Md Zakir Hussain

Abstract Children Stories Thriller

4.0  

Md Zakir Hussain

Abstract Children Stories Thriller

প্রিয় বন্ধুকে...

প্রিয় বন্ধুকে...

2 mins
361


সৌমেন,

     অনেক বিশেষণ লাগানোর ইচ্ছে ছিল- প্রিয় সৌমেন, প্রাণপ্রিয় সৌমেন, প্রিয় বন্ধু সৌমেন- সেসব না বলে শুধুই সৌমেন। কেমন আছিস তুই? তোর পুরনো খাতাটা আজ খুঁজে পেলাম। মনে আছে? সেই যে তোর কবিতার খাতাটা..লুকিয়ে রেখেছিলাম? কত খুঁজেছিলি তুই, কত বার ফিরিয়ে দিব ভেবেও আর ফিরিয়ে দেয়া হয়নি তোকে।


       আচ্ছা...তুই থাকিস কোথায় বলত? তুই কি এখনো কবিতা লিখিস? হয়তো বা না....সময়ই হয়তো হয় না। তোর কবিতা গুলো আজ আরেকবার বসে বসে পড়লাম। হা হা হা...কি সব ছেলেমানুষীর দিন ছিল সে সব। আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলি মনে আছে? তুই ভীষণ ভালবাসতি আমাকে, তাই না রে? আচ্ছা জ্যোতির কথা মনে আছে তোর? ওর বাড়ির সামনে গিয়ে রোজ দাড়িয়ে থাকতি? আর একদিন ওর দাদা তোকে........! গুণে দেখলাম জ্যোতিকে নিয়ে এই খাতায় পঁচিশটা কবিতা আছে। এসব কবিতা পড়লে না জ্যোতির হাতেও মার খেতি....."জ্যোতি, এ কেমন তোর রূপের জ্যোতি/ যেমন আঁধার বাতি/ বল না, তুই হবে আমার সাথি।" পড়ে চোখে জল চলে এসেছে আমার। তোর খাতাটা চুরি করার পর সবাই মিলে পড়েছিলাম এগুলো, সাহিন তোর খাতায় ১টা স্কেচও করেছিল আমাদের তিন বন্ধুর। বলিস না যে সাহিনকে তোর মনে নেই....আরে সাহিন সেই যে রোজ মজার মজার টিফিন আনত। ওর খবর শুনেছিলি তো তুই? নাকি পাসনি? কলেজে ভর্তি হওয়ার ২মাস পরেই ওর ক্যান্সার ধরা পরে। এক বছরের মাথায় সব শেষ। সারা শহর যেন জমা হয়েছিল ওকে এক নজর দেখতে- শুধু তুই-ই ছিলি না। শেষ দিকে ও প্রায়ই বলত তোর কথা। কোথায় যে হাওয়া হয়ে গেলি তুই!


       আমাদের ক্রিকেট খেলার দিনগুলোর কথা মনে আছে তোর? ডিস্ট্রিকে প্রথম হয়েছিল আমাদের টিম। সেদিন আতিক হাফ-সেঞ্চুরি করেছিল, আমরা সবাই আনন্দে ওকে কোলে করে নিয়ে এসেছিলাম। 


        আচ্ছা পুরনো কথা থাক, এখন কি করছিস বল? বিয়ে করেছিস? আর ছেলে-মেয়ে? তুই বউ-ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার করছিস, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে বন্ধু। জানিস,গত সপ্তাহে আমাদের পুরনো শহরে গিয়েছিলাম। সবকিছু কত যে বদলে গেছে। আমাদের খেলার মাঠটা আর নেই। কি যে কষ্ট লাগল দেখে। আর ওই যে পুকুরটা- ওটার তো নাম-নিশানাও নেই। খুব কষ্ট লাগছিল। আজ তোর খাতাটা পেয়ে মনটা এতো ভালো লাগছে...কত কথা যে লিখতে ইচ্ছে করছে তোকে! এই এতগুলো বছরে কত কি হয়ে গেল, কিছুই তোকে বলা হল না।


          তোর ঠিকানায়ও তো এই চিঠি পৌঁছাবেনা কখনো। তোর ঠিকানাটাই তো জানা হল না আমার। হয়ত কোনদিনও জানা হবে না। কোনদিন তোর মুখটাও দেখা হবে না- তোর খাতাটাও আর তোকে ফিরিয়ে দেয়া হবে না... থাক তবে আমার কাছেই। শৈশবের একটা অংশ অন্তত থাকুক আমার কাছে...

ইতি...


Rate this content
Log in