চিঠি
চিঠি
ছোট্ট তাতান মন মরা হয়ে বসে আছে হোস্টেলের ঘরের এক কোণে। ঘরের বাকি ছেলেরা যেখানে ক্রিসমাসের উপহার ও ক্রিসমাস ইভ নিয়ে হই হুল্লোড় করছে সেখানে বয়স দশের তাতানের মন খারাপ করে বসে থাকাটা বড্ড বেমানান দেখাচ্ছে দৃশ্যপটে।
ক্লাস টু তে ওঠার পরেই তাতানকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বোর্ডিং স্কুলে। যদিওবা এর কারণ তাতানের উশৃঙ্খল আচরণ নয়, বরং বাবা মায়ের কর্মজীবনে ব্যস্ততা।
'ছেলেটাকে কে দেখে রাখবে!' এই বলে তাকে বোর্ডিং-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাতান এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিলেও আজকে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। সকলের বাড়ি থেকে ক্রিসমাসের উপহার এসেছে, চিঠিতে বয়ে এসেছে শুভেচ্ছা বার্তা। কিন্তু তাতানের জন্য কিছু আসেনি।
না, তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ নয়, তাও কেন ওর জন্য সামান্য চিঠি টুকু এলো না সেটা বুঝতে পারছে না তাতান।
মিস্টার দেবাংশু দত্ত ও মিতালি দত্ত সকাল থেকেই খুব ব্যস্ত। আজ তাদের অফিসে বিরাট বড় পার্টি আছে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে। সন্ধ্যার জন্য এখন থেকেই তৈরি হচ্ছে তারা। মিতালি দেবী পার্লার থেকে ঘুরে এসে ড্রেস সিলেকশন করছেন, দেবাংশু বাবু নিজের চুল গোঁফের ছাঁট টা ঠিকঠাক হয়েছে কি না দেখে নিচ্ছেন।
এর মধ্যে মিতালি দেবী বলে উঠলেন, "দেখো তো দেবু লেটার বক্সে কোনো চিঠি আছে কি না! অফিস থেকে কাল নাকি একটা লেটার পাঠিয়েছে"।
দেবাংশু বাবু স্ত্রী-এর কথা মতো বাড়ির বাইরে থাকা লেটার বক্সের কাছে এসে উপস্থিত হলেন। লেটার বক্স খুলতেই একটা নয় বরং দু'টো খাম দেখা গেল।
দু'টো খাম নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে এলেন দেবাংশু বাবু। মিতালি দেবীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, "দেখো কোনটা দরকারি"।
মিতালি দেবী খাম দু'টো হাতে নিয়ে নাক মুখ সিঁটকে বললেন, "ওহ দুটো এলো কোথা থেকে! এটা আবার কি?"
খামটা খুলতে গিয়ে মুখের ভঙ্গিমায় পরিবর্তন ঘটলো মিতালি দেবীর। খামটা খুলে দেবাংশু বাবুর দিকে তাকালেন।
"কি দেখছো এভাবে!" - দেবাংশু
"তাতান পাঠিয়েছে এটা" মিতালি দেবী বললেন। খামের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা চিঠি, তার সঙ্গে একটা হাতে আঁকা কার্ড। সান্টার ছবি এঁকে তার পাশে বড় বড় করে লেখা হয়েছে, "Merry Christmas মা এন্ড পাপা"।
সাদা কাগজে লেখা চিঠিটা খুললেন দেবাংশু বাবু। পড়তে শুরু করলেন,
হে মা পাপা আই লাভ ইউ। আই মিস ইউ। কতদিন দেখিনি তোমাদের, একবার এসো প্লিজ। আই হোপ তোমরা আমার বানানো কার্ডটা পেয়েছো। ওটা আমি স্কুলের ক্রাফট ক্লাসে শিখেছি। ভালো হয়েছে না!!
মা পাপা আমি তোমাদের অপেক্ষায় থাকবো, আর চিঠির রিপ্লাই দিতে হবে কিন্তু, নয়তো আড়ি।
- তাতান
দেবাংশু বাবু ও মিতালি দেবী একে অপরের দিকে ছলছলে চোখে তাকিয়ে রইলেন। তারা নিজেদের নিয়ে এতই ব্যস্ত যে ছেলেটাকে ভুলেই গেছেন! দেবাংশু বাবু তাড়াতাড়ি চিঠিটা ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিয়ে বললেন, "পার্টিতে যাওয়া সম্ভব নয় আজ, এখুনি বেরোতে হবে নয়তো সময় মতো তাতানের কাছে পৌঁছানো যাবে না"।
মিতালি দেবী মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ছুটে চলে গেলেন পোশাক বদল করতে।