Mousumi Chatterjee

Inspirational

3  

Mousumi Chatterjee

Inspirational

প্রতিশ্রুতি

প্রতিশ্রুতি

8 mins
8.1K


যেদিন হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলাম আমার বদলি হয়েছে পুরুলিয়াতে সত্যিই খুবই কষ্ট হয়েছিল । ফোনে মাকে জানাতে তারও মন টা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ।আমি যে তার একমাত্র ভরসা এখন । সেই বাবা গত হওয়ার পর থেকে আমিই আগলে রাখি মাকে ।

আজও মনে পড়ে হাসপাতালে শায়িত মৃত্যুপথযাত্রী বাবার সেই কথাটা -"মা রূপা তোর ভরসায় তোর মাকে রেখে যাচ্ছি , ওর যে আর কেউ নেই তুই ছাড়া । তুই আমায় ছুঁয়ে কথা দে, ওকে তুই বুকে আগলে রাখবি,'' বলছিল আর বাবার দুচোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে যাচ্ছিল। আজও যেন সেই মূহুর্তটা আমার সামনে ভাসে। সেদিনই আমি বাবাকে ছুঁয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে মা কোনদিন ও কোনো কষ্ট যেন না পায়, তার সবসময় আমি খেয়াল রাখব আর তাকে কখনও একা থাকতে দেবো না।

তাই আজ বদলির খবরটা পেয়ে , চোখে যেন অন্ধকার দেখি । যার জন্যেই বিয়েটাও করিনি । পাঁচ বছরের প্রেম ছিল জয়ের সাথে আমার । আমি আর জয় একই সাথে ডাক্তারি করি । ও ছিল বাচ্চাদের ডাক্তার আর আমি জেনারেল ফিজিশিয়ান । জয় থাকতো গড়িয়া আর আমি যাদবপুরে। ও প্রাইভেটে ডাক্তারি করত আর আমি সরকারি হাসপাতালে ছিলাম । আমাদের বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু পারলাম না তা পূরণ করতে শুধুমাত্র বাবার প্রতিশ্রুতি রাখতে । জানি আমি বিয়ে করে চলে গেলে যে, সে মানুষটা পুরো একা হয়ে যাবে । ওদিকে জয় ও কখনও মেনে নেবে না ঘরজামাই হয়ে থাকতে।আবার মা ও কখনোই চাইবে না মেয়ের শ্বশুর বাড়ী এসে থাকতে ,তাই অগত্যা আমাকেই আমার স্বপ্নকে গলা টিপে শেষ করে দিতে হলো । জয় আমার এই সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে চায় নি, কিন্তু আমি নিরুপায় । সে আমায় অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে, যে দিনরাতের কাজের লোকও তো মায়ের জন্যে রেখে দেওয়া যায়্‌,কিন্তু তাতে আমার ঘোর আপত্তি। কারণ আজকাল প্রায়শই শোনা যায় কাজের লোকের দ্বারা গৃহকর্ত্রী খুন হয়েছে ।না, না বাবাকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আমার তা খেলাপ করি কি করে? জয় কে বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিই আমি । সেও ঠিক করেছিল বিয়েই আর করবে না কিন্তু অসুস্থ মায়ের কথা রাখতে অবশেষে বাধ্য হয়ে বিয়ে করে ।

আমার মা ও অবশ্য আমাকে অনেক বুঝিয়ে ছিলো বিয়েটা করার জন্যে, কিন্তু আমি অনড়।কিছুতেই আমার পণ ভাঙতে পারেনি কেউই। একদিকে কষ্টে আমার মন ব্যাকুল, কিন্তু অন্যদিকে মায়ের পাশে থাকতে পারব চিরকাল , বাবার কথা রাখতে পেরেছি তাতেই আমার পরম শান্তি ।

এরপর মাকে বলি- আমি পুরুলিয়ায় গিয়ে একটু গুছিয়ে নিয়ে , সপ্তাহ দুয়েক পরেই তোমায় এসে নিয়ে যাবো । আর ততোদিনের জন্যে নীলাকে দিনরাতের জন্যে রেখে যাচ্ছি । ওই তোমার সব দেখাশোনা করবে ,যদি ও আমি সমস্ত কিছু তোমায় কিনে দিয়ে যাচ্ছি , শুধু নিত্য বাজারটা করে নিও। কোনো চিন্তা নেই তোমার , জানি তুমি আমায় নিয়ে চিন্তা করছ কিন্তু একদমই ভেবো না, এই তো কটা দিনের ব্যাপার মা, আর তাছাড়া তোমার মেয়ে কিন্তু এখন অনেক বড়ো হয়ে গেছে , ডাক্তার বলে কথা। আমার কথা শুনে মা হেসে ওঠে ।

বলে ,- "ওরে পাগলি মেয়ে আমার , ছেলে-মেয়েরা যতই বড়ো হয়ে যাক না কেন ,মায়ের কাছে তারা সবসময় ছোটই থাকে বুঝলি ।" আমি তখন মাকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করতে থাকলাম।

মা বলে," দেখো মেয়ের কান্ড আমার ,ওরে ছাড় ছাড় কতো কাজ পড়ে আছে যে।"

আমি বললাম ,"জানো মা-এই বেশ ভালোই হলো , এখানে যেন বড্ড বেশী হাঁপিয়ে উঠছিলাম, ওখানে গিয়ে আমি নতুন করে বাঁচব।"

তারপর ঠিক দুদিন পরই খুব ভোরে মাকে রেখে পুরুলিয়া রওনা দিলাম বাসে ধর্মতলা থেকে । প্রায় ঘন্টা ছয়েক পর আমি আমার গন্তব্যস্হলে পৌঁছে গেলাম । ওখানকার ওই লাল মাটির দেশ,, চারিদিকে সবুজের সমারোহ আমায় যেন পাগল করে দিল। ওখানে আমাকে একটা কোয়ার্টার দেওয়া হয়েছিল আর সাথে দিনরাতের একটি মেয়ে পেলাম যার নাম টুসু। সেদিন আর গ্রামীণ হাসপাতালে যাইনি। অতো ধকল করে গেছি তাই সারাটা দিন বিশ্রামই করলাম। পরের দিন হাসপাতালে জয়েন্ করেছিলাম । ওখানকার মানুষজন খুবই ভালো , এই কলকাতার মানুষদের মতন মেকি নয়। ওরা যেন সব্বাই প্রাণখোলা সদাহাস্যময়। মনের মধ্যে কোন ঘোর প্যাঁচ নেই । ওখানকার হাসপাতালের কলিগরাও সবাই খুব ভালো ।

দিন পনের পর মাকে গিয়ে নিয়ে চলে আসি এখানে । মা ও এখানে এসে ভীষন খুশি , এই খোলামেলা জায়গায় তার উপরে এত সুন্দর মনোরম পরিবেশ ভালো না লেগে যায় ?আর তাছাড়া কতবছর মা আমার কোথাও যায় নি, শুধুই সংসারের হেঁসেল টেনেছে মুখ বুজে। আমাদের শখ-আহ্লাদ মিটিয়ে গেছে , নিজের কোনো চাহিদা দেখায় নি।

এখানে এসে আর একটা নেশায় আমায় পেয়ে বসেছে - সেটা হচ্ছে প্রাতঃভ্রমন। কলকাতায় থাকতে যা কোনদিন ও যাইনি। কিন্তু এখানে আসার পর থেকেই ভোর হলেই আমি রোজই বেরিয়ে পড়ি কি এক অজানা টানে । আমি যেন নতুন ভাবে প্রেমে পড়েছি । কে বলেছে প্রেম শুধু মানুষে মানুষের মধ্যেই হয়, প্রকৃতির প্রেমে ও পড়া যায় ।

প্রকৃতির এই মনো-মুগ্ধকর দৃশ্যে আজ আমি মুগ্ধ , ময়ূর যেন পেখম মেলে ধরেছে, প্রকৃতি আমার হৃদয়ে । এই অপার শ্যামলিমায় আমি যেন দিশেহারা, আমি যেন তুচ্ছ ঢেউ -তার অপার সৌন্দর্যের সাগরের সামনে । উঁচু পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মায়াজাল, সেখান থেকে নেমে আসা ঝরণার অশান্ত শীতলজল অস্হির বেগে বয়ে চলা- গন্তব্য নদীর বুক । এই সৌন্দর্য্যলীলা দেখে মন বারবার গেয়ে ওঠে -"পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে ॥

পাগল আমার মন জেগে ওঠে ॥

চেনাশোনার কোন বাইরে সেখানে পথ নাই নাইরে।

সেখানে অকারণে যায় ছুটে ।

হ্যাঁ হ্যাঁ আমি নতুন করে বাঁচতে চাই । আমার সেই মনের চাপা কষ্টটা যেন আজ অনেকটা লাঘব হয়েছে । দেখতে দেখতে মাস ছয়েক হয়ে গেল এখানে এসেছি ।

আজ যা ঘটনা ঘটলো তাতে আমি বেশ বিচলিত । কিন্তু আমি আমার ধৈর্য্য নিয়ে যথেষ্ট ভাবনায় ছিলাম কারণ কখন বলে ফেলি তাই বুঝতে পারছিনা। একে নতুন জায়গা । স্তব্ধ হয়ে শুধু দেখে গেলাম , আর দুচোখ দিয়ে শুধু জলের ধারা পড়ে গেল । এখনও যেন ঘটনাটা ভুলতে পারছি না।

রোজকার নিয়মে আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছি হঠাৎ দেখতে পাই কিছু লোক একটি আদিবাসী মহিলাকে তাড়া করেছে ।

মহিলাটির পরনে ছেঁড়া শাড়ি , চুল উস্কো-খুস্কো, কতদিন যে ভাল করে স্নান করেনি তার ঠিক নেই । ওর এক হাতে একটি আট কি নয় বছরের বাচ্চা মেয়ে আর কোলে একটি ছেলে পুতুল ,(গাবদু-গুবদু দেখতে পুতুলটাকে, আচমকা কেউ দেখলে মনে করবে সত্যিকারের ছেলে ,আর সত্যিই কারের বাচ্চাদের মতই জামাকাপড় পরানো পুতুলটাকে) যা দেখে আমি একটু অবাক হয়ে গেছি ।

বাচ্চা মেয়েটির পরনেও ছেঁড়া জামা, ওর চুলে ও কতদিন তেল পড়েনি, দেখে বোঝাই যাচ্ছে।

বেশ কিছু লোকজন মহিলাটিকে মারতে উদ্যত হয়, -"ধর , ধর, মার,মার, চুরি করা বার করে দেব।"

সাথে সাথে বাচ্চা মেয়েটি বলে ওঠে -"ই বাবু তুরা মুর মাকে মারিস লাই রে, উ মরে যাবে ।"

লোকগুলো ততোধিক রেগে গিয়ে বাচ্চা মেয়েটিকে ঠেলে দিয়ে বলে-"এই সর এখান থেকে , তোর মা রুটি চুরি করেছে ।"

তৎক্ষনাৎ মেয়েটি বলে ওঠে - "না রে বাবু তুরা আগে শুন ক্যানে মুর কথাটা, মুর মাটো চোর লয় রে, মুর মা চোর লয় , উরে ছাড়ান দে।"

অমনি লোকগুলো বলে ওঠে -"উঃ উঃ মুখে ওরকম সব্বাই বলে চোর নয়। আর ওই যে হাতে ধরা আছে রুটি টা ওটা কি করে অস্বীকার করবি বল?"

ওদের কথাতে সেই মহিলাটি চিৎকার করে বলে ওঠে ,"-চুরি করবো লাইতো খাবার পাবো কুথায়? তুরা দিবি খাবার মুর বেটা, বিটিকে ? উরা ক- তো-দিন না খেয়ে আছে । দ্যাখ দ্যাখ বেটাআমার না খেয়ে ক্যামনে শুকায়ে গ্যাছে।"

সবাই মিলে হেসে ওঠে বলে ,"-ওটা তোর ছেলে ! ওটা তো একটা পুতুল ।"

অমনি মহিলাটি আরো ক্ষেপে গেল - বলল,"- কি বুলছিস বটে , ইটা মুর বেটা আছে , পুতুল লয় রে। তুদের মাথ্যা মু ভিঙে দিবো "বলেই একটা বড়ো ইঁট তুলেছে।

মেয়েটি ছুটে এসে মাকে বলতে থাকে ,"- মা তু ইমন করিস লাইরে । শান্ত হ ক্যানে, শান্ত হ মা, ক্যানে বুঝিস লাইরে উটা পুতুল টো বটে , মুর ভাই লয়রে, সিতো মুদের ফিলে কবে তো চলে গ্যাছে।"

"মিছা কথা বলবিক লাই,, ইটা মুর বেটা আছে। যা, যা, ভাগ ইখান থিকে।"

ওরা বলে-," এই তোর মাকে ডাক্তার দেখাতে পারিস না?"

"মুরা টাকা কুথায় পাবো বাবু্‌?"বলে ওঠে মেয়েটি ।

তারা আবার জানতে চায় -"কেন রে তোর বাবা কোথায় ?"

সে আবার বলে ওঠে -'সে তো লাই বাবু ।"

"কেন সে কোথায় ?"

মেয়েটি পুনরায় বলে ,"-উ যেদিন টো মুর ভাইটা মরি গিলা, পরদিন মুর বাপটাও মুদের কে ফেলি পলায় গেলা। উ তারপর থিকি মুর মাটাও ক্যামনে হই গিলা।"

এতক্ষণ মহিলাটি পুতুলটিকে রুটি খাওয়াবার চেষ্টা করছিল হঠাৎ ওদের দিকে ফিরে আবার বলতে থাকে -"ই বাবুরা তুরা যাবি ইখান থিকে? তখন থিকে খালি বকরবকর করেই চলেছিস।যা ভাগ , ভাগ ইখান থিকে।" তারপরেই আবার ছুটে যায় ওদের কাছে।বলে -"পারবি বল, পারবি মুর নাগরকে ফিরায় আনতে ???

পারবি লাইরে, পারবি লাই। ই দ্যাখ্ মুর পরনে ছিঁড়া কাপড় , দ্যাখ্, দ্যাখ্" বলেই মেয়েটাকে ওদের কাছে টেনে নিয়ে যায় ।বলে - "দ্যাখ্ মোর বেটিটা ক্যামনে ছিঁড়া জামাটো পড়ে আছে , কত্তোদিন টো ভালো করে খায় লাইরে। ই দ্যাখ্ ক্যামনে মুখটো না খেয়ে খেয়ে শুকায়ে গ্যাছে। আর ই দ্যাখ্ মুর কোলের বেটা টা খেতে না পেয়ে পেয়ে ক্যামনে হয়ে গ্যাছে, কথাটো বলতে পারছে লাইরে, ক্যামনে বুবা হয়ে গ্যাছে, দ্যাখ দ্যাখ বাবু তুরা দ্যাখ ক্যানে। পারবি বল পারবি উর মুখে কথা ফুটাতে" বলেই পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে লাগল ।

এই দেখে মেয়েটি ওদের বলে ,"- বাবুরা তুরা ইখান থিকে চলে যা ক্যানে। যা যা তুরা।" বলাতেই ওরা ওদের মতো যে যার চলে গেল।

মেয়েটি মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,"- মা রে, চল মুরা ঘরকে যাই ক্যানে। তুই কাঁদিস লাই রে। মু তো তুর সথে আছি । তু কাঁদিস লাই," বলে মাকে নিয়ে যেতে যায়।

তখনই আমি ওদের ডেকে উঠি-"এই শোন, তোর নাম কি রে?"

"মোর নাম টো মহুল আছেন আর মুর মাটোর নাম হাঁড়িয়া আছেন রে ডাক্তার দিদি।"

ওর মুখে আমার পরিচয় শুনে বেশ চমকেই গেলাম বললাম ,"বাব্বা- আমি ডাক্তার তুই জানলি কি করে ?"

মেয়েটা হেসে বলল,"- দ্যাখেছি তো তুকে ওই হাসপাতালটোয় যিতে , মুদের বিহুটার যখন অসুখ হয়েছিল তখন তো তুই তো উকে সারায় দিয়েছিলিস ।"

আমি বললাম -" ও তাই , তা তুই যাবি আমার সাথে , আমার বাড়ীতে"

আজ থেকে আমার কাছেই থাকবি তোরা , তোর মাকে আমি ভালো করে দেবো, তোকে স্কুলে ভর্তি করে দেব, পড়াশোনা শিখবি, অনেক বড়ো হবি। কিরে যাবি আমার সাথে ?"

ও যেন কি ভাবতে লাগলো , ওর দুচোখ তখন যেন রঙিন স্বপ্ন দেখতে লাগল । আমার কথায় সম্বিৎ ফিরে পেল।

বলে উঠল ,"- তু ঠিক বলছিস ডাক্তার দিদি । মুর মাটো সত্যি ভালো হয়ে যাবেক? মু তুদের মতো লিখাপড়া শিখে বড়ো হবো?"

আমি বললাম," হ্যাঁ রে, মিথ্যে আমি বলিনা। এই তো তোকে ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি , তুই যতদুর পড়াশোনা করতে চাস ততদুর আমি তোকে পড়াবো, আর তোর মা ও ভালো হয়ে যাবে ।"

বলেই ওদের আমার কোয়ার্টারে নিয়ে আসলাম আর মা কে ডেকে সব বললাম। সাথে এটাও বললাম যে, মা তুমি আমায় আশির্বাদ করো, আমি যাতে আমার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারি । মা আমায় বুকে জড়িয়ে আদর করে বলে ,"- আমি জানি তুই পারবি।" বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে বললাম," - বাবা আজ আমি আরও একবার প্রতিশ্রুতি দিলাম , তুমি ও আশির্বাদ করো।"

সেদিন থেকে আমরা একসাথেই থাকতে লাগলাম ।

সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational