Tanuchhaya Mukherjee

Others

3.4  

Tanuchhaya Mukherjee

Others

বিশ্বাসঘাতকতার পর (শেষ পর্ব)

বিশ্বাসঘাতকতার পর (শেষ পর্ব)

3 mins
313


সুতনু মোনালিসার মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। তিন মাস পর ওদের বিয়ে। একদিন বিয়ের আগে মোনালিসা সুতনু ও প্রিয়া মিলে মিলিনিয়াম পার্ককে বেড়াতে গেল। ওরা পার্কের চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সুতনু একসময় ওদের জন্য কিছু স্ন্যাক্স কিনতে গেল। ঠিক সেই মুহূর্তে- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, ওরা দেখল একটা নিরিবলি জায়গায় খুব ক্লোজ হয়ে অনিরুদ্ধ আর একটি মেয়ে বসে আছে।সেটা দেখে মোনালিসা নিজেকে কনট্রোল করতে পারল না, ওদের দিকে এগোতে গেল, প্রিয়া হাত চেপে ধরে কিছু দিন পর যে তার বিয়ে, সেই কথা বলার চেষ্টা করল। কিন্তু মোনাসিসার কাছে কোনো কথা গেল না, হাত ছাড়িয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। অনিরুদ্ধ ভূত দেথার মত চমকে উঠল। এরপর মোনালিসার মনে অনিরুদ্ধর বিরুদ্ধে যত ঘৃণা জমেছিল তা সব উগড়ে দিল। অনিরুদ্ধ একটা কথাও বলতে পারল না। মেয়েটিও সব জানতে পারল। এদিকে প্রিয়াও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। প্রিয়া ওকে জোর করে ওখান থেকে নিয়ে গেল।


এরমধ্যে সুতনু এসে গেছে। প্রিয়া তাকে সব বলল। সুতনু বলল, "ও ঠিক করেছে। এটা করে মনের দিক দিয়ে ও একটু হালকা হল।" ওরা এবার পার্ক থেকে বেড়িয়ে লঞ্চ ধরার জন্য হাঁটতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ঐ মেয়েটি ছুটতে ছুটতে মোনালিসার সামনে এসে দাঁড়াল, মোনালিসা কে বলল দিদি, (মেয়েটি মোনালিসার থেকে ছোটো হবে) "তুমি অনিরুদ্ধর মুখোস টা খুলে দিয়ে আমার কত যে উপকার করলে তা তুমি জান না।" মেয়েটি বলল আমার নাম কলি।" মোনালিসা বলল, "আচ্ছা কলি আমি যে ঠিক বলছি তুমি বিশ্বাস করছ কোন ভিত্তিতে?" কলি বলল, "তোমার কথা ঠিক না হলে অনিরুদ্ধ প্রটেস্ট করত, কিন্তু সে তা না করে চুপ করে ছিল। তোমরা চলে যাবার পর আমিও ওকে অনেক চার্জ করলাম, কিন্তু ওর মুখে কোনো কথা নেই। সেইকারণে বুঝলাম ওই অপরাধী। আমি রাগ করে চলে এসেছি। আমি তোমার মত ওকে ছাড়ব ন। দু দুটো জীবন নিয়ে খেলা করা মূল্য ওকে দিতে হবে। আমার বাবার পুলিশের ওপর মহলে জানা আছে, দেখ কি অবস্থা হয় ওর!প্রয়েজনে তুমি শুধু সাক্ষ্য দিও।" প্রিয়া সঙ্গে সঙ্গে বলল, "ও দিতে পারবে না। কিছুদিন পর বিয়ে।" সুতনু বলল,যদি অনিরুদ্ধর শাস্তি হয় তাহলে মোনালিসার প্রয়োজনে সাক্ষ্য দেওয়া উচিত।" প্রিয়া বলল, "কি বলছিস দাদা মাসি মেসো জানতে পারলে কি হবে জানিস?" সুতনু বলল, "কিছু হবে না। আগেকার মানুষ ওরা, জানতে পারলে কিছু বলে ম্যানেজ করে দেব। অনিরুদ্ধর শাস্তি পাওয়া দরকার রে যাতে আর কোনো মেয়ের সর্বনাশ না করতে পারে।"সুতনুর প্রতি মোনালিসার শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেলো।


অনিরুদ্ধর শাস্তি হল। মোনালিসা কে কোর্টে কয়েকবার গিয়ে সাক্ষী দিতে হয়েছিল। সুতনু সঙ্গে গিয়েছিল। দু পক্ষের ই বাড়ির লোক জানতে পারেনি। তিন মাস পর মোনালিসা সুতনুর বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর বেশ কিছুদিন সুতনু মোনালিসার মধ্যে একটা আড়ষ্ট ভাব লক্ষ্য করত। মোনালিসা তার শরীরে অনিরুদ্ধর কদর্য স্পর্শ টা কিছুতেই ভুলতে পারছিল না। তার মনে হত সেই স্পর্শ টা এখনো তার শরীরে লেগে আছে। তার ছোঁয়ায় সুতনুর যদি ক্ষতি হয়, তাই সুতনুকে এড়িয়ে চলত। সুতনু বিচক্ষণ, সেই কারণে মোনালিসার মনোস্তাত্বিক দিক বিচার করে বিভিন্নভাবে তার কাউন্সিলিং করে তাকে কিছু দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক করে তুলল। এখন ওরা দুজনে সুখের দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছে। প্রিয়ারও খুব ভালো পাত্রের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেছে।


অনিরুদ্ধ যেমন মোনালিসার জীবনে কালসাপ হয়ে তার সারা শরীরে বিষ ঢেলেছিল, তেমনি প্রিয়া সুতনু দেবদূত হয়ে তাকে অমৃত পান করিয়ে বিষের জ্বালা থেকে মুক্ত করেছিল। প্রিয়া ওর পাশে না থাকলে আজ মোনালিসার গল্প টা এক সময় থেমে যেত। অলিতে গলিতে অনিরুদ্ধর মত কালসাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে আর মোনালিসার মত মেয়েরা এদের শিকার হচ্ছে। সবাইকে বাঁচাতে প্রিয়ার মত সুতনুর মত কেউ ছুটে আসে না। এরা কেউ আত্মহত্যার পথ বেচে নেয় কেউ সাহস করে আইনের আশ্রয় নেয়।শেষে আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর কাছে আলোচনার বস্তু হাসির খোরাক হয়ে দিন কাটায়। সুতরাং এই ব্যাপারে পাশ্চাত্য কে নকল না করে সমাজ চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। তরুণীদের তাদের আবেগকে প্রাধান্য না দিয়ে তাদের কোনটা ভালো কোনটা মন্দ সে সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তবেই সুস্থ্য সমাজ গড়ে উঠবে।


-সমাপ্ত-




Rate this content
Log in