Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics Crime

5  

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics Crime

বংশ রক্ষা১পর্ব (তৃতীয় অধ্যায়)

বংশ রক্ষা১পর্ব (তৃতীয় অধ্যায়)

7 mins
1.1K



"বাবা আপনি এ কী করছেন চেঁচিয়ে ওঠে ঋণা !"

নিতাই আলো জ্বলতেই চমকে ওঠে,হতচকিত হয়ে বলে," চুপ চুপ ভানু উঠে যাবে। কেলেঙ্কারির আর শেষ থাকবে না।" মুখে তার অপরাধ ভাব।

এই চিৎকারে শাশুড়ি ঘরে হাজির। আজ তার চোখে মুখে যেন আজ আগুন জ্বলছে, বলে "বৌমা চুপচাপ আমার ঘরে এসো।"

শাশুড়ির কথা অবাধ্য হবার ক্ষমতা তার নেই।পাশের ঘরে গেলে শাশুড়ি স্বস্নেহে বলে,"তুমি আজ রাতের দুধটা খেয়েছিলে? ঠিক বলো!"

"না মা আরশোলা পড়ছিল। তাই খাইনি রান্নার ঘরে জল বের হবার নালিতে ফেলে দি"

"তুমি আমায় মিথ্যা বললে! এটা ঠিক করো নি।"

"কিন্তু মা --"

কথা থামিয়ে নারায়ণী বলে "শোন তোমার কৌতুহল হচ্ছে শ্বশুর কেন তোমাকে এই সব করছে তাই তো!এটা চরম গোপনীয়তা ছিল, আমার আর তোমার শ্বশুরের মধ্যেই ।এক পরিচিত আমার ঘনিষ্ঠ ডাক্তারের পরামর্শে তোমাকে রাতে দুধের সাথে নিদিষ্ট মাত্রায় ঘুমের আর যৌন উত্তেজক ড্রাগ মিশিয়ে দি। সব দিন উত্তেজক দি না, তোমার মাসের সেদিন গুলো বাচ্চার আমার সম্ভবনা বেশী,  এমন মাসে পাঁচ ছ দিন। মানিক তোমার শ্বশুরের সন্তান।

ভানুর শারীরিক সমস্যা আছে,ওর বিবাহিত জীবন, সন্তান কী ভাবে হয় , ধারনা নেই।ওর নারীর প্রতিও কোন মোহ নেই। রাতে ঘুমের ওষুধ ছাড়া ঘুম হয় না। আট ন ঘন্টার পর ওঠে, গভীর ঘুমের সময় ওর চেতনা থাকে না।ঘুমের মাঝে হৈচৈ চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গলে রেগে ক্ষেপে যায়।

যে ঘরে তোমরা রাতে শোও তার দুটো দরজা। একটা বাইরে থেকেই চাবি থাকে ভিতর থেকে লাগানো ব্যবস্থা এখন আর নেই।ঐ দরজার বাইরের চাবি খুলে তোমার শোবার ঘরে এসে, শ্বশুর তোমার অচেতন অবস্থায় এসব করে,আমার সম্মতি ক্রমে।

আমার এত ধন সম্পদ খাবে কে! মেয়েরা অন্য বংশের।আমার শ্বশুরের বংশ শেষ হতে দেবো না,তাই আমার সম্মতি ক্রমে তোমার শ্বশুর একাজ করে।ও রাজী ছিল না,অনেক বুঝিয়ে ওকে রাজী করিয়েছি।আমি আমার স্বামীকে তোমার ভোগে দিয়েছি,এটা আমার কম দুঃখ ত্যাগ নয়। একটা চোখ চোখ নয়, দুটো নাতি আমার চাই, দরকারে দুটো নাতনী এর মাঝে এসে যায় আসবে।"

রীনার বয়স তখন উনিশ বা কুড়ি,বাইরের জগতের ধারনা তার ছিল না।আর তার বাপের বাড়ির মানুষ গুলো এই বাড়ির প্রশংসায় পঞ্চমুখ।এরা অনেক উপঢৌকন দেয়।গরীব বৌমার বাড়ির মানুষদের এত সাহায্য করার আর ইজ্জত করার কারণ আজ রীনা বুঝল।বাপেরবাড়ির মানুষ তাকে নয়, তার শ্বশুর বাড়ির স্বার্থই দেখবে। আর তার সন্তান মানিক তো শ্বশুরের।হাজার চিন্তা রীনার মনে আজ ঘুরপাক খাচ্ছিল। মুখ নামিয়ে বসেছিল।

