মনোরমাদি
মনোরমাদি
মনোরমাদি ছিলেন আমাদের পাঠভবন স্কুলের হিন্দি শিক্ষিকা। তিন ছিলেন ইউ, পি বাসিন্দ। । আমাদের সময় পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হিন্দি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ছিল । উনি খুব সুন্দর আর সরলভাবে আমাদের হিন্দি ভাষা শেখাতেন । আজও মনে পড়ে সেই ক্লাসের অনেক ঘটনা। আমাদের তিনি হিন্দি কবিতা মুখস্ত করে আসতে বলতেন আর ক্লাসে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করার জন্যও বলতেন। একবার আমরা একটি হিন্দি কবিতা মুখস্ত করে এসে ক্লাসে আবৃত্তি করছিলাম। কবিতাটির নাম ছিল কোয়েল । কবিতাটি ছিল এইরকম
কালি কালি কু কু করতি
জো হাই ডালি ডালি ফিরতি।
আমাদের সঙ্গে একটি ছেলে পড়তো। কথা বলার সময় ওর একটু মুখে লাগত। ও যখন কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলো তখন সারা ক্লাস হেসে কুটিপাটি। ও বলতে লাগলো
তালি তালি তুতু তরতি
জো হায় দালি দালি পিরতি।
মনোরমাদি আমাদের সবাইকে চুপ করে বসতে
বললেন। আমাদের বোঝালেন কারোর কোন দুর্বলতা নিয়ে হাসা উচিত নয়। বরং ওকে উৎসাহিত করার জন্য আমাদের শেখালেন।
এই যে একটি শিক্ষা পেলাম, এরপর থেকে আর এরকম ভুল কোনদিনও আমার জীবনে হয়নি।
আরেক দিনের ঘটনা। আমরা অনেকদিন ট্রেনে বসিনি। আমরা মনরোমাদির সাথে গল্পস্বল্প করে বললাম," চলুন না আমরা পারুলডাঙ্গা স্টেশনে ট্রেনে বসবো । সেখান থেকে ট্রেনে চেপে আবার বোলপুর স্টেশনে এসে নামব।' তিনি আমাদের মন বুঝে আমাদের কথায় হ্যাঁ করলেন। তারপর সেই নির্দিষ্ট দিনে আমরা সবাই পারুল ডাঙ্গা স্টেশনে গিয়ে পৌঁছলাম। ট্রেনে চেপে দুধারে ধান ক্ষেত , খোলা মাঠ, সারি সারি গাছপালা দেখতে দেখতে বোলপুর স্টেশনে এসে নামলাম। সেদিনের ট্রেনে বসার আনন্দ আজও মনে পড়ে। সেদিন আমরা ছিলাম পাঞ্চ বন্ধু আর সঙ্গে আমাদের প্রিয় মনোরমাদি। বোলপুর স্টেশন থেকে রিকশায় বসে সোজা মনোরমাদির কোয়াটারে এসে হাজির হলাম। সেখানে সবাই মিলে রান্না করলাম খিচুড়ি আর চাটনি। সেদিন আমাদের কাচা হাতের রান্না আর স্নেহ মমতা আনন্দের মসলা মেশানো খিচুড়ি আর চাটনির স্বাদ আজও ভুলতে পারিনি। এইরকম ভাবেই আমরা ছিলাম আমাদের শিক্ষিকাদের সাথে স্নেহ মমতা আর ভালোবাসা শ্রদ্ধার বন্ধনে বাঁধা। জানিনা আজ উনি কেমন আছেন, কোথায় আছেন ,বেঁচে আছেন কি না , কিছুই জানিনা । কিন্তু আমার স্মৃতিতে তিনি সদা সর্বদাই অমর হয়ে থাকবেন । আপনি যেখানেই থাকুন আমাদের সবাইকে আশীর্বাদ করুন। আপনার কাছ থেকে যা পেয়েছি ,যতটুকু পেয়েছি তাই আমার কাছে
অমূল্য নিধি।