কালো ছায়ার কবলে
কালো ছায়ার কবলে
লেখক:- ©দীপ প্রামানিক
©Deep Story
আজ বাড়িতে একা আছে অভ্র, মা-বাবা দুজনই গেছে বড়মাসির বাড়ি। তাদের কেনা নতুন বাড়িতে আজ গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান। সামনে মাধ্যমিক তাই ইচ্ছা থাকলেও সে যেতে পারেনি তাদের সাথে। রাতের খাওয়া- দাওয়ার পর্ব শেষ করে পড়তে বসেছে সে তখনই লোডশেডিং। বইপত্র সব গুছিয়ে রেখে হাতের কাছে একটা টর্চ রেখে চাদর মুরি দিয়ে শুয়ে পড়লো সে। আজ বিকাল থেকেই একটানা ঝমঝম করে বৃষ্টি পরেই চলেছে তাই এখন কিছুটা শীত করছে। চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছিলো তখনই একঝাঁক কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো। মনে হচ্ছে কিছু একটা দেখতে পেয়ে তাড়া করছে। এবার মনে হচ্ছে কুকুরগুলো একদম তাদের বাড়ির গেটের সামনে ঘেউ ঘেউ করছে। আজ রাতে আর ঘুম হবেনা মনে হলো। বাইরে বেড়িয়ে কুকুরগুলোকে তাড়াবার সাহসও হলো না যদি কামড়ে দেই। হঠাৎ কুকুরগুলো একবারে চুপ করে গেলো। তখনই বাড়ির ডোরবেলটা বেজে উঠলো। এতো রাতে আবার কে এলো? জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো বৃষ্টি ততক্ষনে থেমে গেছে। হাতে টর্চ নিয়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে বাড়ির মেইন দরজা খুলে দেখলো কেউ নেই বাইরে। অদ্ভুত তো! দরজাটা লাগিয়ে নিজের রুমের দিকে কিছুটা এগোতেই দরজায় ঠোকা মারার শব্দ পেয়ে ফিরে গিয়ে দরজাটা খুললো কিন্তু না এবারেও কেউ নেই। মাথা গরম হয়ে গেলো তার এত রাতে কে এভাবে মজা করছে। বিরক্ত হয়ে দরজা বন্ধ করে নিজের রুমের কাছে আসতেই সে দেখতে পেলো গোটা মেঝেটা জলে ভিজে গেছে আর হল থেকে তার রুমের ভিতর পর্যন্ত চলে গেছে দুটো ভিজে পায়ের ছাপ। ভিতরে ঢুকে দেখতে পেলো তার বিছানায় একটা কালো ছায়ামূর্তি বসে আছে।
অন্ধকারের মধ্যেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে খাটের ওপর বসে পা দোলাচ্ছে সেটি। "কে কে ওখানে?"কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো অভ্র কিন্তু কোনো সাড়া পেলো না। কিন্তু সেটি পা দোলানো বন্ধ করে দিয়ে অভ্রের দিকে ফিরে তাকালো। সে টর্চের আলো ফেললো কালো অবয়বটির ওপর কিন্ত একি! সেটির ওপর কোনো আলো পড়ছে না সেটি একটি কালো ছায়াই হয়ে রয়েছে। ভয়ে কলকল করে ঘামতে লাগলো সে, হাত থেকে টর্চটা পরে গেলো। নিজের রুম থেকে বেরিয়ে অন্ধকারে কোনোরকমে হাতরাতে হাতরাতে বাড়ির মেইন দরজার সামনে এসে দরজা খুলতে গেলো কিন্তু কিছুতেই দরজাটা খুললো না, মনে হচ্ছে বাইরে থেকে কেউ লক আটকে দিয়েছে। একটু আগেই তো দুবার দরজা খুললো তখনতো কোনো অসুবিধা হয়নি। আবারও দু-তিনবার দরজাটা খোলার চেষ্টা করলো সে নিজের শরীরের সমস্ত বল দিয়ে তবু দরজাটা খুললো না। তখনই অভ্র ঘাড়ে শীতল নিঃশ্বাসের স্পর্শ পেলো। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পেছন ফিরে দেখলো সে ছায়ামূর্তিটি সামনে দাঁড়িয়ে। সেটির দুটো চোখ বাল্বের মতো জ্বলজ্বল করে উঠেছে।
ভয়ে চিৎকার করতে চাইলো কিন্তু গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের করতে পারলো না সে কারণ ততক্ষণে কালো অবয়বটি তার টুটি চেপে ধরেছে। অভ্র শ্বাস নিতে পারছে না, দম আটকে আসছে তার। নিজেকে ছাড়াবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে সে কিন্তু পারছে না, হাত দিয়ে ধরতে চাইছে সেই কালো অবয়বটিকে কিন্তু সেটিকে স্পর্শ করতে পারছে না সে। মা-বাবার কথা খুব মনে পড়ছে তার,চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসছে। এবার ছায়ামূর্তিটি তার গলা আরো জোরে টিপতে থাকে। জিভ বেরিয়ে আসছে অভ্রের। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে, মুহূর্তেই চোখের সামনে অন্ধকার ছেয়ে এলো তার।
পরদিন সকালে অভ্রের বাবা-মা বাড়ি ফিরে এসে দেখলেন তাদের বাড়ির গেটের পাশে মরে পড়ে রয়েছে চারটি কুকুর। বাড়ির ভিতরে ঢুকে যা দেখলেন তাতে নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। তাদের আদরের ছেলে চিৎ হয়ে পরে রয়েছে মেঝেতে। গলায় কালশিটে পরে গেছে, জিভ বেরিয়ে এসেছে।চোখ যেনো ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে। নিস্পলক সেই দৃষ্টি।
সমাপ্ত