আমার নিজস্ব!
আমার নিজস্ব!
অষ্টমঙ্গলার পর যখন আবার এ সংসারে ফিরেছি,
কিছু বই-খাতা, ইনস্ট্রুমেন্ট বক্সে করে কিছু কলম,
একটা বড় সড় নিজের চুলের খোপা, হারমোনিয়াম,
আর একটি পুরোনো প্লাস্টিকের স্কেল নিয়ে ফিরেছি।
মনে হয়েছিলো এগুলো আমার একান্তই নিজস্ব !
মাথার উঠে যাওয়া চুলে থুতু ছিটিয়ে,
গোল্লা করে পাকিয়ে ফেলতে পারিনা এখনও,
হয়তো কুশন বানাই, অথবা স্টিলের টুকিটাকি নিই।
হারমোনিয়াম এর বাক্সটা অবশ্য বন্ধই পড়ে থাকে,
বেশী চেঁচালে যে আজকাল গলা ব্যাথা হয়।
কলম গুলো হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু সেই প্লাস্টিকের স্কেলটা এখনও অক্ষত আছে।
খুব মনে আছে, আমি তখন ক্লাস ফোর,
ছোটোমাসি বিয়ে হয়ে গেলো শ্বশুর ঘর।
মেসোমশাই মোটা সোটা, তাঁর ইয়া গোঁফের বাহার,
রঙটা শ্যামলা হলেও, হাসিটা তার খুবই সুন্দর।
হাসলেই বোঝা যায় যে তার দরাজ অন্তর!
পড়াশোনায় বি.এ পাশ, কিন্তু তিনি তবু দোকানদার,
ছা-পোষা কেরানীর চেয়ে ভালো চলে সংসার।
সম্পর্ক ভালো ছিলো মুদী ও স্টেশনারী কোম্পানির,
দিতো তারা মাঝে মাঝেই নানা উপহার।
মাসির দেওয়া নুপুর পড়ে ঝুমঝুমিয়ে করি ঘোরাঘুরি,
মেসোর গিফ্ট থেকে সেই স্কেল পেয়ে আমি কি খুশী!
কি যে আনন্দ! আহা! মরি মরি!
কাউকেই টাকা খরচ করে কিনতে হয়নি যে!
স্কেল তো আমার আছে, তবু কেন জানি না,
এই স্কেলটার একটু বেশী বেশীই খাতির।
"সুদ মিষ্টি" কথাটা শুনিনি, তখন ছোটো ছিলাম যে !
এইরকম ঘটনা
যে কখনও হতে পারে,
এ ব্যপারটা তখনও আমার ধারণার বাইরে।
আসলে কানে আসেনি তখনও ওষুধ কোম্পানির, নানান কায়দা আর কথা তাদের রিপ্রেজেন্টৈটিভের।
অসুখে ভূগে মেসো তো কবেই চলে গেছে পরপারে !
খুব বেশী ব্যবহার করিনি বলেই হয়তো,
স্কেলটা ভাঙেনি, এখনও বাড়িতে রয়েছে ।
কোম্পানিটা হয়তো উঠে গেছে, তবু ধরে রেখেছে, কিছু কথা ওর ঐ ছোট্টো আধারে।