পড়াশোনার সুযোগ না পেয়ে সে ক্লাস ফাইভের পর পড়া ছেড়ে ছিল,তার মানে তার মেধা নেই তেমন নয়।

শ্বশুর কেমন লজ্জিত মুখে বসে, টু শব্দ মুখে ছিল না। কিছু বললে নারায়ণীর তাকে ভৎসনা করবে সে জানে।

অনেকক্ষণ সবাই নীরব।নারায়ণী বলল"বৌমা তোমার কিছু বলার আছে !"

 রীনা ক্ষোভে দুঃখে বলে, "হ্যাঁ আছে, এই ভাবে গোপনে নয়। শ্বশুর মশাইয়ের সাথেই আমার বিয়ে দিতে পারতেন। অনেক মেয়ের তো বয়সে অনেক বড় দ্বিতীয় বা তৃতীয় পক্ষ বরের সাথে বিয়ে হয়, আপনার স্নেহের ছোট সতীন হয়ে থাকতাম।"

"দেখো বৌমা সমাজে একটা মান সম্মান আছে। আমার মেয়ে জামাই আছে,আর ভানুর উপর যেটা অবিচার হতো। "

রীনা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে,বলে "এই ভাবে কেন আমি কোন সত্যিকারের স্বামী পাবো না ? একজন অস্বাভাবিক আধপাগল,নারীর মনে কামনা বাসনা কিছুই যে জানে না।আর একজন আমার সন্তানের পিতা, আমায় অচেতন করে মিলিত হোন,শুধুমাত্র আমাকে গর্ভবতী করতে।সেটাও উনার স্ত্রীর সম্মতি ক্রমে, এটা জীবন!এ জীবনের চেয়ে মরা ভালো।"

নারায়ণী তার কথার গুরুত্ব বোঝে।ভয় পায় যদি সব লিখে আত্মাহত্যা করে! বলে "আমি আমার পরিবারের স্বার্থে তোমার ইচ্ছামত তোমার শ্বশুরকে দিলাম,যেদিন তোমার মনে হবে শ্বশুরকে বলবে।

 তোমার বাচ্চা যখন তিন মাস গর্ভে আমরা জানতে পারি, ঘুমের ওষুধ বা উত্তেজক রাতে আর তোমার খাবার দুধে দিতাম না।যাতে বাচ্চার ক্ষতি না হয়। তোমার বাচ্চা আমাদের বংশধর,তার দেড়বছর বয়স অবধি রাতে তোমাকে যে দুধে খেতে দিতাম তাতে কোন ঘুমের ওষুধ থাকত না। যাতে তোমার দুধ খেয়ে যেন ভবিষ্যতে ওর কোন সমস্যা না হয়। তোমার সন্তানকে আমরা ভীষণ ভালোবাসি। এ বাড়ীর সব সম্পদ ওর। তুমি মা হিসাবে এটাও একটু ভাবো!"

রীনা হতাশায়, দুঃখে চোখের জল মুছতে মুছতে বলে, "আমাকে আপনারা মানুষ মনে করেন না,গরু ছাগল আর কী।নিজের স্বার্থে ভালোবাসা ।তারপর ধীরে ধীরে নিজের ঘরের দিকে গেল।নিতাই গিন্নির সামনে যেন সাধুপুরুষ,কিন্তু উনিশকুড়ি বছরে,পুত্র বধুর জন্য মনটা চুক চুক করে।

নারায়ণী স্বামী নিতাইকে বলে "ওর সঙ্গে যাও কি বলে দেখো !সেই ভাবে আমাদের ছক সাজাতে হবে। "

রীনা যে আপসে রাজী তার দরজা খোলা দেখে বোঝা গেল।কিন্ত এরাতে গার্ড হিসাবে তার স্ত্রী নেই। নিতাই ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকে কপাট লাগাল।

