অগ্নিস্নাতা ৪ পর্ব
অগ্নিস্নাতা ৪ পর্ব
❤❤ অগ্নিস্নাতা 🔥🔥চতুর্থ পর্ব
✍ কলমে : ---- ঈপ্সিতা দেব
রাজমাতা লক্ষ্য করলেন ওনার পুত্র ভীষ্ম আজ অধিক উত্তেজিত ,তার ক্রোধান্বিত নেত্রদ্বয়,কঠিন মুখাবয়ব দেখে রাজমাতা আসন্ন ঝড়ের আভাস পাচ্ছিলেন।তাই রাজমাতা এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ভীষ্মকে শান্ত করার জন্যে বলেন " পুত্র ভীষ্ম,এই কারণে পুত্র তুমি এতো ক্রধান্বিত?আমন্ত্রণ আসেনি যখন ওখানের রাজকুমারীদের কথা ভাবার দরকার নেই । ভারতবর্ষে রাজকুমারীর অভাব নেই ,তুমি অন্য রাজ্যের রাজকুমারীর সঙ্গে বিচিত্রবির্যের সম্মন্ধ করো।"
ভীষ্ম বলেন মাতা তা হয় না,ঐ কাশীরাজ কন্যাদের সঙ্গেই বিচিত্রবির্যের বিবাহ হবে।আজ যদি কাশী রাজকুমারীরা এই হস্তিনাপুরের রানী না হয় সমগ্র ভারতের রাজাদের কাছেই হস্তিনাপুর হাস্যপদ হবে,হস্তিনাপুরের এই অপমান প্রতিষ্ঠাগত অপমান।যা সমগ্র ভারতের রাজাদের নিকট বিনা যুদ্ধে একপ্রকার মান,সম্মান গত পরাজয়।কাজেই মাতা আমাকে কাশী নগরে যাওয়ার অনুমতি দিন।
রাজমাতা সত্যবতী বলেন বেশ তবে অনুমতি দিলাম,আমার আশীর্বাদ তোমার সঙ্গে রয়েছে পুত্র।
গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম আশীর্বাদ নিয়ে সেই স্থান থেকে প্রস্থান করলেন।
পরমেশ্বর মহাদেবের সামনে করজোড়ে উপবিষ্টা হলেন রাজমাতা সত্যবতী।আজ তিনি দুঃখিত,তাঁর হৃদয় আত্মগ্লানিতে পূর্ণ।এই ঘটমান সকল কারনের জন্যে তাঁর পিতার হৃদয়ে অন্তরে সুপ্ত লোভের অবস্থানই উত্তর দায়ী __ বারংবার এই কথাটাই মনে হচ্ছে।এই কারনেই আজ হস্তিনাপুরের এই অপমান।আজ দেবব্রত যদি ব্রহ্মচর্য ব্রতপালন না করতো তবে কাশী রাজের ভগিনীর সঙ্গে গঙ্গাপুত্রের বিবাহ হতো,,,,,,,,,,,ঐ বিবাহ না হওয়ার পর থেকেই কাশী রাজের মিত্রতাভাবাপন্ন মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেছে।গঙ্গাপুত্র তা জানলেও নিজ বিবাহ সংক্রান্ত বিষয় বলে নির্লিপ্ত।আজ কাশী রাজের করা অপমান ও যে সেই ঘটনার ফলশ্রুতি সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু সত্যবতীর মন আজ কু ডাকছে ,ভীষণ বড়ো বিপদ ঘটতে চলেছে এমন আশঙ্কাই বারবার মনের মধ্যে এসে উঁকি দিচ্ছে।গঙ্গা পুত্র বিনা নিমন্ত্রণে কাশীর সয়ম্বর সভায় গেল,সত্যবতী গঙ্গা পুত্রে জেদ,প্রতিজ্ঞায় অবিচল থাকার বিষয়ে অবগত_______ আর ঠিক এখানেই সত্যবতীর ভয়।সত্যবতী জানেন এই ভূ ভারতে এখন এমন কোন রাজা নেই যে গঙ্গা পুত্রকে পরাজিত করতে পারে,যুদ্ধ হলে গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম ই জয়ী হবে এই ব্যাপারে কোন সংশয় নেই।কিন্তু দেবব্রতের মতো একনিষ্ঠ কর্তব্যপরায়ন পুত্র সত্যবতী ভাগ্য করেই পেয়েছে।নিজে যুবরাজ হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর কেবলমাত্র পিতৃ সুখের কথা চিন্তা করেই যে যুবক হস্তিনাপুরের সিংহাসনের অধিকারের সঙ্গে ব্রহ্মচর্য ব্রতপালনের দৃঢ় সংঙ্কল্প নেয় সে নিজের কোনরকম ক্ষতির বিষয়ে চিন্তা না করেই যে কাশী রাজকুমারীদের যে এই হস্তিনাপুরের আনবেন এই বিষয়টি নিশ্চিত।কিন্তু এই কার্য সাধনে সেখানে সর্বনাশা যেন কিছু না ঘটে এটাই মহাদেবের নিকট কাম্য এবং রাজমাতার একমাত্র চিন্তা।
ঐদিকে কাশীর রাজসভা ত্রুটিহীন ভাবে সজ্জিত হচ্ছে।কাশীরাজ সকল সৌন্দর্য একত্রিত করে বিলাসবহুল রাজকীয় এই সভা প্রস্তুতের আদেশ দিয়েছেন।যা তৎকালীন ভারতের নজিরবিহীন ছিল।কাশীরাজের ইচ্ছে এই সয়ম্বর সভার সৌন্দর্যতা যেন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকে।
কিন্ত এই সয়ম্বর সভায় যে মৃত্যুর বীজ লুকিয়ে রয়েছে তা সকলের অজ্ঞাত থেকে গেল।
বিবাহের দিন যতই এগিয়ে আসছে কাশী রাজ ততই চিন্তিত।যদিও আয়োজনে কোন ত্রুটি তিনি রাখতে চান না।ওনার চিন্তা জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বাকে নিয়ে।যদিও এই চিন্তা নতুন কিছু নয়।এই চিন্তার শুরু সেই দিন থেকে যেদিন গনৎকার জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বার ভাগ্য গননার পর বেশ দৃঢ়ভাবে জানায়
" এই কন্যার বিবাহ স্থানে সমস্যা আছে।সর্বগুনের অধিকারিণী হয়েও মর্যাদা লাভের কারনে সারা জীবন লড়াই করে যেতে হবে।তবে ও নিজ লক্ষ্যে পৌঁছাবে। এই কন্যা এক নতুন যুগের সূচনা করবে।এমন কী এই কন্যাকে যুগ যুগ ধরে মানুষ মনে রাখবে।"
______ এই কারণে রাজা অম্বার দোষ কাটানোর জন্য ব্যাবস্হা করেন।দোষ কাটানো পর গগনা করে গননৎকার জানায় " এক বিশেষ মুহূর্তে রাজকুমারী নিজে তার জীবন সঙ্গী নির্বাচন করবে সেই সম্পর্ক হবে জন্মজন্মাতরের।" কাশী মহারাজা আনন্দে আত্মহারা ছিলেন,তাই আর গনৎকারের বাকি কথা গুলো উনি শোনেন নি।
কাশীরাজের এই জেষ্ঠ্যা রাজকুমারী অম্বা তার দুই সহোদরার থেকে অনেক গুন অধিক সুন্দরী হওয়ার পরেও রূপের অহংকারী ছিল না।রাজকুমারী নিজের কক্ষের দর্পণের সম্মুখে খুব কম সময় উপবিষ্ট হত।ছোটবেলা থেকেই শাস্ত্র অধ্যায়ন, চিত্রাংকন, অশ্বচালনা এবং অস্ত্রশিক্ষার প্রতি অধিক আগ্রহ ছিল।শরের দ্বারা লক্ষ্যভেদে এই রাজকন্যা ক্রমশই পারদর্শী হয়ে উঠছিল।বিববহ সংক্রান্ত বাধা থাকার দরুন রাজকুমারীর এই সব ইচ্ছে রাজা কোনদিন বাধা দেয় নি।তবে কাশী রাজের চিন্তার কারন ছিল এটাই অপর দুই কন্যার মধ্যে নারীসুলভ আচরণ যেমন রূপসজ্জায় রত থাকা,অন্তপুরে একজন মহারানীর আচার ,আচরণ, রাজকুমারগণ সম্পর্কে আলোচনা_____ পরিলক্ষিত হলেও ওঁনার জেষ্ঠ্যা কন্যার এই সব ব্যাপারে কোন উৎসাহ নেই।কাশীরাজ দেখেছেন একমাত্র সেনাপতি পুত্রী চিত্রলেখার সঙ্গে রাজকুমারী বেশ সাচ্ছন্দ।ওরা দুজনেই অস্ত্রচালনায় পারদর্শী। প্রচলিত ধারায় কোন অন্যায় প্রত্যক্ষ করলেই সেটির বিপক্ষে যেতে সময় নষ্ট করে না।প্রতিবাদী এই রাজকুমারী তাই অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে না।প্রবাহিত বায়ুর বিপক্ষে যাওয়া যেন ওর নেশা।
ওকে তাই কেউ ভালোবেসে সম্মান দিলে তবেই ধরে রাখতে পারবে,নাহলে এ কন্যা বহ্নি তুল্য।সাধারনের স্পর্শযোগ্য নয়,সে কোনো রাজপুত্র কিংবা রাজাই হোক না কেন__________
তৎকালীন সমাজে এই জন্য অম্বাকে কম কটাক্ষ শুনতে হয় নি।কিন্তু অম্বার তাতে কিছু এসে যায় না।এই সমালোচনা অম্বাকে নিজের কাজ থেকে এক চুল ও সরাতে পারে নি।
অম্বিকা ও অম্বালিকা রূপসজ্জায় ব্যাস্ত থাকলে অম্বা শর দ্বারা লক্ষ্য ভেদে কত দ্রুত করতে পারছে কিনা ,সে অস্ত্র চালনা নিয়ে অভ্যাসে ব্যাস্ত থাকতো।
তাই এই কন্যা যেদিন লজ্জিত হলেও নিজ প্রণয়ের কথা কাশী রাজকে জানায় সেদিন পিতৃহৃদয়ে অপরিসীম আনন্দ অনুভূত হয়েছিল।তিনি তখন স্থির করেন দ্রুত সয়ম্বর সভার আয়োজন করে কন্যাদের বিবাহ দেবেন ।
কাশীরাজ্য তাই সেজে উঠেছে।কিন্তু কাশীরাজেনর কপালে চিন্তার মেঘ ঘনীভূত হয়েছে।যদিও এই চিন্তা নতুন কিছু নয়।এই চিন্তার শুরু সেই দিন থেকে যেদিন গনৎকার জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বার ভাগ্য গননার পর বেশ দৃঢ়ভাবে জানায়
" এই কন্যার বিবাহ স্থানে সমস্যা আছে।সর্বগুনের অধিকারিণী হয়েও মর্যাদা লাভের কারনে সারা জীবন লড়াই করে যেতে হবেযদিও এই চিন্তা নতুন কিছু নয়।এই চিন্তার শুরু সেই দিন থেকে যেদিন গনৎকার জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বার ভাগ্য গননার পর বেশ দৃঢ়ভাবে জানায়
" এই কন্যার বিবাহ স্থানে সমস্যা আছে।সর্বগুনের অধিকারিণী হয়েও মর্যাদা লাভের কারনে সারা জীবন লড়াই করে যেতে হবে।"বিবাহ টঞ____________________________________________
চলবে