কান্নার কিংকর্তব্যবিমূঢ় রহস্য
কান্নার কিংকর্তব্যবিমূঢ় রহস্য
হাওয়ার সো সো শব্দ কানে আসতেই বিছানা থেকে নেমে জানলার বাইরে উঁকি দিলাম। বেশ ভালোই ঝড় শুরু হয়েছে বাইরে। গাছপালা গুলো ডায়ে বায়ে দুলে বেড়াচ্ছ, আকাশে মেঘের গর্জন আর অন্ধকার ঘনঘটা ছেয়ে আছে।
গ্ৰাম্য এলাকা তাই রাস্তায় আলো নেই, তবে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় মাঝে মাঝে সবটা স্পষ্ট দৃশ্যমান হচ্ছে। এরই মধ্যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। প্রাকৃতিক প্রলয় বুঝি একেই বলে।
জানলাটা বন্ধ করে বিছানায় এসে বসলাম। আর হঠাৎ করে কারেন্ট চলে গেল। বিছানা হাতড়ে ফোনটা খুঁজে তার ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে ঘরের ভিতরে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। তারপর আলোটা বন্ধ করে দিলাম।
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে তাই গরম লাগার প্রশ্নই ওঠে না। এই আবাহাওয়াতে কেমন যেন ঘুম ঘুম পায়। একা মানুষ আর কি বা করবো!! বিছানায় পিঠ পেতে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে থাকতে থাকতে মা বাবার কথা মনে পড়তে লাগলো। সেই যে কাজের জন্য ওদের ছেড়ে চলে এলাম আর তো যাওয়াই হয় না। এসব ভাবতে ভাবতে বেশ তন্দ্রা লেগে আসছিল তখনই একটা আওয়াজ পেয়ে লাফিয়ে উঠে বসলাম। ফোনের আলোটা জ্বেলে দেখলাম সবকিছু তো ঠিক আছে। আলোটা নেভাতে গিয়ে আবার শুনলাম কেউ যেন কাঁদছে।
এই বাড়িতে আমি ছাড়া কেউ নেই তো কাঁদছে কে? আর এই ঝড় জলের রাতে কেউ আসবে এটা আশা করাও যায় না। গ্ৰামে আছি ভাবতেই এবার মনে পড়ল তেঁনাদের কথা। শুনেছি গ্ৰামে ভুত থাকে, তাহলে কি তাদের উপদ্রব!!!
কথাটা ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে অগ্ৰসর হলাম। আওয়াজটা যেন আরো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। কিছুটা ভীতি ও কিছুটা এক্সাইটমেন্ট নিয়ে দরজাটা খুললাম কান্নার রহস্য উদঘাটন করবো বলে। ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখলাম এতো এক বিড়াল বাচ্চা। বিড়ালটা এখনো মানুষের মতো সুর করে কেঁদেই চলেছে। ঝড় জলের রাতে নিজের আপনজনদের কাছে ফিরতে পারেনি তাই হয়তো কাঁদছে।
আর আমি বিড়াল এর কান্না কি না কি ভাবলাম। নিজের এই ভূত প্রেত জনিত ভাবনার কথা ভেবে নিজেরই হাসি পেলো। আর কি বা করবো, একা মানুষ বিড়াল ছানাকে সঙ্গী বানাবো ভেবে তাকে ঘরে নিয়ে গেলাম।