Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Mysterious Girl "মিশু"

Tragedy Others

3.5  

Mysterious Girl "মিশু"

Tragedy Others

মোহ

মোহ

4 mins
720


"ঋদ্ধি তোর এই পাগলামো বন্ধ কর এবার, ভুত টুত কিছু হয় না" আশা বিরক্তি নিয়ে তাকালো ঋদ্ধিমানের দিকে। ঋদ্ধিমান কলেজের ছাত্র, বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হলেও ওর মন ও মস্তিষ্ক সারাক্ষণ ভূতের সন্ধান করে চলেছে। বহুবার লোকমুখে প্রচলিত ভৌতিক স্থান গুলো ঘুরে ঘুরে ভূত খোঁজার চেষ্টা করেছে তবে কোনো বারেই কিছু পায়নি। এবার ক্রিসমাসের ছুটিতে একটা নতুন জায়গায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঋদ্ধিমান এবং সঙ্গী করতে চাইছে ছোটো বেলার বন্ধু আশা ও নবীনকে। নবীন যেতে রাজি হলেও আশা বেঁকে বসেছে, সে একেবারে ভূতে বিশ্বাসী নয়।

নবীন বলে উঠল, "আরে চল না, ভূত না পেলেও রাজবাড়ীতে ঘোরা তো হবে। পুরোনো আমলের বাড়ি, বেশ ভালোই লাগবে"।

"আমি থাকা খাওয়া সবের ব্যবস্থা করে ফেলেছি, চল আশা প্লিজ" ঋদ্ধিমানের অনুরোধ ও নবীনের জেদের কাছে হার মেনে আশা রাজি হলো যেতে।


জায়গাটা খুব একটা দূরে নয়, শহরের শেষ প্রান্তের পুরোনো এক রাজবাড়ী। চুন সুড়কি খসে পড়েছে দেওয়াল থেকে, রঙ উঠে একেবারে ফ্যাকাশে অবস্থা। ঘর গুলো বড় বড় হলেও বন্ধ পড়ে থাকার দরুন একেবারে ভ্যাপসা গন্ধে ভরে রয়েছে। আশা নাক মুখ সিঁটকে বলল, "ইসস এখানে থাকা যাবে না"।

"থাকা যাবে। এসেছি যখন তখন দু'টো দিন তো থাকবো" নবীন এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। আর ঋদ্ধিমান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো যে এই বাড়ির কোথায় ভুত থাকতে পারে! বাড়ির বড় দালান থেকে চিলেকোঠা সর্বত্র ঘুরে নিয়েছে ঋদ্ধিমান। সন্ধ্যা হতেই পাশে থাকা এক হোটেল থেকে খাবার এনে রেখেছে নবীন। তার সঙ্গে হোটেলের স্টাফদের থেকে শুনে আসা গল্পটাও বলতে শুরু করেছে, "রাতে নাকি এখানে মেয়ের চিৎকার শোনা যায়, স্টাফরা বহুবার শুনেছে। গভীর রাতে আবার হাসে মেয়েটা"।

"চুপ করতো, যত আলতু ফালতু কথা" আশা ধমকে চুপ করিয়ে দিল। তিন বন্ধু বসে গল্প আড্ডায় সময় কাটালো বেশ খানিকক্ষণ।

এরপর রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ল যে যার মতো। আশা খাটে শুলেও নবীন ও ঋদ্ধিমান মেঝেতে বিছানা করে শুয়েছে। এখানে অনেক ঘর থাকলেও এই একটা ঘরেই থাকার অনুমতি পাওয়া গেছে। নবীন ঘুমিয়ে পড়লেও ঋদ্ধিমান এখনো জেগে আছে। নিজের কানে শুনতে চায় হাসির আওয়াজ, যেটা হোটেলের স্টাফরা বলেছিল।

কয়েক মূহুর্তের মধ্যেই একটা মৃদু হাসির শব্দ কানে আসতে ঋদ্ধিমান ধরফড়িয়ে উঠে বসল। ভাবতে লাগল, "আমি বেশি ভাবছি বোধহয়, কান বাজছে আমার"।

কিন্তু শব্দটা স্পষ্ট হতে লাগলো ধীরে ধীরে। ঋদ্ধিমান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে চমকে উঠল। আশা বিছানায় বসে খিলখিলিয়ে হেসে চলেছে।

"আ...শা....." কোনো রকমে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল ঋদ্ধিমান। কাঁপা কাঁপা হাতে কাঁধ ঝাঁকিয়ে ডাকার চেষ্টা করলো নবীনকে।

"উঠবে না, কেউ শুনবে না। তুই তো দেখতে চেয়েছিলি তাই শুধু তুই দেখ" গলার স্বরটা অচেনা মনে হলো ঋদ্ধিমানের। কই আশার তো গলার আওয়াজ এমন নয়?

ঋদ্ধিমান উঠে দাঁড়ালো, ভয়ে ওর বুক কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা গলায় ঋদ্ধিমান বলল, "কে তুমি?"

"আমি এই বাড়ির একমাত্র অধিকারীনী। আমি রাজকন্যা ইন্দ্রাবতী" গলার স্বর ও বলার ধরনের গম্ভীরতায় যেন রাজকীয়তা অনুভব করল ঋদ্ধিমান।

"তুমি ভূত!!" ভীত কন্ঠে প্রশ্ন করল ঋদ্ধিমান। একথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল আশা। হাসি থামিয়ে বললো, "হ্যাঁ তাই, আমি অতৃপ্ত আত্মা"।

"মানে টা কি! তুমি কি আমাদের মেরে ফেলবে?" ঋদ্ধিমান পিছিয়ে গেল কয়েক পা।

"না, আমি কারোর ক্ষতি করি না। আমি তো আমার রাজত্ব সামলাচ্ছি, আমার এই বাড়ি আগলে রাখছি" আশা বিছানা ছেড়ে নেমে এলো। ঋদ্ধিমান খেয়াল করলো ওর পা মাটিতে নেই, শূন্যে ভাসছে।

ঋদ্ধিমান ঢোক গিলে বলল, "আমি একটা প্রশ্ন করি?"

আশা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। ঋদ্ধিমান যেন স্বস্তি অনুভব করলো, আর বলল, "তুমি ভূত হলে কিভাবে?"

"আত্মহত্যা করে" এ কথা শুনে ঋদ্ধিমান চমকে উঠল, "আত্মহত্যা?"

"হ্যাঁ, আমি নিজে নিজেকে খুন করেছি। ছিন্নভিন্ন করেছি আমার শরীর। তবে তাও আমি মুক্তি পাইনি, থেকে গেছি এই বাড়িতে। আমি যে মোহ কাটিয়ে উঠতে পারিনি" আশা ওরফে ইন্দ্রাবতীর কথার মাথা মুন্ডু বুঝতে পারলো না ঋদ্ধিমান। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

হতাশাগ্ৰস্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইন্দ্রাবতী বলল, "স্মৃতিহত্যা করতে পারলে কেউ আত্মহত্যা করতো না।"

"কি হয়েছিল?" - ঋদ্ধিমান

"আমার স্বামী ও তার পরিবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল আমার সঙ্গে। অর্থের লোভে আমাকে বিয়ে করেছিল, ভালোবাসার নাটক করেছিল। যেদিন এই মিথ্যের পর্দা সরে গেল, দেখলাম সত্য কত ভয়ঙ্কর!! আমার স্বামীর অন্য একজনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক, এমনকি পরিবারের সকলে সেটা জেনেও আমাকে জানায়নি। সহ্য করতে পারিনি এসব, শেষ করে ফেলেছিলাম নিজেকে।"

"কত দিন আছো তুমি এই বাড়িতে?" - ঋদ্ধিমান

"আড়াইশো বছরের বেশি" বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইন্দ্রাবতী।

ঋদ্ধিমানের খারাপ লাগলো, বলল, "তুমি মুক্তি পাবে না?"

"চাই না আমার মুক্তি, এই বাড়ি এই সংসার সব আমার আপন। আমি কখনো এগুলো ছেড়ে যাবো না। সব আমার....." বলে হাসতে হাসতে আশা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ঋদ্ধিমান ছুটে গিয়ে ধরলো আশাকে। কোলে তুলে বিছানায় শোয়ালো।

ঋদ্ধিমানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, একটা হিম শীতল হাওয়া বয়ে গেল ওর কানের পাশ থেকে। মৃদু হেসে কেউ বলল, "এই কথা আর কেউ জানবে না তুমি ছাড়া। মনে থাকবে!"

ঋদ্ধিমান আশেপাশে তাকালো দেখলো কেউ নেই। বসে থাকতে থাকতে দুচোখে ঘুম নেমে এলো। সকালে ঋদ্ধিমানের ঘুম ভাঙলো আশা ও নবীনের ডাকে।

"তুই বসে বসে ঘুমাচ্ছিস কেন!" আশা চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করল। ঋদ্ধিমান কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে রইলো। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "চল ফিরবো"।

"আজই?" - নবীন

"এখুনি" ঋদ্ধিমান কথাটা বলে ব্যাগ গুছিয়ে কাঁধে তুলে নিল। আশা ও নবীন অবাক হলেও কিছু জিজ্ঞেস করে উত্তর পায়নি। রাজবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে ঋদ্ধিমান একবার পিছন ফিরে তাকালো, "এত কষ্ট পেয়ে মৃত্যু বরণ করলে, তাও কেন আটকে রয়ে গেলে এখানে! সত্যি কি মোহ আমাদের মৃত্যুর পরেও আটকে রাখে? ভগবান করুক তুমি মুক্তি পাও, পরজন্ম বলে যদি কিছু হয় সেটায় তুমি সুখী থাকো"।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy