Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Mysterious Girl "মিশু"

Abstract Horror Thriller

4.0  

Mysterious Girl "মিশু"

Abstract Horror Thriller

রহস্যময় রূপকুন্ড

রহস্যময় রূপকুন্ড

5 mins
211


"বাবা, বাবা, এটা দেখো...." আত্মজা হাতে একটা কাগজের টুকরো নিয়ে ছুটতে ছুটতে দুতলা থেকে নেমে এলো বৈঠকখানায়। কাগজের টুকরোটা এগিয়ে দিয়ে বলল, "বাবা এটা দেখো"।

অশোক বাবু কাগজের টুকরোটা হাতে নিয়ে বললেন, "এটা কোথায় পেলি আতু? এটা তো বহু আগের"।

"জানি তো, লেখাই আছে ২০০৪ সাল। আগের পেপার কাটিং। তবে এটার অর্থ কি? বরফ গলতেই শয়ে শয়ে কঙ্কাল, হিমালয়ের এই হ্রদ ঘিরে রয়েছে অপার রহস্য!" আত্মজা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল বাবার দিকে।

পাশ থেকে আত্মজার মা দময়ন্তী কপাল চাপড়ে বললেন, "আতু তোরও কি তোর বাবার মতো রোগ ধরলো? যা দেখিস তা নিয়েই কৌতুহল?"

অশোক বাবু মৃদু হেসে বললেন, "হোক না, সমস্যা কি? বস আতু, বলছি সব"।

আত্মজা বাবার পাশে চেয়ার টেনে বসল। অশোক বাবু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, "সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬,৪৯৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত হিমালয়ের কোলে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় ওয়ান গ্রামে অবস্থিত এই লেক। আটমাস বরফে ঢাকা থাকে এই স্থান, বরফ গলতে শুরু করলেই এই জলাশয়ের আশপাশে একের পর এক কঙ্কালের দেখা মিলতে থাকে। যা নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে। এই লেক রূপকুন্ড নামে খ্যাত।"

"সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬,৪৯৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই লেকের জলে এত কঙ্কাল কী ভাবে এলো?" আত্মজা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।

- এক ব্রিটিশ রক্ষী বরফে মোড়া লেকে প্রথম বার দেখতে পান বেশ কিছু হাড়গোড়। গরমে বরফ গলতে শুরু করলে হাড়গোড় ও কঙ্কালের পরিমাণ বাড়তে থাকে। প্রাথমিক ভাবে ব্রিটিশদের ধারণা হয়, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্ঘাত জাপানিরা এই পথে ভারতে প্রবেশ করতে শুরু করেছিলেন। সেই সময় তারা পথ হারিয়ে ফেলেন। এবং কোনও ভাবে দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদরা হাড়গুলি পরীক্ষা করে দাবি করেন, হাড়গুলি জাপানি সৈন্যদের হতেই পারে না, কারণ এই হাড়গুলি অনেক প্রাচীন।

- তারপর?

- স্থানীয়দের অনেকে দাবি করেন, এইখানে এক সময়ে পালা করে আত্মহত্যা করত এক দল লোক। আত্মহত্যার নাকি প্রথাও ছিল এক সময়। রটে যায়, প্রেতাত্মারা নাকি এই লেকে বাস করে। কোনও কোনও পর্যটক তো এরপর রূপকুণ্ড অভিযানে যেতেই ভয় পেতেন।

- সত্যি ভূত থাকে নাকি!!

- রহস্য সমাধানে ২০০৪ সালে রূপকুণ্ড অভিযান করা হয়। জানা যায়, ৮৫০ শতকের কঙ্কাল এগুলি। বিজ্ঞানীদের অন্য একটি দল অবশ্য দাবি করেন, হাড়ের বয়স ২০০ বছরের কাছাকাছি। মারাত্মক ঠান্ডার কারণে হাড়, মাংস সবই প্রায় অক্ষত থেকেছে বছরের পর বছর। কিছু কঙ্কালের গায়ে মাংস লেগে থাকার কারণেই প্রথমে এই কঙ্কাল গুলির বয়স বোঝা যায়নি। এদের মধ্যে দু’টি দলকে শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। জানা যায়, একটি দলের সদস্যরা একই গোত্রের, অপর দল একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর।

আবার স্থানীয় এক উপকথা অনুযায়ী, এক দেবী রুষ্ট হয়ে অভিশাপ দেওয়ায় শিলাবৃষ্টি নেমে এসেছিল। যার ফলে ওই এলাকার সব বাসিন্দার মৃত্যু হয়। এই দেবীকে নন্দা দেবী রাজ জাট বলেন স্থানীয়রা। এই কঙ্কাল গুলি ওখানের বাসিন্দাদের।

অন্য এক উপকথা অনুযায়ী, যশোদ্ধল নামে এক রাজার অন্তঃসত্ত্বা রানির গর্ভস্থ ভ্রূণ পড়ে গিয়েছিল রূপকুণ্ডে। সেই আত্মাই নাকি পর্যটকদের আক্রমণ করে মেরে ফেলত। সেই মৃত পর্যটকদেরই কঙ্কাল এগুলি।

- ধুর এত রকম কথা বললে হয় নাকি?

- আরে আরো আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন অন্য কথা। বহু বছর আগে স্থানীয় গাইডদের সাহায্যে তীর্থযাত্রায় এসেছিল একটি দল। আচমকা মারাত্মক শিলাবৃষ্টির কারণে মৃত্যু হয় গোটা দলটির। প্রতিটি খুলির মাঝে ফাটল, এটা ছিল কঙ্কাল গুলির বৈশিষ্ট্য। ছোট কিন্তু এই গভীর আঘাত থেকেই মৃত্যু হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন গবেষকরা।

- দাবি করলে তো হলো না, প্রমাণ দিতে হবে। আচ্ছা, খুলিতে ফাটল ছাড়া আর কোনো মিল পাওয়া যায়নি?

- এখানে পাওয়া মানুষদের অধিকাংশেরই বয়স ছিল ২১ বছরের বেশি। এর মধ্যে কিছু মহিলা ও শিশু ছিলেন। রূপকুণ্ডের ওই সব কঙ্কাল থেকে পাওয়া ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ভারতে পাওয়া সব চেয়ে প্রাচীন মানুষের ডিএনএ সেগুলি। জিনগত ভাবে ভিন্ন অন্তত তিনটি গোষ্ঠীর। হায়দ্রাবাদের ‘সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি’-র কুমারস্বামী থঙ্গরাজ বলেন, একাধিক গোষ্ঠীর কঙ্কাল যে রয়েছে, সেটা প্রথম জানতে পারা যায় ৭২টি কঙ্কালের মাইটোকনড্রিয়াল ডিএনএ পরীক্ষা করে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ডিএনএ গুলির সঙ্গে বর্তমান ভারতের মানুষের সঙ্গে অনেক মিল। আবার কিছু ডিএনএ-র সঙ্গে পশ্চিম ইউরেশিয়ার জনগোষ্ঠীর মিল প্রচুর। পরীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া কঙ্কাল গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম ভাগের ২৩টি কঙ্কালের সঙ্গে ভারতের বর্তমান মানুষের জিনগত মিল পাওয়া গিয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে ১৪টি কঙ্কালের সঙ্গে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার বাসিন্দাদের সাদৃশ্য রয়েছে। বিশেষ করে গ্রিস, ইরান এবং শেষ তথা তৃতীয় ভাগের কঙ্কাল গুলির সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ( ইন্দোনেশিয়া, জাপান, চীন ) বাসিন্দাদের জিনগত মিল রয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়াডাওয়িন হার্নের বলেছেন, তারা চমকে গিয়ে ছিলেন। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার প্রাচীন বাসিন্দাদের কঙ্কাল গুলো দেখে।

- এ ধাঁধা তার মানে ভারতে আটকে রইল না?

- না, প্রশ্ন তুলে দিল, তা হলে কি অত বছর আগেও পৃথিবীর সম্পূর্ণ অন্য প্রান্ত থেকে রূপকুণ্ড দর্শনে আসত মানুষ!

রূপকুণ্ডের এই কুহেলির সমাধানে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি মিলেছিল কলকাতার অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার। এই সংস্থা পরীক্ষা করে দেখেছে হাজার বছরের পুরোনো মানুষের হাড়গোড়। বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে ওই সাফল্যে কলকাতার অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ভূমিকা স্বীকার করা হয়েছে।

যদিওবা কেন তারা বিপদসঙ্কুল পথ অতিক্রম করে ওই হ্রদে এসেছিলেন, কী ভাবে এসেছিলেন বা দীর্ঘদিন ধরে এই মৃত্যু মিছিলের কারণ কী, সে সব এখনও রহস্যে মোড়া।

অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধিকর্তা বিনয়কুমার শ্রীবাস্তবের মতে, রূপকুণ্ড একটা ধাঁধা। কেন বিভিন্ন সময়ে এত মানুষ এখানে আসতেন, তার হদিস পাওয়া দুরূহ। হতে পারে তীর্থযাত্রা বা নতুন বসতির সন্ধান অথবা ওই এলাকায় কোনও প্রাচীন জ্যোতিষ কেন্দ্রের টানে তারা আসতেন। এই তত্ত্বগুলি কিন্তু এখনও প্রমাণিত নয়।

শ্রীবাস্তবের বক্তব্য, মৃত্যুর কারণ মূলত ছিল প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তারা এ-এস-আইয়ের তরফে নিরলস গবেষণা চালাচ্ছিলেন। কারণ, বিজ্ঞানের অভিধানে রহস্যের ঠাঁই নেই। যুক্তি দিয়েই সব কিছু দেখতে হয়।

"যাহ! এটাও রহস্য রয়ে গেলো?" আত্মজা মুখ ভার করে বসে রইল।

পাশ থেকে দময়ন্তী মৃদু হেসে বললেন, "সত্যি কথা বলতে যা যা বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পারেনি তাকে রহস্য বলে রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে এটা তো সত্যি যে অদ্ভুত সব ঘটনা আসলেই ঘটেছে।" 

অশোক বাবু চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বললেন, "এই দেশ যেমন জ্ঞান, ঐতিহ্য, ইতিহাসে সমৃদ্ধ তেমনি এখানে লুকিয়ে আছে রহস্যের হাতছানি। প্রতিটা স্থান কিছু ইতিহাস বহন করে রহস্যের মুকুট পরিহিত অবস্থায়। এই রহস্য সমাধান করা বোধহয় সম্ভব নয়। আমার তো মনে হয় কিছু জিনিস অজানাই ভালো"। 

 


                                   



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract