Tuhi ghosh

Tragedy Classics

4  

Tuhi ghosh

Tragedy Classics

সার্ভিস বিফোর সেলফ

সার্ভিস বিফোর সেলফ

5 mins
11


আজকাল ডিউটি সেরে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। ডাক্তারি পাশ করেছি সবে তবে ইন্টার্ন চলছে। আর তার জন্য আমাকে আসাম আসতে হয়েছে। আমি যেখানে ডিউটি করি সেখান থেকে আমার হোস্টেল টা বেশ অনেকটাই দূর। আজকে রাতে ওয়ার্ডে রোগীর চাপ না থাকলেও বিভিন্ন কাজ করতে করতে ফিরতে বেশ লেট হয়ে গেল ।স্বভাবতই রাস্তায় কোনো গাড়ি পেলাম না। পাহাড়ি রাস্তা তাই রাত হয়ে গেলে গাড়ি পাওয়া খুব মুশকিল হয় তাই ভাবলাম শর্টকাট রাস্তা ধরেই হোস্টেল আসার চেষ্টা করব । আসতে আসতে রাস্তায় মোমোর দোকান খোলা ছিল দেখে পেত ভরে মোমো খেলাম।

মোমো খেয়ে হোস্টেলের রাস্তা ধরলাম; যে রাস্তাটা দিয়ে আসব বলে ঠিক করেছিলাম সে রাস্তাটা সবাই বলে খুব একটা ভালো রাস্তা নয়। মেয়েদের জন্য একেবারেই ভালো নয়। কিন্তু আমি যদি শর্টকাট না ধরি তাহলে আমি আজকে পৌঁছাতে পারবো না তাই বড় টর্চটা নিয়ে অতশত না ভেবে হোস্টেলের দিকে হাঁটতে স্টার্ট করলাম ।আমার বন্ধু রা সবাই আগেই হোটেল পৌঁছে গেছে শুধু আমার আর আমার একটি বন্ধুর আজকে একটু বেশি কাজ ছিল কিন্তু আমার বন্ধুটি লোকাল তাই সেআগেই বাড়ি পৌঁছে গেছে। মোমো খেয়ে মনটা এমনি ভালো ছিল তাই আমি মনের আনন্দে গুনগুন করতে করতে হোস্টেলের দিকে হেঁটে যাচ্ছি ।10 মিনিট হেঁটেছি মনে হল কেউ যেন আমার পিছন পিছন আসছে কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছি না । তাই একবার পিছন ফিরে তাকালাম না কেউ তো নেই। প্রথম কথা পাহাড়ি রাস্তা তার উপরে আবার বিকেল এ বৃষ্টি হয়েছে তাই বেশ শিরশির করছে শরীর টা।আমি জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে আর একহাতে টর্চ নিয়ে গুনগুন করে হাঁটতে শুরু করলাম । ডাক্তারি নিয়ে পড়েছি বলে কঙ্কাল নিয়েও কাজ করেছি তাই রাতে ভূতের ভয় আমার সেরকম নেই কিন্তু ঠান্ডা তে একটু গা শিরশির করছিল। ঘড়িটা দেখে নিলাম ঘড়িতে যখন পৌনে বারোটা বেজে গেছে এরপর শীত টা আরো বেশি জাঁকিয়ে ধরলো আমাকে। আমি পায়ের গতি বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু যা ঠান্ডা তাতে পসিবল হচ্ছেনা ও আর বারবার সাইড এ দেখছি ; দেখছি যদি কোন গাড়ি পাওয়া যায়। এভাবে কতক্ষন হেঁটেছি জানিনা কিন্তু হঠাৎ থমকে গেলাম কিছু আওয়াজ শুনে ;মনে হল পেছন থেকে কেউ আসছে আমি প্রথম থেকেই অকুতোভয় আর আমি সব সময় ফোল্ডিং লোহার রড ,পেপার স্প্রে, টর্চ এগুলো নিয়ে চলাফেরা করি; ও রাস্তায় কোনদিন আমাকে সেরকম বড় বিপদে পড়তে হয়নি কিন্তু তাও সেফটি ফার্স্ট। পিছন থেকে কারুর আসার শব্দ পেয়ে ব্যাগ থেকে আস্তে আস্তে ফোল্ডিং কাভার করলাম নিজের মতো রাস্তায় চলছি এইসময় হঠাত করেই তীব্র বুলেটের হেড লাইটের আলো এসে পরলো আমার চোখে। কিছুক্ষণের জন্য থতমত খেয়ে গেলাম। বুলেটের আওয়াজ আমি পাইনি তাহলে এটা কি চোখের ভুল এটা এত তাড়াতড়ি কোত্থেকে এলো? হাওয়ায় ভেসে এলো নাকি। এসব ভাবতে ভাবতে লক্ষই করিনি ভদ্রলোক আমার সামনে এসে কখন দাঁড়িয়েছেন ।ভদ্রলোক বললে ভুল হবে তার পরনে ছিল সেনা পোশাক কাঁধে বন্দুক মাথায় টুপি আমার সামনে এসে তিনি একগাল হেসে জিজ্ঞেস করলেন বেহেন জি ইতনি রাত কো ইধার ক্যা কার রাহে হো কিধার জানা হ্যা? একটু অস্বস্তি বোধ করে বললাম আমি হসপিটালে ইন্টার্ন করতে এসেছি। এখন তো এখন ফিরতে রাত হয়ে গেছে আমি হোস্টেল যাব। সেনা জওয়ান টি কি একটা ভেবে বললেন আরে ব্যাহেন আপকো পাতা নেহি ইয়ে রাস্তা আচ্ছা নেহি হ্যা। লারকি ও কে লিয়ে তো বিলকুল ভি নেহি। আমার কাছে সত্যি কোন উত্তর ছিল না আমি বললাম যে রাত হয়ে গেছিল তাই কোন গাড়ি পাচ্ছিলাম না তাই শর্টকার্ট নিতে হলো। সেনা জওয়ান কিছুক্ষণ ভেবে বললেন চালিয়ে হাম আপকো হোস্টেল ছোড় দেতা হুঁ। আমি একটু ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম এত রাতে আপনি এখানে কি করছেন? তিনি আর একবার হেসে বললেন আরে বেহেন হাম পেট্রোলিং মে নিকলে থে আপকো ইসস রাস্তা সে যাতে হুয়ে দেখা তো হাম ভি পিছে পিছে অা গায়ে।

আমিও আর বেশি প্রশ্ন না করে উঠে বসলাম। এদিকে আধঘণ্টার মধ্যে আমি আমার হোস্টেল এর সামনে চলে এলাম। হোস্টেল এর বাইরে লাইট এ আমি দেখলাম সেই সেনা কে সুপুরুষ যাকে বলে। ইউনিফর্মে আসাম রাইফেল লেখা আছে ।আমাকে দেখে বলল ম্যাডাম জি আপ ঘর মে যাইয়ে। অর আইন্দা ইসস রোড পে আকেলে কাভি মাত জানা; আজ হাম হ্যা কাল হাম নেহি রেহে তোহ। মন টা এই কথা শুনে ভারী হয়ে গেলো। কথা না বাড়িয়ে তাকে ছোট্ট একটা থ্যাঙ্ক ইউ বলে আমি চলে এলাম। পরেরদিন একটু দেরি করে হসপিটাল গেলাম হসপিটালে গিয়ে শুনলাম আমায় আর্মি হসপিটাল এ আজ ইমার্জেন্সী ডিউটি করতে যেতে হবে। আমরা ইন্টার্ন করতে এসেছিলাম কিন্তু এইভাবে আর্মি হসপিটাল এ যেতে হবে শুনে একটু অবাক হলাম যাই হোক পুরো টীম হাজির হলাম ওখানে। পৌঁছে দেখলাম চারিদিক হুলুস্থুল পড়ে গেছে। খোজ নিয়ে জানতে পারলাম কাল রাতে patroling এর সময় অসম রাইফেল এর জওয়ান দের ওপর অতর্কিতে হামলা হয়েছে। প্রায় ৪০ জনের মতো সেনা জওয়ান got injured। তিন জন শহীদ হয়েছেন। আমরা কথা না বাড়িয়ে ছুটলাম injured দের কাছে। কিছুক্ষণ পর এক সেনা জওয়ান এসে বললেন আমায় ম্যাম ডেথ সার্টিফিকেট ভি ইস্যু কারনা হ্যা আপ প্লিজ মেরে সাথ আইয়ে। আমি গেলাম তিন জনের ডেথ সারটিফিকেট করতে। কিন্তু আমি তো এটা পারবোনা করতে তাই সিনিওর ম্যাম এর সাথে গেলাম সার্টিফিকেট এ ম্যাম এক এক করে নাম লিখছেন শেষের নাম টা সেনার মুখে শুনে আমি চমকে উঠলাম " দিগ্বিজয় শর্মা। আমি টাইম টা জানতে চাইলে তিনি যা বললেন তাতে আমি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না। হামলা হয়েছে রাত ১০.০০ সময় আর তিনি স্পট এই শহীদ হন। আমি কাল রাতে আমার হোস্টেল এর বাইরে দাঁড়িয়ে অসম রাইফেল এর badge টার সাথে তার নাম টাও; দেখেছিলাম দিগ্বিজয় শর্মা আর তখন রাত ১২.১৫ বেজে গেছে কিন্তু সে যদি স্পট এ শহীদ হন তাহলে কে তাকে ছেড়ে দিল হোস্টেল পর্যন্ত? এত কথা বা কে বললো তাকে। পাহাড়ি ঠান্ডা তেও ঘামতে শুরু করেছি আমি। সম্বিত ফিরল এক অধিকারীর ডাকে। তাড়াতাড়ি রুম টা ছেড়ে বেরিয়ে এলাম, ম্যাম কে কিছু বললাম না। বিকালের মধ্যে তিন জনের কফিন বন্দি দেহ রওনা দিল তাদের পরিবারের উদ্যেশ্যে। শেষ বারের মত আমি দেখলাম তাদের আর তাকেও। তার কফিন বন্দি দেহর কাছে যেতে মনে হলো সে যেনো বলছে আমায় বেহেন জি মাত জানা উস রাস্তে সে ফির কাভি হার টাইম হাম নেহি রেহেঙ্গে আপকে লিয়ে। কষ্ট টা দলা পাকিয়ে এলো গলায়; ছোট বেলাতে বাবা কে হারিয়েছি বাবা ও সেনা বাহিনী তে ছিলেন। বাবার পথ না ধরলেও সার্ভিস বিফোর সেলফ আদর্শে বড় হয়েছি। আজ দেখলাম মৃত্যুর পর ও কিভাবে সে ডিউটি করতে পারে। চোখ টা ভিজে এলো অজান্তে মনে মনে স্যালুট করলাম আর হাত নেড়ে সবার অজান্তে বিদায় জানালাম তাকে। সেও মনে হলো এক গাল হাসি এসে বিদায় দিল আমায় যা শুধু আমি শুধু আমি দেখতে পেলাম।


তুহি ঘোষ


Dedicated to Indian army 


Pic-from Google


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy