পুনর্ভবা পর্ব :-৭
পুনর্ভবা পর্ব :-৭
দেখতে দেখতে ভোর হয়ে গেল। সুলতা তবু একটু ঘুমিয়েছিলো। নিখিলেশ এর দুচোখ চেয়ে রয়েছে জানালা দিয়ে দূরের আকাশে। আকাশের রঙটা ফিকে হয়ে এসেছে। পূর্ব দিকে একটু একটু গোলাপী আভা ফুঁটে উঠেছে। দোয়েল পাখিটা সবার প্রথমে ঘুম ভাঙা স্বরে ডেকে উঠেছিল। একে একে বুলবুলি, ঘুঘু, বক, মাছরাঙা, কাক সকলেই সাড়া জাগাচ্ছে।
মাঝে মাঝেই মোরোগ সকলকে খুব জোরে ডেকে জানান দিচ্ছে যে ভোর হয়ে গেছে।
খুব শিগ্গির পট পরিবর্তন হচ্ছে আকাশের। বোঝা যাচ্ছে যে পৃথিবীটা সত্যিই দৌড়ে চলেছে। সময়ের সাথে পাল্লা দেওয়া যে কতটা কঠিন তা এই সকাল
হওয়া দেখলে খুব সহজেই হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব।
সাতটার মধ্যেই হয়ে গেল সব গোছগাছ। রাতে আটা মাখা ছিল। পুঁটির মাকে বলা ছিল আজ একটু ভোর ভোর আসতে। এসেই উনুনে আগুন দিয়ে দিয়েছিলো বলে সাত তাড়াতাড়ি জলখাবার এর পাট চুকলো।
খুকু তো প্রায় লাফাচ্ছে। এভাবে মাকে ছাড়া এত দূরে বেড়াতে যাওয়া ওর এই প্রথম। নিজেকে বেশ স্বাধীন বলে ভাবছে বোধ হয়। বাবাকে ওর একটুও ভয় নেই। মা ই যা একটু বকাবকি করে।
লালমোহনকে বলতে হয়নি কিছুই। ও গরুদুটোকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিয়েছে। গরু গুলোকে গাড়িতে জুতে একদম রেডি। ছই এর ভেতরে বেশ মোটা করে খড়ের গদি বিছানো আছে। তার ওপর একটা কাঁথা আর চাদর বিছানো। বীরগঞ্জ থেকে কুমারগঞ্জ কম দূর নয়। মাঝখানে দিনাজপুর হয়ে যেতে হবে।
অনুপমা দেবীর চোখ দুটো ছলোছলো। আর সুলতা তো হাপুস নয়নে কাঁদছে। সোনা অবাক হয়ে চেয়ে আছে। আর তাই দেখে খুকু জিজ্ঞেস করে উঠলো,
_______তোমরা কানছো কেন?
____না দিদিভাই কাঁদছি না। চলো, এগোও বাবার সাথে, আসছি আমি।
_____বৌমা, খুব সাবধানে থেকো। তোমার এখন চোখের জল ফেলতে নেই মা। আর তো মাস দেড়েক! তারপর তো আবার আসবো। তখন বেশ কিছুদিন থাকবো এখানে। মন খারাপ করে থেকো না। দু-তিন দিন পরেই ওদের বাপ বেটিকে পাঠিয়ে দেবো। চিন্তা করোনা।
______আসি গো সোনা মামনি, লক্ষ্মী হয়ে থেকো। একা বাইরে যেওনা কেমন! কত লোকের মা নেই! আর আমার তো তিন তিনটে মা। একটা পূর্ণিমা, একটা প্রতীমা আর একটা বুড়ি মা। বুড়ি মার কাছে দুটো দিন থেকেই আসি।
হেসে ফেলে সোনা। সবার মুখেই সেই হাসিটা যেন ছড়িয়ে যায়।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে গরু দুটোও অস্হির হয়ে উঠেছিলো। ওরা চড়ে বসার পর লালমোহনের ইশারা পেয়ে খুশিমনে হেলতে দুলতে দিনাজপুরের পথে পা বাড়ালো।