চাং ফু সুও
চাং ফু সুও
শিক্ষকরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। উচ্চমানের শিক্ষকের অভাব হলে শিক্ষার্থীরা গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। শিক্ষকতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেশাগুলোর অন্যতম। কারণ, তাদের মর্যাদা ও মানের সঙ্গে দেশের নাগরিকদের গুণগত মানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। শিক্ষকদেরকে শিক্ষার্থীদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে হবে।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনীতি ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এর শিক্ষাব্যবস্থা ও সেরা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা উল্লেখযোগ্য। তাই বলা যায়, শিক্ষা একটি দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কিত।
বর্তমানে চীনের গ্রামাঞ্চলে পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, বিভিন্ন এলাকার সম্পদের কার্যকর ব্যবহার এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা এ পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কৃষি শিল্পের সবুজ ও গুণগত মান উন্নয়নের ওপর এখন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চীনের প্রকৌশল একাডেমির শিক্ষাবিদ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চাং ফু সুও এমন কাজে জড়িত সেরা গবেষকদের অন্যতম। তিনি দীর্ঘকাল ধরে চীনের গ্রামাঞ্চলের উৎপাদন-কাজ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। সবুজ কৃষিশিল্পের উন্নয়নে তিনি অবদান রেখে চলেছেন। তাঁর দল সবুজ কৃষি উৎপাদনের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে এবং চীনের সবুজ উন্নয়ন ও গ্রামাঞ্চলের পুনরুজ্জীবনে চমৎকার অবদান রেখেছে।
আমরা জানি, কৃষি খাতের গবেষণাকাজ আর উৎপাদন-কাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা ও উৎপাদনের অসঙ্গতি, সেরা ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের অভাব, কৃষিপ্রযুক্তির কর্মীদের গ্রামের জীবন সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, ইত্যাদি সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে শিক্ষক চাং ফু সুও বছরে ৩০০ দিনেরও বেশি সময় গ্রামে কাটান। তিনি গবেষক ও শিক্ষার্থীদের দল নিয়ে গ্রামের উত্পাদনসম্পর্কিত বিস্তারিত গবেষণা ও পর্যবেক্ষণকাজ করেন। সরকার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষকদের নিয়ে, বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতা ও সংমিশ্রণে, উৎপাদনকাজের সমস্যা সমাধান করতে চেষ্টা করেন তিনি এবং একটি বহুমুখী পরিষেবা-প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গ্রামবাসীদের সাথে উত্পাদন-প্রক্রিয়াসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রযুক্তির নব্যতাপ্রবর্তনের মাধ্যমে কৃষিশিল্পের দ্রুত উন্নয়ন বয়ে আনেন।
অধ্যাপক চাং ও তাঁর কর্মদল চীনের কৃষি প্রযুক্তি পরিষদ, বেইজিং পৌর সরকার ও বিভিন্ন শহরের ৬৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা করেছে; বিভিন্ন এলাকায় মোট ২৯১টি ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রাঙ্গণ’ নির্মাণ করেছে; এবং খাদ্যশস্য, শাকসবজি ও ফলসহ ৬০ ধরনের কৃষিজাত পণ্য নিয়ে গবেষণা করেছে। এসবের উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।
সবুজ উৎপাদন-প্রযুক্তির উদ্ভাবন চীনের সবুজ কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। অধ্যাপক চাং চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের গবেষকদলের সঙ্গে যোগাযোগ করে, রাষ্ট্রীয় কৃষি উন্নয়ন গবেষণাগার গঠন করেছেন এবং কৃষির সম্পূর্ণ উত্পাদন চেইন বিশ্লেষণ করে, কৃষির সবুজ উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন। চীনের হ্যপেই প্রদেশের ছুচৌ জেলায় একটি কৃষিঘাঁটি নির্মিত হয়েছে। এর সঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। অধ্যাপক চাংয়ের নেতৃত্বে বহুমুখী কৃষির সেরা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ কোর্সও চালু হয়েছে, যাতে কৃষির সবুজ উন্নয়নের তত্ত্ব ও পদ্ধতি নতুন করে অনুসন্ধান করা যায় এবং চীনের কৃষির সবুজ উন্নয়ন তত্ত্বও বিশ্বের সামনে তুলে ধরা যায়।
গত ১০ বছরে চীনের সবুজ উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগিয়ে, অধ্যাপক চাং ১১৫২ জন গবেষক, ৬৫ হাজারেরও বেশি কৃষিকর্মী, আর ১.৩ লাখেরও বেশি কৃষিসংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে নিয়ে চীনের ৪৫২টি জেলায় সবুজ উত্পাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণকাজ করেছেন। তাদের যৌথ প্রয়াসে সংশ্লিষ্ট খাদ্যশস্যের উত্পাদনের পরিমাণ ৩.৩ কোটি টনে দাঁড়িয়েছে এবং নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার ১২ লাখ টন হ্রাস পেয়েছে।
২০১৮ সালের মে মাসে অধ্যাপক চাং তাঁর গবেষকদল নিয়ে বেইজিংয়ের উপকন্ঠ এলাকায় ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রাঙ্গণ’ নির্মাণ করেন। রাজধানীর উপকন্ঠ এলাকার গ্রামবাসীদের সবুজ কৃষি-প্রযুক্তিসম্পর্কিত প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ পর্যন্ত বেইজিংয়ের উপকন্ঠ এলাকায় মোট ৫০টি ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রাঙ্গণ’ নির্মিত হয়েছে, যা ১৯২টি গ্রামের ১৭০০টিরও বেশি দরিদ্র পরিবারের আর্থিক আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা দিয়েছে। এভাবে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামের মানুষের জন্য আরও সুন্দর জীবন গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আশা করেন অধ্যাপক চাং।
তথ্য : আন্তর্জাল, বিভিন্ন পত্রিকা।