Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Manik Goswami

Classics Inspirational

3  

Manik Goswami

Classics Inspirational

মনের জানালা বেয়ে

মনের জানালা বেয়ে

9 mins
265



- 'বাবু, তুই একটুখানি ওপাশ ফিরে শুয়ে থাক, আমি তোর ঘরটা ঝাড়ু দিয়ে দিই'।

- 'কেন রে, ওপাশ ফিরে শুয়ে থাকবো কেন? তোর দিকে চেয়ে থাকলে কি হবে' ?

- 'আমার বড় ভয় হয় রে বাবু। পুরুষ মানুষের চোখ তো। মনে হয় যেন গিলে খাচ্ছে'।

- 'আরে, আমাকে দেখে তোর ভয় হয়। তাহলে কাজ করবি কি করে? আর কাজ না করলে খাবি কি '?

- 'না রে বাবু, তুই ওপাশ ফিরে শুয়ে থাক, আমি ঝাড়ু দেওয়া শেষ করি। এরপর রান্নাটাও তো করতে হবে। আমার দেরী হলে তোর অপিসেরও দেরী হয়ে যাবে'।

- 'আচ্ছা, ঠিক আছে। তোর কথামতো এই আমি ওপাশ ফিরে মুখ ঢেকে শুলাম, তুই তোর কাজ সেরে নে'। 

চাকুরীতে বদলি হয়ে অমিত এসেছে আদিবাসী অধ্যুষিত এই শহরে। কোম্পানিরই কোয়ার্টার। দুই ঘরের একটা আস্তানা। রান্নাঘর, বাথরুম সবই রয়েছে। একটা ঘর শোয়ার জন্য, অন্য ছোট ঘরটাতে বসার ব্যবস্থা আছে। মুড়কি এ বাড়িতেই কাজ করে। ঘর পরিষ্কার রাখা, রান্না করে দেওয়া, বাসন ধোয়া, খাওয়ার আর স্নানের জলের ব্যবস্থা করে দেওয়া, সব কাজই সে করে। বয়স কম মেয়েটার, এই উনিশ কুড়ি হবে বোধহয়। বিয়ে হয়েছে কি না অমিত সেটাও ঠিক জানেনা এখনও। একদিন সুযোগ বুঝে এ কথাটা জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। মনে মনে ভেবে নেয় অমিত।

-'যা বাবু, চানটা সেরে নে। রান্না হয়ে গেছে। এই টেবিলের ওপর আমি সব খাবার ঢেকে ঢুকে রেখে যাচ্ছি। চান, পুজো হয়ে গেলে খাবারটা খেয়ে নিয়ে আপিস চলে যাবি। আমার কাছে আর একটা চাবি তো আছেই। দুপুরে এসে বাসন গুলো ধুয়ে মুছে আমি রেখে যাবো। সন্ধ্যেবেলায় তুই আপিস থেকে ফিরলে আমি এসে চা করে দেব, আর রাতের খাবারটাও বানিয়ে রেখে যাবো। তোর সময়মতো তুই খেয়ে নিস। এখন ওঠ, যা, চানে যা। আমি বেরোচ্ছি। আর হ্যাঁ, তুই তো নতুন এসেছিস। এদিক ওদিক কোথাও যাবি না। আপিস হয়ে গেলে সোজা ঘরে চলে আসবি। চাল, ডাল, তরকারী যা লাগবে, আমাকে পয়সা দিয়ে দিবি, আমি এনে রাখবো। তোকে বেরোতে হবে না। গায়ের মানুষগুলো সন্ধ্যের পর কেউ আর মানুষ থাকে না রে। সব এক একটা পিশাচ হয়ে যায়। সবাই তাড়ি, মানে চোলাই মদে ডুবে যাবে, হোঁশ হারাবে, গালি গালাজ করবে আর ঘরে গিয়ে বৌকে ধরে পেটাবে। তুই সইতে পারবি না রে। তোর খারাপ লাগবে। যাগগে, পরে কথা হবে। আমি এখন যাই। ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিস'।


             **                  **                   **


বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে। এখানে আসার পর থেকেই মুড়কি যেভাবে সংসারের সব দায়িত্ব সামলাচ্ছে, তাতে অমিতের জীবন তরী বেশ মসৃন ভাবেই এগিয়ে চলেছে। সংসারের কোনো কাজই করতে হচ্ছে না, অথচ কি আরামে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। মুড়কিকে এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না অমিত। এতো সহজ সরল মেয়েটা, কত সহজেই অজানা অচেনা লোকের সাথে কথা বলতে পারছে। একেবারে আপন জনের মতো। 

আজ ছুটির দিন। তার ওপর বাইরে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। ল্যাপ টপে নিজের মনেই কাজ করে চলেছে অমিত। মুড়কি এসে ঘর দোর পরিষ্কার করে চা বানিয়ে দিয়েছে। চায়ের কাপটা পাশে রেখে একমনে কাজ করছে অমিত। মুড়কি চেঁচিয়ে ওঠে। 'চা টা যে তোর ঠান্ডা হয়ে গেলো রে বাবু। এতই যখন কাজ তোর তখন বললেই পারতিস, পরেই বানাতাম চা টা'।

- 'আরে, না না, হয়ে গেছে কাজটা। একটু বাকি আছে, সেরে নিয়েই চা খাবো। আর হ্যাঁ, দুটো বিস্কুট দিয়ে দিস। খালি পেটে চা খাবো না।

- 'দেওয়াই আছে। তুই চা বিস্কুট টা খেয়েই কাজ টা কর না কেন। এর পর চা টা তো একেবারে জল হয়ে যাবে'।

- 'হ্যাঁ, হ্যাঁ, হয়ে গেছে আমার কাজ। এখন বন্ধ রাখছি। বাকিটা রাত্তিরে করে নেবো। যা শাসন। চা তো এক্ষুনি খেতেই হবে।

- 'শাসন কিসের। চা ঠান্ডা হয়ে গেলে তো আমাকে আবার বানাতে হবে। আমার আর অন্য কাজ নেই নাকি'।

- 'তোর চা কই'।

- 'রান্না ঘরেই আছে। আমিও খেয়ে নিই গিয়ে'।

- 'না, চায়ের কাপটা নিয়ে এখানে এসে বস। গল্প করতে করতে চা টা খাওয়া যাবে'।

- 'না, না, আমি রান্না ঘরেই যাচ্ছি। ওখানেই খেয়ে নেবো'।

- 'বললাম তো এখানে নিয়ে এসে বসতে। কথা আছে’।

 মুড়কি আর কথা না বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে এ ঘরেই এসে বসে। অমিত বলে, 'মুড়কি, চা খেতে খেতে তুই তোর নিজের কথা বল। কতদিন ধরে তুই এ বাড়িটায় কাজ করছিস, এর আগে কারা এসেছিলো এখানে, তারা কেমন মানুষ ছিল, তুই এখনও বিয়ে করেছিস কি না, না কি মা বাবার সাথেই আছিস, সব কথা বল, আমি শুনি'।

- 'আমার কথা শুনে তোর কি হবে রে বাবু, তার চেয়ে তুই নিজের কথা বল। আমার মতো মেয়ে মানুষের কথা শুনতে তোর ভালো লাগবে না। তাছাড়া কি আর বলবো। সবই তো আমার পোড়া কপালের কথা'।

- 'কেন ? কি ঘটেছে তোর জীবনে ? বল শুনি। আজ তো আর অফিসে যাচ্ছি না, তোর গল্পই শুনি'।

- 'কি আর শুনবি বাবু, একঘরে এই মেয়েটার কথা'।

- 'একঘরে ? একঘরে কেন ? কেউ নেই তোর' ?

- 'সবই ছিল। মা ছিল, বাপ ছিল। ভাই বোন আর কেউ ছিল না বটে। লেখাপড়া তো করা হয়ে ওঠে নি। ঘরের কাজই করতাম। এখানে এই আপিসটা তখন নতুন হয়েছে। তোর মতোই এক বাবু এসেছিলো বদলি হয়ে। বাপের সাথে তার খুব ভাব জমে উঠেছিল। সন্ধ্যে হলেই দু'জনে মদের আড্ডা বসাতো। এখানকার মতো করে গালিগালাজ করাটাও শিখে গেলো সেই বাবু। বাপও সুযোগ বুঝে আমাকে লাগিয়ে দিলো বাবুর ঘরে কাজ করার জন্য। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সব কাজই করতাম। কিছুদিন পর থেকেই বুঝতে পারলাম, বাবুর দৃষ্টি ভালো নয়। আমার দিকে কেমন লোভী চোখে চেয়ে থাকে। চোখের দৃষ্টিতেই আমাকে যেন গিলে খেতে চায়। হাত ধরে টানে, সব সময়ই গায়ে গায়ে লেগে থাকার চেষ্টা করে। বাপকে জানালাম যে বাবু মোটেই ভালো লোক নয়। বাপ আমার কথাটা শুনতেই চাইলো না। বললো, মরদ মানুষরা ওরকম একটু হয়ই। কি হবে তোর ওকে একটু সঙ্গ দিলে ? বাপের কথাটা শুনে মনটা বেজায় খারাপ লাগতে লাগলো। শরীর খারাপ বলে দু তিন দিন আর বাবুর বাড়িতে যাইনি। সে বাবু আমার বাপের কাছে নালিশ করে দিলো। আমি যাই না বলে তাকেই সব কাজ করতে হচ্ছে। অসুবিধা হচ্ছে। আপিসের কাজও ঠিকমতো করে উঠতে পারছে না। নালিশ শুনে ঘরে এসে বাপ আমাকে খুব মারলো। বললো, কাজ করতে না গেলে যে দু'টো পয়সা ঘরে আসছে, সেটাও তো বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমরা খাবো কি ? আসলে বাপ তো আমার মাসের মাইনের টাকাটা জোর করে আমার থেকে নিয়ে নিতো আর মদ খেয়েই উড়িয়ে দিতো সে টাকা। টাকা না এলে সেটাও আর আয়েশ করে খেতে পারবে না চিন্তা করেই আমাকে মারধর করেছিল। বলেছিলো, যে গরু দুধ দেয় তার লাথ ও খেতে হয়। আবার যেতে শুরু করলাম বাবুর বাড়ি। ভয় লাগতো, তবুও কাজগুলো আমি মন দিয়েই করতাম। একদিন এইরকমই এক বর্ষার দিনে বাবু আপিস না গিয়ে ঘরেই বসেছিল। আমি কাজ করতে এসে ঘরে ঢুকতেই বাবু ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলো। আমি চিৎকার করে উঠতেই রুমালে করে কি একটা যেন শুঁকিয়ে দিলো, একটা মিষ্টি গন্ধ। আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। তারপর আমার শরীরটাকে নিয়ে বাবু কি যে করেছিল আমি তো আর তা বলতে পারবো না, আমার তো জ্ঞানই ছিল না। পরে যখন জ্ঞান এসেছিলো, দেখেছিলাম আমার গায়ে একটা কাপড়ও ছিল না। উঠে আগে জামা কাপড় পড়ে নিই। বাবু একটা চেয়ারে বসে থেকে আমার দিকে চেয়ে চেয়ে হাসছিলো। সে হাসি কেমন যেন তৃপ্তির হাসি, জয়ের হাসি। সেদিন বাড়ি ফিরে খুব কেঁদেছিলাম। সারা গায়ে খুব ব্যথা হয়েছিল। সেদিনও বাপে আমার কোনো কথাই শুনতে চায়নি, মদ খাওয়ার টাকার জোগাড়টা বন্ধ হয়ে যাবে বলে।

কিছুদিন পর যখন লোকে জানতে পারলো যে আমি মা হতে চলেছি,আমার গাঁয়ের চেনা লোকেরা সবাই কেমন অচেনা হয়ে গেলো। আমাকে বললো কুলটা। সব দোষ এসে পড়লো আমার ওপর। বাপই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে দিলো সবার কাছে। মায়ের তো কোনো কথা উপায় ছিল না। কে আর সাধ করে মার খেতে চাইবে, বল। বাপটা আমার মাকে এতো মারতো যে বাপের মুখের ওপর আর কোনো কথা বলার সাহসই হতো না মায়ের। তাই সেও চুপ করেই ছিল। বাচ্চাটা যেদিন হলো, বাপ আমাকে মেরে ঘর থেকে বের করে দিলো। মা আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছিল। এতো মার খেয়েছিলো মা যে, আর উঠে দাঁড়াতেই পারছিলো না। গাঁয়ের মানুষ সবাই মিলে আমাকে একঘরে করে দিলো। এই গাঁয়েরই শেষের দিকে একটা ছোট্ট ঘর বানিয়ে আমার থাকার জায়গা করে দিলো। কিন্তু খাবার জিনিস এই গাঁয়ের থেকে আমি কিনতে পারতাম না। পাশের গাঁয়ের থেকে আমাকে জোগাড় করতে হতো। আমি কিন্তু বাবুর বাড়ির কাজটা ছাড়িনি। বাবু অবশ্য আমাকে আর রাখতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত অনেক হাতে পায়ে ধরেও যখন কাজে রাখতে রাজি হচ্ছিলো না, তখন পুলিশের কাছে যাবার কথা বলতেই রাজি হয়ে গেলো। বাচ্চাটাকে খাইয়ে দাইয়ে বড় করে তোলার জন্য আমাকে কাজটা তো করতে হবেই। বাবু কিন্তু কিছুতেই বাচ্চাটাকে তার নিজের বাচ্চা বলে মানতেই চাইলো না। আমাকেও তার বৌ বলে মানলো না। উল্টে আমাকে নানা রকম ভয় দেখাতো। কেস করে আমাকে নাকি জেলে ভরে দেবে, তখন বাচ্চাটাকে দেখার কেউ থাকবে না। শেয়াল, কুকুরে ছিঁড়ে খাবে। আমিও ভয় পেয়ে গেলাম। চুপচাপ কাজ করে চলে আসতাম।

একদিন হঠাৎ করেই সে বাবু কোথায় উধাও হয়ে গেলো। তার আপিসে পর্যন্ত গেলাম। জানতে পারলাম, সে বাবু নাকি বদলি হয়ে গেছে। আর আসবে না এই গাঁয়ে। তার বদলে অন্য একজন নতুন বাবু আসছে। সাতদিনের মধ্যে তুই এসে গেলি বলে আমার চাকরিটাও থেকে গেলো। না হলে ওই একরত্তি ছেলেকে কি ভাবে মানুষ করতাম সে ভগবানই বলতে পারে। যাক যে, আমার যা হবার হয়ে গেছে। আমাকে নিয়ে আর আমি চিন্তা করিনা, চিন্তাটা শুধু ওই বাচ্চাটাকে নিয়ে। কি ভাবে যে ওকে বড় করে তুলবো, কে জানে ? আমার কথা তো শুনলি তুই, এবার তোর কথাটা বল। আমিও একটু শুনি।

- 'তোর জীবন যন্ত্রণার গল্প শুনে আমারই তো খুব কষ্ট হচ্ছে রে মুড়কি। একা একঘরে হয়ে থেকে বাচ্চাকে বড় করে তোলাও তো কষ্টকর। মায়েরাই শুধু এসব বোধহয় পারে। তা, তুই যখন কাজে আসিস, বাচ্চাটা কোথায় থাকে ? একা একা থাকতে পারে' ?

- 'না গো না, দু বছরের বাচ্চা। একা থাকতে পারে নাকি ? ওখানে আরও দু'টো ঘর আছে। তারাও একঘরে হয়েই আছে। গাঁয়ে ঢুকতে পারে না, আমার মতোই। আমি তো তাও তোর ঘরে কাজ করতে আসতে পারি, ওরা গাঁয়ের ভেতর আসতেই পারে না। ওদেরই একজনের কাছে বাচ্চাটাকে রেখে আসি। ঠিকমতো দেখাশোনা করে। সময় মতো চান করিয়ে দেয়, খাইয়ে দেয়। ভালোই থাকতে পারে ওর কাছে। থাক না, আমার কথা থাক না এবার, তোর কথা বল না রে বাবু। কে কে আছে। বিয়ে করেছিস তো' ? 

- 'আমার মতো হতভাগ্যের কথা শুনে কষ্টই পাবি রে মুড়কি। তার চেয়ে এই তো আছি বেশ। দিন তো কেটে যাচ্ছে। আর তুই তো আছিস, আমাকে ঠিক দেখে শুনে রাখবি'।

- 'তোর কথা শুনে তো মনে হচ্ছে, তোর খুব কষ্ট রে বাবু। বল না শুনি। যদি একটুও কষ্ট কমাতে পারি'।

- 'আমি একা, একদমই একা রে মুড়কি। এই পৃথিবীতে আমার আপন বলে কেউ নেই আর। ছোটবেলায় বাবা মারা যাবার পর অনেক কষ্ট করেই মা আমাকে বড় করে তুলেছেন। পড়াশোনা শেষ করে এই চাকুরীটা পেয়ে গেলাম। কলকাতাতেই থাকতাম তখন। দেখে শুনে মা আমার বিয়েটাও দিয়ে দিলেন। বউটাও বড় ভালো ছিল রে মুড়কি। কিন্তু সুখ তো আমার কপালে ছিল না। এই বিভীষিকা মহামারীর দাপটে মা আর বৌ একসাথেই হারিয়ে গেলো আমার জীবন থেকে। দুঃখের বোঝা কাঁধে নিয়ে একা একাই কোনোরকমে কাটাচ্ছিলাম দিনগুলো। এক বছরের মধ্যেই এই বদলির খবরটা পেলাম। সাথে সাথে মেনে নিলাম। তারপর সব কিছু ছেড়ে দিয়ে, সব কিছু ভুলে, চলে এলাম তোদের গাঁয়ে। কলকাতা থেকে একরকম পালিয়ে বেচেছি আমি। ভালোবেসে ফেলেছি তোদের এই সুন্দর ছিমছাম গ্রামটিকে। সারা জীবনটাই আমি তোদের এই গাঁয়েই কাটাতে চাই রে মুড়কি। থাকতে দিবি তো আমায়, তোদের এই গাঁয়ে ? তুই যদি থাকিস আমার সাথে মুড়কি, তোর বাচ্চাটা বড় হবে আমাকেই তার বাবার পরিচয়ে। চিন্তা করিস না, আমি পালাবো না। আমি একটু ভালোবাসা চাই রে মুড়কি। পারবি তো আমাকে তুই ভালোবাসতে। মেনে নিতে পারবি কি তুই আমাকে তোর সাথী মনে করে। থাকতে পারবি কি তুই আমার সাথে ? আমার শুকিয়ে যাওয়া নদীতে জোয়ার আনতে পারবি কি তুই। জোর করে কিছু হোক সেটা আমি চাই না। তোর যদি মনে হয় আমার সাথে থাকাটা তোর উচিত হবে না, গাঁয়ের লোক মেনে নেবে না, তবে নাই বা থাকলি। যেমন আছিস তেমনই থাকবি তাহলে। আর যদি ভালোবাসতে পারিস, ভালোবাসাটুকু তুই ও পাবি। তোর কোনোদিন কোনো অসম্মান হবে না, এই কথাটা আমি তোকে জানিয়ে দিতে চাই। ভেবে দেখ, তুই কি, তোর বাচ্চাটার আর আমার জীবনটাকে একসাথে এগিয়ে নিয়ে চলতে সাহস পাবি'?

- 'তুই আমাকে বড় দুর্বল করে দিলি রে বাবু। তোর কষ্টে তোকে যদি সাথই দিতে না পারলাম তাহলে আমি আর মানুষ কিসের হলাম রে। আবার ভাবছি, আমাদের সমাজ কি এটা মেনে নেবে ? বড় দোটানার মধ্যে ফেলে দিলি রে আমাকে। তবু, বাপকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখি, তারা মেনে নেবে কি না।  


                                     --------x--------  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics