Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Others

বিধির বিধান

বিধির বিধান

5 mins
141


” প্রেমের অকাল মূত্যু নেই বলে শোকের মধ্যে প্রেম চিরন্তন হয়ে যায়। “ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।


তখন সকাল প্রায় দশটা বাজে, বন্যার মা দেখেন বন্যা এখনও ঘুম থেকেই ওঠেনি। পড়ুয়া মেয়ের এই দশা দেখে বিরক্ত হয়ে, বন্যাকে ডাকতে শুরু করেন, -এই বন্যা ওঠ,

আর কত বেলা অবধি ঘুমিয়ে থাকবি,উঠে ব্রেকফাস্ট কর।


-যাও না মা, আমাকে আরেকটু ঘুমাতে দাও।


-কেনরে ? ক্লাসে যাবি না?

সকাল ১০টা বেজে গেছে।


-কি বলছ ?এত বেলা হয়েছে আমাকে বলনি কেন?

মাকে বকা দিয়ে ঝটপট উঠে পড়ল আর দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলো।

আধঘন্টা পরে যখন রেডি হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে, তখন ওর মা বললো,- কি রে ব্রেকফাস্ট করলি না?

বন্যা বলল,- না মা,তাড়াতাড়ি যেতে হবে খুব ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে।

মা কে এসব বলে তাড়াহুড়ো করে এভাবে বের হয়ে গেল ঠিকই,তবে সত্যি তার কোন ইম্পরট্যান্ট ক্লাস নেই।ওদের 

কলেজে অনুপ নামে একটি শান্ত,ভদ্র,পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকা নিরীহ ছেলের পিছনে লাগাটাই বন্যার এখন qপ্রধান কাজ। অনুপ বা অনুকে জ্বালাতেই যেন বন্যা এক ধরনের স্বর্গীয় সুখ অনুভব করে।তবে অনু তাকে একদমই পাত্তা দেয়না।

ক্লাসের প্রথম দিনই বন্যা অনুর চশমাটা কেড়ে নিয়েছিলো আর তারপর তাকে অনেক বিব্রত করে চশমাটা ফেরত দিয়েছিল।সেদিন থেকে বন্যাকে দেখতে পারেনা অনু ।

যখনই অনুকে ক্লাসে বা ক্যাম্পাসে বসে পড়াশোনা করতে দেখে, তখনই বন্যা বিরক্ত করা শুরু করে দেয় ওকে। বন্যার অত্যাচারে অনু প্রচন্ড বিরক্ত,

কিন্তু এটা সত্য যে বন্যা খুব ভালবাসে অনুকে। কিন্তু বন্যার ভালবাসা অপ্রকাশিত প্রকৃত ভালবাসা, যেটা অনু একদমই বুঝতে পারে না।তার কাছে এসব জ্বালাতন মনে হয়।তাই অনু ঠিক করে নেয় আর বন্যার কোন কথার উত্তর দেবে না।


একদিন বন্যা অনুর সাথে কথা বলতে চেষ্টা করে। যদিও কথায় কথায় অনু রেগে যাবার মত ছেলে না,

তবুও কিন্তু সে রেগে বলে ওঠে "এই মেয়ে কি পেয়েছ তুমি যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছো"। তখন ক্যাম্পাস

ছাত্রছাত্রী তে পরিপূর্ণ হয়ে আছে,হঠাৎ 

অনুর কথার জন্য সবাই ওদের নিয়ে মনযোগী হয়ে পড়ে । এই ঘটনায় বন্যা সেদিন প্রচন্ড অপমানিত বোধ করে আর রাগ করে চলেও আসে বাড়িতে।

অনু মনে মনে হাসে আর বলে, - যাক বাবা, বাঁচা গেলো।

কিন্তুু না,বন্যার গতদিনের অপমানিত হওয়ার ঘটনা অনুর সাথে কথা বলা আটকাতে পারে না..


পরের দিন ক্লাসরুম বসে অনু পড়ছিল।

বন্যা এসে বললো, - কেমন আছো...?

এ কথা শুনে অনু তো অবাক..?

বন্যা বলছিলো..,- জানো কালকে তুমি যে আমাকে বোকা বানিয়ে দিলে সেটা আমার অনেক বেশি মজা লেগেছে।

কালই প্রথম তুমি আমার উপর রাগ করে কথা বলেছ.. আমি সারা রাত তোমার চোখের মিষ্টি দৃষ্টিটাকে মিস করেছি...।

একথা শুনে অনু মনে মনে ভাবতে লাগলো কি বেহায়া মেয়েরে বাবা..

গতকাল কতগুলো মানুষের সামনে অপমানিত হলো, সেটা কিনা ওর কাছে মজা লেগেছে...


অনু বন্যার কোন কোথার উত্তর দিলো না… কিন্ত বন্যা বকবক করতেই লাগলো। তাই বাধ্য হয়ে অনু সেখান থেকে রাগ করে উঠে বাসায় চলে গেল।


পরেরদিন সারা ক্যাম্পাস ঘুরে অনুকে আর খুঁজে পাওয়া গেলনা।

বন্যার মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গিয়েছে.. আজ প্রায় ১০দিন হল অনু ক্যাম্পাসে আসেনা..।বন্যা অনেকভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে... কিন্তুু তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি..


একাদশতম দিন বন্যা মনটা খারাপ করে তার ডিপার্টমেন্টের সামনে বসে ছিল… হঠাৎ সে লক্ষ্য করলো অনু ক্যাম্পাসে আসছে….।

বন্যা অনুকে দেখা মাত্রই দৌড়ে তার সামনে গিয়ে দাড়ায় আর অভিযোগের সুরে বলে, - এতদিন ক্যাম্পাসে আসোনি কেন..? তুমি জানোনা অনু..?

তুমি বোঝোনা?তোমাকে কত ভালবাসি আমি। তোমাকে এই দশটা দিন দেখতে না পেয়ে আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো।অনু তোমাকে ছাড়া আমার জীবন অচল।আমি তোমাকে ভালবাসি অনু।


দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথাগুলো শোনার পর.... হঠাৎ অনু বলে উঠে,

আমি তোমাকে ভালবাসি না বন্যা।

আমার পথ ছাড়ো বলছি..

বন্যা কাঁদতে কাঁদতে বললো..,- এ হতে পারে না অনু, এ হাতে পারে না...


এরপর আর দুজনকে দেখা যায়নি ক্যাম্পাসে..

অনুর কোন খোঁজ কেউ জানে না..

এদিকে বন্যা তার চোখের জলে সাগর সৃষ্টি করে ফেলেছে..


তার তো ভালবাসায় কোন খুঁত ছিলো না তবে কেন সে এত কষ্ট পাবে...

প্রায় দেড়মাস কেটে গিয়েছে..এর মাঝে।

একদিন বিকালে বন্যা ব্যালকনিতে অনুর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর স্মৃতিচারণ করছিল..

তখন একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। একটু ইতস্তত করেও বন্যা ফোনটা ধরে...

ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে ,

আপনি বন্যা বলছেন..?

বন্যা বলে, -  হ্যাঁ।বলুন।

খুব দ্রুত সিটি হাসপাতালে চলে আসুন..অনু আপনার সাথে কথা বলতে চায়…

-অনু? হাসপাতাল.?কি হয়েছে অনুর..?


-আপনি চলে আসুন..


বন্যা খুব দ্রুতই চলে যায় হাসপাতালে এবং জানতে পারে অনু ক্যান্সারের জটিলতায় ভুগছে..হাতে আর সামান্য সময় আছে।


বন্যা অনুর রুমে ঢুকেই বলতে লাগলো.., - তুমি কি এই জন্য এতদুরে ছিলে...? তুমি এত স্বার্থপর হলে কিভাবে..?

অনু বলে ওঠে, - আমি তোমাকে এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে জুড়তে চাইনি বন্যা ।তোমাকে প্রথম দিনই ভাল লাগে যায় আমার । কিন্তু মাঝপথে এসে জানতে পারলাম।আমি মৃত্যুর অত্যন্ত কাছে।যে দশদিন আমি ক্লাসে আসিনি...আমি তখন ছিলাম ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করাতে। আর পরীক্ষার পরে জানতে পারা গেল যে আমার দিন শেষ হয়ে আসছে।আমার হাতে আর সময় নেই বন্যা ।আমার যাবার সময় হয়ে গেছে,আমাকে যেতে হবে।

অনুর অবস্থা খুব খারাপ হতে শুরু করল ধীরে ধীরে...


অনুর অবস্থা এমন দ্রুত খারাপ হচ্ছে দেখে বন্যা ডাক্তারকে ডাকতে শুরু করে , - ডাক্তার! ডাক্তার!


এদিকে অনু তার হাত ধরে বলে...

ভাল থেকো বন্যা ..........


তারপরই অনুর চোখ দুটো স্থির হয়ে যায় অনু তাকিয়ে ছিলো ঠিকই কিন্তু প্রান পাখিটা উড়ে চলে গিয়েছে….

দূরে অনেক দূরে।

বন্যা অভিমানের সুরে বলে ওঠে,-

তুমি আমাকে এভাবে একা ফেলে চলে যেতে পারো না.. এই অনু!

ওঠো....,এই ওঠ না।ঠিক আছে কথা বলবে না তো, না বললে।


অনুর হাত জড়িয়ে ধরে,বন্যা খুব করে কাঁদে। কান্নাই যে তার এখন একমাত্র সাথী। বুকের মাঝে কষ্টের অনুভুতিগুলো তাকে কুরে কুরে যন্ত্রনা দিতে থাকে। বড় নিষ্টুর এই পৃথিবী টা।

তার কষ্ট হয়তো বুঝবে না বা ভাগ নিতে পারবে না। ধীরে ধীরে তার কান্নাও একদিন থেমে যাবে, কিন্তু তবুও তার নীরব অশ্রু আর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ থেমে থাকবে না।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy