Suparna Bose

Romance

3  

Suparna Bose

Romance

নৌকা

নৌকা

7 mins
253



আজ বাড়িতে একেবারে একা অনুমিতা।স্বামী বরুণ অফিসের কাজে শহরের বাইরে।ছেলে রঞ্জু, বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গেছে। আজকের পরিকল্পনাটা বাতিল করতে বললে হয়তো সে করত।কিন্তু অনুমিতাই বারণ করল।ছেলেটা সামনে সপ্তাহে ব‍্যাঙ্গালোর চলে যাবে তার আগে পুরণো বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় কাটাবে।তাতে বিঘ্ন ঘটাবেনা অনুমিতা।ছেলে চলে গেলে মাঝেমাঝে এমন একা তাকে থাকতেই হবে।বরুণকে তো হামেশাইণ বাইরে যেতে হয়।নাহয় আজ থেকেই শুরু হোক অভ‍্যাস।


দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে অনুমিতা জানলার কাছে এসে দেখল অল্প অল্প মেঘ এসেছে আকাশে।পুরনো দিনে ডাকাত আসার আগে যেমন নাকি চিঠি পাঠাতো গেরস্তকে।নাও পারলে সামলাও।তেমনই আরকি।হাওয়াটাও বেশ সিংহের মতো কেশর ফোলাচ্ছে।


  ঝড় ভালো লাগে অনুমিতার।সমস্ত স্থিতাবস্থা ভেঙে দেয় ঝড়। ঝড়ের আগে দুহাত তুলে নাচতে ইচ্ছে করে তার।অনুমিতা ঠিক করে ঝড়কে স্বাগত জানাবার জন‍্যে সে সেই গোলাপি শাড়িটা পরবে।যেটা কেনা ইস্তক একবারও পরা হয়নি।কপালে বিন্দি ।চোখে কাজল।বরুণের ভারি পছন্দের রং। বিয়ের পরেপরেই বরুণ বলতো,"এই রঙে তোমায় যেমন মানায়।অন‍্য কোনো রঙে তেমন নয়।" নিজের মনেই হাসে অনুমিতা, সে নিজে কি ভালোবাসে এই রং?কতকাল নিজের ভালোলাগাগুলোকে নেড়েচেড়ে দেখেনি অনুমিতা।কেবল সকলের মনের মতো হয়ে বেঁচেছে।সর্বদা সে ভালো মেয়ে ভালো স্ত্রী ভালো মা এমনকি ভালো বৌমা হতে চেয়েছে।সকলের কাছে ভালো থাকতে গিয়ে নিজের প্রতি অন‍্যায় করেছে।নিজের ইচ্ছেগুলোর গলা টিপে মেরেছে।একঅর্থে নিজের প্রতি অন‍্যায় করেছে সে।আজ সারাটা দিন সম্পূর্ণ একা কাটাতে গিয়ে কত পুরণো কথা মনে পড়ে অনুমিতার।কখনো মন ভারাক্রান্ত হয়।কখনো অকারণ পুলক জেগে ওঠে।আজ অনেকদিন পরে অনিকেতের কথা মনেপড়ে।সত‍্যিই কি অনেকদিন পরে আজ মনে পড়ল নাকি প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে পড়ে আর সে তার মনের মাটিতে কবর দেয় তাকে।ঝড়ের মতই দূর্দম ছিল অনিকেত।যখন যেখানে থাকতো সেই জায়গাটা গানে গল্পে আড্ডায় ভরিয়ে রাখতো।অনুমিতারও উচ্ছল প্রাণবন্ত স্বভাব।অল্পদিনের মধ‍্যেই দুটিতে বেশ ভাব হয়ে গেল।যদিও অনিকেত বরুণের অফিস কলিগ।গুজরাটের প্রবাসে অনুমিতার অনিদা হয়ে উঠতে তার বেশি সময় লাগলোনা।আজ বহুদিন বাদে সেইসব টুকরো স্মৃতি যেন জন্মের ওপার থেকে ঝড়ের হাওয়ায় ঘূর্ণী তুলে ভেসে আসছে।আজ মেঘের দিকে চেয়ে গুনগুন করে গান ধরে অনুমিতা, আজ ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার পরাণসখা বন্ধু হে আমার...।

বন্ধুই ছিল অনিকেত।বিদেশ বিভূঁইয়ে একা ছোট্ট রঞ্জুকে নিয়ে কতরকম বিপদে পড়েছে অনুমিতা।হঠাৎ তুমুল জ্বর।খেলতে খেলতে পড়েগিয়ে মাথা ফেটে যাওয়া। বেশিরভাগ সময়েই বরুণের বাইরে ট‍্যুর থাকতো।সেইসময় একডাকে ছুটে আসতো অনিকেত।স্ত্রী সুপ্রভাও কখনো বাধা দেয়নি।কিন্তু সুপ্রভার ভরসা বিশ্বাসের মর্যাদা কি রাখতে পেরেছিল অনিকেত বা অনুমিতা।যদিও সেইসময় কোনো গ্লানিবোধ না থাকলেও পরে অপরাধবোধ জেগেছে বৈকি।আসলে সেইসময় কি এক ঘোরের মধ‍্যে কেটে গিয়েছিল তিনটে বছর। 


কোনো একদিন আলাপচারিতার মুহূর্তে অনুমিতা অনিকেতকে স্পষ্ট করে বলেছিল,"তোমাকে আমার ভালো লাগে অনিদা।তোমাকে সারাদিনে একবার অন্তত না দেখলে আমার জগৎ নিভে যায়।"নিজের কন্ঠস্বরের দৃপ্ততায় সে নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিল।এতোটা স্পষ্ট করে কখনো কি নিজের কথা জানাতে পেরেছে সে!আর কি বলেছিল অনুমিতা? "তোমার সামনে এলে আমার শরীর কেমন করে,অনিদা"?নিজের মনেই হেসে ফেললো অনুমিতা।নাহ ও কথা সে বলেনি মুখ ফুটে।হয়তো তার শরীর ভাষায় প্রকাশ করেছিল সেকথা।তবে এটাও তো ঠিক, মানুষের নাভির দুপাশে দুরকমের খিদে থাকে কোনোটাকেই তুমি অস্বীকার করতে পারো না।এছাড়াও আরো দুটো খিদে থাকে একটা মনের।অন‍্যটা মস্তিষ্কের।আবার এই সব খিদেকে একঘাটে জল খাওয়ায় বেঁচে থাকার খিদে।অনুমিতার সমস্ত খিদের মুখে বাড়াভাতের মতোই মনে হতো অনিকেতকে।


দূর আকাশে মেঘের ভিতর বিদ‍্যুৎ চমকালো।যেন একটা লিকলিকে শাখামুটি সাপ।মুহূর্তে অনুমিতার মনে হলো,অনিকেত কি অজগরের মত তাকে মাপছিল সেইসব দিনগুলোতে? দুচোখে সন্মোহন নিয়ে শ্বাসের ঝড়ের সাথে তাকে নিজের দিকে টানছিলো না?কেবল এবং কেবলমাত্র পেটের খিদে ছাড়া বরুণ অনুমিতার আর কোনো খিদের পরিতৃপ্তি করেছে কখনো ! আদৌ করতে চেয়েছে?হয়তো সেকারনেই বিষয়টা জানার পর বরুণ কোনো কথা বলেনি। দ্রুত বদলি নিয়ে কলকাতায় চলে এসেছে।অনুমিতার সংসার বেঁচে গেছে কিন্তু অনিকেতের বাঁচেনি।ধীরস্থির শান্ত সুপ্রভা ডিভোর্স ফাইল করেছিল।লামসাম এমাউন্টের খরপোশ,ফ্ল‍্যাট মায় একমাত্র মেয়ের কাস্টডিও ছেড়ে দিয়েছিল অনিকেত সুপ্রভাকে।অনিকেত প্রকৃতঅর্থেই অনিকেত অর্থাৎ গৃহহীন হয়ে গিয়েছিল।অন‍্য অফিসে জয়েন করেছিল।এখন কোথায় আছে কে জানে।অনুমিতা চশমার কাচ মোছে আঁচল দিয়ে।

সন্ধের মুখে ঝড়ের সাথেই একটা চড়ুইপাখি জানলা দিয়ে উড়ে আসে ঘরে।শোবারঘর পার করে সোজা লিভিং রুমে। তারপর চক্কর কেটে দুবার উড়ে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে বসে পড়ে টিউব লাইটের ওপর।তাড়াতাড়ি ঘরের পাখা অফ করে দেয় অনুমিতা ।পাখি তার ডানাদুটি মুড়ে টিউবলাইটের ওপর সেই যে বসল আর উড়ল না।ঘাড়ঘুরিয়ে কেবল এদিক ওদিক দেখে।একটু যেন হাঁফ ধরেছে মনে হয়।প্রায় সমান উঁচু একটি কাঁচের আলমারির মাথায় একটি বাটিতে একটু জল ও চালের দানা দিয়ে অতিথি সৎকারের ব‍্যবস্থা করে অনুমিতা।অতিথি কিছুই স্পর্শ করে না।তবে বেশ গুছিয়ে বসে।সেই ঘরে সেই সময় টিভি চলছিল।অতিথি টিভি দেখতে থাকে।বেশ বোঝা যায় ইতিমধ‍্যে তিনি আর নড়বেন না। বেশ স্বস্তি বোধ করে অনুমিতা। 


একটু পরেই ফোন করে রঞ্জু।"কিগো মা, ভয় করলে বলো।বাড়ি চলে যাবো তাহলে"।অনুমিতা ব‍্যস্ত হয়ে বলে,"ভয় করবে কেন? নিজের বাড়িতেই তো আছি।তাছাড়া এক অতিথি এসেছে।সে রাতে আর কোথাও যাবে বলে মনে হয় না।" রঞ্জু কৌতুহলি হয়ে ওঠে," কে এসেছে গো মা? মাণী পিসি?" মাণী তাদের রান্নার লোক।রঞ্জ ভাবে তার মা হয়তো শেষমেশ তাকেই ডেকে পাঠিয়েছে রাতটুকু থাকার জন‍্যে।অনু তাড়াতাড়ি বলে " না না সে নয়।অন‍্য একজন।তুই চটকরে একবার ভিডিওকল কর। দেখাচ্ছি।" প্রায় তৎক্ষণাৎ রঞ্জু ভিডিওকল করে।অনু বসার ঘরের টিউব লাইটের ওপর বসে থাকা চড়ুইটাকে দেখায়।রঞ্জু হেসে ফেলে," ও এই তাহলে তোমার অতিথি?একটা চড়ুই পাখি? " অনু হেসে বলে," তা নয়তো কি। একদম একা থাকার চেয়ে আরেকজন লিভিং কেউ রইল।ভালো নয়?" রঞ্জু আবার হাসে, " সে তো ঠিকই।তবে সারারাত তোমার ঘুম হবে তো? " _নাইবা হলো।একরাত্তির না ঘুমোলে কি আর এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে। "রঞ্জু ফোন ছেড়ে দেয়।


          আজ বহুদিন পর অথবা জীবনে প্রথম অনুমিতা ভাবে সে কি চেষ্টা করলে একটা চাকরি জোটাতে পারতো না নিজের জন‍্যে! সেতো বিএ পাশ করেছিল।যাহোক একটা চাকরি। তাহলে সে বরুণের জীবন থেকে সরে যেতে পারত। আরো অনেক মেয়ের মতই চাকরি করার কথা ভাবেনি কখনো অনুমিতা। বিয়ে করে সংসার করতে ভালো লাগত।সে তাই করেছে।আনন্দের সাথেই করেছে।কিন্তু সেই ঘটনাটার পর ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে গেলো তার। সবকিছু জেনেও বরুণের এই নিস্পৃহভাব অনুমিতাকে অসহিষ্ণু করে তোলে আজকাল।বরুণ তাকে ক্ষমা করে মহৎ সাজার চেষ্টা করছে।অথবা স্রেফ অবজ্ঞা করছে বরুণ। 


 কতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। বরুণ সেই আগের মতই নিজের কাজে ব‍্যস্ত। নিজের জীবিকায় ব‍্যস্ত। রঞ্জুও বড় হয়ে গেছে।শীঘ্রই সে ডানা মেলে দেবে দূর শহরে। আজকাল অনুমিতার  চমৎকার সাজানো সংসারে নিজেকেই বাড়তি মনেহয়। ইদানিং তার হাতে সময় উদ্বৃত্ত হয়ে যায়।সেই উদ্বৃত্ত সময়কে খাতার পাতায় লিখে রাখে অনুমিতা।এটা সে পারে।এক সময় অনুমিতার লেখা অনেক কবিতা অনিকেত উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করেছে।অনিকেতের ঠোঁটে কি ভীষণ সজীব হয়ে উঠতো কবিতাগুলো।


আজকাল নিজের একটি সত্তাকে সর্বদাই যেন অতীতের চৌকাঠে বসিয়ে রেখেছে অনুমিতা।বাকিটুকু চেয়ে থাকে ভবিষ‍্যতের জানালায়।মাঝের যেটুকু বাস্তব সেটুকু প্রায় নেই বললেই চলে।তার এই দীর্ঘ অবসর তাকে মশলা ফুরিয়ে যাওয়া হাউইয়ের মত নিঃস্ব করে দিতে থাকে।কতদিন কোনো কবিতা লেখেনা অনুমিতা।শেষবার অনুমিতার ঠোঁটে ছোট্ট একটা কামড় দিয়ে অনিকেত বলেছিল," অনু, সেদিন তোমার লুকোনো ডাইরিটা জোর করে কেড়ে নিয়ে না পড়লে জানতেই পারতাম না তুমি এতো ভালো কবিতা লেখো।নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখো কেন অনু?"অনিকেত নিজের বুকের সাথে চেপে ধরেছিল অনুমিতাকে।আর অনুমিতার মধ‍্যেও অদ্ভুত এক আত্মবিশ্বাস জেগে উঠেছিল দুরন্ত ঘোড়সওয়ারের মতো।


রাতে ঘুম এলো না অনুমিতার।আজ অনেকদিন পর ভেলভেটে মোড়া নীল ডাইরিটা নিয়ে বসলো। অতীত বা ভবিষ‍্যৎ কোনোটাই নয় কোনো এক স্বপ্ন প্রদেশ থেকে সে লিখে চললো কিছু মায়াঅক্ষর।অনুমিতা লিখলো, "কাল তুমি অনেক রাতে ফিরে, ঘুমন্ত আমাকে না জাগিয়ে নিঃশব্দে পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছ।ভোর রাতে খোলা জানালায় একটা পালকের মত নরম হাওয়া আমার চোখের পাতায় টোকা দিল।আমি ঘুমের ঘোরে ভাবলুম, সে বুঝি তোমার অধরোষ্ঠ।আমি ঘুমের ভেতর আহ্লাদী হয়ে মৃদু কামড়ে দিতেই দেখি সে শুধু দখিন হাওয়া। আর তুমি পাশে ঘুমিয়ে আছ কাদা হয়ে। ভোরের অল্প আলো এসে পড়েছে তোমার ঘুমন্ত মুখে। এই মুখ শিশুর মত নিস্পাপ।চোখের কোলে উদ্বেগের রেখামাত্র নেই।ঠোঁটের কোণে একটুখানি অন্ধকার।গালের ওপর নাকের একটা ছোট্ট ছায়া যেন আমায় হাতছানি দিচ্ছে কেবলমাত্র একটা ডিঙিনৌকা সম্বল করে সমুদ্রে ভেসে যেতে।আমি নিজেকে প্রতিহত করতে পারছি না কিছুতেই।ইচ্ছে করছে তোমার চুল ঠোঁট চোখের পাতা চুমু দিয়ে এলোমেলো করে দিই। জোছনার মত নরম সাদা পাঞ্জাবি পাজামার ঘেরাটোপ থেকে তোমায় উন্মুক্ত করি।আকাশমণি গাছের মত তোমার চিকন শরীরে অর্কিডের মত জড়িয়ে ফুল ফোটাই। নানা রঙের অজস্র ফুল।কোনোটা পাখি আবার কোনোটা প্রজাপতির মত দেখতে। উজ্বল রঙে তারা আকর্ষণ করছে আমায়। একটা রঙিন প্রজাপতি আমি।অথবা একটা গন্ধহীন ফুল ।বাতাসে উড়ছে পরাগরেণু।যেন আমার বুকের ভেতর জমে থাকা কবিতা অক্ষর।


তোমার বুকের পশমের ভেতর নাক ডুবিয়ে গন্ধ নিচ্ছি।গ্রীষ্মের প্রথম বৃষ্টির পরে মাটির বুক থেকে যেমন গন্ধ আসে।ঠিক তেমন।আমি জানি তোমার ঘুম ভেঙে গেছে তবু তুমি চুপটি করে আদর নিচ্ছ চোখবুজে। তোমার শরীরের বেহালায় ছড় টানছে আমার কুশলী আঙুল।চোখের পাতা থেকে ঠোঁটের পাপড়ি।বুকের প্রান্তর থেকে আরো নিচে মায়াপ্রদেশে। সুর জাগছে তোমার রক্তের প্রবাহে।তুমি ডানহাত বাড়িয়ে আমাকে চেপে ধরেছ তোমার বুকের ওপর।আমি অস্থির হয়ে পড়ছি তোমার স্পর্শে।নাইটি খুলে ছুঁড়ে ফেললাম বিছানার একপাশে।আর কোনো পর্দা নেই আমাদের মাঝে।পরস্পরের ত্বকের ওম।রোমকূপে বিদ‍্যুৎ প্রবাহ।অন্তত এই মুহূর্তে আমাদের মধ‍্যে কোনো মান অভিমান নেই।অন্তত আরো কিছুটা সময় আমরা মুখস্থ মন্ত্রের মত বাজবো না একে অন‍্যের দেহমন্দিরে। বরং পাকদন্ডীতে হারিয়ে যাওয়া পর্বতারোহীর মত আমরা পরস্পরকে খুঁজবো উন্মাদের মতো।

অন্ধকার দূরত্ব মুছে দেয় অনিকেত।তোমার হৃদস্পন্দন শুনতে পাই ।দেখতে পাই কাছেই ।ইচ্ছে করে কথা বলি।হাত ছুঁই।আঁধারের পর্দা সরিয়ে দিই একটানে।একের পর এক বিভীষিকার দিন রাত পেরিয়ে যাচ্ছে। এসবের ওপারে দেখা হবে!যদি না হয়।বাণীর পরশ দাও।একটি আসরফির মত। আগলে রাখার মত একটি চুম্বন।কেন মৃত‍্যুর কথা বলো?ভয় করে।কান্না পায়। কেন চলে যাও?এখন গভীর রাত। কেউ জেগে নেই পাহারা দিতে।মানুষের পুড়ে যাওয়া দেখতে শ্মশানে যেয়োনা।একটিবার কাছে এসো।বুঝতে পারবে লুকনো প্রদাহ কাকে বলে। একবার এসে দেখে যাও আমার আলোর অলিন্দ। আমার সাজানো সংসার।কিচ্ছুটি ভাংতে পারোনি তুমি।এসো দেখো, সারারাত ওই শুকতারার দিকে চেয়ে চেয়ে কেমন কাটিয়ে দিচ্ছি রাত।একটিমাত্র কথাও যদি বলো।কেন বলছনা?দেখতে পাওনা চোখে জল!এবার ঘুমিয়ে পড়ো। আমি বারবার গিয়ে দেখে আসি,ঘুমের ভেতর ছটফট করছ কিনা। হাত চলে যাচ্ছে হয়তো মশারীর গায়ে।হয়তো চশমা পরেই ঘুমিও পড়েছ।


আজকাল যমুনার জলে লাশ ভাসে।এই রাত যমুনার মত কালো আমরা কি একটি দুটি কথার কুসুম ভাসাতে পারিনা?না হয় সকাল হলে লাশের মতই ভেসে যাবে সেইসব কথা।চড়া রোদ এসে তুলে নিয়ে সৎকার করবে।তবু ভাসার সুখটুক দিলে ক্ষতি কি!কতদূর আর ভেসে যেতে পারি।এক সময় ডুবে তো যেতেই হবে।

লেখা হয়েগেলে বার তিনেক পড়ল অনুমিতা।তারপর কাগজটা ছিঁড়ে নিল ডাইরি থেকে। খুব যত্ন করে ছেলেবেলার মতো একটা নৌকা বানালো। তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।উঠোনে থইথই করছে বৃষ্টির জল।চাঁদের আলো চিকচিক করছে।অনুমিতা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বার করে ছৈ ভর্তি ফ‍্যান্টাসি ভাসিয়ে দিল জলে।


Rate this content
Log in