Rimasta samajder

Tragedy Classics Children

4  

Rimasta samajder

Tragedy Classics Children

ইন্দু

ইন্দু

3 mins
206


আজ অষ্টমী ব্যানার্জি পরিবারে প্রতি বছরের মতো এবারে সেই পুজোর আমেজ নেই শুধু এই পরিবারের নয় সারা দেশেই দুর্গা পূজোর আবেগ, অনুভুতিরই কোনো রেশ নেই কারণ করোনা এসে সব নিয়মই বদলে দিয়েছে কিন্তু যে দেবীর কৃপায় এতদিনের পারিবারিক ব্যবসা চলে আসছে সেই দেবীর ১৬০ তম বর্ষের পূজো হবে না কেমন শরীরের একটা অংশ বাদ পড়ার মতো ঘটনা তাই পূজো আড়ম্বরপূর্ণ না হলেও নিয়মানুয়ায়ী করা হচ্ছে । তাছাড়া দুর্গা পুজোর সঙ্গে বাঙালির নারীর টান তো আছেই ।  

সকালবেলা  ....

ঠাকুরমশাইয়ের মহাষ্টমী অঞ্জলির জোগাড় যন্ত্র শেষ হতেই বাড়ির লোকেরা একে একে অঞ্জলি দেওয়া শুরু করলো বাড়ির লোকজনের অঞ্জলির শেষ হয়ে এসেছে দেখে ব্যানার্জি বাড়ির ছোট বউ দীপ্তি শাড়ির আঁচল সামলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল কাউকে দেখতে না পেয়ে  বাড়ির বাইশ পুরনো চাকর রতনকে হাত নেড়ে ডাকল রতন কাছে আসতে দীপ্তি বলল ' রতন কাকা মতি মাসি আর বাকি কাজের লোকদের ডেকে দাও । ' রতন চলে যাচ্ছিল দীপ্তির কি যেন মনে হল রতন কে আবার ডেকে বলল ' রতন কাকা আর একবার এদিকে এসো তো । ' রতন জিজ্ঞেস করল ' কি হয়েছে ছোটো মা ?' দীপ্তি বলল ' পূজোর কাজে জন্য যারা আছে তাদের মধ্যে কেউ অঞ্জলি দেবে কি না জিজ্ঞেস করতো ।আর ,হ্যাঁ সবাই এক এক করে পাঠাবে আর মনে করে... । দীপ্তির কথা শেষ হওয়ার আগেই রতন খলবলিয়ে বলে উঠল ' মনে আছে ছোট মা ওই সানিটাজার না কি যেন ও ইস্প্রে করে দেব তারপর এক একজন কইরে ঠাকুর দালানে ......।'  বলতে বলতে রতন চলে গেল পূজোর কদিনর  কাজের জন্য রাখা রাঁধুনি, বাজারের ফাইফরমাশ খাটবার , ঘর বাড়ি পরিস্কার করার লোকেদের ডাকতে । এক একজন করে কয়েকজন অঞ্জলি দিল কেউ বা অঞ্জলি না দিয়ে শুধু প্রসাদ নিয়ে চলে গেল দড়ি দিয়ে আটকানো দালানের সিড়ি থেকে । 

দুপুরবেলা....  ( বাইরে সূর্যদেব মধ্যগগনে চারিদিকে পরিবেশটা নিত্যবহ দিনগুলোর মতোই  কাকেরা গলা সাধতে শুরু করেছে তবে মাঝে মাঝে দূর থেকে একট  দুটো মাইকের গান কানে আসছে ।)

পূজোর প্রসাদ বিতরণীর পরে যখন বাড়ির সব বউ, ছেলে, কচিকাঁচার চলে গেছে শুধু বাড়ির বড় বউ মৃত্তিকা আর ছোট বউ দীপ্তি মিলে পাশের দু একটা বাড়ির থেকে আসা ডালাগুলোর ওপর থাকা   কাগজ তুলে পড়ে  কোনটা কার তা কাগজে লেখা নাম , গোত্র পড়ে আলাদা করে ডালা সরিয়ে রাখছে তখন একটা সাত বছরের বাচ্চা মেয়ে একছুটে দালানের আটকানো দড়ির নীচ দিয়ে গলে ভিতরে ঢুকে গেল । মৃত্তিকা আচমকা দেখে বলল ' দাড়া দাড়া কে তুই ? ' বাচ্চা মেয়েটার গায়ে সাদা রংয়ের ময়লা হয়ে আসা হাটু অবধি জামা, চুলে অযত্নের ছাপ স্পষ্ট, চেহারা শীর্ণ শ্যামবর্ণ। তবে কোথাও ওর চেহারা মধ্যে চোখটাতে এক অবুঝ আশা আর অনেকটা লালিত ভালোবাসায় ঘেরা সেটা দীপ্তি লক্ষ্য করল তবে মেয়েটা কিছু বলল না শুধু হাতে থাকা একটা ছেড়া পৃষ্ঠা আর কয়েকটা সাদা টগর ও শিউলি ঠাকুর‌ঘরের চৌকাঠের সামনে রেখে চলে গেল আগের মতোই । দীপ্তি দেখল কাঁপা কাঁপা কাঁপা হাতে ভুল বানানে লেখা একটা চিঠি। দীপ্তি চিঠিটা পড়তে শুরু করল লেখাটা ' মা তুমি আমার বাবাকে দূর শহরের থেকে ফীরীয়ে দাও । মা একা পাড়চে না কাজ করতে। ঘরে ভালো কোন খাবার নেই ।তূমী বাবাকে ফীড়ীযে দীনে আমাকে বাবা একটা জামা কীনে দেবে । তৌমাকে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে দেখাতে নিয়ে যাবে আর একদীন আমী, মা , বাবা আমরা সবাই মীলে মাউংষ ভাত খাবও।  মা তোমাকে ষারাদীন ডাকে তূমী নাকী সবার কথা শওন তাই আমি তোময় চীঠটা  লীখলাম আর কটা ফূল দীনাম আমার কাছে মীষটি কেনার পয়সা নেই তো তাই তৌমায় ভালৌ কীছূ দীতে  পাড়লাম না বাবা এলে সবাই জেমন তৌমাকে ডালা দিয়ে পূজো দেয় ঠিক অমন‌ করে পূজা দেবও  ।' দীপ্তি পড়ে মৃত্তিকার হাতে দিল ওকে পড়ার জন্য । 

কিছুক্ষণ পর ......

মেয়েটা বেড়িয়ে যেতেই রতন হাঁপাতে হাঁপাতে ঢুকল মনে হয় মেয়েটাকে আটকানোর জন্য ওর পিছু নিয়েছিল। তবে এতক্ষণ ধরে রতনের উপস্থিতি দীপ্তি টের পায়নি মৃত্তিকার চোখের  পলক দালানের দিকে সরতেই  দীপ্তি খেয়াল করল রতন কিছু বুঝতে না পেরে একবার ওর দিকে আর একবার মৃত্তিকার দিকে তাকাচ্ছে। দীপ্তির মুখটা থমথমে আর চোখে অনেক প্রশ্নের ভিড় এসেছে । মৃত্তিকার পড়া শেষ হতেই রতন কে জিজ্ঞাসা করল ' কে গো ওই মেয়েটা ?' রতন বলল পূজোর ঘর বাড়ি পরিস্কার করার জন্য কর্তাবাবা যে তিন জনকে রেখেছেন ওদের মধ্যে একটা বিধবা আছে ওরই মেয়ে ।' দীপ্তি এবার জড়িয়ে আসা গলায় বলল ' ওর বাবার কি হয়েছিলো রতন কাকা?' রতন একটা নিশ্বাস ফেলে বলল ' আর কি বলব ছোট মা ।' বলে একটু থামল তারপর আবার বলল ' ওর বাবা একজন মজুর কাজের জন্য দলের লোকেদের সাথেই বোম্বেতে গেছিল তারপর এইসব করোনার জন্য আর ফিরতি পারেনি অনেকদিন আটকা পইড়ে  ছিল খাবার-দাবার, টাকাকড়ি কিছু না থাকায় দলের সঙ্গে চইলে আসছিল ।' রতনের গলা নীচু হয়ে এল কিন্তু বলতে থাকল ' তারপর ওখান থেকে আসার সময় অনেক গোলমাল হয়েছিল সেসব আমি জানি নে আর ওই বিধবাও জানে না । খবরে নাকি দেখেছিল যে যারা ওর সাথে গেছিল সবাই ফিরতে গিয়ে মারা পড়েছে ... কেউই আর বাঁচেনি । ' আর কিছু বলার আগেই দীপ্তি থামিয়ে দিল । রতন বিষণ্ণ মুখে চলে যাচ্ছিল মৃত্তিকা করুণ কণ্ঠে বলল' মেয়েটার নাম জান গো রতন কাকা?' রতন ঘাড় নেড়ে বলল ' ইন্দু' তারপর চলে গেল। মৃত্তিকা আর দীপ্তি একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল । মৃত্তিকার মুখ ফেকাসে হাতে কাগজটা তখনও ধরে আর দীপ্তির চোখটা টলটল করছে কান্না ঝরে পড়ার জন্য ।  


Rate this content
Log in

More bengali story from Rimasta samajder