Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Piyali Mukherjee

Abstract Inspirational

4.5  

Piyali Mukherjee

Abstract Inspirational

দেশ : আত্মত্যাগ

দেশ : আত্মত্যাগ

4 mins
378


#সত্যি স্বাধীনতার গল্প

'দেশ' নামক শব্দের ব্যাপ্তি অপরিসীম। দেশ কোনো স্থান নয়, কোনো মানচিত্র নয়, কোনো ভৌগোলিক সীমানা নয়, বরং দেশ আমাদের আবেগ, আমাদের পরিচয়, আমাদের ভালোবাসা । এক সোঁদা মাটির গন্ধ, লাল মাটির উষ্ণতা, শাল-পিয়ালের জঙ্গলের গভীরতা , পর্বতের স্তব্ধতা, এমন নানা বৈচিত্র্যে ভরা, কৃষ্টি-সংস্কৃতির মিলন মধুরতায় পূর্ণ আমাদের দেশ, আমাদের মা ।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেই দিনের বিপ্লবের কথা, বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ, বীরত্ব ও সাহসিকতার কাহিনী এখনও অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, নিজ পরিচয়ে উন্নীত। অন্য দিকে 'স্বাধীনতা' হলো সেই সাহস, যা আমাদের জীবনের একটা সময়ে কোনো না কোনো স্বপ্নকে পূরণ করতে প্রয়োজন হয়।

স্বাধীনতার ৭৫ বছরের পূণ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে সেই দিনের, সেই স্বপ্নের কথা বলাই এই গল্পের মূল উপজীব্য।

চূড়ান্ত ঘোরালো পরিস্থিতি, দিল্লী থেকে কাশ্মীর যাওয়ার রাস্তা তখন ভয়াবহ বিপদসংকুল, দুর্গম। যুদ্ধবিমান নামার কোনও উপায় নেই বললেই চলে। অল্প কিছু সৈন্য-সামন্ত নিয়ে আকাশ পথে রওনা দিলেন কর্নেল রঞ্জিত রাও। 

দিনটা ছিল ২৭ অক্টোবর, ১৯৪৭। স্বাধীন ভারতের প্রথম যুদ্ধযাত্রা। দেওয়ান রঞ্জিত রাও এসে নামলেন শ্রীনগর এয়ারপোর্টে। লোকবল, যোগাযোগ, অস্ত্র সবই সংখ্যায় খুব বেশি নয়। সংখ্যাতেও তারা নগণ্য। কোনোরকমে হানাদারদের বাধা দিলেন বটে, কিন্তু তারা সকলেই নিহত হলেন। অতর্কিত আক্রমনে কাশ্মীরের অনেকটা অংশেই ঢুকে এল শত্রুসৈন্য। শুরু হল প্রথম ভারত-পাক যুদ্ধ।

গিলঘিটের তুষারাবৃত অনেকটা অঞ্চল ইতিমধ্যেই হাতিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। পাঁচ হাজার দুর্ধর্ষ উপজাতি যোদ্ধা রওনা দিল শ্রীনগর দখল করতে। হরি সিং বাহিনীর প্রধান রাজেন্দ্র সিং যুদ্ধে রওনা দিলেন মাত্র শ’দেড়েক সৈন্য নিয়ে। বিপক্ষে সংখ্যায় প্রায় দশগুনের বেশি। উরিতে পুরো দুটো দিন ঠেকিয়ে রাখার পর ব্রিগেডিয়ার রাজেন্দ্র মারা গেলেন এক অসম যুদ্ধে। এবার আত্মসুখসর্বস্ব , অপদার্থ রাজা হরি সিং এর টনক নড়ল, সদ্যগঠিত ভারত সরকারের কাছে তখন তিনি প্রার্থনা করলেন - ‘দোহাই, শ্রীনগর রক্ষা করুন’।

ব্রিগেডিয়ার রাজেন্দ্রের পর এক অসম যুদ্ধে আবার মারা গেলেন কর্ণেল রঞ্জিত রাও। দিল্লীতে অবশ্য তখনো অনেকে ভেবে চলেছে এই হানাদাররা বুঝি একদল গুন্ডা। ইউনিট, সাব ইউনিট, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে শিক্ষিত কমান্ডারদের নেতৃত্বে যখন একের পর এক এলাকা দখল করতে থাকল তখন বোঝা গেল এরা মোটেও ভাড়াটে হানাদার নয়, সুশিক্ষিত যোদ্ধা, যাদের পেছনে আছে একটা গোটা দেশ। হাতে তাদের, গ্রেনেড , মেশিনগান, উচ্চ ক্ষমতাশালী রাইফেল, এমনকি কামান পর্যন্ত। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তারা তছনছ করে দিল বারামূলা শহর। মারা গেলেন গাড়োয়ালী সৈন্যদের প্রধান, মেজর সোমনাথ শর্মা।

স্ট্র‍্যাটেজিক কারণে ঝানগড় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। জায়গাটি ছিল মীরপুর আর কোটলির সংযোগস্থলে। এই অংশ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পড়ল দুর্ধর্ষ ব্রিগেডিয়ার মহম্মদ ওসমানের ওপর। ওসমান এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র‍্যাজুয়েট, স্যান্ডহার্স্ট রয়্যাল মিলিটারি একাডেমির লাস্ট ভারতীয় ব্যাচের ছাত্র। বর্মায় ব্রিটিশ আর্মিতে অপরিসীম কর্মদক্ষতার ফলে নেটিভ হওয়া সত্ত্বেও তিনি দ্রুত প্রমোশন পান। জানা যায় সেনাবাহিনী ভাগ বাঁটোয়ারার সময় "বেলুচ রেজিমেন্টের" অন্যতম সর্বোচ্চ মুসলিম অফিসার হওয়ার কারণে পাকিস্তান তাঁকে অফার দেয়, সে দেশে জেনারেলের পদটা কালক্রমে তারই হবে। কিন্তু তিনি সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ তার জন্মস্থান উত্তরপ্রদেশের বিবিপুর। ভারতবর্ষ ছেড়ে যেতে চাননি কোনো মূল্যেই। দেশভাগের সময় ছিলেন পশ্চিম পাঞ্জাবে, দাঙ্গার সময় নিজের জীবন বিপন্ন করে বাঁচিয়েছিলেন বহু শিখ ও হিন্দু পরিবারকে। এতবড় অফিসার হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রায়ই সাধারণ সৈনিকদের খোঁজখবর নিতেন। এসে বসতেন তাদের ডিনার টেবিলে, তাদেরই সাথে। মদ স্পর্শ করতেন না, গান্ধী হত্যার পরদিন থেকে মাছ-মাংস ত্যাগ করে হয়েছিলেন নিরামিষাশী। ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অনাড়ম্বর, তার মাইনের একটা অংশ ব্যয় হত গরীব শিশুদের শিক্ষায়।

ইংল্যান্ডে থাকার সময় এক ভোজসভায় এক মুসলিম মৌলবাদী নেতা তার ডাইনে খেতে বসেছিলেন। ওসমানের পরিচয় পাওয়ার পর অত্যন্ত অন্তরঙ্গতার সুরে বলেন " ও আপনি জাতিতে মুসলমান? আমিও তাই। বড়ই সুখের কথা..." বাক্য শেষ করতে না দিয়ে ওসমান বলেছিলেন," মাফ করবেন স্যার, আমি জাতীতে ভারতীয়। আর ধর্মে ইসলাম।"

যেদিন ওসমান চার্জ নিলেন তার দুদিন পরেই বাহিনীর ঘটল পরাজয়। পিছু হটতে হল কয়েক মাইল। পালটা আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেন জেদী সেনাপতি, স্থানীয় বালকদের নিয়ে গড়ে তুললেন অসামরিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, নিখুঁত করলেন সিগনালিং ব্যবস্থা, সহকর্মীদের প্রত্যয় দিলেন।তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় বাহিনী কোটা পুনর্দখল করেন।কিন্তু প্রতিপক্ষ সংখ্যায় ছিল অনেক অনেক বেশি, তারা পালটা আঘাত হানতে ছাড়ল না। তিন দিক থেকে তাদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হল ভারতীয় আর্মি। শত্রুসৈন্য এসে পড়েছে একদম , "আরো লোকবল চাই তার, কোথায় পাবেন সৈন্য ? " ওসমান হাঁক দিলেন , "যে যেখানে আছ অস্ত্র হাতে সামনের সারিতে এসো।" ইঞ্জিনিয়ার, সরবরাহ কর্মী, রাঁধুনি, কেরানী, সকলকে নামালেন যুদ্ধক্ষেত্রে। তাঁর রণকৌশল আর প্রচন্ড প্রতি-আক্রমণে দখল হল নৌশেরা। গায়কোটের অরণ্য অতিক্রম করে লক্ষ্য এবার ঝানগড়। যা কব্জা না করা অব্দি ওসমান প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ক্যাম্পের মেঝেতে শুয়ে রাত কাটাবেন, বিছানায় ঘুম হবেনা। আর এদিকে পাকিস্তানীরা নিষ্ফল হুংকার দিয়েছিল, "ওসমানের মুন্ডু চাই, যে কোনো মূল্যে।"

৩ জুলাই, ১৯৪৮। প্রচন্ড বোমাবর্ষনের মধ্যে ঝানগড়ের যুদ্ধে এক বাংকার থেকে অন্য বাংকারে যাতায়াতের সময় কামানের গোলায় মারা গেলেন তিনি। সেনা-ছাউনিতে নেমে এল অন্ধকার। শেষ হল এক বীরত্বের কাহিনী।জাতীয় পতাকায় ঢেকে মরদেহ নিয়ে আসা হল দিল্লীতে। সেনাবাহিনীর সমস্ত প্রধান ছাড়াও শবানুগমন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু ও তার মন্ত্রীসভার সকল সদস্যেরা। এমনকি যাযাবর লিখেছিলেন, "স্বাধীন ভারতে এর আগে গান্ধীজির শবযাত্রা ছাড়া আর কারো মৃত্যুতে দিল্লীতে পড়েনি এমন সার্বজনীন বিষাদের ছায়া। ঘটেনি এমন রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধানিবেদন ।"

ওসমানের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে, পাশের ওখলা সেমেটারিতে। বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশনের নিচে বিশাল এলাকা জুড়ে এক গোরস্থান। সেখানে রয়েছে হাজার হাজার কবর। কুকুর ছাগল পর্যন্ত সেখানে চরে বেড়ায় নির্ভয়ে। অসংখ্য সমাধির মধ্যে এখনও হয়তো রয়েছে মহাবীরচক্রপ্রাপ্ত সেনানায়ক মহম্মদ ওসমানের সমাধি। ধূলিমলিন, কিন্তু কালো পাথরের ফলকে জ্বলজ্বল করছে 'নৌশেরা কা শের,MVC '। ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পরেও দেশের জন্য এমন বহু আত্মত্যাগের কাহিনী আছে, যা এক উজ্জল দৃষ্টান্ত , বিরল কাহিনী রূপেই খ্যাত। একটা ছোট্ট স্মরণ, এক অজানা গর্বের ইতিহাসের গল্প দেশকে আর তার সন্তানদের সবসময়ই গর্বিত করে তোলে। "বন্দেমাতরম"।।


(কলমে -পিয়ালী মুখোপাধ্যায়)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract