দৃষ্টিভ্রম
দৃষ্টিভ্রম
তখন রাত খুব গভীর, চারিদিক ভীষণ নিস্তব্ধ। হঠাৎ গভীর রাতে বিনোদের ঘুম ভেঙে গেল। অনেকক্ষণ থেকে কে যেন ক্ষীণকণ্ঠে ডেকে যাচ্ছে, ‘বাবা, বাবা।’ বিক্রম ভয় পেলে এভাবে অনবরত ডাকতে থাকে। বিক্রম বিনোদের ছেলে। বয়স ছয় বছর। বিনোদ উঠে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল বিক্রমের রুমের দিকে। বিক্রম গুটিসুটি মেরে দেয়াল ঘেঁষে বিছানার ওপরে বসে আছে।
-বিক্রম , কী হয়েছে বাবা? আবার ভয় পেয়েছ?
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে বিক্রম কিছু বলতে পারছে না। ইশারায় দেখাল বিছানার নিচে।
-স্বপ্ন দেখেছ?
-না।
-তাহলে?
ভিকি আবারও খাটের নিচে হাত ইশারা দিয়ে দেখাল শুধু। তার মুখের কথা যেন আটকে আছে।
-ভয়ের কিছু নেই। মিছিমিছি ভয় পাচ্ছ কেন? তুমি এখন বড় হয়েছ। তোমাকে একা ঘুমোবার অভ্যাস করতে হবে। বিনোদ বিক্রমকে হাত ধরে টেনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল, ‘ঘুমাও, বাবা।’
বিনোদ ঘুরে দাঁড়াতেই তার জামার কোনায় টান পড়ল। বিক্রম ওর জামা ধরে রেখেছে। বিনোদ মাথা ঘোরাতেই দুর্বল কণ্ঠে বলল বিক্রম , ‘খাটের নিচে কে যেন আছে বাবা। প্লিজ একটু দেখো।’
-খাটের নিচে কে থাকবে? কী সব আজগুবি কথা?
-বাবা প্লিজ!
বিক্রমের কণ্ঠে এমন কিছু ছিল যে বিনোদের মনে হলো আচ্ছা ঠিক আছে একটু না হয় দেখি। ছেলেটার ভয় দূর করা দরকার। বিনোদ মাথা নিচু করল। আর ঠিক তখনই খাটের নিচে ধুপ করে একটা আওয়াজ হলো।
বিছানার ঝুলে থাকা চাদর সরিয়ে কিছু সময় অন্ধকারে তাকিয়ে থাকল বিনোদ। চোখে অন্ধকার কিছুটা সয়ে আসতেই সে লক্ষ্য করল এক জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে।
বিনোদের মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। গায়ে কাঁটা দিয়ে ভয়ের একটি শীতল স্রোত তার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল। তার কি হ্যালুসিনেশন হলো? সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কী করে সম্ভব। বিছানার নিচে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বিনোদের দিকে তাকিয়ে আছে—বিক্রম !
বিনোদের হৃৎপিণ্ড বলের মতো লাফিয়ে উঠল। এখানে বিক্রম এল কীভাবে? তাহলে বিছানার ওপরে কে?
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বিক্রম বলল, ‘কে যেন আমার বিছানার ওপর বসে আছে বাবা!’ বিনোদ অবাক হয়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো এটা দৃষ্টিভ্রম না সত্যি।