Ankit Bhattacherjee

Horror Fantasy Others

3  

Ankit Bhattacherjee

Horror Fantasy Others

স্বপ্ন পরীর কবলে

স্বপ্ন পরীর কবলে

5 mins
820


১ 

পৃথিবীতে সব থেকে রহস্যময় জিনিস বোধহয় স্বপ্ন। সাধারনত আমরা স্বপ্নে যা দেখি তা ঘুম ভাঙতেই মুছে যায় অথবা কিছুটা আবছা স্মৃতির মত মনে থেকে যায়, কিছু সময়ের জন্য। কিন্তু গতকাল রাতে দেখা স্বপ্নটা যেন কোনো পছন্দের সিনেমার মতই পুরোটা মাথায় গেঁথে গেছে অর্জুনের। ভারি অদ্ভুত ছিল সে স্বপ্ন। স্বপ্নের নৌকো চড়ে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা কোনো এক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল সে, কোনো এক অপরূপ সুন্দরী মেয়ের হাত ধরে। শুধু মেয়ে বললে ভুল হবে, সে ছিল যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোনো পরী। অর্জুন যেখানে যেতে চাইছিল, সেই পরী চোখের পলকে সেখানেই তাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসছিল। স্বপ্নের শেষে বিদায় নেওয়ার আগে পরী তাকে বলে ঘুম থেকে উঠে অর্জুন যদি তার একটা সুন্দর ছবি আঁকতে পারে, তাহলে সে আবার আসবে পরের রাতের স্বপ্নতে। সকালে উঠেই সেই কাজে লেগে পড়লো অর্জুন। আঁকার হাত তার খারাপ না আর তাছাড়া সেতো সারা রাত পরীর দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ছিল তার অপূর্ব রুপে মোহিত হয়ে। তাই খুব সুন্দর করে একটি পেন্সিল স্কেচ করে, অর্জুন ফুটিয়ে তুলল পরীর মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য। সেটি বাবা মাকে দেখিয়ে তার স্বপ্নটির কথা জানাতে, তারা বেশ মজাই পায় এবং বলে এইরকম একজনকেই তারা ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য খুঁজে বের করবে। সারাটা দিনই অর্জুন শুধু পরী-টির ছবিটা দেখতে থাকলো আর মনে মনে ভাবছিল যে আজ রাতে কোথায় তাকে নিয়ে যাবে সেই পরী। রাতে অর্জুনরা একটু তাড়াতাড়ি-ই খেয়ে শুয়ে পরে। যদিও অর্জুন পড়াশোনা করে, রাত করেই ঘুমাতে যায়। কিন্তু আজ তার পড়াশোনার কোনো ইচ্ছা নেই। তাই রাতের খাবার জলদি শেষ করে শুয়ে পড়লো অর্জুন। 

আজ রবিবার, অর্জুন একটু দেরিতেই ঘুম থেক ওঠে। কিন্তু অনেকটা বেলা হয়ে যাওয়ার পরও সে ঘুম থেকে উঠছেনা দেখে বাবা মা একটু অবাকই হলেন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ডাকার পরও যখন কোনো সাড়া দিলনা অর্জুন, এবার তাদের মনে ভয় হতে শুরু করলো। অর্জুনের শরীর খারাপ হয়নি তো? কিন্তু গতকাল রাত পর্যন্ত সে তো ঠিকই ছিল। তাই ছেলের নিশ্চয় কোনো বিপদ হয়েছে, এই আশঙ্কায় ভীত হয়ে, ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন তারা। আর ভেতরে প্রবেশ করা মাত্র যে চরম অপ্রত্যাশিত ও ভয়ঙ্কর দৃশের সম্মুখীন তাদের হতে হলো, তা তাদের বোধ, বিচারেরে যেন অনেক উপরে। অর্জুনের গোটা শরীরটাই ধনুকের মত বেঁকে বিছানার ওপর শুয়ে কিন্তু সেটা পিছনের দিকে ঝুঁকে। চোখের মনি দুটো উল্টে গিয়ে শুধু সাদা অংশটি দেখা যাচ্ছে। মুখটাও খোলা অবস্থায় বেঁকে গিয়েছে। আর সব থেকে আশ্চর্যের যেটা তা হল গলার কাছে দুটো ফুটো যেখান থেকে এখনও রক্ত বেরিয়ে চলেছে। ঠিক যেন কোনো বিশাল আকৃতির বিষাক্ত সাপ তার বিষধর দাঁত দুটো বসিয়ে দিয়েছে প্রতিশোধের নেশায়। ডাক্তারবাবু এসে জানালেন আর কিছু করার নেই, সব শেষ। কিন্তু মৃত্যুর কোনো সঠিক কারণ তিনি বলতে পারলেননা। কারণ শরীরে যদি বিষক্রিয়া হত, তবে শরীর নীল হয়ে যেত। অথচ অর্জুনের শরীর যেন একটু বেশি সাদা বা ফ্যাকাসে মনে হচ্ছে। ঠিক যেন কেউ রক্ত চুষে নিয়েছে ছেলেটার শরীর থেকে।


৩ 

মাথা ঘুরে পড়ে যেতে গিয়েও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে মেঝেতে বসে পরলেন অর্জুনের বাবা। হঠাৎই তাঁর চোখ পড়লো খাটের নিচে পড়ে থাকা একটা সাদা কাগজের দিকে। তাঁর কি মনে হতে উনি কাগজটা বের করে আনলেন। কাগজটা উল্টে দেখতেই যেন এক আতঙ্কের স্রোত তাঁর রক্তে মিশে গেলো। একটি পরীর ছবি পেন্সিল স্কেচ করা আছে তাতে, যেটা গতকাল তাঁর ছেলে এঁকেছিল। কিন্তু গতকালের ছবিতে থাকা সেই পরী আর আজকের পরীর মধ্যে যেন এক বিশাল পার্থক্য চোখে পড়ছে। তাঁর বিস্ময়ের ঘোড় যেন আরও শতগুণ বেড়ে গেলো। তিনি যা দেখছেন এবং অনুভব করছেন, তা সাধারন বুদ্ধি দিয়ে বিচার করা অসম্ভব। চুলগুলো কি আগের দিন এরকম এলোমেলো ছিল? সুন্দর গোলগাল মুখটা যেন একটু শুকিয়ে গিয়ে লম্বাটে মনে হচ্ছে। চোখের মনি গুলো যেন আরও বড় বড় মনে হচ্ছে। চোখের দু-কোণের লাল শিরা – উপশিরা গুলো ঢেকে ফেলেছে মণি দুটোকে আর সেগুলি যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। সারা মুখ জুড়ে যেন একটা পৈশাচিক হাসির আর পরম তৃপ্তির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। আর সব থেকে লক্ষ্যনীয় বিষয় হয়তো পরী-টার দাঁতগুলো।গতকালের সেই ছবিতে কি পরী-টার এত বড় বড় দুটো দাঁত মুখের দুপাশে আঁকা ছিল? আর শুধু তাই না, সেই দাঁত দিয়ে চুইয়ে পরা লাল রঙের শুকনো দাগটা যে আসলে অর্জুনেরই রক্ত, সেটা বুঝতে বেশি অসুবিধা হলনা তার বাবার। গতকালের ছবিতে থাকা অপূর্ব সুন্দরী সেই স্বপ্নপরী-টি যেন অলৌকিক ভাবেই অতি ভয়ঙ্কর রূপিণী এক স্বপ্ন-পিশাচ হয়ে ফুটে উঠেছে ওই ছবিতে।   

৪ 

এমন এক ভয়ানক স্বপ্ন দেখে আঁতকে উঠলেন অর্জুনের বাবা। প্রচণ্ড এক আতঙ্ক তাঁকে ঘিরে ধরেছে তখন। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনের দিকে চেয়ে দেখলেন সময়টা, রাত তখন প্রায় ২টো। আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে তিনি ছুটে গেলেন তাঁর ছেলের ঘরে। এক দারুন ভয়ে তার সমস্ত শরীর তখন কাঁপছে। না জানি কোন ভয়ঙ্কর দৃশের সম্মুখীন তাঁকে এখন হতে হবে, যখনই তিনি ঘরের আলোটি জ্বালবেন। তাঁর শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে, তবে আর অপেক্ষা করলে হয়তো আরও বেশি দেরী হয়ে যাবে। এমন সময় অর্জুন খুব জোড়ে চেঁচিয়ে ওঠে। “বাঁচাও, বাঁচাও, আমায় ছেড়ে দাও…” বলে সজোরে আর্তনাদ করতে শুরু করে। অর্জুনের বাবা মুহূর্তের মধ্যে ঘরের আলো জ্বেলে দেখলেন অর্জুন উল্টে বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে। সজোরে ধাক্কা মেরে অর্জুনকে ঘুম থেকে জাগালেন তার বাবা। অর্জুনের চোখে মুখেও যেন আতঙ্ক আর ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। অর্জুনের বাবা দেখতে পেলেন তাঁর ছেলের গলায় আঙুলের লাল ছাপ দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, অর্জুনের গলা কেউ টিপে ধরেছিল। তাই অর্জুন কাশছে এবং তার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। অর্জুনকে জলের বোতলটা দিয়ে, তাকে বিছানায় বসানো হল। দুজনেরই বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি। অর্জুন তখনও বাবাকে জড়িয়ে ধরে থরথর করে কাঁপছে। কথা বলার মত অবস্থায় সে নেই। এদিকে অর্জুনের বাবা শুধু মনে মনে ভাবছেন, আর একটু দেরী করলে, কি সর্বনাশ যে ঘটে যেত, সেটা ভবেই তাঁর রক্তে যেন ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর আবহে বিস্মিত হওয়ার মত ঘটনা আরও কিছুটা বাকি ছিল। অর্জুনের বাবা দেখলেন সেই পরীটার ছবিটি অর্জুনের বালিশের নীচ থেকে উঁকি দিচ্ছে। অর্জুন হয়তো সেটা নিয়েই শুয়েছিল। কিন্তু সেটা হাতে তুলে নিতেই দুজনে যা দেখতে পেল, তা স্বাভাবিক বুদ্ধি দিয়ে বিচার করা যায়না। স্বপ্নেতে অর্জুনের বাবা ঠিক যেমন পরিবর্তন দেখেছিলেন, ওই পরীর ছবিটিতে, ঠিক সেই সেই পরিবর্তন এই ছবিটিতেও চোখে পড়ছে তাঁর। শুধু মাত্র একটি জিনিস এই ছবিটিতে এখনও নেই। আর একটু দেরী হলে হয়ত সেটাও দেখা যেত পরীটার ছবিটায়। আর সেটা হল ওই পরীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা দুটো বড় বড় দাঁতের গায়ে লেগে থাকা রক্তের দাগ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি একটা দেশলাই জ্বালিয়ে, ছবিটাকে পুড়িয়ে ছাই করে ফেললেন। মুহূর্তের মধ্যেই গোটা ঘরটা যেন কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেলো আর তার সাথে এক পচা দুর্গন্ধ নাকে এলো দুজনেরই। এরপর ওই সমগ্র কালো ধোঁয়া এক জায়গায় এসে কুণ্ডলী পাকাতে লাগলো, আর তারপর সেটি যেন একটি ছায়া মূর্তির মত মুখ ফুটিয়ে তুলল। দুজনের কাউরই চিনতে অসুবিধা হলনা সেই মুখ টিকে – সেই স্বপ্ন-পরীটির পিশাচীনি রুপ। কিরকম যেন একটা পৈশাচিক হাসি খেলে গেলো সেই কালো ধোঁয়া দিয়ে তৈরি হওয়া মূর্তিটির মুখে। তারপরই সেটি জানলা দিয়ে বেরিয়ে বাতাসে যেন মিলিয়ে গেলো।     



Rate this content
Log in