রীনার মৃদু স্বরে বলে,  "আপনি তো আবার সময় বুঝে আসবেন, আমায় শুধু গর্ভবতী করার জন্য। সেই গাবিন করতে গাইগরুকে যেন  ষাঁড় দেখানোর মত।তবু ভালো একটু সুখ পাবো, সত্যিটাও বুঝব।আগের সন্তান মানিক হল গাইগরুকে সেই যেন ইঞ্জেকশন দেওয়ার মত, সুখ পেলাম না, সত্যিটা জানলাম না, মানিককে চুরি করে আমার গর্ভ থেকে বের করলেন। "

রীনার মুখে এমন সব বিদঘুটে কথাবার্তা শুনে নিতাই হতবাক,এসব কী বলে রে ! অন্ধকারে রীনাকে নিতাই আবেগঘন স্বরে বলে, "তুমি যদি চাও,ছেলের ব্যর্থতা কিছুটা আমি--"

রীনা কথা থামিয়ে চাপা স্বরে বলে "আস্তে কথা বলুন। আমার স্বামীর ঘুম ভাঙ্গলে আবার অশান্তি। ঘুমন্ত বাঘীনি নয় জেগে থাকা বাহিনীকে সামলাতে পারবেন তো! আর খাটে নয়, মেঝেতে আসুন, না হলে খাটের শব্দ হলে আমার স্বামীর আবার ঘুম ভাঙ্গলে বিপদ,কত আমার জ্বালা!"

রীনার রসীকতা আর ব্যঙ্গ নিতাই হজম করছিল।কিন্ত সত্যিই উঠতি তেজি বাঘীনির মত লাস্যময়ী জেগে থাকা রীনার হানায় বুড়ো বাঘ নিতাই বেশ শারীরিক নাজেহাল বেইজ্জত হয় এদিন বার বার !

আর আপনি থেকে শ্বশুরকে তুমি, বাবা থেকে বুড়ো ভাম, একটা অপদার্থ আরও কত কটু কথা ঠিক মত তৃপ্তি না পেয়ে রীনা শোনাল! বাল্যের রীনার মুখরা গুন এরা জানত না। তীব্র ক্ষোভ আর প্রতারণার জ্বালা রীনাকে বিদ্ধ করছিল,বরং ভানুর প্রতি করুনা হচ্ছিল। কাজ শেষে রীনা বলল, "বংশধর আরও চাই তো ! কালও চলে আসিস বুড়ো। মুখোরা রীনা তীব্র রাগে ক্ষোভে বড়দেরও তুই তোকারি করা বাল্যের স্বভাব,আজ যেন তার বহিঃপ্রকাশ! "

এই দু তিন বছরে রীনা অনেক স্মার্ট তবে চুপচাপ থাকত। কিন্ত এই সত্য প্রকাশের পর সে মরিয়া। পরিস্থিতির চাপে, সন্তানের মায়া, আর ধন প্রাচুর্য্য গহনার মোহে, সব মেনে নিয়েছিল।যা কিছু গোপন তিন জনের মধ্যেই ছিল। পাড়া প্রতিবেশীরা যদিও আড়ালে বলত মানিক ভানুর নয় ভানুর বাবার সন্তান।

 ভানুর বোনদেরও আপার বিষ্ময় ছিল। তবে ওরা বাবাকে সন্দেহ করত না।ভাবত নষ্ট মেয়ে বাইরের কোন পুরুষ আছে।আর দোষ কী! মানিকের মুখটা  অবিকল মায়ের মত।তবে রীনা তো গৃহবন্দী, আর গোপনে নিতাইয়ের দক্ষ নিপুণ ভোজবাজির খেল! নারায়ণী আর নিতাই জানত, তারা একশ শতাংশ নিশ্চিত ছিল মানিক তাদেরই বংশধর।

সব কিছু রীনার কাছে প্রকাশ্যে আসার পর,আটান্ন বছরের নিতাই সামন্তের, রীনার শত ব্যঙ্গ বিদ্রুপ গায়ে লাগেনা।তেপান্ন বছরের স্ত্রীর সাথে পাঁচ বছর আগেই এসবে ইতি। আর গাঢ় অচেতন কালে সতের বছরের রীনাকে তিন চার মাসে, বিশ বাইশ বার তার অভিজ্ঞ কর্মনৈপূর্ন্য, মিশনে সকসেস্ বংশধরের আগমন!

আরও সতর্কতা।তাই দুটো নাতি চাই।গিন্নির এমন নির্দেশ।ভানু এমন হবে আট নবছর অবধি বোঝা যায়নি।ডাক্তাররা আশ্বাস দেন , চিকিৎসা চলেছে পনের বছর অবধি।যখন বুঝল, ভানু নেহাত আমড়া কাঠের  ঢেঁকী, তার বহু আগেই নারায়ণী তার সব উর্বরতা শেষ করে ফেলেছিল।তবে এই ছেলেকেই শ্রীখন্ডী করে আবার এই মাষ্টার গেম নারায়ণীর।

ভাগ্য গুনে নারায়ণীর পুত্র বধু আবার গর্ভবতী হল।তাই নিতাই সামন্ত সুখী না হতাশ বোঝা গেল না। আপাতত তার বিরতি।আবারও রীনার পুত্র সন্তান !নারায়ণীর মনে এত আনন্দ যেন কোন দশ নম্বরে নামা ব্যাটসম্যান আসলে বোলার, টেষ্ট ম্যাচে উভয় ইনিংসেই টেষ্ট সেঞ্চুরি করেছে।

দ্বিতীয় সন্তান তখন ছয় মাস ।একদিন শ্বশুরকে ঘরে ডেকে রীনা ক্ষোভে বলে," বুড়ো কী ভয় পেয়ে গেলে !" 

নিতাইয়ের চোখ নব উৎসাহে চিক চিক করে বলে। "তোমার শরীর সুস্থ স্বাভাবিক তো!"

রীনা রসীকতা ভরা ব্যঙ্গ হেসে বলে "শাশুড়ি মায়ের বাচ্চা হবার কতদিন পর করতে! যেন ন্যাকা !"

রীনা অন্যদের সামনে নিতাই কে বাবা, আপনি সম্মান দিয়ে কথা বললেও একা আড়ালে, বুড়ো আর তুমি সম্বোধন করত।নিতাই মেনে নিত।

নারায়ণীর দুই নাতি হয়েছিল তাই আর স্বামীকে আর ভাড়ায় খাটাতে চায় না,রীনার পরিতৃপ্তির জন্য তার দায় নেই।

নিতাই জানে নারায়ণী সম্মতি ছাড়া ঋনার ঘরে যাওয়া অসম্ভব। তাই রীনাকে বলে শাশুড়িকে বলো। রীনা ক্ষেপে যায় বলে "ও মাগী তো তোমায় কম বয়সে অনেক ভোগ টোগ করেছে ,এই বয়সে ছাড়তেও হিংসা!"

শাশুড়ি পরদিন রীনাকে বোঝায় "অনেকেই তো বৌমা বিয়ের দুচার বছর পর দুটো বাচ্চা নিয়ে বিধবা হয়।"

"আপনার ছেলে তো বেঁচে আছে, মরে নাই!"

নারায়ণী কোন উত্তর নেই ,একটু ভেবে বলে "তোমার বাবা দাদাদের অনেক সাহায্য করি,সে তোমার জন্য। "

"কেন করেন! আমি করতে বলি! যে বাবা টাকা আর বাড়ি দেখে বিয়ে দেয়, স্বামী কেমন হবে,  মেয়ের যৌবন তৃপ্ত হবে কিনা ভাবে না।সে বাবা না কষাই! বিনা পণে, আবার আপনাদের কাছে নানা সুবিধা নিতে আমাকে এ বিয়ে না দিয়ে,বরং হাত পা বেঁধে জলে ফেলে দিতে পারত।নিজেরা সব সুখ ভোগ করল,আর আমার বেলা সোনার কলম,কিন্ত কালী নেই,মারো ঝাঁটা!"

নারায়ণী বুঝতে পারে রীনার ক্ষোভ আক্রোশ আর বিদ্বেষ ।

ফল হয়েছিল, নিতাই আবার গেল রাতে ঋনার ঘরে।রীনা বলে "দেখ বুড়ো প্রত্যেক দিন আসবি, নাহলে সব কথা পাড়ায় ফাঁস করব,আর সব কথা শাশুড়িকে কেন বলিস !ওর তো রাগ হবেই। বুড়ো একুশ বছরের আমার মত সুন্দরী মেয়েকে ভোগ করছিস, আবার বিনা পয়সায়।"

তুই তোকারি রীনা খুব না রাগলে যে করে না, নিতাই  এতদিন বুঝে গেছিল, আজ এত রাগার কারণ কী! শ্বশুর জানতে চাইলে রীনা রেগে আগুন বলে,"এ সব ব্যাপারে শাশুড়িকে পাত্তাই দেবে না,কী করবে ও!সে আমি বুঝে নেবো।আমাকে ও কী খুন করবে! দুধে বিষ দিয়েই মরুক না !"আমি আর ওকে ভয় পাই না।"

"না না কী পাগলামী কথা, তুমি আমার দুই নাতি মা, নারায়ণীর কাছে তোমার জীবনের দাম অসীম, সেটা আমি জানি,আমার নাতিদের বড় করা ,মানুষ করে তোলা, সব তোমার দায়িত্ব। ভানু তো নামেই বাবা।"

"তোমার নাতি! তাই বটে।বলছ কি করে বেহায়া বুড়ো! তাও একা আমার সামনে! অন্যের সামনে বলো ঠিক আছে।সে তো তোমায় আমিও বাবা বলে ডাকি ,আপনি বলি।"

নিতাই তর্ক করে না।রীনার কাছে সবেতেই সে হার স্বীকার করে নেয়।নারায়ণী ক্রমে বুঝে যাচ্ছিল এক মৌচাকে দুই রানী মৌমাছি থাকে না।চালাক রীনা এক দিকে স্নেহের চোখে ভানুকে কাছে টেনেছিল।শ্বশুর তো ওর ভৃত্য।আর নাতীগুলো যতই তার নেওটা হোক, রীনার সন্তান ।

ভানু দুহাতে দুই সন্তানের হাত ধরে প্রায়ই বেড়াত গ্রাম্য রাস্তায়,বাজারে চকলেট কিনে দিতো।কথা তেমন বলত না।বড় মানিক তখন আট বছরের ,আর রতন সাড়ে পাঁচ বছরের। দুষ্ট গ্রামের মানুষ মুখ টিপে হাসত। পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের যুবতী রীনা তেষট্টি চৌষট্টি হাই প্রেসার সুগারে জর্জরিত শ্বশুরে মোটেও তখন তৃপ্ত হত না। তাই রীনার মেজাজ অল্প কারণেই চরমে থাকত। 

বেপরোয়া রীনাকে শাশুড়ি শ্বশুর রাগাত না।দুই সন্তানের মা,সংযত রীনা,বাড়ির বাইরে বের হত না।এক বাপের বাড়ি খুব দরকারে যেতো।সে বুঝতে পারত, পাড়া প্রতিবেশীরা তাকে করুনা করে, সহানুভূতি দেখায়। আবার মানিক, রতনের জন্ম নিয়ে আকার ইংগিতে বিদ্রুপ করে।রীনার তখন বাড়িতে অনেক প্রভাব,স্বেচ্ছায় গৃহ বন্দী রীনা ।

 মাঝে মাঝেই রাতে শুতে গিয়ে ঘুমে অচেতন স্বামী ভানুকে দেখে একা নির্জনে নীরবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদত, চোখের জলে বিছানার বালিশ ভিজে যেত। নিজের ভাগ্য কে দোষ দিত।আর জন্য তার বাবা আর শাশুড়ির উপর তার রাগ ক্ষোভ বেশী ছিল।

 অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের প্রতি তার কোন আস্থা শ্রদ্ধা বা ভরসা ছিল না।এক মাত্র তার দুই সন্তান তার আশা তার ভবিষ্যত।নিজের অতৃপ্ত কামনা যৌবনের আকাঙ্খা তাকে যে দগ্ধ করত, দু পুত্রের মুখের দিকে চেয়ে যেন প্রান একটু জুড়াত।

দুই সন্তান এখন আলাদা ঘরে শোয়,ঐ ঘরে আর নারায়ণীর শোবার ঘরের মাঝে ছিল এক সংযোগ  দরজার। নারায়ণী রাতে দুবার নাতিদের ঘরে ঢুকে দেখে যেত, যাতে তাদের কোন অসুবিধা না হয় তাই সতর্কতা ! আবার দুই নাতির প্রতি তার যেন বেশী দাবী নীরবে আকার ইংগিতে রীনার কাছে জাহির করতে চাইত। রীনা এসব তুচ্ছ ব্যপার নিয়ে কিছু মনে করত না।জানত ঠাকমা তার দুই নাতিদের প্রানের অধিক ভালোবাসে। বংশধর বলে কথা!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy