একটা শেষ চিঠি
একটা শেষ চিঠি
" মা আমি পারলাম না। আমি হেরে গেলাম.. তোমার কাছে, তোমাদের সবার কাছে... অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম মা জানোতো, ভেবেছিলাম একদিন একটা বড়ো চাকরি করবো আর তোমাদের অনেকটা সুখে রাখবো... পূরণ করতে পারলাম না। আমি যে ইচ্ছা করে করছিনা কিছুই কিন্তু কি করবো বলতো আমিও তো মানুষ তাইনা!! প্রতিদিন নিয়ম করে ধর্ষিত হতে যে আমিও আর পারছিনা গো মা। তোমার এই ছোটো মেয়েটা অনেক খারাপ। অনেক চেষ্টা করেছিলাম ভালো মেয়ে হতে, ভালো বোন হতে.. আমি ব্যর্থ আবারো। তোমাকে আর বাবা কে কতবার বলতাম রোজ রাতে অশান্তি না করতে নিতে পারিনা আমি আর সহ্য হয় না যে আমার, আমাকে যে কেউ বুঝতে চাইতো না.. আমার সামান্য কথা শোনার ও যে ছিল না কেউ । বয়সের তাড়নায় একবার ভালোবেসেছিলাম একজনকে সে ও তো ছেড়ে দিল.. বন্ধুহিনতা নয় তবে আমার যে বন্ধু থেকেও ছিল না । তুমিও যে সবসময় একটা সন্দেহর বেড়াজাল এ ঘিরে রেখেছিলে আমায়.. আমি জন্মেছিলাম এটা তো আমার দোষ নয় বলো? এরম একটা পদক্ষেপ নিতে চায়নি ভয় করছে এখনও কি করে করবো! কিন্তু এটা না করলে যে আমি থাকতে পারবো না, রোজ রোজ হতাশায় ডুবতে পারবো না। পারবো না নিজেকে এরম আনমনা দেখতে। ভুল বুঝোনা মা। আমি তোমাদের ভীষন ভালবাসতাম.. ওপারে গিয়েও বাসবো
ইতি
তোমার ছোটো মেয়ে"
চিঠির পাশে কলম টা রেখে চোখের জল মুছতে মুছতে এগিয়ে চললো খাটের উপরে রাখা চেয়ার এর উদ্দেশ্যে. মাটিতে লোটাচ্ছে ওড়না খানি । চেয়ার এ উঠে ওপরে থাকা পাখাটির দিকে একবার তাকিয়ে রইলো চুপ করে তারপর আস্তে আস্তে ঝুলিয়ে দিলো নিজেকে। হার মেনে নিয়ে চলে গেলো।
পরদিন সকালে, নিত্যদিন এর মতই হাকডাক চলছে... কিন্তু নিত্যদিন এর মতন ওই মাথা গরম করে চিল্লিয়ে ওঠা উত্তর গুলো আর শুনতে পাচ্ছে না তার মা। ভাবলো বুঝি শরীর খারাপ সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলো ঘরের দিকে । দরজার ফাঁক থেকে ঝুলন্ত পা দেখে আতকে উঠলো .. গড়িয়ে পড়লো মেঝে তে। কান্নায় মাথা ঠুকতে থাকলো দেওয়ালে... ছুটে গেলো সবাই । ঝুলন্ত দেহ টা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো তার দিদি। কত্ত বড়ো হয়ে গেলো না বোন টা! বন্ধুরা মেনে নিতে পারছে না কেউ, এত্ত সাহসী একটা মেয়ে এরম কাজ কিকরে করলো । দেহ নিয়ে গেলো...
কিছু মাস পেরিয়ে গেলো,, আদরের ছোট মেয়েকে হারিয়ে মানসিকভাবে দুস্থ হয়ে পড়েছিল মা তাই বাধ্য হয়ে দিয়ে আস্তে হয় মানসিক হাসপাতালে । দিদি করেছে বিয়ে সংসার হয়েছে তার.. পড়ে আছি আমি। হ্যা সেই পাপী, অভাগা বাবা । প্রতিটা দিন , প্রতিটা সেকেন্ড নিজেকে দোষ দিয়ে চলেছি। নিজের অনেক পাপের ফল ভোগ করেছি। আর নয়, আর আমার কাছে নেই কিছু আকড়ে ধরে বাঁচার। দিনের পর দিন যদি সেই অশান্তি গুলো না করতাম তাহলে হয়তো শেষ বয়সে এই পরিস্থিতি হতো না আমার!! হয়তো এটাই শেষ পরিণয় আমার। আমি যে আজ নিঃস্ব। পাপের শাস্তি টা আজ নিজেকে দিয়ে মুক্ত করি সব কিছু থেকে। শেষ ইচ্ছা হিসাবে চাইবো যাতে পরজন্মে আমায় আর দ্বিতীয় বার মানুষ হিসাবে জন্ম দেওয়ার ভুল না করেন বিধাতা।
আর তারপর সিগারেট এর শেষ টান টা দিয়ে উঠে গেলেন এক অভাগা বাবা।
কিছু গল্পঃ অসম্পূর্ণ থাকাই বোধকরি শ্রেয়।।
~মোনাপ্রিয়া।