Krishna Banerjee

Classics

4  

Krishna Banerjee

Classics

চেনা গন্ধ আচেনা মুখ

চেনা গন্ধ আচেনা মুখ

5 mins
314


                        চেনা গন্ধ অচেনা মুখ 

                      ( প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য )

                       কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী 


                                  সারাবছর আফিসের একটা দম এটকানো চাপ । প্রাইভেট সেকটারে এমনটাই হয় । দিন - রাত কিছুরই হিসাব থাকেনা । অনেকদিনের পর টানা সাতদিনের একটা ছুটি পেলাম । আমার একটা পুরাতন ঠিকানা আছে । বহু আগে মাঝে মধ্যে সেখানে যেতাম একটু হালকা হয়ে নিতে । শেষের সাত সাতটা বছর ঐ অঞ্চলের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিলোনা । আসলে সময় হয়ে ওঠেনি । তমালিকার বাবার নিকট অপমানীত হবার পর যখন বুঝলাম তমালিকা ওর বাবার যুক্তিতেই সম্মতি জানাচ্ছে ও নিজেই আমাদের সম্পর্কটা ধরে রাখতে চাইছেনা তখন থেকেই ঐ পল্লিতে যাতায়াত । বিন্দু বালার সাথে আমার আলাপ ওখানেই । সারাদিন চাকরির সন্ধানে ঘুরে সন্ধ্যায় যখন বার্থাহয়ে ফেরা একটা পুরুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতাম তখন নিজের পৌরাস্তটা জাগ্রত করতে ছুটে যেতাম বিন্দুবেলার কাছে । ওকে আমি বিন্দি বলেই ডাকতাম । সেইসময় বিন্দু বালা আমাকে অনেকটাই সাহায্য করেছিল । প্রথম প্রথম না করলেও পরে ওরকাছে আমার খাটা চলতো । জুয়াতে জিতলে কিছু কিছু মিটিয়ে রাখতাম । ওর একটা পরিবার ছিল । রাজমিস্তারির কজ করতে গিয়ে পাঁচটালা থেকে পড়ে বরটা বিকলাঙ্গ হয়ে জায় । একটা ছোট্ট মেয়েছিলো বেশ ফুটফুটে । সে তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে । এখন হয়তো অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছে । বছর তিনেক বিন্দি আমাকে অনেকটাই হেলপ করেছিল তারপর চাকরিটা জুটে যেতেই আমি আটকা পড়ে জায় । চাকরি পেয়ে দুইবার গিয়েছিলাম । তবে ওর টাকা দিতে । আসলে কি জানেন তমালিকার দেহের গন্ধ আমার রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে ছিলো। বিন্দির সাথে সম্পর্ক হলেও তমালিকাকে আমি ভুলতে পারিনি । 

                              আমার জীবন থেকে তমালিকার চলে যাওয়াটা হয়তো আমি মেনে নিতে পারিনি , তাই আজও আমি আবিবাহিত। ছুটি মেলাতে কেনোযেন মনেহলো একবার বিন্দির সাথে দেখা করে আসি । যতইহোক একদিন সেতো আমাকে সাহায্য করেছে । সেখানে যখন পৌছালাম দেখলাম বিন্দির রুমটা বন্ধ রয়েছে । বাইরে তালা নেই , অর্থাৎ বিন্দি ভিতরেই রয়েছে । আমি বাড়তিনেক দরজা ঠোকা দিতেই দরজাটা খুলে গেলো । একটা চেনা গন্ধ আমার নাকে আসে লাগলো । বিন্দির ঘরের বাইরে তেমন আলো নেই তাই মুখটা দেখা সম্ভব হলোনা । আমি প্রশ্ন করলাম কে বিন্দি । মেয়েটি জানালো না বিন্দি দেশের বাড়িতে চলে গিয়েছে সে এখন আর এখানে থাকেনা । গলার শব্দটা যথেষ্ট চেনা । আবার বললো আমাকে দিয়ে কজ চলবেনা ? আমি বললাম না তেমন নয় টাকা বিন্দিকেও দিতাম আপনাকেও দেব এতে এমনকি অসুবিধা রয়েছে । মেয়েটি আমাকে ভিতরে আসতে অনুরোধ করতে আমি ভিতরে চলে এলাম । মজার বিষয় ঘরের ভিতরে একটা হালকা নীল আলো জ্বলছে তাতে দেহের অকার বোঝা গেলেও মুখটা বোঝা যাচ্ছেনা । আমি বললাম আলো জ্বালানো যাবেকি ? আপনার মুখটাইতো দেখতে পাচ্ছিনা । মেয়েটা বললো আপনিতো আমার দেহটা কিনতে এসেছেন , মুখদিয়ে কি হবে । আমি আবারো বললাম না আসলে আমি কারকাছে এসেছি তিনি সাপ , বেজি না অন্যকিছু না দেখলে বুঝবো কিকরে । মেয়েটি একটু বিরক্ত হয়ে বললো তাহলে অন্যঘরে যেতে পারেন । তখনো আমার নাকে সেই চেনা গন্ধ ঘুরে বাড়াচ্ছে যেটা আমি কয়েকবছর আগে তমালিকার দেহে পেতাম ।

                            আমি আর কথা বাড়ালামনা সোজা সুজি প্রশ্ন করলাম কি দিতে হবে ? ও জানালো আপনার জা ইচ্ছা আপনি যখন বিন্দি দিদিকে চেনেন তখন আপনি আই এলাকার পুরাতন খরিদ্দার আপনাকে আলাদা করে কি বলবো বলুন । যাইহোক মনে মনে একটা দম আমি ধরেই নিলাম । তারপর আমি যত ওর কাছে যেতে লাগলাম ওকে স্পর্শ করতে লাগলাম ততই তমালিকা জেনো আমার হাতে , মুখে , ঠোঁটে জড়িয়ে যেতে লাগলো । আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না । বলেই ফেললাম তমালিকা তুমি এখানে । তমালিকা কাঁপা গলায় বললো কে …….কে তমালিকা ? আমি বললাম তুমি তমালিকা তোমার দেহে ঘ্রান , তোমার স্পর্শ সবটাই আমার চেনা । মেয়েটি আবার বললো তমালিকা মারা গিয়েছে আমি তিতাস । যদি আপনার আমাকে পছন্দ না হয় আপনি চলে যেতে পারেন । আমি বললাম এখানে পছন্দ আপছন্দের কিছু নেই , আপনার সবকিছু আমার চেনা , একটিবার আলোটা জ্বালান আমি আপনাকে একটিবার দেখতে চাই । মেয়েটি জানালো ক্ষমা করবেন সেটা আমি পারবোনা । কিন্তু এই  গান্ধজে আমার তমালিকার দেহের । মেয়েটি বললো গন্ধ চেনা হলেইজে মানুষটা চেনা হবে তারতো কোনো মানে নেই । আমি আবার বললাম ওর প্রতিটা স্পর্শ আমি চিনি জা আপনার মধ্যে আমি বুঝতে পারছি । মেয়েটি বলল সেটা আপনার সমস্বা । আবার আমার বিরক্তি লাগতে লাগলো আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দুটো পাঁচশ টাকার নোট বিছানায় ফেলে বেরিয়ে যেতে যাচ্ছি এমন সময় তমালিকার ফোনটা বেজে ওঠে , আমি মুখটা ওরদিকে ঘোরাতেই দেখতে পাই ওর মুখের একটি আংশ পুরে গিয়েছে যেটাকে ও লুকাতে চাইছিলো বার বার ।

                                 আমার ডানহাতেই ঘরের সুইচবোর্ড , সেটা আমার বহু আগে থেকেই জানা । তাই মুহুর্ত বিলাম্ব না করে আলোটা ধরিয়ে দিলাম । আলোটা জলে উঠতেই তমালিকা কান্নাতে ভেঙে পড়লো । আমি ওরদিকে এগিয়ে গিয়ে ওর মুখটা তুলে ধরলাম , জিজ্ঞাসা করলাম এটা কিকরে হলো ? এবার তমালিকার কান্নার শব্দ আর্তনাদে রূপান্তরিত হয়ে উঠলো । আমি ওকে শান্ত করে জিজ্ঞাসা করলাম এটাকিকরে হলো সেটাতো বলবে । তমালিকা নিজেকে একটু সামলেনিয়ে বললো এটা আমার পাপার ফল , তুমি আলোটা জ্বালিয়ে ভুল করেছো । আমি ওর দুই কাঁধ চেপে ধরে বললাম কিছু ভুল আমি করিনি তুমি আমাকে বিয়ে করবে ? তমালিকা বললো আমার এই অবস্থা দেখেও তুমি আমাকে বিয়ে করবে । আমি একটু হেসে বললাম তোমার এই  মুখটা হয়তো আমারকাছে অচেনা কিন্তু তোমার দেহের গান্ধ সেটাতো আমার চেনা তাইনা তমালিকা । আমি ওরদিকে  হাতদুটো বাড়িয়ে দিতেই ও আমার বুকের মধ্যে আছড়ে পড়লো । বিয়ের চ্যাপ্টারটা জীবন থেকে মুছেই দেবো ভেবেছিলাম সেটা আর হলোনা ।

                                  সমাপ্ত 


Rate this content
Log in