Apurba Kr Chakrabarty

Classics Crime Thriller

4.5  

Apurba Kr Chakrabarty

Classics Crime Thriller

মুখোশ

মুখোশ

15 mins
454


তিন চার পুরুষের বসত বাড়ি নির্মল রায়ের ,বাড়ির সংলগ্ন বাগানে নানা গাছ গাছালি ভর্তি।শহরের এমন জি টি রোড থেকে একশ মিটারের মধ্যে বিশ ফুট রাস্তার ধারে এতবড় বাড়ির মুল্যই আলাদা।পূর্ব পুরুষদের স্মৃতিজড়িত প্রাচীন ঐতিহ্য আভিজাত্যের আবেগ ছিলই, সঙ্গে নানান গাছ আম জাম পেয়ারা কাঁঠাল,শুধুমাত্র গাছ পাকা ফলের খাওয়া স্বাদ নয়! ফল বিক্রি করে নগদ কাঁচা টাকার মোহ ।সঙ্গে পাতি লেবু ,সজনের শাক,ফুল ডাঁটা, কাঁচ কলা, মোচা থড় ,কাঁচা আম, ইচর নানান শাক সব্জির চাহিদা পুরনে সংসারে অনেক আর্থিক সাশ্রয় হয়।

এই সব কারনেই পুরোন বাড়ি ভেঙ্গে নতুন ফ্ল্যাট দুরে থাক নির্মল এ বাড়ির সংস্কার করত না। প্রতিবেশীরা বলত এ বাড়িতে ভুত আছে। বাগানের গাছপালার ঝোঁপ ঝাড়ে, নানান প্রজাতির সব রাত পাখির ছলে অতৃপ্ত আত্মাদের ভিড় জমে । গভীর রাতে তাদের কোলাহল , আনাগোনা বেড়ে যায়।

আজ তিন চার দিন হল নির্মলের মাথায় আসছে না। তার সদরের দরজার চৌকাঠ সামনে রাতে কে বা কারা তুকতাকের মত কিছু রেখে যাচ্ছে। প্রথম দিন সে এত খেয়ালই করে নেই। কলা পাতার উপর সিঁদুর মাখানো ছাড়ানো কলা ,শোল মাছের কাটা মাথা,ধুতরা ফুলের বীজ, ডুমুর আর হরতকি, লাল জবা ফুল, সবকিছুই সিঁদুর ঘিতে গুলে জবজবে লাল করে রেখে যাচ্ছে। তবে কী কোন ডাইন না কালাজাদু জানা দুষ্ট মানুষের কাজ!

এসবের খুব বেশী মান্যতা বা বিশ্বাস নির্মলের নেই। প্রথম দিন আচমকাই ঐ কলা পাতার তুকতাকের বিবিধ সামগ্রীর উপর পা দিয়ে দলিয়ে দিয়েছিল। এরপর তার কেমন অস্বস্তি লাগে। নিকট প্রতিবেশী তরুণ দার পরিচিত এক গনক, যিনি হাত, কপাল এই সব দেখে ভাগ্য গননা করেন, মাদুরী তাবিজ দেন, বাস্তুবিদ্যার শুভ অশুভ প্রভাবের উপর পরামর্শ দেন । অপদেবতা বা ডাইনীর অশুভ দৃষ্টি কুপ্রভাব পড়লে এ সব দোষ প্রতিকার করতেন।

নির্মলের ধারনা এসব ধান্ধা,বুজরুকী মানুষ ঠকানোর ব্যবসা। তার দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী তরুণদাকে এই সব তুকতাক বিষয়ে বলেছিল।তরুণের পরামর্শে, এদিন নির্মল গনক বিশ্বনাথের কাছে গেছিল,একবারে নিরুপায় হয়ে।

কুড়ি টাকা আগাম ফি দিয়ে নির্মল, ডাক্তার দেখানোর মত গনকের কাছে নাম লিখিয়েছিল ।তার যখন সময় হল। ঐ গনক বাবা নাম বিশ্বনাথ মুকুটে বিষ্ময়কর ভাবে বললেন ,

"আপনি ভীষণ বিপদে পড়লেন। এভাবে কেউ ফাঁদে পা দেয়!"

কী করে জানল, এসব তুকতাকের কথা! তিন কিমি দুরে তার জ্যোতিষের চেম্বার, কীসের ফাঁদ বলে নেই! তবে সতর্ক করেছেন, আর দুবার যদি এই ফাঁদে পা দেন ,আপনার মৃত্যু নিশ্চিত।এক বারের ফাঁদে পড়ার বিপদ কতটা খুলে বলেনি। আজ চার দিন এমন করে তুকতাকের ফাঁদ কে পাতছে! সদরের দরজা খুলে সারারাত বসা সম্ভব নয়! ঘর থেকে কেন! দোতলার বারেন্দা থেকেই সদরের দরজার বাইরে কে কী করছে দেখা সম্ভব নয়।

উচু প্রাচীর ঘেরা এ বাড়ির বাইরে সদর না খুললে,তো রাস্তার কিছুই দেখা যায় না।রাতের কোন ফাঁকে কেই বা এই সব তুকতাক করছে বোঝা দুষ্কর। তবে কাছের মানুষ সন্দেহ নেই ,নির্মল নিশ্চিত।

গনক বিশ্বনাথের পরামর্শ মত ,দ্বিতীয় দিন থেকে সদরের দরজার কপাট খুলে ,বালতি ভর্তি জলে গোবর গুলে ঐ কলা পাতাসহ তুকতাকের সামগ্রি, গোবর গুলা বালতির জলের ধাক্কায় দরজার চৌকাঠ থেকে সড়িয়ে পাশের ড্রেনে নির্মল ফেলে দিচ্ছিল।

নির্মল এ কদিন একাই বাড়ীতে।স্ত্রী দুই ছেলেমেয়েদের নিয়ে গ্রীষ্মের ছুটিতে বাপের বাড়ি গেছিল।এখন ছেলে মেয়েদের স্কুলে ছুটি,আর প্রাইভেট টিউশন নেই। ক্লাস ফাইভ আর সেভেনে, ছেলে মেয়ের পড়াশোনা।বোর্ডের বাংলা মিডিয়াম সিলেবাস । শিক্ষিত,বাবা মায়ের তাই পড়াতে অসুবিধা হয় না।

নির্মল শহরের নিকট একটি গ্রামীণ এলাকার ব্যাংক শাখায় করনিকের কাজ করে।তার ছুটি নেই। দুপুরে ব্যাংকের ক্যান্টিনে ভাত খেতো, রাতের জন্য অফিস থেকে ফেরার সময় বাজার থেকে রুটি, তরকারি কিনে বাড়ি ফিরতে অন্ধকার হয়ে যেত। কোন সমস্যা ছিল না। বসে বসে ঘরে টিভি দেখা চলত রাত দশটা অবধি, ভালোই তার সময় কাটত। তারপর খেয়ে দেয়ে সময় মত শুয়ে ঘুমানো।

মাঝখান থেকে, কৃপন নির্মলের সংসারের খরচ সাশ্রয় হচ্ছিল।পনের দিন একজন মানুষ সে যাইহোক,খেয়ে চালিয়ে নেয়।সংসারে চারটে মানুষের খরচ ঢের বেশী। নির্মলের বাড়ির পাশের রাস্তার বিপরীত দিকের, নিকট প্রতিবেশী তরুণ হাসপাতালে কী একটা কাজ করে, খুলে বলত না । যার সাথে নির্মলের সম্পর্ক ভালো।

তুকতাকের বিষয়টা নির্মল প্রথম দিনেই তরুণকে খুলে বলেছিল। তার পরামর্শেই গনক বিশ্বনাথের সাথে সে যোগাযোগ করে, পরামর্শ চায়। তরুণের দোতলা ঘরের জানালা থেকে নির্মলের দরজার স্পষ্ট দেখা যায়। কে এই সব তুকতাকের দুস্কর্ম করছে, তা দেখার জন্য রাত জেগে বসার প্রস্তাব,প্রতিবেশী তরুণদা দিল।

"এক দুদিন নয়! চার দিন আর সহ্য করবে না।"

শুধুমাত্র প্রস্তাবই নয়, তিনিও নির্মলের সঙ্গেই রাত জেগে কে সেও দুষ্ট মানুষ চিহ্নিত করতে চান। না হলে আগামীদিন এমন কান্ড তার বাড়ির সামনেও কেউ করতে পারে।তবে রাত জেগে বসে থাকাই সার।সেদিন সারারাত জেগে কোন মানুষের দেখা নেই, অথচ এক সময় ভোরের দিকে তাদের নজর এল, কলা পাতার উপর তুকতাকের সামগ্রি সহ, রাখা আছে ।নির্মলের সদর দরজার চৌকাঠে ঠিক উপর!এটা কী তবে মনে হয় ভৌতিক কান্ড!

বিশ্বনাথ গনক বললেন,

" রহস্যজনক! তবে ভৌতিক কান্ড এই মুহূর্তেই বলব না।"

সেদিনের রাতে নির্মলের বাড়ি ছিল জনশুন্য। নির্মল প্রতিবেশী তরুণ দার বাড়ির দোতলার ঘরে জানালায় বসে ,তুকতাকের কে অপরাধী,তার পর্যবেক্ষণ করছিল পরদিন নির্মল রাতে দোতলার তার ঘরে, একা শয়ন তো করল! কিন্তু থাকতে পারছিল না।

এক অস্বস্তিকর গা ছম ছমে ভাব! গ্রীষ্মের সময় জানালা খোলা, চাদঁনী রাত, গুমোট গরম,ফ্যানের হাওয়া গায়ে যেন আগুনের হলকা।একটা পচা গন্ধ।

অলস আধঘুম চোখে মাঝে মধ্যেই মনে হচ্ছিল কিছু যেন আবছা ছায়া মূর্তি বা আর কিছু বাইরের দিকে খোলা পুবের জানালায় সহসা দেখা যাচ্ছিল আবার মুহূর্তেই অদৃশ্য হচ্ছিল।ছাদে যেন ভারী কিছু চলাফেরা আনাগোনার শব্দ।

চরম একটা ভয় তাকে গ্রাস করেছিল।কেউ যেন নিচে

ঘর খোলা খুলি করছে! নির্মল চুপচাপ খানিকক্ষন ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম আসছিল ছিল না।মরিয়া হয়ে ঘরের মধ্যেই রাখা নিরাপত্তার কারনে ষোল এম এম লোহার রড,ছ ফুট মত লম্বা।বছর পঁয়তাল্লিশের শক্তপোক্ত নির্মল হাতে মজবুত করে ধরে,আচমকাই শোবার ঘরের দোর খুলে দোতলার দক্ষিণের বারেন্দায় বের হল।

রাত তখন বারোটা, বারেন্দা নিঝুম নিস্তব্ধ, চাদঁনী আলো, বাগানের গাছের আড়ালে রহস্যঘন আলো আধাঁর পরিবেশ, হালকা দক্ষিণ বাতাস গাছের পাতা নড়াচড়া,আলোছাড়া যেন নেচে নেচে খেলে বেড়াচ্ছিল সারা উঠানে।পচা গন্ধের তীব্রতা ,ঘরের মধ্যে এতটা অনুভব হচ্ছিল না।

বাড়ীতে এ রাতে তার থাকতেই ভরসা হচ্ছিল না। দ্রুত নিচে নেমে এসেছিল। একতলার বারান্দার সংযোগ সিঁড়ির কপাট আচমকাই খুলেছিল। ঠিক সিঁড়ির পাশে কিছু যেন পড়ে! সাদা কাপড়ে ঢাকা মানুষের শব না আর কিছু! এই পর্যবেক্ষণ করার মত সাহস নির্মলের ছিল না।দুরে আধাঁর থেকে বিড়ালের করুন কান্না যেন পরিস্থিতিকে আরও ভয়ার্ত্ত করেছিল।আবার দোতলার বারান্দার চলাফেরার শব্দ, ঘরের কপাট ধাক্কাধাক্কির মত কিসের আওয়াজ! এই তো নামলাম! কিছুই তো নজরে পড়েনি! কোন ভৌতিক কান্ড নাকি!

চরম মানসিক বিভ্রান্ত একাকীত্ব দুর্বল মন পড়ি কী মরি এইভাবে ভয়ে দৌড়ে সদরের দরজার দিকে গেল।কোন রকম,দরজার খিল খুলে নির্মল বাড়ির বাইরে এসে তার নিকট প্রতিবেশী রাস্তার উল্টো দিকে তরুণ দার বাড়ির দরজার কড়া খুব জোরে নাড়াচ্ছিল।এত রাতে এমন কড়া নাড়া ঠিক নয়,কিন্তু তার যা পরিস্থিতি চিৎকার করতে গেলে গলার আওয়াজ বের হচ্ছিল না।

সহসা নির্মল তার বাড়ির ভিতর থেকেই একটা বিকট গোঁঙ্গানীর আওয়াজ শুনতে পেলো।আর তরুণ বা নিকট কোন অন্য প্রতিবেশীদের ভরসা সাহস পেলো না।সবাই ছিল এত রাতে গভীর নিদ্রামগ্ন।বিকট শব্দের আওয়াজ যেন ক্রমে বাড়ছিল আর এগিয়ে আসছে।আর অপেক্ষা করেনি, নির্মল দৌড়ে পাড়া ছেড়েছিল। সদরের দরজার কপাট হাট করে খোলাছিল।

এই গভীর রাতে ভিন্ন পাড়ার তার এক বন্ধুর বাড়িতে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে আশ্রয় পেলো।তার মনে এতটাই ভয় ছিল,ঐ রহস্যজনক সাদা কাপড়ে ঢাকা তার বাড়ির নিচে বারান্দার সিঁড়ির পাশে পড়ে থাকা বস্তুটি মনে হচ্ছিল হয়ত ভুত! যে এই বিকট আওয়াজ করে তাকে আক্রমণ করতে আসছে! তাই বন্ধুর বাড়ি আশ্রয় পাওয়ার আগে অবধি ভয়ে প্রান ওষ্ঠাগত মনে হচ্ছিল এই বুঝি কিছু ভুত বা অশরীরী তাকে আক্রমণ করবে!

খুব সকালেই বন্ধুকে নিয়ে বাড়ি এসে দেখল আজ আর বাড়ির সামনে তুকতাকের সামগ্রী সহ সিঁদুর মাখা কলাপাতা নেই।তার নিজ হাতে রাতে খোলা সদরের দরজার,এখন কপাট লাগানো! চাবি বা খিল ছিল না, শুধুমাত্র সদরের কপাট ঠেসানো ছিল। সদরের কপাট ঠেলতেই খুলে গেল । দেখল আজ বাড়ির ভিতরের দিকে ঠিক সদর দরজার সামনে সেই সব তুকতাক সামগ্রী,একই কৌশলে রাখা।

একটু নিচের বারান্দার দিকে এগুতেই নজরে এল,এক আজানা মানুষের মৃতদেহ ! সিঁড়িতে উঠার বাম পাশে এক তলার বারেন্দায় পড়েছিল। সাদা কাপড় ঢাকা, রাতে নির্মল এটা নজর করেছিল,তবে মানুষের শব ঠিক বোঝেনি।সব ঘরের দরজার কপাটগুলো খোলো, দোতলার তাদের শয়ন কক্ষে আলমারী ভাঙ্গা, সব কিছু লন্ডভন্ড কাপড় শাড়ি ব্লাউজ পোষাক পরিচ্ছদ এলোমেলো কিন্তু কিছু চুরি হয়নি।এখন ওখানে রক্তের দাগ, আর পচা একটা দুর্গন্ধ তখনও সারা বাড়ি ঘরে বিরাজ করছিল।

পুলিশকে খবর করলে, পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেল।তাকে থানায় ডেকে জেরা করল,বহুক্ষন আবার ডাকলেই আসতে হবে এমন বন্ড করে ছাড়া পেলো,নাম পেশা কর্মস্থল সব জানার পর, নির্মলকে পরামর্শ দিল,আপাতত ঐ বাড়িতে থাকবেন না। তবে আমরা কদিন নজরদারি রাখব। পোস্টমোর্টেম রিপোর্ট অনুসারে মৃতদেহ ব্যক্তির খুনের সময় গতকাল সন্ধ্যা বা প্রথম রাতে আটটার মধ্যে।

পাশের প্রতিবেশী তরুণ জানাল, গতরাতে তারা কোন বিকট শব্দ পায়নি। ডাকাডাকি বা দরজার কপাটে ধাক্কাধাক্কি তারা শুনতেই পায়নি। যদিও অনেক রাত অবধি তরুণ জেগেছিল।একটা রহস্য খুন আর ঘরের দরজা ভেঙ্গে আলমারীর চাবি খুলে সর্বস্ব লুট,এই মর্মে নির্মল একটা এফ আই আর স্থানীয় থানায় করেছিল। নির্মলের এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে থাকা সম্ভব ছিল না।গনক বিশ্বনাথ কাছে গেলে তিনি বললেন," আপনার আয়ু সংকটে। শহর ছেড়ে এখনই অন্য স্থানে আশ্রয় নিন।অতৃপ্ত ক্ষোভিত আত্মার কুদৃষ্টি সংসারে চরম অশুভ লক্ষ্যন ,অমঙ্গলের প্রভাব। "

নির্মল আর সাহস পায়নি ,এবাড়ীতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করা নিরাপদ নয়। শহরের অন্য প্রান্তে কোন ঘরভাড়া থাকার সাহস ছিল না।কিন্তু তার ছেলেমেয়েরা এই শহরের স্কুলে পড়ে। নবীন তখন, ব্যাঙ্কের চাকরীর সুত্রে শহর থেকে একটু দুরে, একটি গ্রামীণ শাখায় কর্মরত।ঐ গ্রামে একটি ঘরভাড়া পেয়েছিল কম ভাড়া। আরো দু ঘর ভাড়াটিয়া,ভাড়া বাড়িতে থাকে । ভুতের ভয়! একক নির্জন বাড়ির মত প্রতিকুল পরিবেশ নয়।

রাতের নির্জনতা আর নানা গাছ পালার তার শহরের বাড়িটা দিনে যত মনোরম হোক রাতের পক্ষে একটু ভয়ার্ত্ত পরিবেশ। বাল্যকাল থেকেই এই পরিবেশে নির্মল মানুষ ,তাই তার কিছু মনে হত না।আর তার ছেলেমেয়েরা জন্ম থেকেই অভ্যস্থ তাই তাদের এ সব বন ঝোঁপ রাতে আলোআধাঁর পরিবেশ গা সওয়া হয়ে গেছিল। স্ত্রীও দীর্ঘ পনের বছর এ গৃহের বধূ । বিয়ের সময়কালে শ্বশুর শাশুড়ি জীবিত ছিলেন।তাই তার একাকীত্ব বা ভয়ের কোন সমস্যার কারণ ছিল না।

দীর্ঘ দিন শহরের বাইরে ভাড়া থাকায়, নির্মলের এমন শহরের বাড়ি যতই পূর্ব পুরুষদের ভিটা হোক, ভুতুরে আবার মৃত মানুষের দেহ! বিভীষিকাময় সেই রাতের কথা নির্মল ভুলতে পারছিল না। আরও দু বছর পাড় হয়েছিল। নির্মলের চাকরীস্থল এ গ্রামেই,তার ব্যাঙ্গে স্কুল শিক্ষকদের বেতন হয়,এই সুপারিশ যোগাযোগে গ্রামের স্কুলেই ছেলে মেয়েদের ভর্তি করেছিল।

ভেবেছিল এবার ধীরে সুস্থে ঐ শহরের বাড়ি বিক্রি করে যা টাকা পাবো ঐ টাকাতে কলকাতায় এক ভালো পরিবেশে একটা ফ্ল্যাট কিনতে পারব। কিছু সঞ্চয়ও থাকবে।

একক গৃহে যেমন তার ভীতি,তেমন পুরোন কোন ফ্ল্যাট কিনতে রাজি নয়,যদি কোন রহস্যের কারনে ঐ ফ্ল্যাট বিক্রি হয়!আর সে ফ্ল্যাট কোন পূর্ববর্তী ভৌতিক রহস্য থাকে! একদা ভুত প্রেত আস্থা বিশ্বাস হীন নির্মল এখন খুব ভুতপ্রেত অপদেবতা বিশ্বাস করে।একা তাই আর বাড়িতে থাকতে পারে না। বৌ বাচ্চাদের আর গরম ও পুজোর ছুটিতে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে আর্থিক লাভ দেখে না।

ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছিল পড়ার চাপ বাড়চ্ছিল।গ্রামের অনামী স্কুল চেয়ে শহরে নামী স্কুলে পড়ানোর সখ।

বাড়িঘর বেচে কলকাতার দিকে তার বসবাসের ইচ্ছা।

কিন্তু সমস্যার কারণ, তার দুই তিন বছরের পতিত বাড়ির খদ্দের হয় না।গাছ ঝোঁপ ঝাড়েভরা হানাবাড়ি যেন! ফলমুল কিছুই পেতো না। গাছপালা কাটলে নাকী অতৃপ্ত আত্মারা রুষ্ট হবে। যার ফলে তার ও পরিবারের অন্যদের চরম অঘটন সর্বনাশ নিশ্চিত! গনকের সতর্কতার ভয় ছিল।

নির্মলের দীর্ঘদিনের পূর্ব পুরুষের বসত বাড়ি,ভুতের বাড়ি প্রচার হয়েছিল। কোন খদ্দের পাশাপাশি বাড়িতে যখন এ বাড়ির বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে আসত, তিল কে তাল করত।রাতে নাকি এ বাড়ীতে ভুতের আসর বসে!এ বাড়ীর ঘরে ঘরে ভুত, আর মাঝে মধ্যেই,রাতে হৈহুল্লোর হয়, মরা পশু প্রানীর দেহাবশেষ এবাড়ীর উঠানে বারেন্দায় ঘরের মেঝে পাওয়া যায়।তরুণের কাছে মানুষ বেশী খোঁজ নিত।প্রতিবেশীদের মধ্যে তার ধারনা এ বিষয়ে বেশী ,সবাই জানত।

ঘটনা সম্পুর্ন মিথ্যা নয়। তরুণ সেই বিভীষিকা রাতের ঘটনা জানত,সকালে শবদেহ,ঘর আলমারী লুট পাট প্রতক্ষ্যদর্শী, তার তাই এ বাড়ি বিষয়ে পূর্বের তুকতাক ভৌতিক কান্ড, মৃতদেহ উদ্ধার ঘর, বাড়িতে লুট পাট কিন্তু চুরি কিছুই হয়নি। এসব বলে সম্ভাব্য ক্রেতাদের হাড় হিম করে দিতো। পুরোন হোক,তবু এমন ভালো লোকেশন বাড়ি! দাম ছিল না। খদ্দেরই ছিল না।কে আর শখ করে ভুতের বাড়ি কিনবে!

গনক বিশ্বনাথের সাথে একদিন নির্মল দেখা করে এই বাড়ির ভবিষ্যত বিষয়ে কী কী পরিকল্পনা করা যায় জিজ্ঞেস করলে,গনক বিশ্বনাথ বললেন যত তাড়াতাড়ি বাড়িটা বেচে দাও। এর অশুভ যোগ তোমার ব্যক্তিগত জীবনে আসবে, স্ত্রীবিয়োগ বা এমন অঘটন অসম্ভব নয়। তোমার উপর অপদেবতা যিনি তোমার কোন পূর্ব পুরুষ, কুদৃষ্টি পড়েছে।

দীর্ঘ সময় এক দেড় বছর অনেক চেষ্টা করল, দালাল ধরে পেপারে বিজ্ঞাপন করেও এবাড়ীর খদ্দের পাচ্ছে না। তাড়াছিল বাড়ি বেচে কলকাতায় সে ফ্ল্যাট কিনবে। এই অসহায়ভাব নির্মল শেষে গনককে প্রকাশ করলে, বিশ্বনাথ আশ্বাস দেয়, তিনি খদ্দের দেখে দেবেন।এক তান্ত্রিক এমন বাড়ির নাকী খোঁজ সন্ধান করছেন।

এরপর বিশ্বনাথের সুপারিশে এই বাড়ি অনেক কম দামে বিক্রি করে নির্মল যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। অন্তত অশুভ অভিশপ্ত বাড়ির প্রকোপে বিপদ অঘটনের হাত থেকে সে ও পরিবারের মানুষ তো অন্তত বাঁচল!

আরও দুবছর পর নির্মল একদিন তার পূর্ব পুরুষের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ির কী হাল দেখতে এসেছিল। সে এ বাড়ির বিক্রির টাকা ও ব্যাঙ্ক লোনে কলকাতার এক ভালো পরিবেশে দুই বেড় রুমের ফ্ল্যাট ক্রয় করেছিল।

এখন এই তার পুরোন বাড়ির হাল দেখে তাজ্জব হল। গ্রাউন্ড ফ্লোর, প্লাস আট তলা মস্ত বিল্ডিং,প্রতি ফ্লোরে চারটে করে ফ্ল্যাট ! আট নয়শত বর্গ ফুট সাইজের ফ্ল্যাট বত্রিশটা! আর নিচে গ্যরেজের জন্য বিস্তীর্ণ এলাকায় ষোল সতেরটি ফোর হুইলার।আরও গাড়ী রাখার ফাঁকা জায়গা আছে।

একটি নামী ফ্ল্যাট নির্মাণ সংস্থার নাম ফ্ল্যাটের মাথায় বড় বড় করে লেখা। এই ফ্ল্যাট নির্মাণ সংস্থার অফিসে যোগাযোগ করলে,এক কর্মী বলল,আর তিন টে মাত্র ফ্ল্যাট অবিক্রিত আছে।নিজে খদ্দের সেজে জানল,এক একটি ফ্ল্যাটের মুল্য, তার কলকাতার ফ্ল্যাটের মূল্যের চেয়ে কম নয় ,বরং পজিশন ও ফ্ল্যাটের ফ্লোরের সংখ্যা উপর দামের তারতম্যে, কিছু দু বেডের ফ্ল্যাটের দাম তার ফ্ল্যাটের চেয়ে বেশি। আরও খোঁজ খবর নিয়ে নির্মল জানল, তার পূর্ব পুরুষের ভিটে ভেঙ্গে যে ফ্ল্যাট নির্মাণ হয়েছে, প্রতিবেশী তরুণ ও গনক বিশ্বনাথের নামে দুটি ফ্ল্যাট আছে।

এরপর নির্মল গনক বিশ্বনাথের সাথে দেখা করে।তার গননায় ভুতের বাড়ি কি ভুত মুক্ত হল!ফ্ল্যাটে থাকতে আপনার ভুতের ভয় করে না? বিশ্বনাথ কথা এড়িয়ে বলে,

"আপনি ভুতের ভয় পেয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি কী করব! ভুত নেই বললে , পরে যদি আপনি ভয়ে মরতেন বা কোন অঘটন হত তার দায় কে নিতো! আর আমার এটা পেশা। সব ছাত্র ছাত্রীরা কী নামি দামী শিক্ষকের কাছে উচ্চ বেতনে প্রাইভেট টিউশন পড়ে সফল হয়?না নামী দামী ডাক্তারের কাছে উচ্চ ফি,আর আকাশ ছোঁয়া অপারেশন খরচ বহন করে সব রোগী সুস্থ হয়!তার বেলা কী করেন!গননা করা আমার পেশা ,কাউকে বিশ্বাস করতে কী জোর করি !না আপনাকে বলেছি!"

"আমার প্রতিবেশী তরুণ হাসপাতালের কি একটা কাজ করে,আপনার নাম করেছিল, সে কী আপনার হয়ে কাজ করে!"

"সে সব কথা আপনি ভাবুন,নামী দামী ডাক্তার,উকিল বা শিক্ষকের নাম তো কোন মানুষ বলে, সে উপকার পেয়ে বলে, না দালালী করে বলে, সেই প্রশ্ন কোন দিন তুলেছেন? যতসব আমাদের মত দু পয়সার গনকদের পিছনে কেন! আর আপনার বাড়ির মৃতদেহ কেন এল এসব তদন্ত করে পুলিশ কী পেলো! আপনি তো কম হায়রানি হোন নি! পুলিশের কাছে যান!"

নির্মল বুঝেছিল সে বড় যড়যন্ত্রের শিকার,সারা জীবন সে ব্যাঙ্কে চাকরী করে যা উপার্জন করবে,সে যদি ঐ বাড়ি ভেঙ্গে ফ্ল্যাট নির্মাণ করত, অনেক বেশী লাভবান হত তাও মাত্র দু বছরের পরিশ্রমে। নির্মলের মনে পড়ল বছর তিনেক আগে তাকে এক মারোয়ারী, তার প্রায় সাড়ে তিন হাজার, চার হাজার বর্গ ফুট,এলাকার জুড়ে বাড়ি,বিশ ফুট রাস্তার পাশের,এ বাড়ির বিনিময়ে চারটে ফ্ল্যাট অফার করে।

সেদিন তরুণ বলেছিল, এই সব মারোয়ারীর পাল্লায় পড়বে না ভাই। এরা এই রাজ্যটাই লুট করল। তুমি যেমন আছো থাকো ,জমি আজ সোনার চেয়েও দামি, দিন দিন দাম বাড়বে। তোমার কী এত অভাব! এত সুন্দর প্রাকৃতিক বান্ধব বাড়ি,ঘরে আম জাম কাঁঠাল পেয়ারা কলা থেকে পেঁপে, সজনে কত কী গাছ!এত বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাহাড়ের কোন শৈল শহরে পাবে না।"

নির্মল মানুষকে বিশ্বাস করে। তরুণ কথা বিশ্বাস করে।আর দিন দিন শহরের জমির দাম যে লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি হচ্ছে এ তো সে দেখচ্ছিল ! ভুতুরে কান্ড তুকতাক আর গনকের বিভ্রান্তি, পুলিশের যোগসাযোগ সব কী তবে বৃহত্তর পূর্ব পরিকল্পিত যড়যন্ত্রের সে শিকার! সে একটা গর্দ্ধব ছাড়া কিছুই নয়।কিন্তু দুঃখে হতাশায় চুল ছেঁড়া ছাড়া আজ আর কিছু উপায় নেই।

সত্যিটা বললে লোকে হাসবে আর স্ত্রী সন্তান সারা জীবন তাকে শুধু বোকা গাধাই বলবে না,আবার তাদের আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ,কৃপনতার জন্য ধিক্কার দেবে।

সেয়ানা ঠকলে বাপকে কবুলে না। তাই চরম মনের এ দুঃখ মনেই রাখল।কিন্তু ঘুম আসে না। নিজেকে শত ধিক্কার ছি ছি করে আশ মেটে না।এই নিয়ে দিন রাত একা থাকলেই সে চিন্তা করত।অফিসে আনমনাভাব ছেলেমেয়েদের পড়ানোর আগ্রহ ছিল না। প্রাইভেট টিউশন দিয়েছিল।কী হবে কৃপনতা করে! মনের এই অসহ্য দুঃখ রাখতে না পেরে সেদিন তার এক সহকর্মী বেশ ধূর্ত, আর উপস্থিতি বুদ্ধি ভীষণ।অদ্রীশকে নির্মল জানত ,একটু নাকি সে গোয়েন্দা গিরিও করে। তাকে বলল,

"ভাই আমার বদলী তো কলকাতার কাছাকাছি হল, এবার চলে যাব,তবে মনে বড় দুঃখ জানো!এই চিন্তা করলে ঘুম হয় না, আমার পৈত্রিক বাড়িটা জলে দরে বেচলাম।এক বিশ্বাসী প্রতিবেশী চরম সর্বনাশ করল!" সব ঘটনা এরপর খুলে বলল, সব শুনে একদিন নির্মলের বন্ধু তার পূর্বতন বাড়ি অধুনা ফ্ল্যাট দেখল।

তার মেধা ,অনুসন্ধান মুখী মন,আর এক নিষ্ঠ চিন্তার ফল,রহস্যটা সে খানিক উদ্ধার করেছিল। বলল,

ঠিকই ধরেছ ,তরুণ এই তুকতাকের কারীগর,অন্য লোক দিয়েই করাত। সে রাতে তুমি তার বাড়ি গেছিল,তুকতাকের রহস্য ভেদ আর অপরাধী সনাক্ত করতে, তুমি সেদিন আসল ফাঁদে পা দিলে!সেদিন তোমার বাড়ি ফাঁকা ছিল। তোমার দোতলার বারান্দার গ্রীল ছিল আগেকার দিনের বুক অবধি, লোহার নানা কারুকার্য ময়। গাছ থেকে গ্রীল টপকে ঐ বারান্দায় ওঠা বিচিত্র নয়।আর ছাদের ওঠার গেট ভিতর থেকে শুধু খিল থাকে, চাবিতালা তো দিতে না! উপরে উঠে ছাদের হালচাল দেখে, বাড়ির ভিতর সব কিছুই দেখে শুনে, দুষ্টচক্র পরের রাতে তোমাকে চরম ভয় বিভ্রান্তির পরিকল্পনা করে। সফলও হয়।

ছাদ থেকে দোতলার শোবার ঘরের বাইরে দিকের পুব জানালার ঠিক সামনে কিছু ভয়ঙ্কর সাদৃশ্য বস্তু দ্রুত উঠানামা বা নড়াচড়া করে সড়িয়ে নেওয়া হচ্ছিল ,পচা ইঁদুর বিড়াল হলে দুর্গন্ধ বের হওয়া বিচিত্র নয়। আবার রাতের প্রাচীর টপকে কোন বেওয়ারিশ লাশ ফেলে সেটা বারান্দার ঠিক সিঁড়ির পাশে টেনে রাখলে নিচের বারান্দার নামতে সিঁড়ির দরজা খুললেই এই সাদা কাপড় ঢাকা লাশ তোমার নজরে আসবে ওরা জানত ।

কোন হরবোলা কেন! একটু কৌশলেই যে কোন মানুষ আধাঁর থেকে বিড়ালের কান্নার মত আওয়াজ করতেই পারে ,তুমি নিচের সিঁড়ির দরজা খুলে শবের মত সাদা ঢাকা বস্তু আর বিড়ালের করুন কান্নায় বিভ্রান্ত ছিলে। আর ছাদের গেট তো সেদিন রাতে ঘর থেকে বের হয়ে দেখোনি! খিল খোলা শুধুমাত্র ছাদের দিক থেকেই লাগানো ছিল।সে সময় বুঝে দোতলার বারান্দার আর

ঘরে চলাফেরার শব্দ ,কপাটে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এসব কারনে,ভীষণ ভয়ে বাড়ি থেকেই তুমি পালালে। তরুণদের বাড়ি ধাক্কাধাক্কির করলে,তরুণ সব শুনেও না শোনার অভিনয় করে।

তার পর তোমার খোলা সদরের দরজার বাড়ি থেকে বিকট আওয়াজ করাও ছিল তাদের চাল,এরা সম্ভবত তরুণে বিশ্বাসী লোকজন।হয়ত হরবোলা গুন ছিল।

পাড়া ছেড়ে পালালে, এরাই দরজা বন্ধ করে। অন্য কোন মানুষের যাতে এত রাতে সদরের কপাট খোলা দেখে কৌতুহলী না হয়। আর হাসপাতাল কাজের কারনে তরুণের পক্ষে কোন বেওয়ারিশ লাশ ডোমকে বলে বস্তায় ভরে আনা অসম্ভব নয়। পুলিশ ঐ মরা লাশের পোস্টমোর্টেম রিপোর্ট করেছিল কীনা বা তার রিপোর্ট জাল কীনা কে জানে! তরুণদের পরামর্শে তুমি গনক বিশ্বনাথের কাছে গেছিল। বিশ্বনাথ এই চক্রের অংশ ছিল, তোমাকে বিভ্রান্ত করে।মায়োয়ারীর সাথে তরুণ,গনক বিশ্বনাথ গোপন যোগাযোগ রাখত।

ঐ বাড়িতে ভুতের একটা পরিবেশ আগে থেকেই তরুণ তৈরি করেছিল। পরে সেই রাতের বিভীষিকার পর তোমার ভুতের বিশ্বাস আসে। পরে তুমি বাড়ির বিক্রির ধান্ধা করলে,বাইরেই খদ্দেদের প্রতিবেশীরা বিশেষ করে তরুণ ভয়ঙ্কর ভুতের গল্প ,বাড়িতে মৃতদেহ বিকট আওয়াজ ,পুলিশ কেশ ,নানা ভয় দেখিয়ে বাড়িটা বিক্রি হতে দেয়নি।

গনক তোমার মৃত্যু ভীতি আর স্ত্রীর জীবনের অঘটন স্ত্রীর মৃত্যুর ভয়,তোমাকে চরম বিভ্রান্তি এনে দ্রুত নগন্য দামে বাড়িটা বিক্রি করতে বাধ্য করেছিল,খানিকটা হঠকারীতায় গনকের প্রভাবে তুমি আছন্ন ছিলে।দাম যাচাই বা লোকসান আটকানোর আর সুযোগ পাওনি।একটা ফ্ল্যাটের দামও পাওনি।সেখানে আগে চারটে ফ্ল্যাট দেবো বলেছিল।

ঐ মারোয়ারী তরুণ আর গনক বিশ্বনাথকে দুটো ফ্ল্যাট দিয়েছিল ,পুলিশকে কিছু খাইয়েও তার লাভ ছিল।আর তান্ত্রিকের নামে বকলমে আগের মারোয়ারী এ বাড়ি ক্রয় করে। মারোয়ারীর সেদিন এই পজিশনে বড় বাড়ির প্রতি লোভ হয়,কিন্তু তুমি রাজি ছিলে না,কারন তোমার অভাব নেই, বাড়ির ও জায়গার দাম দিন দিন বাড়ছে।পৈত্রিক স্মৃতি জড়িত বাড়িতে অনেক ফলের গাছ, এই যুক্তি ঠিক ছিল।

ঘনিষ্ঠ দীর্ঘ দিনের প্রতিবেশীকে ,মারোয়ারী তোমাকে চারটে ফ্ল্যাট দেবে বলেছে এটা বলেই মস্ত ভুল করলে। আবার তুমি রাজী হও নি!এরপরই মারোয়ারীর সাথে তরুণ যোগাযোগ করে,এদিকে তোমার বাঙালি আবেগ তাতাতে মারোয়ারীর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলল! গনক বিশ্বনাথের সাথে ওরা নিশ্চিত যোগাযোগ করেছিল ।কি ভাবে তোমার মনকে চরম বিভ্রান্ত আর ভয়ে কাবু করা যায়,এটা ওদের যৌথ প্লান,আমার মনে হয়।

তুকতাকের পরিকল্পনা,এমন সময় করে,একা পনের দিন তুমি বাড়িতে, এই সুযোগে একটা চরম ফাটকা খেলে।হয়ত মারোয়ারীর পুলিশের সাথেও একটা কিছু বোঝাপড়া থাকতে পারে। মারোয়ারী এই সুযোগ আর ছাড়তে চায়নি।

একটা উপায় ছিল, যখন তুমি ভুত প্রেত বিশ্বাস করতে না,উচিত ছিল বাড়ির সব গাছ কেটে পরিবেশ ভয় মুক্ত করে,পরিস্কার পরিচ্ছন্ন গৃহে লুকিয়ে বেশ কটা সি সি ক্যামেরা লাগানো। ঘরে রীতিমত অস্ত্র রাখা, আর দোতলার বারেন্দার গ্রীল নিছিদ্র করা,ছাদে গাছ ছাড়া মানুষের ওঠা সম্ভব নয়। রাতে, বাইরে থেকে গোপন নজরদারীতে সিকিউরিটি গার্ড রাখা উচিত ছিল।এতে অপরাধী ধরা পরত বা একবার তাড়া খেলে জীবনে ভুতের ভয় দেখানোর সাহস পেতো না।সি সি ক্যামেরার ছবি যদি সনাক্ত হত, তবে তো ছাড় পেতো না। আর কী ভেবে হবে। আগে আমার পরামর্শ একবার নিতে পারতে ।

নির্মল মিনতি করে বলে,

এসব কথা আর কাউকে বলবে না।আমার লজ্জা,তার চেয়েও বড় বিপদ আমার বাড়িতে বৌ বাচ্চারা এসব শোনে যদি, চিরজীবন কথা শোনাবে। কৃপনতা আর করি নি, আগে অনেক করতাম, আর এমন ঠকলাম!জানতে পারলে আমার চৌদ্দ গুষ্টির শ্রাদ্ধ করবে। "

"আমার কী ভাই দরকার এসব কথা পাঁচ কান করা!  তুমি কলকাতার দিকে চলে যাচ্ছ।এবার আর দেখা কম হবে।সরল সাদা সিধে মানুষদের এমন ঠকতে হয়। সংস্কৃত নীতি গল্প গুলো মনে হয় পড় নেই বা মনে নেই। তোমার কথা ভাবলে সত্যি খারাপ লাগবে। তবে ভাই যদি ছেলেমেয়েদের ভালো করে শিক্ষিত করে মানুষ করতে পারো!তবে তার চেয়ে বড় সম্পদ,আর পরিতৃপ্তি কিছু নেই।"

এছাড়া আর কিছু বন্ধুটির শ্বান্তনা দেওয়ার ছিল না।

                                সমাপ্ত



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics