Arpita Pal

Abstract Children Stories Horror

3  

Arpita Pal

Abstract Children Stories Horror

অভিশপ্ত ডায়রি - প্রথম পর্ব

অভিশপ্ত ডায়রি - প্রথম পর্ব

3 mins
316


  

কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে অণেকক্ষণ ধরে কাজ করার পর বেশ হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। একটু relax হওয়ার জন্য চেয়ারে হেলান দেওয়ার সাথে সাথেই প্যান্টের পকেটে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠল। কলটা রিসিভ করে বললাম- 

“ বল্। কি খবর তোর? অনেকদিন পর ফোন করলি তুই। “ 

“ আমার খবর ভালোই। এখন অফিসের খুব প্রেসার চলছে রে। তাই তোকে আর সময় করে কল করতে পারছিলাম না। এখন একটু ফ্রী আছি। তাই ভাবলাম তোর একটু খবর নিই। “ 

“ আমিও কয়েকদিন আগে অফিসের কাজে বেশ busy ছিলাম। এখন কাজের চাপটা একটু কম। “ 

“ তাহলে তো বলতে হয় আমি তোকে একেবারে right time-এ কল করেছি। আমার কাছে তোর জন্য একটা প্রস্তাব আছে। “ 

আমি একটু অবাক হয়ে বললাম - 

“ প্রস্তাব? কিন্তু কিসের প্রস্তাব? “ 

আমার বন্ধুবর একটু হেসে নিয়ে বলল- 

“ এখন বলব না। তোকে রাতে কল করে সব বলব। “ 

“ Ok. তাই হবে। “ 

বাগডোগরা airport থেকে বেরিয়ে আগে থেকে ঠিক করে রাখা গাড়িতে উঠে আমি এবং আমার সহধর্মিণী তনিমা - যাকে আমি তনু বলেই ডাকি, রওনা দিলাম কোচবিহারের উদ্দেশ্যে গাড়ি যতক্ষণে গন্তব্যস্থলে পৌছাচ্ছে ততক্ষণে কিছু কথা পাঠকদের জন্য বলে রাখা ভালো। প্রথমেই আপনাদের সাথে আমার পরিচয়টা সেরে ফেলি আমি মনোময় বাগচী। একটা প্রাইভেট ব্যাংকে এখন আমি কর্মরত। দু-বছর হয়ে গেল তনুর সাথে আমার বৈবাহিক সম্পর্কটা ভালোই কাটছে। আমার কলেজের বন্ধু অখিলেশের প্রস্তাবেই আমাদের আজ কোচবিহারে আসা। ঐ দিন এই অখিলেশেই আমায় ফোন করে এখানে আসার কথা বলে। মুলত দুটো কারণে। প্রথমত, ওদের কোচবিহারের বাড়িটাকে একজন হোটেল মালিক কিনে নিচ্ছেন। পাচঁ-ছয় বছর হয়ে গেল এই বাড়িটায় ওদের পরিবারের কোনো লোক থাকে না শুধু দুজন কেয়ারটেকার ছাড়া। সবাই হয় বিয়ে করে না হয় চাকরি সুত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাস করে। শুধু অখিলেশ দেশের বাইরে USA-তে settle। এখন সেই বাড়ির বেশ কিছু ফার্নিচার কয়েকজনের কাছে বেঁচে দেওয়া হবে। সেটা তদারকি করার দায়িত্ব অখিলেশ আমাকেই দিয়েছে। ওর মতে এই মুহুর্তে আমি-ই নাকি ওর কাছে সব থেকে বেশি বিশ্বস্ত লোক। পরিবারে লোকজনকে এই সময় কাউকে পাওয়া যাবে না। সবাই সম্পত্তির ভাগ বুঝে নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে পরেছে। ওর দাদাঠাকুরের আঁকা বেশ কিছু ছবি আছে যেগুলো আপাতত আমার কাছে আমার বাড়িতেই থাকবে। পরে অখিলেশ দেশে ফিরলে আমার থেকে সেগুলো চেয়ে নেবে। আর দ্বিতীয় কারণ হল - নাহ্ সেটা ও আমায় বলেনি। ওটা নাকি আমাদের জন্য surprise যেটা আগামীকাল আমার আর তনুর তিন বছরের Marriage Anniversary-এর গিফট্। আর সেই গিফট্-টাকে নিয়ে তনু ভীষণ excited রয়েছে। এখন সে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্যটাকে উপভোগ করছে। আমিও অবশ্য তনুকে একটা surprise দেবো যেটা সে গাড়ি থেকে নেমেই দেখতে পারবে। অবশ্য এই surprise-টার কথা সে কিছুই জানে না। 

দেখতে দেখতে আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌছে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে সামনে ঘুরতেই তনু যাখল তাতে সে এতটাই অবাক হয়েছিল যে বেশ কিছুক্ষণ ওর মুখ থেকে কোনো কথাই বেরচ্ছিল না।কারণ ওর সামনে এখন দাঁড়িয়ে আছে একটা পুরনো জমিদার বাড়ি। তনুর বরাবরই এই ধরনের বাড়ির প্রতি একটা আকর্ষণ কাজ করে। আর এই আকর্ষণের জোরেই সে বেশ কিছু জমিদার বাড়িতে ঘুরতেও গেছে। তবে কখনও সেই সব জায়গায় থাকার সুযোগ পায়নি। কিন্তু এই প্রথম এরকম একটা জমিদার বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়ে সে ভীষণ বিস্মিত হয়ে যায়।

আমি যখন ওকে বললাম - 

“ আমার তরফ থেকে এই surprise-টা কেমন লাগল? “ 

ঐ সময় তনু যেভাবে আমার দিকে তাকিয়েছিল তার সেই মুখ আমি কখনও ভুলব না। 

কোচবিহারে অখিলেশের এই বাড়িটা বাংলার জমিদার বাড়ির আদলে তৈরি। তবে জমিদার বাড়ি বলতে যা বোঝায় এই বাড়িটা সেরকম বড়ো না হলেও খুব ছোটও নয়। আমি অবশ্য কলেজে পড়াকালীন দু-বার অখিলেশের সাথে এই বাড়িটায় ঘুরে গেছি। দুবারই এসেছিলাম দুর্গা পুজার সময়। আর সব জমিদার বাড়ির মতো এই বাড়িতে দুর্গা পুজা না হলেও ঐ সময় অখিলেশ ও তার ভাই বোনেদের সাথে বেশ মজাই করেছিলাম। 

দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর আমি rest নিলেও তনু পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখছে হাতে একটা DSLR নিয়ে। সন্ধ্যে বেলায় চা খাওয়ার সময় DSLR- এ তোলা এই বাড়ির প্রত্যেকটা ফটো সে আমায় দেখাচ্ছিল এবং সবকটাই অসাধারণ ভাবে তোলা হয়েছে। তনু বরাবরই ফটো খুব ভালোই তোলে। যেটা আমার দ্বারা কোনো কালেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফটো গুলো দেখাতে দেখাতে তনু হঠাৎই উঠে গিয়ে দরজার পাশে রাখা টেবিলটা থেকে একটা জিনিস নিয়ে এসে আমার দিকে এগিয়ে দিল। তখন সেটা দেখে আমার মনে হল ওটা লাল রঙের কভার করা বইয়ের মতো কিছু একটা হবে। 

আমি তখন ওকে জিজ্ঞাসা করলাম- 

“ এটা কি? কোথা থেকে পেলে? “ 

সে আমার হাতে জিনিসটা ধরিয়ে দিয়ে বলল- 

“ তুমি নিজেই দেখ। “ 

আমি সেটা হাতে নিয়ে তার পাতাগুলো ওলটাতেই বুঝলাম এটা খুব পুরনো একটা ডায়রি। যার প্রতিটা পাতা পুরনো বইয়ের পাতার মতো হলদেটে হয়ে গেছে। এই ডায়রিটা যে সালে লেখা হয়েছে সেটা শুধুমাত্র প্রথম পাতাতেই লেখা আছে - ১৯১২ সাল। আর কোথাও কোনো তারিখ লেখা নেই। লেখাগুলো মাঝে মধ্যেই শুরু হয়েছে। তবে কিছু পাতার পর আর কোনো লেখা নেই। কোথাও এই ডায়রির মালিকের নামও লেখা নেই। 

এবার আমি তনুর দিকে তাকিয়ে বললাম- 

“ তুমি এই ডায়রি কোথা থেকে পেলে? “ 

দেখলাম সে ভীষণ উৎসুক হয়ে আছে কথা গুলো বলার জন্য। সে বলল- 

“ দুপুরে যখন এই বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তখন তিনতলার ডান দিকের একটি কোণের ঘরে এই ডায়রিটাকে পাই। ঘরের মধ্যে বিশেষ কিছুই ছিল না। একটা খাট, একটা আলমারি, একটা টেবিল যার উপরে কিছু বই রাখা ছিল আর একটা চেয়ার। ঘরে ঢুকেই আমার চোখে পড়ল সেই টেবিলের একটা ড্রয়ার অর্ধেক খোলা। আমি সেটা বন্ধ করতে গিয়েই সেখানে এই ডায়রিটাকে পাই। প্রথমে বুঝতে পারিনি এটা যে একটা ডায়রি। পরে কৌতহলবশত সেটা হাতে নিয়ে খুলতেই বুঝতে পারলাম। “ 

 “ হুমম্...... সবইতো বুঝলাম। কিন্তু তোমার এই ডায়েরিটা নিয়ে আসা একদম উচিৎ হয়নি। “ 

তনু ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- 

“ কেন? আমি কি কলসি ভরতি মোহর নিয়ে এসেছি যে তুমি এরকমভাবে বলছো। কোথায় ভাবলাম ডায়রিটা পেয়ে তুমি একটু উৎসাহ দেখাবে। তারপর দুজনে মিলে ডায়রিটা পড়তাম। তা না করে তুমি উচিৎ অনুচিতের কথা বলছো। “ 

“ ছেলেমানুষি কোরো না তনু। তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ আমরা এই বাড়ির অতিথি। এই বাড়ির কোনো কিছুর উপর আমাদের কোনো অধিকার নেই। তাই এই ডায়রিটা যেখান থেকে নিয়ে এসেছ সেখানে রেখে দিয়ে আসবে। এই নিয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না। “ 

তনু এবার একটু বিরক্ত হয়েই বলল- 

“ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। কাল সকালেই আমি রেখে দিয়ে আসব। “ 

                                                                         ক্রমাগাত...... 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract