Manasi Ganguli

Tragedy

4  

Manasi Ganguli

Tragedy

স্বপ্নভঙ্গ

স্বপ্নভঙ্গ

3 mins
341


স্বপ্নভঙ্গ


   আপনভোলা, সাদাসিধে, গানপাগল ছেলে দীপ। ছোট্ট থেকে গান ভালোবাসে। তিন বছর বয়স যখন ছেলেকে বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে, পাওয়া যাচ্ছে পাহাড়পাড়ার এক বাড়িতে তখন আমার ব্যবসা ছিল। ভিডিও বেরেয়ারে রেকর্ড ঘোরাচ্ছে আর গান করছে--- শিশু ছেলেটি হাঁ করে সেই দিকে লক্ষ্য করে ভয়ে বিস্ময়ে। পাকে বাজে তালে তালি হাতে তালি দিত গান টুকটাক। মাইকে গান প্রোফাইল একবারে আলোচনা করুন। নিজের মনে গেয়ে তো। গানের শব্দে শব্দে মুখ দিয়ে পথ আওয়াজ করতো, মনে হতো মিউজিক বাজছে।

    এর মধ্যে পুরানো যখন আটদিন, দীপের সেতার বাজানো শিখতে শুরু কর। বাড়ির মেয়ে আসতে শেখাতে---খুব পণ্ডিত মানুষ, ১৩টা ইনসট্রুমেট বাজাতে পারতেন। বাবার বন্ধুই সুবাদে বাড়িতে এসে শেখান। দিদির শিক্ষার সময়, দীপের মধ্যে থাকতে থাকতে। দিদি যখন বাড়ি থাক না, সেই দীপ বাজাতো নিখুঁত ভাবে। এইভাবে বাজেট খাটে বাজানা বাজাতে গিয়ে ছোট দীপ হাতে ফাকে সেতার মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে চুমার। দিদি বাড়ি ফিরে কেঁদে আকুল।

    নতুন সে এল দিদির জন্য আর দীপের ইচ্ছা এত পছন্দ বাবা একটি ছোট সেতার অন্তর্গত আমাদের জন্য। এত আনন্দ, এত দীপের বাধে না। সেই শুরু। সেই থেকে সে দীপার বাজিয়ে তৈরি বুঁদ হয়ে, বাজাবার সময় কোন দিকে জ্ঞান থাকে না। এর সাথে লেখাপড়াও ভিডিও। মনেয়ও দীপ খুব ভালো।

    তাই দিদির বিয়ে হয়, দীপের বিয়ে শেষ হয়। আমাদের সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ শব্দ বাবা বললেন, "গানবাজনা নিয়ে থাক। ধনী ঘরের ছেলে, বাবা বড় ব্যবসা, প্রয়োজন নেই। দীপ বাবার শান্তিপূর্ণ সঙ্গীতের সাধনায় নিজেকে ডুবিয়ে দিল। দুচোখে স্বপ্নদোষ সেতারবাদ স্বাগত। উপযুক্ত হলে পাত্রী খোঁজার সময়, সঙ্গীতের সাধক, সুন্দর পূজারী দীপ বলে, "সুন্দরী, গান ছাড়া বিয়ে করব না।" খুঁজেই মেয়ে খুঁজে বিয়ে দেওয়া হল।

    ভালই চল দু'জনে ভাব-ভালবাসায়। মাঝে মাঝে বাবার শারীরিক গঠন বাধ্য হতে লাগলো। আপনি আর ব্যবসা দেখতে না পারেন। আর দীপ, ব্যবসার শিক্ষার্থী না, বোঝে না। আপনারই অংশের উপর ভরসা। বাবা মারা মারামান কোথায় কী আছে দীপ শিখা না। পৈত্রিক বাড়ী, জমিজমা যদিও আছে, তবু এর আরকথা জানা না বেচারা দীপ।

   এরই দীপের স্বপ্ন দেখতে সত্যি হতে চলল। বিদেশ থেকে ডাক এলোকার ইউনিভার্সের সেতার শিক্ষক হিসাবে কাজ করার জন্য। ১০ বছরের কন্ট্রাক্ট। দীপ আনন্দে আত্মহারা। সীমা বলেঠ অ্যাপয়র খবর। কিন্তু না, স্বপ্নপূরণ এত সহজে না। উপযুক্ত সময়ে ভিসা না পাওয়া দীপের বিদেশ নেওয়া হয়। এই সুযোগ দীপকে দিয়েছিলেন, তিনি একজন ওয়ার্ল্ড ফেমাস ড্রাম বাজে। তিনি স্বপ্নে হন, কারণ সেখানে দীপের সোলো প্লে রাখা হয়েছিল। শহর পথ রাস্তা ইলেকট্রনিক্স বোর্ডে দীপের ছবি ও নাম ঘুরছিল সদাসর্বদা। দীপ যেতে না পারায় তাঁকে অনেক বিড়ম্বনা ও লোকসানের মধ্যে পাওয়া যায়।

   দীপের স্বপ্ন চুরচুর করে ভেঙ্গে গভীর তাসের ঘরের মত। বিদেশ নেওয়া আর হল না। সংখ্যা অঙ্কের ক্ষতিও হল, যেটা দীপের বিশেষ প্রয়োজন ছিল তখন। দীপের মুখের দিকে তাকানো যায় না। তার স্ত্রীও তাকে প্রায় ছেড়ে দেওয়ার মতই। একই বাড়িতে থেকে স্বামীর প্রতি অবহেলা, ঘৃণা তার প্রতীক। দীপ আরো ভেঙ্গে পড়ে। ভাগ্য তাকে সাথ দেয় না। তার থেকে কম যোগ্যতার লোকও এই লাইনে সুপ্রতিষ্ঠিত, নিজের হাতের বাজেনা কত খবর। দীপ ভেঙ্গে পড়ে। এই সময় দিদি তার দাঁড়ায়। তাকে মনে করে শক্তি জোগায়। দিদির ভালোবাসার চেষ্টা, সান্ত্বনায় দীপ আবার বাধা দাঁড়াবার যদি স্বপ্ন সফল করতে পারে, তার আজীবন লালিত স্বপ্ন।

   


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy