Nityananda Banerjee

Action Crime Others

3  

Nityananda Banerjee

Action Crime Others

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
234


অষ্টাদশ পর্ব


আমি শ্রী পুলক রায়চৌধুরী, এক্স- সি এস, সি টি ও কলকাতা ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিতের এই ভাবপ্রবণতা দেখে আশ্চর্য্য হলাম না। এই পরিবারের সঙ্গে আমার এক রাতে যে পরিচয়টুকু পেয়েছিলাম ; তার জন্য আমি এক ফোঁটাও অবাক হলাম না । এগুলো যে এই পরিবারের খেলা তা' বুঝতে আমার কোন সংশয় হয়নি ।

গোয়েন্দা বা টিকটিকিগিরি আমার শখের স্বপ্ন । তাই তাঁকে একবার খেলিয়ে দেখতে চাইলাম ।

বললাম - বুকুনরা এখানে থাকে না ? 

ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত বললেন - না । আজ থেকে ঠিক বিয়াল্লিশ বছর আগে এক অভিশপ্ত সন্ধ্যায় আমার ভাইঝি ......

আমি অধৈর্য্য হয়ে পড়লাম। জানি ধৈর্য্য ধরে রাখা গোয়েন্দাগিরির অন্যতম শর্ত । কিন্তু এক্ষণে আমার মনে হল চুলোয় যাক গোয়েন্দাগিরি । বুকুন নামের মেয়েটি আমার হৃদয়ে যেরূপ ধাক্কা দিয়েছে তার সংবাদ না পাওয়া পর্য্যন্ত শখের গোয়েন্দাগিরি না করলেই হয় ।

বললাম - কি ঘটেছিল সেই রাতে ?

ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন - মেয়েটা সকাল বেলায় কলেজে গেল পরীক্ষা দিতে। রাতে বাপের উপযুক্ত কাজ করতে গিয়ে পড়ল বিপাকে । 

আমি আরও অস্থির হয়ে গেলাম - হ্যাঁ হ্যাঁ, তারপর কি বিপাকে পড়ল মেয়েটি ? 

- কলেজের এক পড়ুয়াকে ওর বাবার কায়দা অনুসরণ করে নিয়ে এল বাড়ীতে । জামাই আদর দেখে আমি শঙ্কিত হলাম । আমার শঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে রাতেই রেজিস্টার ডাকিয়ে বিয়ে, বাসরশয্যা সেরে ফেলল। অধিক রাতে ছেলেটি পালায় । সেই রাগে মেয়েটাকে ত্যাজ্য করে আমার দাদা বীরেশ্বর ।

ছেলেটি যখন পালায় ; আমি পাশের ঘরে শুয়েছিলাম । 

দুটো ঘরের মাঝখানে একটা একস্ট্রা কমন দরজা আছে। ছেলেটি ওই দরজা দিয়ে ছাদে ওঠে । তারপর হয়তো ঝাঁপ দিয়ে পালায় । আমি যদি ওকে ধরতাম তবে আজ এইদিন দেখতে হত না । কিন্তু আমার বিবেকে লেগেছিল যে একটি অসহায় ছেলেকে এ ভাবে শাস্তি দেওয়া উচিত নয় । তাই ওকে পালাতে দিয়েছিলাম ।

আমার মধ্যে তখন আলোড়ন চলছে। রিখটার স্কেলে মাপলে হয়তো স্কেলটাই ফেটে যাবে । যাই হোক আমি ওঁকে বেশী কিছু বললাম না। শুধু জিজ্ঞেস করলাম - আপনি খোঁজ রাখেননি ?

বৃদ্ধ কাঁদতে কাঁদতে বললেন - না বাবা । সে সাহস বা সাধ্য আমার নেই । বীরেশ্বরের মত জানোয়ার আমি জীবনে দেখিনি। এই তো আজ সকালে - এক ভদ্রলোক এসেছিলেন ওর সঙ্গে দেখা করতে । কথাবার্তা হচ্ছিল- মাঝে মাঝে তর্ক বিতর্কও হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি দুপুর বেলা ওরা হাত ধরাধরি করে কোথাও চলে গেল । বীরেশ্বরের কথায় ওঠা বসা করা ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই।

বললাম - আপনি তো তাঁর ভাই ! অর্ধেক সম্পত্তির অধিকারী। আইনের সাহায্য নিয়ে পৃথক হতে পারছেন না কেন ? 

এত দুঃখের মধ্যেও তিনি হেসে ফেললেন।

- আমার কি সাধ্য বাবা ওর মত লোকের সঙ্গে লড়াই করি। থানা পুলিশ মন্ত্রী সান্ত্রী সবই তো তাকেই সমর্থন করবে।

বুঝলাম সবই । আরও ভালো করে বুঝে গেলাম সেই রাতের যে ছেলেটির পালানোর কথা বলছিলাম সে আর কেউ নয় - আমিই স্বয়ং । বললাম - ছেলেটির নাম জানেন ?

- আমার পিতৃদেব জানতেন। তিনিও তো জড়িত ছিলেন ওই কাজে । এমনকি আমার মাতা ঠাকুরাণীও সম্মতি দিয়েছিলেন। শুধু আমরা দু'জন আমি এবং আমার স্ত্রী লতিকা - এই জঘন্য কাজ সমর্থন করিনি , কিন্তু প্রত্যক্ষ রূপে বাধা দিতেও পারিনি ।

- যে মেয়েটির কথা বলছেন তার নাম কি ?

সুনেত্রা বলে উঠল - কার নাম আপনি জানতে চাইছেন স্যার ? আমার জেঠতুতো মাসীমার ?

ত্রিলোকেশ্বর বললেন - ওর নাম গোপা । আমার এবং দাদার একটি করে মেয়ে । দাদার মেয়ে গোপা আর আমার মেয়ে রূপা । সুনেত্রা রূপার মেয়ে । আমার নাতনী।

আমি বললাম - গোপাদেবীকে তো না হয় ত্যাজ্য করেছেন আর রূপাদেবীর কি হয়েছিল ?

- তার কিছু হয়নি । কিন্তু হতভাগী সাইকেল চালানো মেয়ে । খুবই উঁচু মনের মেয়ে। বিয়ে দিলাম পাইকপাড়ার বিখ্যাত সান্যাল বাড়ীতে । ধুমধামে বিয়ে হল । কিন্তু ভাগ্যের কথা কি বলব বাবা ! মেয়ের কপালে সুখ নেই । জামাই বৌ-ভাতের পরের দিনই বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে গেল । আমরা তো অবাক । দাদাও অবাক ।

জামাই বলল' আপনাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম।

দাদা বললেন - কেন ?

- সে কথা মেয়েকেই জিজ্ঞেস করে নিন ! 

দাদার রাগ হল খুব । বলল - তোমাকে প্রশ্ন করেছি, উত্তরও তোমাকেই দিতে হবে।

শুরু হল কথা কাটাকাটি। জামাই আমাদের মুখের সামনে বলে দিল কথাটা ।

- কি কথা ?

ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত আমার কানে তাঁর মুখ ঠেকিয়ে বললেন যে সি ডিড নট ব্লীড ডিউরিং দেয়ার ফার্স্ট ইন্টারকোর্স ।

তারপর বললেন - আচ্ছা বল তো বাবা ! এটা কি ধরণের কথা ? একটা ইঞ্জিনিয়ার ছেলের মুখে এমন অবৈজ্ঞানিক কথা শুনে দাদা রাগে ফেটে পড়ল । আমরা সবাই জানি দাদার পকেটে সবসময় পিস্তল থাকে । দাদা পিস্তল বের করে ছয় ছ'খানা গুলি ঢুকিয়ে দিল জামাইয়ের শরীরে। তারপর লাশ গুম করে দিয়ে ক্ষান্ত হল । তিনদিন বাড়ীমুখো হয়নি।

আমি শুনছি আর প্রমাদ গুনছি । এখনই এখান থেকে না পালিয়ে গেলে প্রাণের মায়া ত্যাগ করতে হবে ।

ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিতকে পর্য্যবেক্ষণ করে আমার মনে হল ভদ্রলোক ভীতু কিন্তু মহৎ । আসলে হয়তো ভীতুদেরই ধর্ম ভাবনা প্রবল । আমার মনে তাঁকে বিশ্বাসযোগ্য বিবেচনা করে বললাম - ওই যে গোপা নামের মেয়েটির কথা বলছিলেন ; আপনার দাদা কি ওঁকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন ?

- শোনো বাবা তাহলে বলি ! সেদিন সন্ধ্যেবেলায় যে ছেলেটিকে নিয়ে এত কাণ্ড ঘটল বীরেশ্বর গর্বের হাসি হেসে বলেছিল ' বাপকা বেটি ' । বাবা যেমন গায়ের জোরে তমালী মাকে জিমখানা থেকে তুলে নিয়ে এসে জবরদস্তি বিয়ে করে নিল ; গোপাও মোটামুটি বাক্যের জোরে ছেলেটিকে ঘায়েল করল । তবে জানো কি বাবা - মেয়ের ওই ছেলেটিকে খুব পছন্দ হয়েছিল । সে কথা খোলাখুলি বীরেশ্বরকে জানাতেই বলেছিল ' তুই খালি ওকে একবার বাড়ীতে নিয়ে আয়; তারপরের ব্যাপারটা আমি বুঝে নেব ।

তো ছেলেটি এল; জামাই আদর খেল। একই রাতে রেজিস্ট্রি, সিঁদুর দান, এমনকি বাসর শয্যাও হল । আমরা তো নীরব দর্শক থেকে গেলাম। বীরেশ্বর একজনকে বলল এখনই একটা সেক্স বুস্টার নিয়ে আয় । আজ মেয়ের জীবনটা পাল্টে দেব ।

দিয়েও ছিল । কিন্তু ছেলেটি ভোর রাতে পালিয়ে যেতে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল বীরেশ্বর। ছেলেটিকে না পেয়ে মেয়েকে তক্ষুণই বাড়ী থেকে দূরে কোথাও রেখে দিয়ে এল। ওইটুকু মেয়ে; কেঁদেকেটে একশা হয়েও বীরেশ্বরের কোপ থেকে বাঁচতে পারল না । 

আমি বললাম - তার কোন খবর আপনারা পেয়েছেন !

- চেষ্টা যে করিনি তা' নয় ; তবে বীরেশ্বরের লোকজন এত সতর্ক রইল যে আমাদের কোন চেষ্টাই ফলপ্রসু হল না ।

আমার মনে তখন দুর্যোগের ঘনঘটা । বক্ষদেশ তোলপাড় করে দিল । আহা রে ! বেচারা গোপা ! বাবার কীর্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে কি বিশাল ও ভয়ংকর ভুলটা না করে বসল ।

দুঃখ হল; সমবেদনা জানালাম । আর সাহস করে বলে বসলাম - আর ওই ছেলেটির কোন খোঁজ করেননি ?

- করেনি আবার ! সারা কলকাতা চষে বেড়িয়েও ছেলেটিকে পায়নি । ভাগ্যিস পায়নি; নইলে তো আমার জামাইয়ের মত দশা হত তারও !

আমি বললাম - এখন যদি তাকে পেয়ে যান বীরেশ্বর রক্ষিত ; তার কি হাল করবেন বলে আপনার মনে হয় ?


( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action