এভারেস্ট কন্যা
এভারেস্ট কন্যা
পর্বতারোহণ কিছু মানুষের নেশা আবার কিছু মানুষের পেশা বলা হয়। যারা পর্বতারোহী তাদের পুরো জীবনটাই লেগে যায় মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে। কেউ পারেন আবার কেউ পারেন না। অনেকে যাত্রাপথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শেরপা হল নেপাল ও তিব্বতে বসবাসরত হিমালয়ের মানুষদের একটি সদস্য যারা পর্বতারোহীদের মত তাদের দক্ষতার জন্য বিখ্যাত।
শেরপা নেপালের সবচেয়ে পাহাড়ী অঞ্চলে মূলত নেটিভ গোষ্ঠীগুলির অন্যতম। পাশাপাশি চীন, ভুটান, ভারত ও হিমালয়ের কিছু কিছু এলাকাও রয়েছে। শেরপা বা শেরভ শব্দটি শেরপা ভাষার শব্দ শর ("পূর্ব") এবং ওয়াহ ("মানুষ") থেকে এসেছে, যা উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় নেপালে তাদের ভৌগোলিক উত্থানের কথা উল্লেখ করেছে।
বেশিরভাগ শেরপা নেপালের পূর্ব অঞ্চলে বাস করে; তবে কিছু কিছু পশ্চিমে রোলালিং উপত্যকায় এবং কাঠমান্ডুর উত্তরে হেলামু অঞ্চলের কিছু বাস। তেনব্বোছ নেপালের প্রাচীনতম শেরপা গ্রাম। শেরপা মানুষ চীন, ভুটান এবং ভারতের রাজ্যের সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে, বিশেষত দার্জিলিং জেলা। শেরপা ভাষা তিব্বত-বার্মান ভাষার দক্ষিণ শাখা থেকে আসে এবং এটি একটি মিশ্র পূর্ব তিব্বত (খম্বা) এবং লাসা সংলাপ। তবে, এই ভাষাটি লাসা তিব্বতের থেকে আলাদা এবং লাসা স্পিকারের কাছে অপ্রচলিত।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রগুলিতে,পশ্চিমী দেশগুলিতে স্থানান্তরের শেরপার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক সিটিতে বৃহত্তম Sherpa সম্প্রদায় আছে - সংখ্যায় প্রায় 3,000 জন আছে। 2001 সালের নেপালের জনসংখ্যা 154,622 জন শেরপাকে তার সীমানার মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছে। শেরপা জনসংখ্যার কিছু সদস্য পর্বতারোহণে তাদের দক্ষতার জন্য পরিচিত।এদের প্রধান জীবিকা - কৃষি ও পশুসম্পদ চালান বাণিজ্য, গাইডের কাজ এবং হিমালয় পর্বতারোহণ, তেনজিং (1953 সালে হিলারির সাথে একযোগে এভারেস্টের প্রথম চক্র), গারজেন (1956 সালে জাপানী ম্যানসুল কর্পসের সাথে এবং প্রথম পর্বতমালার সাথে একটি গাইড) হিসাবে উল্লেখযোগ্য নাম।
৪৮ বছর বয়সে এভারেস্টে উঠে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন নেপালের এক মহিলা পর্বতারোহী। সারা দেশে তিনি এভারেস্টকন্যা নামে পরিচিত। এভারেস্টজয়ী অন্যান্য নারীর চেয়ে লাকপা শেরপা এগিয়ে। এ পর্যন্ত তিনি সাতবার মাউন্ট এভারেস্টকে জয় করেছেন। বিশ্বের আর কোনো নারী এতবার এভারেস্টের চূড়ায় নিজের পদচিহ্ন রাখতে পারেননি। তিনি প্রথম নেপালি নারী হিসেবে ২০০০ সালে প্রথম এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন এবং সফলতার সঙ্গে নেমে আসেন।
লাকপা শেরপা (এছাড়াও লাকপা (জন্ম ১৯৭৩) একজন নেপালি শেরপা পর্বাতারোহিণী। তিনি মাউন্ট এভারেস্ট নয় বার আরোহণ করে বিশ্বের মহিলাদের মধ্যে অধিকতমবার এভেরেস্ট শীর্ষ জয়ের মর্যাদা অর্জন করেছেন। ২০০০ সালে তিনি হলেন এভারেস্ট আরোহণ করে, সফলভাবে নেমে আসা প্রথম নেপালি মহিলা।
প্রাথমিক জীবন:
লাকপা ১১ জন ভাই বোনেদের মধ্যে নেপালের মাকালুতে বড় হয়েছেন।
কর্মজীবন:
২০০০ সালে এশিয়ান ট্রেকিংএর পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত একটি অভিযানে তিনি দলনেত্রী ছিলেন ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০০০ সালে, তিনি হয়ে ওঠেন প্রথম নেপালি নারী যিনি মাউন্ট এভারেস্ট শিখর আরোহণ করে, বেঁচে অবরোহণ করেন (এছাড়াও দেখুন পাসাং লামু শেরপা)। নেপালী নারী মিলেনিয়াম অভিযানের অন্তর্ভুক্ত ছিল তার এই আরোহণ।
২০০৩ সালে মার্কিন পিবিএস খেয়াল করেন যে, তিনি ৩ বার এভারেস্ট বিজয় করে, বিশ্বের মহিলাদের মধ্যে অধিকতমবার আরোহণকারীনি ছিলেন। ২০০৩ সালের মে মাসে তিনি তার বোন এবং ভাই একত্রে এভারেস্ট বিজয় করেন; তারা হলেন মিং কিপা এবং মিংমা গেলু।
১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৭ সাল অবধি লাকপা ৬ বার এভারেস্ট জয় করেন এবং তার স্বামী নয়বার। ওই বছর তারা তাদের ২০০৭ এভারেস্ট ট্রিপ সম্বন্ধীয় একটি উপস্থাপনার আয়োজন করেন সঙ্গে অনুদান গ্রহণ করেন কোয়েকার লেন সমবায় নার্সারি স্কুলএর জন্য। জর্জ এবং লাকপা, মাউন্ট এভারেস্ট ৫ বার একত্রে বিজয় করেন ।
২০১৬ সালে, তিনি তিব্বত (চীন) থেকে মাউন্ট এভারেস্ট বিজয় করেন, যেটি এভেরেস্টে তার সপ্তম আরোহণ। রাষ্ট্রপতি মাউন্ট এভারেস্ট সাম্মিটারস এসোসিয়েশন,এর সভাপতি আর একজন নেপালি মহিলাও সেই সঙ্গে শিখরে পৌঁছান কিন্তু নেপালের দিক থেকে। মায়া শেরপা, যিনি আর একজন রেকর্ড অধিকারিণী এবং কে২ আরোহণকারিণী।
আরোহণ কর্মজীবন সাফল্য:
১) ২০০০
২) ২০০১
৩) ২০০৩
৪) ২০০৪
৫) ২০০৫
৬) ২০০৬
৭) ২০১৬
৮) ২০১৭
৯) ২০১৮
অতিরিক্ত অভিযান:
২০১০ সালে কে২ আরোহণের জন্য অভিযান, ৩ নম্বর শিবির থেকে ফিরতে হয় খারাপ আবহাওয়ার জন্য।
২০১৫ সালে এভারেস্ট অভিযান; তিব্বতে বেস ক্যাম্প অবধি পৌছেছিলেন কিন্তু বসন্তকালে হিমালয়ের ভূমিকম্পে ফিরে আসতে হয়েছিল। (আরও বিস্তারিত দেখতে lদেখুন ২০১৫-এর মাউন্ট এভারেস্ট ভূমিকম্প এবং/অথবা ২০১৫-এর নেপাল ভূমিকম্প)।
ব্যক্তিগত জীবন:
লাকপা তিনি (বুধবার) জন্মগ্রহণ করেন সেই দিনের জন্য নামকরণ করা হয়। যদিও নেপালে জন্মগ্রহণ করেন, বর্তমানে তিনি একজন মার্কিন নাগরিক এবং তার তিন সন্তানপালন এবং বিভিন্ন চাকরিতে ব্যাস্ত থাকেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাত এগারোতে কাজ করেছেন। যাইহোক, ইউ.কে. মিডিয়া আউটলেট দৈনিক টেলিগ্রাফ সাক্ষাত্কারে তিনি পর্বতারোহণের জন্য তার অদম্য বাসনা উলেখ করেন,দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফএর অনুযায়ী যেমনটি পূর্বে জর্জ ম্যালরি এবং ইউচিরো মিউরার মত পর্বাতোরোহীদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল।
তার দুই কন্যা ও এক পুত্র, এবং ১২ বছর ধরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন জর্জ দিজমার্সাকুর সঙ্গে, যিনি একজন রোমানিয়ান-আমেরিকান। তারা ২০০০সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে প্রথমবার পরিচিত হন, ২০০২ সালে বিবাহ করেন। ২০০৮ সালে জর্জএর কর্কট রোগে আক্রান্ত, হবার পর চিকিৎসার মাত্রাধিক্য বিল ছিল তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের টানাপড়েনের অন্যতম কারণ।
২০১৬ সালে লাকপা সপ্তমবার এভারেস্ট বিজয় করেন ও বিশ্বের নারীদের মধ্যে সর্বাধিকবার এভারেস্ট বিজয়ের পুনরায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে স্বীকৃতিপ্রাপ্তি শুরু করেন।
পরিবার ও সম্পর্ক:
২২ মে, ২০০৩ সালে তার ছোট বোন মিংমা ১৫ বছর বয়সে মাউন্ট এভারেস্ট শিখরে (তিনি আরোহণ করেন লাকপা এবং গেলুর সঙ্গে), আরোহণ করেন। সুতরাং, মাউন্ট এভারেস্ট বিজয়িনী সর্বকনিষ্ঠ নারী ও ব্যক্তি । (এছাড়াও দেখুন টেমবা শেরি এবং জর্ডান রোমেরো)। তার ভাই মিংমা গেলু শেরপা ২০১৬ সাল অব্ধি আটবার মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণের জন্য সুপরিচিত। বিবিসির সংবাদ অনুযায়ী ২০০৩ সালে যখন তারা মধ্যে তিন ভাই বোন একত্রে মাউন্ট এভারেস্ট বিজয় করেন সেটি প্রথমবার তিন সহোদরের একত্রে এভারেস্ট বিজয়ের নজির ছিল, সাথে এটি বিশ্ব গীনিস বুক অফ রেকর্ডস দ্বারা স্বীকৃত ছিল।
২০০৪ সালে কানেকটিকাট এভারেস্ট অভিযানে তৎকালীন স্বামী দিজমার্সাকু লাফকাকে মারধর করেছিলেন। অভিযানে উপস্থিত এক সাংবাদিক মাইকেল কোদাসের মতে, ডিজমারসু, " তার ডান হাত দিয়ে তার স্ত্রীকে মাথায় আঘাত করেন।" এই বিবাদটি "পর্বতারোহণ জগতের প্রচার মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল"।