্যর মুখের মধ্যে একটা অদ্ভুত চাপা গম্ভীরতার ছাপ ধরা পড়ছে।

অদৃত বলল,'আর্য রাতের আকাশেও কিন্তু উজ্জ্বল নক্ষত্র ওঠে। রাতের আকাশেও চাঁদ ওঠে। তাই যেখানে অন্ধকার থাকে সেখানে আলো থাকবেই। শুধু সেটাকে খুঁজে নিতে হয়। যাইহোক, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।'






অদৃত ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে আর্যকে বলল,'আর্য তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।' 

আর্য গম্ভীর ভাবে বলল,' তার আগে আমারও তোমার সাথে কিছু কথা আছে ।'

অদৃত বলল,' হ্যাঁ বলো না।'

আর্য বলল,' আজ তোমাকে ওতোবার ফোন করলাম তুমি ফোন ধরলে না কেন?'









To be continued.........................


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational