গঙ্গা
গঙ্গা
একটা নদীর নাম গঙ্গা, একটা মেয়ের নাম গঙ্গা!
জন্ম তার বিষ্ণু হতে, ধারণ করেন ব্রহ্মা,
গঙ্গোত্রী থেকে মোহনা, সে যেন কোথাও থামেনা!
মহাকালের জটায় থাকেন, তিনি এমনই অন্যনা!
কখনো চঞ্চলতা কখনো স্থিতপ্রজ্ঞ,
হিমালয় থেকে সাগর, ভারতের সৃষ্টি যঞ্জ।
দুপাশ দিয়ে গড়ে ওঠা সভ্যতা,
ভাগীরথের অমরত্ব, এই সেই গঙ্গা।
একটা নদীর নাম গঙ্গা, একটা মায়ের নাম গঙ্গা।
কেউ ভক্তি করে, কেউ করে ময়লা, হে গঙ্গা!
তৃষিতের তৃষ্ণা মেটায়, জাতিভেদ করেনা!
গঙ্গা, সে বয়ে চলে কোনো বাধা মানেনা।
আর আমার গঙ্গা কেঁদে উঠে ডাস্টবিনের ধারে,
দুটো কুকুর পাহাড়া দেয় সারারাত ধরে,
গঙ্গা বেঁচে যায়, বাঁচে ভাগ্যের জোরে,
তার কান্না পৌছায় না, কারো কর্নকূহরে।
আমার গঙ্গা বয়ে যায় ফুটপাত দিয়ে,
চায়ের কাপ ধোয় ছোট্ট হাতে নিয়ে!
বাসন মেজে ফেরে সে বাড়ি বাড়ি,
বাবু দেখায় লাল চোখ, গিন্নি বলেন, আনাড়ি!
শৈশব তার হাত পাতে, আমাদের রাজপথে,
কেউ দেখে কেউ দেখেনা, মুখ ঢাকেন রাজরথে।
পুরোনো স্কুলের জামা পরে, স্কুল দেখে সে ঐ দূরে,
ছেঁড়া ঠোঙার রঙিন ছবি, তাই দেখে তার মন ভরে!
আমার গঙ্গা ঘুমোতে যায়, এক মুঠো স্বপ্ন ধরে,
ফুটের পাসে, ব্রিজের নিচে কিম্বা খালের ধারে।
দুবেলা যদি জুটত খাবার, পেতো নিজের মা,
পৌঁছাত সে চাঁদের পাহাড়, দিয়ে ছোটো হামা!
শৈশব ছেড়ে যৌবনে আসে, আমাদের গঙ্গা,
কেউ বুঝি ভালোবাসে, বোঝে তার সঙ্গা,
আবার গঙ্গা বাঁচতে চায়, ভালোবাসায় ভর করে,
প্রতারণার কালো হাত, তার স্বপ্নও চুরি করে!
গঙ্গা এখন বিক্রি হয়, পুরনো গলিতে,
লাঞ্ছিত হয় গঙ্গা, হাজারো ওলিতে!
রক্ত গঙ্গা বয়ে যায়, গঙ্গার বলিতে,
কাকে সে দোষ দেবে, সমাজ চোরাবালিতে!
গঙ্গা নিস্তেজ হয়, যত সমতলে মেশে,
মারণ রোগের কবলে সে পরলো অবশেষে,
আমাদের গঙ্গা শেষ হলো, অবক্ষয় নিয়ে,
গঙ্গার অস্থি মিললো আবার গঙ্গায় গিয়ে!
প্রতিদিন বয়ে যায়, ভেসে যায় গঙ্গা,
একটা নদীর নাম গঙ্গা, একটা মেয়ের নাম গঙ্গা!