লকডাউন
লকডাউন
বর্ষার দুপুর। সাজিদ বসে আছে। কম্পিউটারে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে ঘুরাঘুরি করতেছে। হটাৎ একটা বিষয়ে তার চোখ আটকে গেলো। দেশে করোণার পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কি আছে কপালে কবে যে এর সমাধান হবে কিছুই জানা নেই। ঢাকার বাহিরে করোণার পরিবেশ খুব খারাপ। মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। কবে হবে এর সমাধান!
এ-রকম হাজারো চিন্তা তার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে। দেশের কথা ভাবতে হবে তার। আবার মনে পড়ে গেলো কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নন্দলাল কবিতা। সেখানে কবি বলেছেন, “নন্দ বাড়ির হতো না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি, চড়িত না গাড়ি কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি, নৌকা ফিসন ডুবিছে ভীষণ রেলে কলিষন হয়, হাটি কুকর আর গাড়ি চাপা ভরা ভয়।“ সে মনে মনে বলে নন্দলালের মতো দেশ প্রেমিক হলে চলবে না। আমাকে আসলেই কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কি করা যায়!
সে ফোন বের করে বন্ধু সালমান কে ডেকে নিলো কিছু করার জন্য। সালমান মাগরিবের পরে আসবে বলে জানিয়ে রাখে। মাগরিবের পরে সালমান আসে। তারা একটা টি স্টলে বসে। তারা লক্ষ্য করে দেখে করোণার ভিতর মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আজ বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের এর টি ২০ সিরিজের শেষ ম্যাচ চলছে। জিম্বাবুয়ে ১৯৯ রান টার্গেট দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ জিতবে কি না জয় বা পরাজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য সকলে একত্রিত হয়েছে(ম্যাস শেষে বাংলাদেশ জয় লাভ করে)।
তারা সেখানে বসতে পারে না। তাই বিরক্ত হয়ে চলে আসে। তাদের গ্রামের ছোট জোকা আলিম মাদরাসা মাঠে বসে। তারা আলোচনা করতে বসে কিভাবে সমাজের মানুষকে সচেতন করা যায়? সাজিদ সালমানকে বলে আমাদের সমাজের মানুষ কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। যে যার মতো চলছে, কেউ কারোর কথা শুনছে না। তাহলে কি আমাদের সমাজের কোন উন্নয়ন হবে না? সালমান বলে উঠে বিষয়টি ভাবা দরকার। আসলেই আজ ঘরে বসে সহজেই খেলা দেখতে পারত কিন্তু তা না করে আজ চা এর স্টলে বসে খেলা দেখতেছে। বাংলাদেশের অক্সিজেন শেষ হতে আর বেশি দেরি নেই।
সাজিদ বলে হ্যা আমরা জন-সচেতনতা মূলক কাজ করি। মানুষকে বুঝিয়ে দেই। তারা গ্রামের কিছু ছেলেদের একত্রিত করে একটা টিম গঠন করে। সেই টিমের কাজ হচ্ছে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করে। তাদের মাধ্যমে জনগনের সার্বিক সহযোগীতা দিতে থাকে। তারা একটা ফান্ডিং করতে থাকে যার টাকা দিয়ে সমাজের অসহায় মানুষকে সাহায্য করবে। এর লক্ষ্য সমাজের উচু তলার বিভিন্ন মানুষকে নির্দিষ্ট অংকের অর্থ চাঁদা হিসাবে নির্ধারণ করে এরপর সে টাকা উঠিয়ে গরিব দুঃখিদের সাহায্য করতে থাকে। তারা হিসাব করে দেখে মাত্র ১০০ জন মানুষ ১০০ টাকা করে দিলে ১০০০০ টাকা আয় হয়। আর সমাজে মাসে ১০০ টাকা দিতে পারবে এমন ১০০ জন খুব সহজেই পাওয়া যাবে। এর থেকেও বেশি দিতে পারবে অনেকে। একটি সৎ ইচ্ছা লাগবে শুধু। সাজিদ ও সালমান সফল হয়েছে। তাদের ইউনিয়ন থেকে প্রতি মাসে ১০ লক্ষ্য টাকা ইনকাম হয়। যা দ্বারা সেই ইউনিয়নের প্রায় ২০০ টি পরিবারের খাওয়া দাওয়ার যাবতীয় ভরপোষ চালাচ্ছে। এরপর তাদের গ্রামের ইউনিয়নের চেয়াম্যানকে জানিয়ে সম্পূর্ণ গ্রামকে লকডাউন করে দেয়। তাদের গ্রামের মানুষের আর কোন সমস্যা নেই। সকলেই সুন্দর আরামে আছে। সাজিদ আর সালমান অনেক খুশি অবশেষে তাদের স্বপ্ন সফল হয়েছে। তারা এবার তাদের এই প্রজেক্ট কে তাদের সম্পূর্ণ জেলাতে করার কথা ভাবতেছে।