Partha Pratim Guha Neogy

Romance

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance

রক্তাক্ত ভালোবাসা

রক্তাক্ত ভালোবাসা

9 mins
1.1K


ইদানিং পড়াশোনার চাপ এতো বেড়ে গেছে তা মানুষের চিন্তার বাইরে। একদিকে যথেষ্ট সময়ের অভাব আর তার সাথে একটা বিশাল সিলেবাস। যেন শেষ আর হতে চায় না। উফ্! এত পড়াশুনা সহ্য হয়? বলেই কাঁধের ব্যাগটা এক রকম ফেলেই দিলো নূপুর।


আহ্! এত চটছিস কেন? দেড় মাস পর ফাইনাল পরীক্ষা তাই পড়াশুনার চাপ একটু বেশী, নূপুরকে শান্ত করতে করতে বলল অলকা ।


পড়াশুনার চাপ যেন বেশী সহ্য করতে না হয় এজন্য মেডিকেলে চান্স পেয়েও পড়লাম না। আর এখন দেখ ইংরেজিতে পড়তে এসে আজ এই প্রেজেন্টেশন, কাল ওই লেকচার; অসহ্য! রেগে বলল নূপুর।


এত রাগ করছিস কেন? পরীক্ষাটা শেষ হোক; দেখিস আমরা অনেক মজা করবো।


এই জনমে আর মজা হবে না! নূপুরের কণ্ঠে বিরক্তির সুর। আর তখনই তাদের পথ রোধ করে দাঁড়ালো নীরব । নীরব ইউনিভার্সিটির বাজে একটা ছেলে। ক্লাস করে না, লেকচার এটেন্ড করে না। কেউ তাকে কিছু বলেও না, কারণ সে ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টির ছেলে।


কোথাও যাচ্ছ ডার্লিং? সিগারেট টানতে-টানতে বলে নীরব ।


সেই জবাব কি আপনাকে দিতে হবে? নিজের কাজ করুন।


উফ্! যখন তুমি রেগে যাও তোমাকে অপূর্ব লাগে নূপুর ডার্লিং...


চল্ তো এখান থেকে! বলেই নূপুর অলকাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। নীরবের কথা শুনলে, তাকে দেখলে মেজাজ বিগড়ে যায় তার।


আচ্ছা তুই যা। আজ আমার লাইব্রেরীতে অনেক দেরী হবে। নোট বানাতে হবে তো!


আমার জন্যও কিন্তু নোট তৈরি করিস নূপুর। না হলে আমার কি হবে?


সবসময় আমার নোট পড়েই তোকে পরীক্ষা দিতে হয়। তুই নিজে কেন নোট বানাস না?


যখন তুই আছিস আমার জন্য! এত কষ্ট কেন করবো?


ইস্! ঢং দেখো মেয়েটার…


লাইব্রেরী থেকে বের হতে অনেকটাই দেরী হয়ে গেলো নূপুরের। কতক্ষণ থেকে রিক্সা, অটো খুঁজছে, কিন্তু কিছুই পাচ্ছে না। এদিকে আকাশে কালো মেঘ ভিড় করছে। এখনই ঝড় বৃষ্টি নামবে। আর রাস্তাটাও ফাঁকা, জনমানবশূন্য। তাই বেশ ভয় লাগছে নূপুরের। হঠাৎ খেয়াল করলো কালো আলখাল্লা পরা কয়েকজন তার পিছু নিয়েছে। লোকগুলোকে সুবিধার মনে হল না নূপুরের। সে ভয়ে দৌড়াতে লাগলো । সেই লোকগুলোও তার সাথে দৌড়াতে লাগলো। আর তখনই একটা হাত নূপুরকে প্রায় টেনে নিয়ে গেলো... নিজেকে কোনমতে সামলে নূপুর দেখল একজন কালো জ্যাকেট পরা লম্বা সুদর্শন যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।


আ..পনি..কে? আর আ...মি কোথা..য়!


এই জায়গা আর এই লোকগুলো কোনোটাই ভালো না। আপনি এখান থেকে চলে যান।


সেই সময়ে কোথা থেকে একটা অটো চলে এলো। যুবকটি একপ্রকার জোর করেই নূপুরকে অটোতে বসিয়ে দিলো। নূপুর তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য যেই না পিছনে ঘুরলো দেখল যুবকটি কোথাও নেই। আশ্চর্য! এত দ্রুত কেউ কোথাও কিভাবে চলে যায়? কিছুই বুঝতে পারলো না নূপুর।


এর পরের দিন ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে নিজের ক্লাসরুমে সেই যুবককে দেখে অবাক হয়ে গেলো নূপুর। এসেছিস তুই? আজ আসতে এত দেরী করলি কেন? জিজ্ঞাসা করলো অলকা ।


হ্যাঁ...ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে গেছে।


ওই দেখ নতুন ভর্তি...


কয়েকদিন পর পরীক্ষা। আর এখন নতুন ভর্তি! অবাক হয়ে বলল নূপুর।


আরে..ওই সব ছাড়! ছেলেটি কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম। চল না আলাপ করি..


কি আশ্চর্য! চিনি না, জানি না..এভাবে কিভাবে আলাপ করবো?


তুই চল তো আমার সাথে, এক রকম তাকে টেনে নিয়ে গেলো অলকা ।


হাই..নিউ এ্যাডমিশন তাই না! আপ..না..র না..ম?


অজয় । অজয় রায় ।


ও..আচ্ছা! আমি অলকা , আর ও হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নূপুর..


হ্যালো..


হ্যা..লো..অবাক হয়ে গেলো নূপুর। কালকেই তার সাথে দেখা হয়েছে অথচ সে বুঝতেই দিলো না।


তা..হঠাৎ..ইউনিভার্সিটি চেঞ্জ করলেন কেন?


ভালো লাগছিলো না তাই..দায় সারা ভাবে জবাব দিলো অজয় ।


আচ্ছা..কোনও প্রয়োজন হলে আমাদের বলবেন। আমরা তো নতুনদের সাহায্য করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকি। কি বলিস নূপুর...


হ্যাঁ..সবসময়ই তৈরি।


তারপর থেকে অজয়ের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে নূপুর। খুবই অদ্ভুত একটা ছেলে। কারও সাথে মেলামেশা করে না। সবসময় বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকে। রাজেন নামের এক ছেলের পাশে বসে ক্লাস করে। তার সাথেই শুধু কথাবার্তা বলে। ঘণ্টার-পর ঘণ্টা লাইব্রেরীতে কাটায়।


এত পড়াশুনা করলে হবে..ঘুমাবি না? রাত তো অনেক হল। কথাগুলো বলল নূপুরের মা তপতী দেবী ।


এই তো? আর একটু..তারপরই ঘুমিয়ে পড়ছি।


কিছুক্ষণ পর মায়ের দেয়া গরম দুধটুকু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে নূপুর। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে তার মনে হয় কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। কেন যেন মনে হয় অজয়ই দাঁড়িয়ে আছে? অথচ বিছানা ছেড়ে উঠতেই কাউকে দেখতে পায় না নূপুর। এসব কি ভাবছে সে? অজয় এখানে কি করে আসবে? এ সবই তার মনের ভুল। কেন জানি এরপর থেকে মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙে গেলেই মনে হয় অজয় তার পাশেই আছে!

আজ নূপুরের মন একদম ভালো নেই। প্রেজেন্টেশনটা ভালো হয়নি। তাই মনমরা হয়ে বসে আছে নূপুর।


বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর..পায়ে দিয়ে সোনার নূপুর..আঁকাবাঁকা মেঠো পথে...গান গাইতে-গাইতে টাপুরের সামনে উপস্থিত হয় নীরব । সুইট হার্ট..এখানে মন খারাপ করে কেন বসে আছো? চলো না..ক্যাফেতে যাই গল্প করি..আজ না হয় হয়ে যাক এক কাপ চা...


আমি চা পছন্দ করি না। রেগে বলল নূপুর।


ঠিক আছে..আমরা কফি খাবো। একদম গরমাগরম ব্ল্যাক কফি...বলেই নূপুরের হাত ধরে টানাটানি করতে থাকে নীরব ।


কি ব্যাপার..হাত ছাড়ুন বলছি..চিৎকার করতে থাকে নূপুর।


না..আজ আর তোমাকে ছাড়ছি না সুইট হার্ট...


আর তখনিই সেখানে এসে হাজির হয় অজয় ।


মেয়েটা যখন যেতে চাইছে না তখন হাত ছেড়ে দেওয়াই উচিত।


তুমি কে আমাদের মাঝে কথা বলার, রেগে গিয়ে বলে নীরব ।


কেউ না..শুধু একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। বলছি, হাত টা ছেড়ে দে, না হলে এর পরিণতি ভালো হবে না।


এমন ভাবে কথাগুলো বলল অজয় আর এমন ভাবে চোখ রাঙালো যে, নীরব সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হল।


ধন্যবাদ..আমাকে সাহায্য করার জন্য।


না না..এ আর তেমন কি! আসলে কতকজনকে কড়া ভাষায় কথা না বললে চলে না।


এদিকে হাঁটতে গিয়ে চেয়ারের কোণে ধাক্কা লেগে পায়ের কিছুটা অংশ কেটে যায় নূপুরের। একটু রক্তও বের হয়। রক্ত দেখে উসখুস করতে থাকে অজয় । আপনার পা দিয়ে তো রক্ত বের হচ্ছে, ব্যান্ডেজ করুন। আ...মি রক্ত দেখ..তে পারি না। আমা..র অ..স্থি..র লা..গে। কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে যায় অজয় ।


অবাক হয়ে যায় নূপুর। এত লম্বা চওড়া যুবক! আর রক্ত দেখেই কাহিল..


তারপর থেকে নূপুর আর অজয়ের দেখা সাক্ষাৎ বাড়তে থাকে। এখন তারা বেশ ভালো বন্ধু। কিন্তু নূপুর অজয়কে ভালো বেসে ফেলেছে। কেমন যেন মায়াময় মুখ অজয়ের ! যত দিন যায় ততই তার দিকে আকৃষ্ট হতে থাকে নূপুর। কেন জানি এক অজানা ভালো লাগা কাজ করে! নূপুর অজয়কে তার ভালোবাসার কথা বলতে চায়। কিন্তু সাহস পায় না। অবশেষে সে ঠিক করে পরীক্ষার শেষ দিনে তাকে তার মনের না বলা কথাগুলো বলবে। অজয় নিশ্চয়ই তাকে প্রত্যাখ্যান করবে না, এতটুকু বিশ্বাস তার আছে।


এক একটি পরীক্ষার দিন পার হয়। আর নূপুর প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। একদিন আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! পরীক্ষা শেষ করেই অজয়ের জন্য অপেক্ষা করতে নূপুর। কিন্তু অজয়ের দেখা পায় না। এই রাজেন ...অজয় কোথায়?


আমি জানি না তো নূপুর। ও তো পরীক্ষা শেষ করার আধঘণ্টা আগেই বের হয়ে গেছে।


নূপুর ভাবতেই পারছে না অজয় তার সাথে দেখা না করে, কথা না বলে চলে গেছে। নির্জন রাস্তায় আনমনে হাঁটছে সে। কোথাও কেউ নেই। হঠাৎ সে খেয়াল করলো সেই কালো আলখাল্লা পরা লোকগুলো আবারও তার পিছু নিয়েছে। জোরে দৌড়াতে লাগলো নূপুর। এবার সেই লোকগুলো তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো। সেই সময়ে কোথা থেকে কিভাবে যেন চলে আসে অজয় ! অজয় আর সেই কিম্ভূতকিমাকার লোকদের মাঝে অনেক কথা কাটাকাটি, বাকবিতণ্ডা হয়। তাদের ভাষা বুঝতে পারে না নূপুর। একসময়ে কথা কাটাকাটি মারামারির পর্যায়ে চলে যায়। সবাইকে ঘায়েল করে ফেলে অজয় । এক সময় সেই লোকগুলোও পালিয়ে যায়। অজয়ও চলে যেতে থাকে কিন্তু তার হাত ধরে ফেলে নূপুর।


কোথায় যাচ্ছ তুমি? আজ আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তুমি কোথাও যাবে না।


কি প্রশ্ন?


তুমি ওই লোকগুলোকে আগে থেকেই জানো। আর তুমিই প্রতিদিন আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকো, তাই না?


মাথা নিচু করে থাকে অজয় ।


বলো...উত্তর দিচ্ছো না কেন?


আমি তো তোমার সুরক্ষার জন্য প্রতি দিন তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি, যেন ওরা তোমার কাছে ঘেষতে না পারে।


কিন্তু ওরা কারা?


ওরা খারাপ। প্রতি নব্বই বছর পর-পর পূর্ণিমার রাতে এক নিষ্পাপ মেয়েকে বলি দেয় নিজেদের শক্তি বাড়ানোর জন্য। চিন্তা করো না, আর ওরা আসবে না।


আমার কথা এত ভাবো, তাহলে আসল কথাটা বলো না কেন যে, তুমি আমায় ভালোবাসো। আমি তোমাকে অনেক-অনেক ভালোবাসি। আমার নিজের থেকেও বেশী।


ভালোবাসা! না তা হয় না!


কেন হয় না? অন্য কাউকে ভালোবাসো? অভিমান করে বলল নূপুর।


আমি কাউকে ভালবাসতে পারি না...


কেন অজয় ?


কারণ আমি মানুষ না..আমি ভ্যাম্পায়ার।


মানে!!!


মানে আমি রক্তচোষা প্রাণী। রক্ত পান করে বেঁচে থাকি। এজন্যই সেদিন তোমার পায়ে রক্ত দেখে ছটফট করছিলাম। দেখতে চাও আমার ভেতরের আমিকে! তো দেখো.. হঠাৎ অজয়ের চোখগুলো লাল হয়ে যায়। কান লম্বা হতে থাকে। আর ঠোঁটের দু'পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে দুটো দাঁত। চিৎকার করে ওঠে নূপুর...


আ....


মাত্র কয়েক সেকেন্ডও আমাকে সহ্য করতে পারলে না তো! পারবেও না...অন্ধকারের সম্রাট আমি। অন্ধকারে বসবাস করি। এই আঁধারেই রাজত্ব করি।


নূপুর কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, এক মুহূর্তের জন্য আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এখন আমিই বলছি, তুমি ড্রাগন হও ড্রাকুলা হও আর ভ্যাম্পায়ারই হও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।


এটা অসম্ভব। ভ্যাম্পায়ার আর মানুষের মধ্যে প্রেম কিভাবে হতে পারে? আমি তো অনেক আগেই এই দুনিয়া থেকে হারিয়ে গেছি। আর এখন এই অভিশপ্ত জীবনের বোঝা টানছি। তুমি তো ফুলের মত কোমল একটি মেয়ে। তোমার জীবন তো মাত্র শুরু হয়েছে। তোমাকে আমি কিছুতেই নিজের সাথে জড়াতে পারি না।

সত্যিকারের ভালোবাসা যেকোনো মুশকিলের সমাধান করতে পারে। তুমি শুধু সাথে থেকো!


বুঝতে চেষ্টা করো নূপুর। আমি জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড, জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে তুমি। আমাকে ভুলে যাও....দেখো! তোমার জীবনেও কেউ আসবে, যে তোমাকে আপন করে নেবে। আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মত কিছু নেই। শুধু আছে এক আকাশ ভর্তি শূন্যতা।


আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করতে পারি না। কেঁদে বলল নূপুর।

প্লিজ..তুমি এভাবে কেঁদো না..


আমি তোমাকে আমার কাছ থেকে কোথাও যেতে দেবো না..অজয়ের হাত শক্ত করে ধরে বলে নূপুর।


তুমি জানো ভ্যাম্পায়াররা তার ম্যাজিকের সাহায্যে যে কারও স্মৃতি মুছে ফেলতে পারে..


তুমি.. কি..তাহলে আ..মা..র...


কথা শেষ করার আগেই নূপুরের মাথায় হাত রাখে অজয় । বিড়বিড় করে কিছু বলতে লাগল আর নূপুর পুতুলের মত দাঁড়িয়ে থাকল। না..কিছু বলতে পারছে না.. নড়তে পারছে। শুধু তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আস্তে আস্ত অজয়ের কোলে ঢলে পড়লো নূপুর..


আমায় ক্ষমা করো । এছাড়া আমার কোনও উপায় ছিল না। তোমার ভালোর জন্য নিজের নামটা তোমার স্মৃতির পাতা থেকে মুছে দিতে হল। আজ থেকে তুমি অজয় নামের কাউকে চিনবে না। এই সময়ের সাক্ষী শুধু আমরা দুজন। এই মুহূর্তটা আমাদের মাঝেই বন্দী থাকবে। না কেউ জানবে, না কেউ বুঝবে আমাদের এই অসম্ভব কাহিনী..একটি আংটি পকেট থেকে বের করে নূপুরকে পরিয়ে দিল অজয় ।


এটা সবসময় পরে থেকো। এটা তোমাকে সমস্ত অপশক্তি থেকে দূরে রাখবে। আলোয় ভরে যাক তোমার ভুবন। তুমি অনেক ভালো থেকো। আর আমি কালের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবো।


অঝোর ধারায় কাঁদছে অজয় ...রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। কারণ সে তো ভ্যাম্পায়ার। আর ভ্যাম্পায়ার কাঁদলে অশ্রু না... ঝরে রক্ত। কেন কাঁদছে সে? তার তো হৃদয় নেই। তবে কেন এত খারাপ লাগছে তার! ভেতরটা কেন এমন ফাঁকা-ফাঁকা লাগছে....নূপুরকে আস্তে করে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকে সে।


নূপুরের যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখল হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে সে।

মাথাটাও বেশ যন্ত্রণা করছে। তার মা তপতী দেবী আর অলকা পাশে বসে আছে।


তুই ঠিক আছিস তো? তিনদিন পর তোর জ্ঞান ফিরল। কাঁদতে-কাঁদতে বলল তার মা তপতী দেবী।


তুই কিভাবে অ্যাকসিডেন্ট করলি? জানতে চাইলো অলকা ।


আমি তো রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম...তারপর! আর কিছু মনে করতে পারলো না সে..মাথাটা খুব ব্যথা করছে...


থাক্! থাক্! আর কিছু মনে করতে হবে না...তুই ঠিক আছিস এটাই যথেষ্ট, চোখ মুছতে-মুছতে বলল তার মা।


এরপর থেকে যখনই নূপুর অ্যাকসিডেন্টের কথা মনে করতে চেষ্টা করে তখনই তার মাথায় যন্ত্রণা হয়। কিছু মনে করতে পারে না। কারও মায়াময় চেহারা তার চোখের সামনে ভাসে..তাও আবার আবছা। নূপুর বুঝতে পারে না এটি কার চেহারা? আর এই আংটি..নূপুর জানে না এই আংটি তার কাছে কিভাবে এসেছে? কেন যেন এই আংটি খুলতে ইচ্ছা করে না তার! মনে হয় অনেক কাছের কেউ তাকে এটা দিয়েছে..যাকে সে ভুলে গেছে কিন্তু যাকে তার মনে রাখা উচিত ছিল..


সকালের মিষ্টি রোদ যখন নূপুরের গালে এসে পড়ে তখন মনে হয় কেউ তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ঝিরি ঝিরি বাতাসে কারও উপস্থিতি টের পায় সে। আর বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন তার কানের কাছে তারই নাম ডাকতে থাকে.. নূ...পু..র..

এই গলার স্বরটি অনেক পরিচিত কারও! কিন্তু কার? তা মনে করতে পারে না নূপুর। এটা কি পুরোটাই তার কল্পনা বা দুঃস্বপ্ন, না এর বাস্তব অস্তিত্ব আছে?



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance