Nikhil Mitra Thakur

Action Classics

4  

Nikhil Mitra Thakur

Action Classics

কুসুমকুমারী দেবী

কুসুমকুমারী দেবী

3 mins
313


কুসুমকুম কুমারী


পরাধীন ভারতবর্ষের মেদিনীপুর শহরে রাস্তার ধারে একটি ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে থাকতেন স্বামী পুত্রহীনা অতি

দরিদ্র এক নারী কুসুমকুমারী দেবী। তিনি শীল-নোড়া

দিয়ে কলাই বেটে বড়ি তৈরি করে তা বাড়ি বাড়ি বিক্রি করে বেড়াতেন। এইভাবে তার যা রোজগার হতো তাতে কোনরকমে নিজের অন্নবস্ত্রের জোগাড় তিনি করতে পারতেন। অথচ এই কুসুমকুমারী দেবীই ছিলেন পাথরে অব্যক্ত সুন্দর স্থাপত্যের মতো অন্তরে অন্তরে সর্বশ্রেষ্ঠ এক দেশপ্রেমী নারী। ক্ষুদ্র সামর্থ্যের মধ্যেও তিনি তার অস্বীকৃত দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির রেখে গেছেন।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ভারতবর্ষে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশপ্রেমে উদ্বেলিত অবিভক্ত বাংলাকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কুচক্রী লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এই অসাধু প্রচেষ্টার অবিভক্ত বাংলা সহ সারা ভারতবর্ষ আন্দোলন মুখর হয়ে ওঠে। পরাধীন ভারতবর্ষে শুরু হয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিযুগ।

এই অগ্নিযুগের এক অন্যতম অগ্নিশিখা বিপ্লবী ছিলেন পিতৃমাতৃহীন চরম দুঃখী ক্ষুদিরাম বোস তিনি তখন মেদিনীপুরে বড়দিদির বাড়িতে থাকেন। গুপ্ত সমিতির একনিষ্ঠ সদস্য হয়ে সারাদিন দেশের হয়ে কাজ করে বেড়ান। বাড়ি ফিরতে তার এক প্রহর রাত হয়ে যায়। বড়দিদি তাই ক্ষুদিরাম ও পুত্র ললিতের খাবার ঢাকা দিয়ে রেখে শুয়ে পড়তেন।

এক রাতে তাদের টাকা দেওয়া খাবার বিড়ালে খেয়ে নেয়। খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ললিত মোহন জোর করে ক্ষুদিরামকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে।

কুসুমকুমারী দেবী তখন বড়ি তৈরির জন্য শিল-নোড়া দিয়ে কালো কলাই বাটছিলেন। দরজা তার খোলাই ছিল। তিনি দেখতে পেলেন এত রাতে দুটি ছেলে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন কেন তারা এত রাতে রাস্তায় এসেছে। ললিতমোহন যদিও জানতেন এত রাতে অভাবী কুসুমকুমারীর কাছে দু'মুঠো খাবার পাওয়ার কোন আশা নেই তবুও তাকে তাদের দুর্দশা কথা বললেন।

কুসুমকুমারী দেবী তাদেরকে সামান্য কিছু খাবার খাওয়ার জন্য বাড়ির ভেতরে আসতে বললেন। ললিত মোহন বাড়ির ভিতরে যেতে চাইলেও ক্ষুদিরাম একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলেন। না যাওয়ার কারণ ললিত মোহন জিজ্ঞেস করলে ক্ষুদিরাম কুসুমকুম কুমারী দেবীর হাতে বিদেশি কাচের চুড়িগুলি ইঙ্গিতে দেখিয়ে দেখাতে থাকেন।

বুদ্ধিমতী কুসুমকুমারী দেবী বুঝতে পারেন স্বদেশী ক্ষুদিরাম তার হাতে বিদেশি কাঁচের চুরি থাকার জন্য তার বাড়িতে খাবার গ্রহণ করবে না। তাই তিনি একটি লোহার জাঁতি নিয়ে এসে ক্ষুদিরামের সামনে সমস্ত কাচের চুরি নষ্ট করে দিলেন। এরপর ক্ষুদিরাম কুসুমকুমারী দেবীর বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন।

এই ঘটনায় কুসুমকুমারী দেবীর হৃদয় স্বদেশপ্রেমী আলোকিত হয়ে পড়ল। এরপর থেকে তিনি বাড়িতে বাড়িতে বড়ি বিক্রি করার অছিলায় বাড়ির মহিলাদের স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করে যেতে থাকেন। বড়ি বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জন করতেন তার সামান্য কিছু তার দৈনন্দিন খরচের জন্য রেখে বাকিটা স্বদেশী দের সংস্থায় দান করে দিতেন।

কুসুমকুমারী দেবীকে কোন বিপ্লবী স্বদেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষা দেননি। তিনি গুপ্ত সমিতির মতো কোন স্বদেশী সংগঠনের সদস্যা ছিলেন না। কোনদিন কোন খবরের কাগজ তার কথা লেখেনি। অথচ সেই সময় বাড়ির মহিলাদের বিপ্লবী কাজকর্ম সম্পর্কে সচেতন করা জরুরী ছিল। কেননা, এতে স্বাধীনতা আন্দোলন যেমন সর্বাত্মক হতে পারবে তেমনি বাড়ির মহিলারা সচেতন হলে বিশ্বাসঘাতকের সংখ্যা কমতে থাকবে। অসচেতন বাড়ির মহিলাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করা, স্বদেশী আন্দোলন সম্বন্ধে সচেতন করা, বিপ্লবীদের কাজকর্ম সম্বন্ধে সচেতন করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোন রকম স্বীকৃতির আশা ছাড়াই নিরলস ভাবে করে গেছেন কুসুমকুমারী দেবী।

ইতিহাসের পাতায় স্থান না পাওয়া এইরকম আরও বহু কুসুমকুমারী দেবী সেই সময় নিরলস ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের কাজ করে গেছেন। তাদের সেইসব অবদানের জোরেই আজ আমরা স্বাধীনতা ভোগ করে চলেছি। এই সব কুসুমকুমারী দেবীরা ছিলেন অগ্নিযুগের এক একজন অগ্নিকন্যা।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action