Sukdeb Chattopadhyay

Inspirational

5.0  

Sukdeb Chattopadhyay

Inspirational

হস্টেল

হস্টেল

14 mins
704



 

শুকদেব চট্টোপাধ্যায়। 


দামাল শিশুদের বাগে আনতে বাড়ির লোকজন সাধারণত দুটো জিনিসের ভয় দেখান। প্রথমটা হল ভূতের ভয়। জবর দাওয়াই। বাচ্চা তো বটেই, অনেক প্রাপ্তবয়স্ককেও আমি রাতের অন্ধকারে ভূতের ভয়ে গুটিয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু কারো কারো যেমন কিছু ওষুধে কাজ হয় না( ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট ), তেমনই এক একটা দস্যি ছেলে মেয়েকে ভূত দিয়েও ঠাণ্ডা করা যায় না। এরকমও দেখেছি, বাবা-মা বেয়াড়া বাচ্চাকে টাইট করার জন্য ভুতের গল্প শোনাবার পর থেকে ভয় পাওয়া দূরে থাক, ভূত দেখবে বলে বায়না ধরে বড়দের একেবারে অস্থির করে তুলেছে। দ্বিতীয় ভয়টা হল হস্টেল বা বোর্ডিং এ রেখে আসার। শিশুর অত্যাচারে নাজেহাল বাবা-মা অনেক সময় বলেন—এবার তোকে বোর্ডিং এ রেখে আসব, তখন দেখবি মজা। যদি এরকম কোন ঘটনা ঘটার সামান্যতম সম্ভাবনাও শিশুর মনে উঁকি দেয় তবে সে অন্তত কিছুদিনের জন্যও সুবোধ বালক হয়ে যাবে। বোর্ডিং এর জুজু দেখিয়েও কাজ হয়নি এতটা ভয়ানক বাচ্চা সচরাচর দেখা যায়  না।


 

আমার স্কুল জীবন বোর্ডিং এ কেটেছে। তবে সেটা আমাকে শায়েস্তা করার জন্য নয়। বাবার বদলির চাকরি হওয়ার জন্য এ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। আমাদের স্কুল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের যথেষ্ট সুনাম ছিল এবং এখনও আছে। আমার বুনিয়াদি স্তরে শিক্ষালাভ হয় বিহারের অজ গ্রামের এক পাঠশালায়। ওই পুঁজি নিয়ে এসব স্কুলে ভর্তি হওয়া কঠিন। কপালে ছিল হয়ে গেছে।

প্রবেশিকা পরীক্ষায় একটা প্রশ্ন ছিল—‘আনন্দমঠ’ কার লেখা ? নামের মধ্যে মঠ দেখে কাল বিলম্ব না করে লিখেছিলাম—স্বামী বিবেকানন্দ।

পাশের ছেলেটার পাণ্ডিত্য আমার থেকেও বেশি। তবু তো বিবেকানন্দ উত্তরটা আমার নিজের চিন্তার ফল। ও সেটুকু মাথাও ঘামায়নি। আমার দেখে টুকে নিল। মৌখিক পরীক্ষায় খানিক লড়ে ছিলাম। এটা ওটা জিজ্ঞেস করার পর আমাকে একটা কবিতা বলতে বলে হল। ব্যাস আর পায় কে। মুখস্থ ছিল ‘দুই বিঘা জমি’। বড় কবিতা। মনের আনন্দে অনেকক্ষণ ধরে বলে গেলাম। কোলকাতায় আমার মামার বাড়ি থেকে একটা টেম্পোতে করে ছোট একটা বিছানা আর কালো একটা ট্রাঙ্কে সামান্য কিছু জিনিসপত্র নিয়ে সেজ মামার সাথে স্কুল হস্টেলে পৌঁছলাম। একে নতুন ছেলে, তার ওপর টেম্পো করে স্কুলে আসার ঘটনা চট করে দেখা যায় না, তাই বেশ কিছু ছাত্র উৎসুক হয়ে দেখতে এল। যারা দেখতে এসেছিল তারাই মহানন্দে আমায় হস্টেলে নিয়ে গেল। আমার জায়গা হল অভেদানন্দ ভবনের একতলার পাঁচ নম্বর ঘরে আরো তিনটি ছেলের সাথে। শুরু হল নতুন পরিবেশে আমার নতুন জীবন। যা কাটিয়েছিলাম ছয় বছরের কিছু বেশি সময়। জীবনের গড়ে ওঠার সময় বহু আনন্দ, অভিজ্ঞতা, বিচ্ছেদ ও দুষ্টুমিতে ভরা ছিল আমার হস্টেল জীবন। এতগুলো বছর পার হওয়ার পরেও নানান ঘটনার স্মৃতি আজও অমলিন। প্রথম দিন আমার হস্টেলে অধিকাংশই নতুন ছাত্র থাকায় কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল। শিক্ষকেরা নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। একটি ছেলে খুব কাঁদছিল। হরিদা (আমরা শিক্ষকদের দাদা বলতাম) ওকে জিজ্ঞেস করলেন—তোর বাড়ি কোথায়?

ছেলেটি বলল—ঢাকুরিয়া। তখন তাকে বললেন—ছাদে উঠলে তুই বাড়ি দেখতে পাবি। আর একে(আমাকে দেখিয়ে) দেখ। পালামৌ থেকে এসেছে, ওকি তোর মত কাঁদছে ?

ছেলেটি তারপর থেমেছিল। বাবা-মার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমারও খুবই কষ্ট হত। কিন্তু কান্নাকাটি করতাম না। ধীরে ধীরে নতুন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। কেবল বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে হস্টেলে ফেরার পর মনটা কদিন অস্থির হয়ে থাকত। স্কুলের কথা বলতে গেলে প্রথমেই মনে আসে নচিকেতার নাম। নচিকেতা সাহা। আমার সহপাঠী। এত মজার চরিত্র খুব কমই দেখেছি। ওকে চিনলাম স্কুলে ভর্তি হওয়ার কয়েকদিন বাদে, অঙ্ক ক্লাসে নাম ডাকার সময়। সবাই ‘উপস্থিত’ অথবা ‘ইয়েস স্যার’ বলছে। হঠাৎ কানে এল ‘হাজির হুজুর'। মাস্টার মশাই জিজ্ঞেস করলেন – কে বললে ?

নচিকেতা উঠে দাঁড়িয়ে বলল—বেরিয়ে গেছে। ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেল। নচিকেতা তো বেঞ্চের ওপর দাঁড়ালই, হাসার অপরাধে আমরাও একই শাস্তি পেলাম। ও বহুবার আমার রুমমেট ছিল। আমার সাথে চারিত্রিক অনেক মিল থাকার জন্য ক্রমশঃ ওর সাথে খুব ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। 

 

ফণীবাবু আমাদের General Science পড়াতেন। লম্বা চওড়া বিরাট চেহারার প্রৌঢ়। একদিন ক্লাসে জলে ডোবা মানুষকে সুস্থ করার জন্য প্রাথমিক ভাবে কি কি করনীয় তা বোঝাচ্ছিলেন। একটু হাতে কলমে দেখানোর জন্য নচিকেতার ডাক পড়ল। রোগা প্যাংলা ছোটখাট চেহারা। ফণীবাবু নচিকে টেবিলের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে বললেন। শরীরের তুলনায় টেবিল ছোট। তবু কোনরকমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। পায়ের অনেকটাই বাইরে ঝুলছে। ফণীবাবু তাঁর দু হাত নচিকেতার কোমরের দু পাশে রেখে বিশাল শরীরের পুরো ভরটা ওর ওপর ছেড়ে দিয়ে ‘এইখানে এমনি করে চাপ দিতে হবে’ বলতেই নচিকেতা কঁকিয়ে উঠল।

ফণীবাবু বিরক্ত হয়ে বললেন—অস্থির হচ্ছিস কেন? একবার চাপ দিলে আর কতটুকু জল বেরোবে ?

প্রক্রিয়াটি পুনরায় দেখাতেই ‘বাবাগো মরে গেলাম’ বলে নচি টেবিল থেকে নেমে একছুটে ক্লাস থেকে পালিয়াছিল। ফণীবাবুর জল বার করাও ওখানেই শেষ, কারণ আর কোন ছাত্র নচির বিকল্প হওয়ার সাহস দেখায়নি। ওই ফণীবাবুই কোন এক সাপ্তাহিক পরীক্ষায় গার্ড দিচ্ছিলেন। শিক্ষকদের চেয়ার টেবিল একটা ছোট চৌকির ওপর বসান থাকত। তাই ছাত্রদের থেকে ওনাদের অবস্থানটা খানিকটা ওপরে হত। আমরা অনেকেই সামনের বেঞ্চটা বাদ দিয়ে বসলেও নচিকেতা প্রথম বেঞ্চে সবার সামনে বসে। সাহস আছে, বাহবা দিতে হয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার খানিক পরেই ফণীবাবু সদর্পে ঘোষণা করলেন—Nobody can copy whenever Phani Babu is present in the examination hall. টোকার চেষ্টা যেন কোরোনা বাবারা। দেখলাম ওনার দৃষ্টি হলের শেষ থেকে মাঝা মাঝির মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। অনেক উঁচুতে বসে থাকা আর বিশাল বপু হওয়ার জন্য সামনের দিকে নজর দেওয়া ওনার পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব ছিল। আর ফণীবাবু পরীক্ষার সময় বসে থাকতেন, ঘোরাঘুরি বিশেষ করতেন না। হলে ঢুকেই নচি এসব নিরীক্ষণ করে ফেলেছিল। তাই প্রথম বেঞ্চে বসেও কেল্লা ফতে।

আমাদের স্কুলে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা প্রভৃতি দেশ থেকে মাঝে মাঝে সাহেবরা আসতেন। ঠিক কি উদ্দেশ্যে তাঁরা আসতেন তা জানি না। তবে কয়েক মাস তাঁরা বিভিন্ন হস্টেল অথবা শিক্ষকদের আবাসে থাকতেন। ওই সময় তাঁরা আমাদের কিছু ক্লাস নিতেন। মূলত আমাদের ইংরাজিতে কথা বলায় পোক্ত করার জন্য তাঁদের নিয়োজিত করা হত। সাহেবরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করতেন না। ক্লাশে টেপ চালিয়ে, রাইম শুনিয়ে, টুকরো টুকরো কথা বলে আমাদের সাথে সড়্গড় হওয়ার চেষ্টা করতেন। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষা শেখার জন্য দরকার চেষ্টার। চেষ্টা আসে আগ্রহ থেকে অথবা পরিস্থিতি বাধ্য করলে। এর কোনটাই আমাদের অধিকাংশের ছিল না। অরবিন্দ পাল ছিল আমাদের ক্লাশের ফার্স্ট বয়। শিশুকালটা বাবার চাকরি সূত্রে হল্যান্ডে কাটিয়েছে। উড়িয়ে ইংরাজি বলতে পারত। ওই ছিল স্পোকেন ইংলিশ ক্লাসে আমাদের ঢাল। সাহেবদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর ওই দিত বা বলা ভাল ওকে দিতে হত। পরিস্থিতির চাপ আমাদের ওপর নয়, সাহেবদের ওপরেই ছিল। তাই ইংরাজি শেখাতে এসে, আমাদের ইংরাজিতে সেরকম সড়গড় করতে না পারলেও, নিজেরা ঠেকায় পড়ে ধীরে ধীরে বাংলায় কথা বলা শিখে ফেলতেন।

মদনদা ছিলেন আমাদের বাংলার শিক্ষক। যার যাই নাম হোক না কেন মদনদা সকলকেই ‘মানিক’ বলে ডাকতেন। ‘মানিক’ ডাকটা যে সব সময় স্নেহের ডাক ছিল না তা বুঝেছিলাম স্কুলে কোন একটা অনুষ্ঠানে দেরী করে আসার পর। চুপচাপ পাশ কাটিয়ে অনুষ্ঠানের ঘরে ঢোকার তাল করছি এমন সময় মদনদা সামনে পড়ে গেলেন--মানিকের একটু দেরী হয়ে গেল যে ! সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে বোকা বোকা হাসি হেসে অনুষ্ঠান কক্ষে ঢুকে পড়লাম। অনুষ্ঠান শেষে মনের আনন্দে বেরচ্ছি, আবার মদনদা।

-- মানিক, একটু হেডমাস্টার মশাইয়ের ঘরে দেখা করে যেও। বুঝলাম মদনদা এইটুকু সময়ের মধ্যেই তাঁর কাজ করে দিয়েছেন। বিপদ আসন্ন। দেরী করে আসার একটা যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা চিন্তা করছি এমন সময় গানের শিক্ষক অমিয়দা ডাকলেন। হারমোনিয়াম আর তবলাটা সামনের হস্টেলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। এমন সুযোগ ছাড়া যায় না। আমি শতর্সাপেক্ষে রাজি হলাম। শর্ত হল, অমিয়দাকে আমার সাথে প্রধান শিক্ষকের ঘরে গিয়ে বলতে হবে যে ওগুলো এনেছিও আমি, আর তাই অনুষ্ঠানে আসতে একটু দেরী হয়ে গেছে। অমিয়দা আমাকে খুবই ভালবাসতেন, আর তা ছাড়া তখন মাল বয়ে দেবার মত অন্য কেউ ওখানে ছিল না। তাই খানিকটা বাধ্য হয়েই উনি আমার প্রস্তাবে সায় দিলেন। মালপত্র রেখে আসার পর আমরা গুটি গুটি পায়ে প্রধান শিক্ষক অমল মহারাজের ঘরে ঢুকলাম। অমল দা ছিলেন একজন আমেরিকান। ইংরাজিতে আমেরিকান উচ্চারণে উনি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন। কিছুই বুঝলাম না। ইশারায় অমিয়দাকে বললাম উত্তর দিতে। তাকিয়ে দেখি ওনার অবস্থাও আমার মতই সঙ্গিন। প্রশ্নই বুঝিনি তো উত্তর দেব কি ? তবু আন্দাজ করলাম অনুষ্ঠানে দেরী করে আসার জন্য যখন এই তলব তখন প্রশ্নটা ওই সংক্রান্তই। সাহসে ভর করে আমার জানা সমস্ত ইংরাজি বিদ্যা উজাড় করে দিয়ে দেরী করে আসার কারণ ব্যাখ্যা করলাম। অমিয়দা শুধু সম্মতিসূচক মাথা নাড়তে থাকলেন। ইংরাজি শব্দ ব্যবহার করছি এটা বুঝতে পারলেও কি বলতে চাইছি তা কিছুই বুঝতে না পেরে অমল দা(হেড মাস্টার মশাই) ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে চেয়ে রইলেন। মুখে আমাদের মত ওনারও একটা অসহায় ভাব ফুটে উঠেছে। কে দণ্ডিত আর কে দণ্ডদাতা তখন বোঝার উপায় নেই। কিছুক্ষণ বাদে ইঙ্গিতে আমাদের চলে যেতে বলে উনিও বাঁচলেন আমরাও বাঁচলাম।

ছেলেবেলায় আমার ম্যাজিক শেখার এবং দেখাবার খুব শখ ছিল। পি সি সরকারের লেখা একটা ম্যাজিকের বইও যোগাড় করে ছিলাম। দড়ি কেটে আবার জোড়া লাগান, তাসের খেলার মতন কিছু প্রাথমিক স্তরের ম্যাজিক রপ্ত করেছিলাম। কিন্তু একাগ্রতার অভাবে আমার জীবনে অনেক কিছু না হওয়ার মত এটিও দীঘর্স্থায়ী হয়নি। এই ম্যাজিকের নেশায় যখন মত্ত তখন কোনভাবে হিপ্নোটাইস করার কিছু কলা কৌশল আয়ত্ত করেছিলাম। কলা কৌশল শিখলেই তো শুধু হবে না, সেটা প্রয়োগ করার জন্য লোক দরকার। অনেককে অনুরোধ করলাম, কিন্তু আমার মত এক আনাড়ি ম্যাজিশিয়ান সহপাঠীর কাছে নিজেকে সঁপে দিতে কেউ চাইল না । যে দু একজন রাজি হল তারা এত বেশি ডানপিটে বদমাইশ যে তাদের ওপর আমার আধশেখা কৌশল কাজ করার কোন সম্ভাবনা নেই। ফলে সেক্ষেত্রে আমি রাজি হলাম না। অবশেষে রমেনকে পেলাম। রমেন্দ্র নারায়ন হাজরা। খুব ঠান্ডা ভাল ছেলে। অনেক অনুনয়ের পর রাজি হল। ঘরের দরজা বন্ধ করে কাজ শুরু করলাম। রমেনের ওপর প্রভাব পড়ছে। রমেন ধীরে ধীরে একটা আচ্ছন্নের মত অবস্থায় চলে গেল। ঘুমন্ত মানুষ কথা বলে না। কিন্তু ওই অবস্থায় রমেনকে যা যা প্রশ্ন করলাম ও তার উত্তর দিল। তারপর ওকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনলাম। পরে দেখেছি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে কোন কসরতের দরকার পড়ত না। আস্তে ঠেলা দিলে বা জোরে কোন আওয়াজ হলেই ও স্বাভাবিক হয়ে যেত। স্বাভাবিক হওয়ার পর রমেন কিন্তু ওই অবস্থার কোন কথাই মনে করতে পারত না। পরে আমার আধশেখা হিপ্নোটিস্ম এর প্রক্রিয়াটি আরো অনেকের ওপর প্রয়োগ করে সফল হয়েছি। রমেনকে বহুবার মিডিয়াম করেছি। বহুরকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছি। সব না মিললেও কাকতালীয় ভাবে কিছু উত্তর মিলে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই খবরটা সহপাঠী তো বটেই এমনকি শিক্ষকদের মধ্যেও ছড়িয়ে গেল। তাঁদের অনুরোধে কারো কারো সামনে হিপ্নোটাইস করে দেখিয়েওছি। তখন একটা আত্মপ্রত্যয় এসে গেছে। একদিন আমার সহপাঠী অলোক তাকে হিপ্নোটাইস করার জন্য বায়না ধরল। অলোক ছিল একটু ছিটেল প্রকৃতির। ওর দৈনন্দিন অনেক ক্রিয়াকলাপ সাধারণের থেকে ভিন্ন ছিল। এমন এক ছেলেকে এসব করা উচিত হবে কিনা এনিয়ে ধন্দে থাকলেও তখন আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকায় রাজি হয়ে গেলাম। অলোককে একটা ফাঁকা ঘরে বসিয়ে আমার কেরামতি শুরু করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর আচ্ছন্ন ভাব এসে গেল। দু একটা প্রশ্ন করি, উত্তরও দেয়। এই পযর্ন্ত সব ঠিকঠাক চলছিল। গোল বাঁধল ওকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাবার সময়।

এ তুই আমার কি করলি ? আমার মাথা কিরকম করছে।‘ বলে গোঁ গোঁ শব্দ করতে থাকে। চোখ তার আধখোলা আর মনি ওপরের দিকে। খুব ভয় পেয়ে ওর মুখে চোখে জল ছিটিয়ে কিছুক্ষণ বাদে স্বাভাবিক করলাম। এমনটাতো কখনও হয়নি, এই প্রথম। আসলে ভুলটা আমারই। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় যার আচরণ অনেকটাই অস্বাভাবিক, কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক অবস্থায় তার মাত্রা আরো বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে ওইদিনের ঘটনার পর শত অনুরোধেও আর কোনদিন কাউকে হিপ্নোটাইস করার চেষ্টা করিনি। আমার ম্যাজিশিয়ান হওয়ার স্বপ্নেরও ওখানেই যবনিকা পড়ে।


স্কুলে সৌমেন্দু, সজল, পার্থর মত আরো কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। নচিকেতার মত এরাও বেশ কয়েকবার আমার রুমমেট ছিল। সৌমেন্দুর এক যমজ ভাই ছিল। সে আমাদের স্কুলে পড়ত না। কিন্তু রবিবার যখন ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য মার সাথে নরেন্দ্রপুরে আসত তখন কোন জন যে কে তা বোঝা খুব কঠিন হত। সৌমেন্দুর সাথে স্কুল থেকে পাশ করার পরেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। এর পুরো কৃতিত্ব সৌমেন্দুরই প্রাপ্য। পার্থও আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল। ও ফুটবল আর ক্রিকেট দুটোই বেশ ভাল খেলতে পারত। পদবি এক হওয়ায় আমরা একে অপরকে স্বগোত্র বলে ডাকতাম।


স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দু বছর পরমেশ্বর দা ( তখন ব্রহ্মচারী বিভুচৈতন্য পরে স্বামী উমানন্দ ) ছিলেন আমাদের প্রধান শিক্ষক। দক্ষ প্রশাসক এবং ভালো মানুষ। ছাত্রদের খুব ভালবাসতেন। ভালবাসলে কি হবে, একটু বেচাল দেখলে নিস্তার নেই। ধমক তো আছেই, কপাল খারাপ থাকলে পিঠেও কয়েক ঘা পড়ত। আমার কাছে মাঝে মাঝে পালামৌ এর গল্প শুনতেন। আমাদের স্কুল দু ভাগে হত। সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে এগারোটা আবার দুটো থেকে চারটে। স্কুলে নিয়মানুবতির্তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হত। তখন ব্যাপারটা একেবারেই পছন্দ না হলেও পরে বুঝেছি যে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিশু বা কিশোরের বেড়ে ওঠার সময় এর কোন বিকল্প নেই। ছাত্রদের সাথে অভিভাবকদের দেখা করার সময় ছিল রবিবার বিকেলবেলা। সহপাঠীদের মা-বাবারা নিয়ম করে প্রতি রবিবার এলেও অনেক দূরে থাকার জন্য আমার মা-বাবা আসতে পারতেন না। একদিন সকালবেলা স্কুলে সবে দ্বিতীয় ক্লাশ চলছে। এমন সময় খবর এল, আমাকে পরমেশ্বর দা ডাকছেন। প্রমাদ গুনলাম। চিন্তা করতে শুরু করলাম দু একদিনের মধ্যে কোন অকাজ করেছি কিনা। মনে পড়ল না। তবু আশ্বস্ত হতে পারলাম না। কারণ, আমাদের অকাজের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে সবকটা মনে নাও থাকতে পারে। স্কুলে ক্লাশ চলাকালিন শমন এসেছে, তার মানে অন্যায়ের মাত্রাটা বেশ বেশি। কি করেছি জানতে পারলে আত্মপক্ষ সমথর্নের একটা আগাম প্রস্তুতি নেওয়া যেত। যাক, যা কপালে আছে হবে। ভয়ে ভয়ে পরমেশ্বরদার ঘরে ঢুকলাম। ভেতরে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। বাবা বসে আছেন। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। হঠাৎই অফিসের কাজে কলকাতায় আসা, তাই সুযোগ করে আমার সাথে একটু দেখা করতে এসেছেন। তখন গরমকাল। ইতিমধ্যেই বাবাকে সরবত, মিষ্টি ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। অসময়ে এসেছেন, তাই বাবা একটু কুন্ঠিত ছিলেন। আমার সাথে খানিক গল্প করার পর আমাকে আবার ক্লাশে ফিরতে হবে এই ভেবে, পরমেশ্বরদার কাছে বিদায় নেবার কথা বলতেই উনি হৈ হৈ করে উঠলেন।

-- বলেন কি মশাই ! স্কুল তো রোজই আছে। কত দূর থেকে এসেছেন। ছেলের সাথে গল্প করুন। দুপুর বেলা আমার সাথে খাওয়া দাওয়া করে তারপর যাবেন। পরমেশ্বরদা বাবাকে দুপুরে পরমাত্মীয়র মত পাশে বসিয়ে খাইয়ে তারপর ছাড়লেন। পরমেশ্বরদার ওই আন্তরিকতার কথা কোনদিন ভুলতে পারব না। আসলে এঁরাই আদর্শ শিক্ষক এবং প্রশাসক। নিয়মানুবতির্তার প্রয়োজন সম্পর্কে যেমন এঁরা সচেতন, তেমনই প্রয়োজনে তার বাঁধনটাকে আলগা করতেও দ্বিধা করেন না। স্কুলে এইরকম আরও কিছু মহান ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়ছিল।

ক্লাশ পরিবতর্নের সাথে সাথে সাধারণত আমাদের হস্টেল বা ভবনেরও পরিবতর্ন হত। আবার কখনও একই হস্টেলে একাধিকবারও থেকেছি। অজিতদা (তখন ব্রহ্মচারী আনন্দচৈতন্য পরে স্বামী স্বতন্ত্রানন্দ ) কয়েকবার আমার হস্টেল ওয়াডের্ন ছিলেন। ছাত্রদের পড়াশোনা, খাওয়া দাওয়া, চরিত্র, স্বাস্থ্য ইত্যাদি সকল বিষয়েই তিনি নজর রাখতেন। স্কুলের ক্লাশে বেয়াদব ছাত্র সামলানো অনেক সহজ। কিন্তু হস্টেলে এতগুলো কিশোরের ব্যক্তিগত এবং দলগত বিভিন্ন ধারার প্রাত্যহিক শয়তানির সাথে এঁটে ওঠা খুব সহজ কাজ নয়। শয়তানির ভান্ডার ছিল হস্টেলগুলি। বয়সের অনেক তফাৎ হওয়া সত্ত্বেও অজিতদা আমাদের সাথে বন্ধুর মত মিশতেন। তাই আমাদের বেয়াদপি ঠান্ডা করার ওনার পদ্ধতি ছিল ভিন্ন ধরণের। মারধোর যে একেবারে দিতেন না তা নয়, তবে হাতে নাতে ধরতে পারলে বা কোন অভিযোগ পেলে, সেই ছাত্রকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে খানিক বুঝিয়ে খানিক বকে তাকে পথে আনার চেষ্টা করতেন। অনেক গহির্ত কাজ করে ধরা পড়া ছাত্রকেও তিনি এইভাবে শুধরেছেন। অন্য কেউ হলে হয়ত চরম শাস্তি দিয়ে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিত। স্কুল থেকে তাড়ানো ছাত্র বাড়ি এসে শুধরত না আরও বিগড়ে যেত জানি না, তবে অজিতদা ছাত্রদের যথার্থই মঙ্গল চাইতেন বলে এমন কোন পদক্ষেপ কখনও নেননি যাতে ছাত্রের চরম ক্ষতি হয়। একবার বিকেলবেলা টিফিনে আমাদের ছাতুমাখা দেওয়া হয়। আমার শৈশব বিহারে কাটায় ছাতুর সাথে পরিচয় ছিল। ভালো না লাগলেও অনিচ্ছায় খানিকটা খেয়ে বাকিটা ফেলে দিয়েছিলাম। আমার বন্ধুরা বিকেলে খেলাধুলা করে এসে চরম খিদের মধ্যে ছাতুর ডেলা টিফিন দেখে তেলেবেগুনে জ্বলেছিল। রাগ দেখিয়েছিল ছাতুর ডেলা খাবার ঘরের দেওয়ালে চারিদিকে ছুঁড়ে মেরে। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। খাবার ঘরের ছাদে, দেওয়ালে, চারিদিকে ছাতু ঝুলছে। ঘরে যেন নতুন ডেকরেশন হয়েছে। বেশ মজা পেয়েছিলাম। অজিতদা একটু পরে খাবার ঘরে এসে অসাধারণ দৃশ্যটা দেখেন। ঘরে তখন কেউ নেই। কাছাকাছির মধ্যে আমাকে দেখতে পান। জানতে চাইলেন যে কাজটা কে বা কারা করেছে। দু একজন বিভীষণ বাদ দিলে এসব ব্যাপারে আমাদের আচরণ ছিল পরাধীন ভারতে বিপ্লবীদের মত। যাই কর না কেন পেটের থেকে কথা বেরোবে না। আমি শতেক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পাশ কাটালাম। অজিতদা আমাকে ওনার ঘরে নিয়ে গেলেন। যে দেশে এত লোক খেতে পায় না সেখানে অপছন্দের খাবারের ওপর এই আক্রোশ দেখানো কত বড় অপরাধ তা বোঝালেন। প্রথমে আনন্দ পেলেও পরে উপলব্ধি করি যে কাজটা আমাদের উচিৎ হয়নি। এরপর অজিতদা আমাকে ও আমার এক সহপাঠীকে আগামী একমাসের টিফিন ঠিক করার দায়িত্ব দেন এবং বলেন--রোজ যদি রাজভোগও খাওয়াস তাহলেও দেখবি কেউ না কেউ তা অপছন্দ করছে। মনের আনন্দে এক সপ্তাহের টিফিনের মেনু তৈরি করা হল। নিজের এবং আরও অনেকের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে লুচি- তরকারি, ঘুগনি, ডিম পাউরুটি কলা ইত্যাদি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখলাম। আলাপ আলোচনা করে নিজেদের তৈরি মেনু, সবাই খুশি। কিছুদিন চলার পর একদিন কানে এল—কি যে তোরা একঘেয়ে খাবার ঠিক করেছিস! একটু অন্যরকম কিছু কর না। অজিতদাই ঠিক ছিলেন। সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। এটা বোঝাবার জন্যই বোধহয় ওই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উনি আমাদের যে কতটা ভালবাসতেন তা টের পেতাম শরীর খারাপ হলে। রাত জেগে পাশে বসে সেবা করে বাবা মার অভাব প্রায় বুঝতেই দিতেন না। স্কুল জীবনে অনেকের কাছে অনেক কিছু শিখেছি, পেয়েছি। আমার পরবর্তী জীবনেও যার অনেক প্রভাব পড়েছে। আবার আমাদের ঘোর অপছন্দের তালিকাতেও কিছু লোক ছিলেন। হয়ত তাঁরা মানুষ খারাপ ছিলেন না, কিন্তু যে কোন কারনেই হোক আমাদের মনের গভীরে ঢুকতে পারেননি।

আমাদের স্কুলের তদানিন্তন সেক্রেটারি ( আমরা ‘বড় মহারাজ’ বলতাম ) স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, আমার জীবনে দেখা সেরা ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন আমাদের সকলের অত্যন্ত শ্রদ্ধার মানুষ। তাঁর সাথে মিশলে, কথা বললে, তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেই হবে। তিলে তিলে আপন দক্ষতায় অতবড় প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তুলেছিলেন। আমার কাছে তিনি ছিলেন মহাপুরুষ। অত ব্যস্ততার মধ্যেও অতগুলো হস্টেলের হাজার হাজার ছাত্রদের খোঁজখবর নিতেন, কোন সমস্যা থাকলে শুনতেন এবং সত্ত্বর তা সমাধানের চেষ্টা করতেন। আমি হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করার পর স্কুলে মাকর্শীট আনতে গিয়েছি। কোন একটি রাজনৈতিক সংগঠন তখন বেশ কিছুদিন ধরে স্কুলের বাইরে স্কুল প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। বিক্ষোভের পদ্ধতি ও তার তীব্রতার কারণে স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে তখন পাকাপাকি ভাবে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। আমি যেদিন গিয়েছি সেদিন কয়েকটি মিলিটারি জিপও ছিল। একাই গিয়েছিলাম। স্কুলের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই বাঁ দিকে পড়বে সেন্ট্রাল অফিস। তিনতলা বাড়ি। দোতলার একপাশে সেক্রেটারির ঘর। মাকর্শীট নেওয়া হয়ে গেছে। গেটের কাছে এসে কিভাবে বাড়ি ফিরব ভাবছি। আমাকে একা দেখে একজন মিলিটারি অফিসার তাঁর গাড়িতে করে আমায় বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসার আশ্বাস দিলেন। এর থেকে ভাল কিছু ভাবাই যায় না। নিশ্চিন্তে বাড়ি পৌঁছে যাব আর পয়সাও লাগবে না। 

গাড়িতে উঠতে যাব এমন সময় কানে এল—শুকদেব, ওপরে এস।তাকিয়ে দেখি ওপরে বড় মহারাজ আমায় ডাকছেন। ওপরে যেতে তিনি বললেন যে পুলিশ বা মিলিটারির গাড়িতে যাওয়া নিরাপদ নয়। যে কোন সময় বিপদ হতে পারে। তাঁর নিদের্শে স্কুলের একজন কমর্চারি আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসেন। একজন প্রাক্তন ছাত্রের জন্য এই দরদ, এই উৎকণ্ঠাতে বোঝা যায় তিনি কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন।

 

স্কুলের দীর্ঘ ছয় সাত বছরের হস্টেল জীবনে অজর্ন করেছি অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। পেয়েছি স্বাবলম্বন, পরিচ্ছন্নতা, জনকল্যাণের মত পুঁথি বহির্ভূত অনেক শিক্ষা। নিজের অগোচরেই যার কিছুটা হয়ত আত্মস্থ করেছি। পেয়েছি সৌমেন্দু, পার্থ, নচিকেতা, সুমন, সজল, অরবিন্দের মত বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ সহপাঠীকে, যাদের পেয়ে বাবা-মাকে ছেড়ে থাকার কষ্ট অনেকটাই ভুলতে পেরেছি। বিভিন্ন স্থান ও পরিবেশ থেকে আসা বিভিন্ন ভাষা ভাষী ছাত্রের সম্মিলিত প্রয়াসে অহরহ সৃষ্টি হত বিভিন্ন ধারার শয়তানি। যার মধ্যে অপরাধের দিকটা নিজগুনে ক্ষমা করতে পারলে উপভোগ করার মত ছিল অনেক উপকরণ। এতগুলো শিশু ও কিশোর একসাথে থাকার ফলে বহু আনন্দঘন মুহূর্ত কাটিয়েছি যা একমাত্র হস্টেলেই সম্ভব। আর পেয়েছি কিছু গুরুজন, যাদের সান্নিধ্যে আমার জীবন ধন্য হয়েছে। আমাদের এই ছোট জীবনে পরিবারের প্রত্যকের জন্য কিছুটা করে সময় বরাদ্দ করা আছে। পরিবারের সদস্যদের আয়ুর তারতম্যে এই সময় কিছুটা বাড়ে বা কমে মাত্র। জীবন শুরু হয় বাবা মার ( যৌথ পরিবারে দাদু, ঠাকুমা, কাকা, কাকিমা ) হাত ধরে। যৌবনের একটা সময়ে আসে স্ত্রী, তারপর পুত্র কন্যা এবং জীবনের অপরাহ্ণে নাতি নাতনি। প্রত্যেকটি সঙ্গ সংসর্গের আছে আলাদা সুখ এবং আলাদা মুল্য। এর যে কোন একটি অংশের বিচ্ছেদে হারিয়ে যায় অনেক কিছু। যা হারাল তা জীবনে আর কোন ভাবেই ফিরে আসে না। হস্টেল যত ভালই হোক না কেন, একটি শিশুর কাছে তা তার বাবা মায়ের বিকল্প বা পরিপূরক হতে পারে না। আর সন্তান বিরহ কেড়ে নেয় বাবা মায়ের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। তাই অনন্যোপায় না হলে সন্তানের বাবা মা পরিবারের মাঝে বড় হওয়ার মধ্যে আছে অনেক বেশি আনন্দ , আছে পূণর্তা।     


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational