Bhaswati Ghosh

Tragedy

2  

Bhaswati Ghosh

Tragedy

সাধ[প্রথম পর্ব]

সাধ[প্রথম পর্ব]

4 mins
6.9K


ডাঁটাটা আয়েশ করে চিবুতে চিবুতে নলিনি একবার স্বামীর দিকে তাকালো।মহাদেব

জামাটা খুলে দড়িতে টাঙিয়ে দিল।"হাঁ গা বাজারে তো ইলিশ উঠে গেছে ,তা একদিন

এনোতো"।"হুম, আনবো"-সংক্ষেপে জবাব দেয় মহাদেব।মনে মনে ভাবে 400টাকা কিলো ইলিশ খাবেন কত শখ!কিন্তু মুখে কুলুপ।উফ্ সারাদিন কারখানার হাড়ভাঙা খাটুনি।তারপর বাড়িতে এই আনো ঐ আনো শুনে কান ঝালাপালা।দেহটা বিছানায় গড়িয়ে দেয় মহাদেব।নলিনি ভাতের থালাটা তুলে জায়গাটা পরিস্কার করে ঘরে এসে মেঝেয়

মাদুরটা পেতে একটা আসন নিয়ে বসে।মহাদেবের দিকে একবার তাকায়।"হাঁ গা এবারে তোমাদের বোনাস কত দেবে গো"?-জিজ্ঞাসা করে মহাদেবকে।মহাদেব চোখ না খুলেই বলে-"কিসের বোনাস?"

"কিসের আবার পূজার"-মুখ ঝামটা দিয়ে ওঠে নলিনি।পাশ ফিরে শুয়ে মহাদেব

বলে-"তার এখন অনেক দেরি।এখন কারখানা চলবে কদিন তার ঠিক নেই!"

"দেরি কিগো আর তো মোটে একমাস।বলছি কি এবার পূজোতে ঐ যে ঝিমলি সিরিয়ালের

শাড়িটা খুব উঠেছে, আমি কিন্তু ঐ শাড়ি কিনবো।"

মহাদেব জবাব দেয় না।নলিনি আবার আদুরে গলায় বলে-"কিগো দেবে

তো?"হুম-সংক্ষেপে জবাব দেয় মহাদেব।হঠাত্‍ করেই নলিনির মনে পড়ে যায় সকালের

কথাটা।পাশের পাড়ায় একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হয়েছে।শান্তির ছেলেকে ভর্তি

করেছে।নলিনিরও ইচ্ছা ওর ছেলেকে দেবে।মহাদেবকে বলে-"হাঁ গা দত্ত পাড়ায় যে

ইংলিশ মিডিয়ামটা হয়েছে ওখানে বাবুনকে দেব, বুঝলে পরের বছর থেকে।ইংলিশ মিডিয়াম এ না পড়লে পড়াশোনা ঠিক হয় না বুঝলে।এখন দিনকাল অনেক বদলে গেছে।আমাদের সময় আর নেই।"

মহাদেব এবার নলিনির দিকে ঘুরে বলে-"তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে?ঐ স্কুলের

খরচা জান?আর ওটা ইংলিশ মিডিয়াম নয়, বাংলা মিডিয়াম।"

নলিনি ঝাঁঝিয়ে ওঠে-"সে যা হোক শান্তি বলছিল খুব ভাল স্কুল।আর ছেলে মানুষ

করতে খরচা করতে হবে না?"মহাদেব রেগে উঠে বলে-"হ্যাঁ আমি রক্ত,কিডনি বেচে

বরং মানুষ করি।দুবেলা খাবার জোটাতে হাড়মাস হয়ে যাচ্ছে।ছেলেকে ভাল স্কুলে

দেবেন?কেন সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে না কেউ!ছেলে একবারে বিদ্যাসাগর।মাথায় ইঁট মারলে বুদ্ধি বেরোবে না।"-ওদের কথার মাঝেই বাইরে থেকে শ্রীমন্তের হাঁক শুনতে পায় মহাদেবের নাম ধরে।মহাদেব জামাটা গলিয়ে

বেরোতে গিয়ে কিছু একটা মনে পড়ায় থমকে দাঁড়ায়।-"নলিনি, মা খেয়েছে কিছু?আর

জ্বরটা বাড়েনিতো?"

নলিনি ঝাঁঝিয়ে ওঠে-"হ্যাঁ গুষ্টির পিন্ডি দিয়েই আমি খেতে বসেছিলাম।আর

সংসারের পিন্ডি তো করতে হবে ঘন্টায় ঘন্টায় ,তো জ্বর দেখবার সময় নেই।তুমি

ছুটি নিয়ে তো মাথার কাছে বসে থাকতে পারতে।"মহাদেব আর কথা বাড়ায় না।মনে

মনে ভাবে কোন কুক্ষণে নলিনির মামার পাল্লায় পড়েছিলাম।জীবনে মামার বাড়িতে

কিছু না পেয়ে লাথি ঝাঁটা খেয়ে মানুষ হয়ে এখন ওর ঘাড় ভেঙে সব সাধ উশুল

করতে চায়।কারখানার লেবার মহাদেবের ক্ষমতা কি নলিনি যেন বুঝেও বুঝতে চায়না।অসহ্য মেয়ে মানুষ একটা।

সন্ধ্যে বেলায় ফিরেই মহাদেবের মাথাটা গরম হয়ে ওঠে।ছেলেটা খাতার পাতা

ছিঁড়ে নৌকা বানাচ্ছে।আর নলিনি বাড়িতে নেই।অনুমানেই বুঝে নেয় টুম্পা দের

বাড়িতে সিরিয়াল দেখতে ছুটেছে।অনেকবার বারণ করেছে কারো বাড়িতে না যেতে।এক

কথা, তা হলে কিনে দাও বাড়িতে।এই বাজারে একটা টিভির দাম কত সেই হুঁশ আছে ওর!তাও বলেছে কটা দিন যাক, চেষ্টা চরিত্র করে ইনক্রিমেন্টে কিনে দেবে।বললে বলবে-আহা এখনকার সিনগুলো কি তখন রিপিট হবে?তারপর ফিরিস্তি শুরু হবে কোন সিরিয়াল কি ক্লাইম্যাক্স এ আটকে।কার বিয়েতে অন্য বর এসেছে,কোন নতুন সিনেমাটা জি বাংলা তে দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।ছেলেটার পিঠে গিয়ে একটা দুম করে কিল বসিয়ে দেয় মহাদেব।তখনি ঘরে ঢোকে নলিনি।ছেলেটা কিল খেয়ে ভ্যাঁ জুড়ে দিয়েছে।নলিনি তো দেখেই হাঁইমাঁই শুরু করে দেয়-"তুমি ওকে মারলে কেন

শুনি?"-নলিনি বলে।মহাদেব শ্লেষের স্বরে বলে-"ও মহারানি ফিরলেন, তা

ছেলেটাকে সন্ধ্যে বেলা পড়াতে বসাতে পার না ?খাতার পাতা ছিঁড়ে নষ্ট করছে।কি করব বল মাগনা তো খাতা পাই না।"

নলিনি হাঁইমাই করে ওঠে-"কত দামি একেবারে খাতা!দুটাকা দামি খাতা।দামি খাতা দেবার মুরোদ আছে?এইরকম পাতা বাচ্ছারা একটু আধটু নষ্ট করে।আর তুমিও তো পার পড়াতে বসাতে,চায়ের দোকানে আড্ডা না মারতে গিয়ে।সারাদিন গুষ্টির পিন্ডি চটকে ঐ তো দু ঘন্টা একটু যাই ওমনি বুক ফেটে গেল।"চেঁচামেচি শুনে মহাদেবের মা ঘরে এসে বাবুনকে কোলে নেন।নলিনি ঝাঁঝিয়ে ওঠে-"থাক আর আদ্যিখেতা দেখাতে হবে না।একটু বাইরে গেছি ছেলেটাকে একটু বাড়িতে কেউ দেখার ও থাকে না।এখন আবার আদ্যিখেতা ছেলেকে দেখে।"ওদের কথার মাঝেই টুম্পা ঘরে ঢোকে।-"কি গো বউদি এত চেঁচামেচি কিসের?"টুম্পাকে দেখে নলিনি নিজেকে সামলে নিয়ে বলে-"কিছু নয় গো তেমন।ছেলেটা পড়তে বসেছিল।তা খাতার পাতা ছিঁড়ে খালি নষ্ট করে তাই দু ঘা দিয়েছি।অমনি বাপ-ঠাকুমা রেরে করে এসেছে।

ওর বাবা আবার ছেলে অন্ত প্রাণ। আদরে বাঁদর করছে।যখন যা চাই তখন তাই।দামি দামি খাতা পেন।আমি বলি ছোটদের এত দামি খাতা দিও না নষ্ট করবে, শুনলে তো।আর ওর ঠাকুমাও তেমন।জ্বর মাথা তুলতে পারছে না তাও নাতিকে মেরেছি যেই ছুটে এসেছে।তুমি বলোতো বাচ্ছাদের শাসন করতে হবে না?"-টুম্পা হেসে মাথা নেড়ে বলে "তা ঠিক বউদি।এই আসনটার ফুলটা তুলে দাও তো একটু বউদি।এখন সময় হবে?"

"হ্যাঁ হ্যাঁ হবে, তুমি বস আমি খালি আটাটা মেখে দুটো রুটি সেঁকে নিই।এই বাবুন যা ঠাম্মার ঘরে, আর পড়তে হবে না।"-নলিনি বলে।বাবুন আর ওর ঠাম্মা বেরিয়ে গেল।মহাদেব অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে গেল।নলিনি আটা

নিয়ে মাখতে মাখতে বকবক করছে। শুনতে পেল-"ছেলেটার পড়াশোনায় জানো খুব মন।বুদ্ধিও বেশ।মাষ্টার মশাই তো ওর বাবাকে দেখতে পেলেই বলে ছেলেতো বেশ বুদ্ধিমান তোমার।একটু নজর রেখ।"

মহাদেবের মনে পড়ে দুদিন আগেই প্রণবমাষ্টার বাজারের মাঝখানে ছেলের ক্লাসটেস্টের রেজাল্ট শুনিয়ে গম্ভীর ভাবে বলেছেন ছেলেটাকে দেখ একটু,রেজাল্টের যা অবস্থা...বাইরে থেকে নলিনি শ্রীমন্তের ডাক শুনতে পেল।ভাতের হাঁড়িটা নামিয়ে বাইরে

গিয়ে বললো-"কি গো ঠাকুরপো কি বলছো?কারখানায় যাও নি?"

শ্রীমন্ত ফ্যাকাশে মুখে বলে-"হ্যাঁ গিয়েছিলাম।ওখান থেকেই আসছি।শোন বউদি একবার তোমায় হসপিটাল যেতে হবে।"

কেন গো?-ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে নলিনি।

"বলছি যেতে যেতে তার আগে চল"-শ্রীমন্ত বলে।[চলবে]


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy