উপহার
উপহার
আজ অরুণিমার জন্মদিন। গ্ৰাম প্রধানের একমাত্র কন্যা সে, তাই তো জন্মদিনে এলাহী আয়োজন করা হয়েছে। অরুনিমা সকাল থেকে খুব আনন্দে বাড়ি জুড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সবে বছর বারোর বাচ্চা মেয়ে সে, তাই তো আনন্দ ধরছে না।
গ্ৰাম প্রধান বিনোদ বাবু মেয়ের জন্মদিনের নানান আয়োজনে ব্যস্ত। দুপুরেই অনুষ্ঠান হবে, গ্ৰামাঞ্চলে রাতে লোকজন ডেকে খাওয়ানো বা বড় অনুষ্ঠান ঠিক করা যায় না; বিয়ে হলে তবু হতো, কিন্তু জন্মদিন সম্ভব নয়।
দুপুরের রান্না বান্না সব হয়ে গেছে। অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসেছে, তাদের আপ্যায়ন জানাতে ব্যস্ত বাড়ির সকলে।
অরুণিমা নিজের স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত, তারাও এসেছে আজ নিমন্ত্রিত হয়ে। সকলে ওকে উপহার দিচ্ছে। রঙ বাহারি মোড়কে মোড়া উপহার গুলো দেখে অরুণিমা আনন্দ উত্তেজনায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। এইসবের মাঝে দরজার এক কোণে জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিনা। সেও অরুণিমার সাথে একই ক্লাসে পড়ে, আর সেই দরুণ নিমন্ত্রণ পেয়েছে। নয়তো সামান্য ভাগ চাষীর মেয়ে কি গ্ৰাম প্রধানের বাড়িতে নিমন্ত্রণ পেত!!
বন্ধুদের সঙ্গে হৈ হুল্লোড়ের মাঝে মিনার দিকে নজর পড়ল অরুণিমার। হাত নেড়ে ডাকল, "মিনা তুই ওখানে দাঁড়িয়ে কেন, এখানে আয়"।
মিনা গুটি গুটি পায়ে হেঁটে সবার মাঝে দাঁড়ালো। ওর হাত দু'টো জামার পিছনে লুকিয়ে রেখেছে দেখে স্নিগ্ধা বলে উঠল, "ওই কি লুকাচ্ছিস হাতের পিছনে? দেখা...."
মিনা কুঁকড়ে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। এই দেখে ওর ক্লাসের সহপাঠীরা ওকে ঘিরে ধরে হাতে কি আছে তা দেখার জন্য তৎপর হয়ে উঠল। বাচ্চাদের মাঝে গোল দেখে বড়রা এসে উপস্থিত হলো।
বিনোদ বাবু আগে বললেন, "কি হয়েছে এখানে?"
স্নিগ্ধা বলল, "দেখো না কাকু ও হাতে কিছু লুকাচ্ছে, দেখাচ্ছে না"।
ইতিমধ্যে একজন কেউ বলল, "কিছু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে নাকি এই মেয়ে!!"
পাশ থেকে আবার কেউ বলল, "হতে পারে, ওর বাপ তো চাষী। গরীব"।
অরুণিমা এসব কথায় তেমন গ্ৰাহ্য না করে মিনাকে বলল, "মিনা কি আছে তোর হাতে, সবাইকে দেখা। দেখ কিভাবে বলছে ওরা"।
মিনা নিজের হাতটা অরুণিমার সামনে নিয়ে এসে ধীমে স্বরে বলল, "এটা তোর জন্য এনেছি। আমার বাবা তো চাষী, গরীব তাই এদের মতো দামী দামী উপহার কিনতে পারিনি। তোর জন্য এই বিনে সুতোর মালা বুনে এনেছি"।
সকলে চুপ করে গেল, পিন পতন নিস্তব্ধতা নেমে এলো ভরা অনুষ্ঠানে।
বিনোদ বাবু মেয়ের কাঁধে হাত রেখে বললেন, "এর চেয়ে ভালো উপহার হয় না অরু, বন্ধুর দেওয়া বিনে সুতোর মালা অনেক মূল্যবান"।
অরুণিমা একগাল হেসে বলল, "হাতে দিচ্ছিস কেন, পরিয়ে দে"।
মিনার মুখে হাসি ফুটে উঠল।