অধিনায়কত্ব
অধিনায়কত্ব
অডিটোরিয়ামটা প্রায় ভরে উঠেছে। সবাই নিজের ছেলেকে নিয়ে বসে আছে, অন্য বাচ্চাদের মায়ের সঙ্গে কথা বলছে। তবে ঋতমা দেবী একেবারেই চুপ। চিন্তায় উনার মাথা কাজ করছে না। ছেলেটা যে এত বোকা কি করে হয় বুঝতে পারছেন না কিছুতেই। ফাইনাল পরীক্ষার সময় কেউ নিজের পরীক্ষা বাদ দিয়ে অন্যকে সাহায্য করে!! নিজের অঙ্ক বাদ দিয়ে ক্লাসের বাকিদের অঙ্ক করে দেওয়ার জন্য খাতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ঋতুরাজের। ছেলেটা পড়াশোনায় এত ভালো কিন্তু এবছর যদি ও ফেল করে!! এসব ভাবতে ভাবতে ঋতমা দেবী খেয়াল করলেন স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ স্টেজে এসে উপস্থিত হয়েছে। বেশ কিছুটা বক্তব্য রাখার পর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা শুরু হলো।
ক্লাস ফাইভ সিক্স সেভেনের ফল ঘোষণা হওয়ার পর ক্লাস এইট-এর ফল ঘোষণা হবে এবার। ঋতমা দেবী তো আশা ছেড়েই দিয়েছেন যে ছেলে খুব ভালো রেজাল্ট করবে।
প্রথম হয়েছে পীয়ূষ, পীয়ূষ-এর মা দেবাঞ্জলি দেবী তো খুশিতে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে লাগলেন। তার সঙ্গে বিদ্রুপের হাসি হাসলেন ঋতমা দেবীর দিকে তাকিয়ে। ঋতমা দেবী বেশ বুঝলেন উনি টিটকিরি করছেন, দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
এরপর দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর নাম ঘোষণা করা হলো "ঋতুরাজ সরকার"।
ঋতমা দেবী ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন যাক ফেল তো করেনি। ঋতুরাজ স্টেজে উঠতেই ওর গলায় মেডেল পড়িয়ে দেওয়া হলো। তার সঙ্গে শার্টে একটা ব্যাচ পড়িয়ে দেওয়া হলো। ব্যাচটা দেখে ঋতুরাজের মতোই বাকিরা খুব অবাক হলো। পীয়ূষ আর ওর মা তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে বিরোধীতা জানিয়ে বলল, "ক্যাপ্টেন এর ব্যাচ তো ক্লাসের ফার্স্ট বয় পায়"।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ডঃ সুপ্রিয়া মাহাতো মৃদু হেসে মাইকটা হাতে তুলে নিলেন। সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, "ক্যাপ্টেনের ব্যাচটা তাকে মানায় যে সকলকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে। ঋতুরাজ পরীক্ষার হলে্ বসে বাকিদের সাহায্য করে ঠিক করেনি তবে যে ছেলেটা নিজের অঙ্ক ফেলে রেখে বাকিদের সাহায্য করেছে সে সবর্ত্র নিজের আগে বাকিদের গুরুত্ব দেবে। আর এই গুণ টা ওকে ওর অধিনায়কত্বে সফলতা এনে দেবে"।
দেবাঞ্জলি দেবী ও পীয়ূষ চুপসে গেল। ঋতুরাজের ক্লাসের সব ছেলেরা আনন্দে চিৎকার করে উঠল। সবাই নতুন ক্যাপ্টেন পেয়ে খুব খুশি।
ঋতমা দেবীর চোখ দুটো জলে ভরে উঠেছে। ঋতুরাজ স্টেজ থেকে নেমে ছুটে এসে মা'কে জড়িয়ে ধরলো।