Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Mysterious Girl "মিশু"

Abstract Others

3.9  

Mysterious Girl "মিশু"

Abstract Others

বইয়ের বাইরে হেস্টিংস সাহেব

বইয়ের বাইরে হেস্টিংস সাহেব

6 mins
416


"নিধি এবার বাড়ি চল, অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। তুই করছিস কি!!" সুনীল বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইল নিধির দিকে, সে একটা মোটা বই নিয়ে বসেই আছে লাইব্রেরির এক কোণের একটা চেয়ারে।


নিধি বই থেকে চোখ সরিয়ে বলল, "দেখছিস তো পড়ছি, বিরক্ত করিস না। যা লাইনটা হারিয়ে গেল তোর জন্য", বলে আবার বইতে মনোনিবেশ করল নিধি।


"নিধি ঘড়ির কাঁটাটা দেখ একবার, বিকেল পাঁচটা বাজে। এই ভুতুড়ে লাইব্রেরীতে এরপর থাকা বিপদ ছাড়া আর কিছুই নয়" সুনীল ঢোক গিলে বলল। কলকাতা ন্যাশানাল লাইব্রেরীর ভৌতিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে জানতে আর তো কারো বাকি নেই। এই লাইব্রেরীকে ঘিরে নানা ধরনের গল্প শোনা যায়। এই প্রাচীন লাইব্রেরীটির দুর্নাম রয়েছে ভুতুড়ে কার্যকলাপের জন্য। তবু এখানে মানুষজন আসে তাদের জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে। এখানে এত বই, যার মধ্যে বহু পুরোনো, বিরলতম সব বইও পাওয়া সম্ভব, আর বইপ্রেমীরা বইয়ের টানে আসে এখানে। এই যেমন নিধি চলে এসেছে।


নিধি কোনো রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে বইতে মুখ গুঁজে বসে আছে দেখে সুনীল বলে উঠল, "এই জায়গা সম্পর্কে খবর গুলো জানিস না তুই!! যারা এখানে পড়াশোনা করতে আসে তাদের অনেকেই বলেছেন, পড়াশোনা করতে করতে আচমকা ঘাড়ে অদৃশ্য কারুর নিঃশ্বাস অনুভব করেছেন। লাইব্রেরীর বল ডান্সের ফ্লোর থেকে ভেসে আসে কনসার্টের সুর। স্তব্ধ দুপুরে শুনেছেন অশরীরী কারুর পদচারণার শব্দ। লাইব্রেরী কর্মচারীদের মতে, লর্ড মেটকাফের স্ত্রীর আত্মাই নাকি এখনও ঘুরঘুর করে এই লাইব্রেরীর অন্দরে বাহিরে।"


সুনীলের কথা শুনে নিধি মুচকি হেসে বলল, "আলিপুরে অবস্থিত এই ভবনটিতে আগে ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বাস। কিংবদন্তী মতে, আজও তিনি এই ভবনেই বিরাজমান। রাতের বেলা যখন চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঠিক সেই সময়ে অনেকেই তাকে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। আবার দিনের বেলা লাইব্রেরী খুললে বিভিন্ন চেয়ার-টেবিল এদিক-ওদিক হওয়ারও নজির রয়েছে। ঘাড়ে অদৃশ্য কারও নিঃশ্বাস অনুভব করা ছাড়াও কারও মতে, স্তব্ধ দুপুরে শুনেছেন অশরীরী কারুর পদচারণার শব্দ। লাইব্রেরীর কর্মচারীরাও অনেকে অশরীরী সত্তার উপস্থিতি টের পেয়েছেন। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় হল, কাউকে আক্রমণ করা হেস্টিংস সাহেবের ভূতের অভিসন্ধি নয়। বরং তিনি নাকি খুঁজে চলেছেন সেই ব্ল্যাক ব্যুরোটি, জীবিতাবস্থায়ও যেটির নাগাল তিনি পাননি। হেস্টিংস বিশ্বাস করতেন, এই ব্ল্যাক ব্যুরোটিই পারবে তাকে হাউজ অভ কমন্সে নির্দোষ প্রমাণ করতে। যদিও শেষ পর্যন্ত তার উপর থেকে সকল অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়েছিল, তবু হেস্টিংসের মন থেকে আজও দূর হয়নি নথিগুলো পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন।"


"বাবাহ তুই তো সব জানিস দেখছি" সুনীল হাঁ হয়ে তাকিয়ে রইল।


"জানি তো, তাই জন্য রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করছি। এই দেখ আমি যে বইটা পড়ছি এটা হেস্টিংস এর জীবন কাহিনী। আমি জানতে চাই তার সম্পর্কে, কি ঘটেছিল এটা আজ আমি জেনেই ছাড়বো" নিধির দৃঢ় কন্ঠে বলা কথা গুলো শুনে সুনীল বিরক্তি প্রকাশ করে বলল, "এরপর কিন্তু ফেরার জন্য বাস পাবো না"।


- তুই বরং চলে যা, আমি এখন যাবো না।


- পাগলামি করিস না, চল নিধি।


- না, তুই যা।


"ঠিক আছে থাক, যখন হেস্টিংস সাহেব এসে ঘাড় মটকে দেবে তখন বুঝবি ঠেলা" বলে সুনীল নিজের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে চলে গেল। লাইব্রেরীর এই কক্ষে একা রয়ে গেল নিধি। ও পড়ে চলেছে হেস্টিংস সাহেবের ভারতের আগমণ, শাসন তথা নানাবিধ ঘটনা। নিধি খেয়ালই করছে না ঘড়ির কাঁটায় কটা বাজতে চলল। এদিকে সূর্যিমামা ডুব দিয়েছে অস্তাচলের পথে, আকাশ ঢেকে গেছে অন্ধকারে। ঘড়ির কাঁটা বলছে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজতে চলল। অকস্মাৎ কারোর পদচারণার শব্দে নিধির যেন সম্বিত ফিরলো। বই থেকে মাথা তুলে এদিক ওদিক তাকাতে দেখল চতুর্দিক সম্পূর্ণ ফাঁকা, ধূ ধূ করছে। আলো জ্বললেও গা ছমছমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।


"আজ আর পড়ে কাজ নেই, কাল আবার আসবো" বলে নিধি বইটা বন্ধ করে সবে চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাচ্ছে তখনই পিছন থেকে যেন গম্ভীর এক পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এলো, "বইতে পড়ে কতটুকু জানবে তুমি! সত্যিটা তোমাকে আমি বলে দিচ্ছি"।


ভয়ে ভয়ে কোনো রকমে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নিধি। এই গলার স্বর ওর অপরিচিত, কিন্তু ভয় লাগছে কারণ সাধারণ বাঙলার তুলনায় অন্য রকম লাগলো কথাটা। কেমন যেন টান আছে ইংরেজির। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে নিধির তো বুক কেঁপে উঠল, চোখ দুটো প্রয়োজনের তুলনায় বড় বড় হয়ে গেল, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। একি দেখছে ও! সেই সাজ, যেন বিট্রিশ শাসক...


"ক...কে আপনি?" নিধি কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল।


- যার সম্পর্কে তুমি বইতে পড়তেছিলে।


- লর্ড হেস্টিংস?


- ইয়েস, আমি লর্ড হেস্টিংস। তুমি জানতে চাও তো আমি কেন ব্ল্যাক ব্যুরোটি খুঁজছি!!


- হ্যাঁ মানে না, না...


- ভয় পাইবার দরকার নেই, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। সিট ডাউন।


নিধি উপায় না পেয়ে বসে পড়ল চেয়ারে। জুতোর খটখট শব্দ করতে করতে ওর সম্মুখে চেয়ার টেনে বসলেন তিঁনি। বলে উঠলেন, "১৭৮৫ সালের ১৩ জুন আমি ভারত ছেড়ে পুনরায় ইংল্যান্ডের মাটিতে পা রাখি। যুক্তি সঙ্গত ভাবেই আশা করেছিলাম দেশে ফিরে দেশবাসীর কাছ থেকে সাধুবাদ ও সম্মান লাভ করবো। কিন্তু বাস্তবে পেলাম বিরূপ আচরণ এবং শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত হয়ে কাঠগড়াতেই দাঁড়াতে হলো। বিচার কাজ ১৭৮৮ সালে শুরু হয়ে ১৭৯৫ সালে শেষ হয়। অবশ্য বিচারে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। দুর্ভাগ্যক্রমে এডমন্ড বার্ক ভারতে দুঃশাসনের জন্য আমিকে দায়ী করেন। ফ্রান্সিস ভারত থেকে দেশে ফেরার পর নিঃসন্দেহে বার্ক প্রভাবিত হন। তবে ভারতের ব্যাপারে আমার মনোভাব তিনি গঠন করেন সম্পূর্ণ নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এবং বাস্তবিকই আমি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার তাড়না দ্বারাই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিজস্ব প্রদেশগুলি লুণ্ঠন, মিত্রদের শোষণ এবং অবিরাম যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে ভারতকে নিঃস্ব করে ফেলেছিলাম আমি। এসব কিছুর জন্যই তিনি মনে করেন আমি দায়ী। ১৭৮৬ সালে বার্ক কমন্স সভায় আমার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনয়ন করেন। এগুলি পরে লর্ড সভায় আলোচিত হওয়ার কথা ছিল। রোহিলা যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রথম প্রস্তাবটি কমন্স সভায় উত্থাপিতই হলো না। কিন্তু চৈৎসিংহ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি ১৭৮৭ সালের অপরাপর প্রস্তাবের সাথে পাশ হয় এবং ১৭৮৭ সালের ১০ মে আমাকে ইমপিচ করা হয়।


বিচার কাজের শুরুর দিকে পার্লামেন্টে দর্শকের ভীর জমে। কিন্তু ১৭৯১ সালের ৩০ মে-র মধ্যে যখন আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমাপ্ত হয় তখন প্রায় কারোরই সন্দেহ থাকেনা যে, অভিমত আমার অনুকূলে। ফরাসি বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহ ব্রিটিশদের জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে এবং সাম্রাজ্য তখন আর লজ্জার ব্যাপার হিসেবে বিবেচিত না হয়ে শঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমি এই সাম্রাজ্যের ত্রানকর্তা, সে দাবি তাই সহৃদয়তার সাথে বিবেচিত হয়। ১৭৯৫ সালে লর্ডসভা যখন রায় প্রদান করে তখন আমি প্রতিটি অভিযোগের ক্ষেত্রে বিপুল ভোটাধিক্যে নির্দোষ ঘোষিত হই।


আইনের রূঢ় বৈপরিত্য ‘দোষী’ বা ‘নিদোর্ষ’ দ্বারা আমার কর্মজীবনের মতো জটিল কর্মজীবনের মূল্যায়ন সঠিক বলে বিবেচিত হওয়া কাম্য নয়। আমাকে বার্ক যে অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক ভাষায় নিন্দা করেছেন তা গ্রহণ করা দায়। দোষী সাব্যস্ত হওয়া দূরে থাক আমাকে যে ইমপিচমেন্ট করা হয়েছিল তাই এখন খুব কম লোকই মেনে নিতে চাইবেন। অপর পক্ষে আমি সৎ উদ্দেশ্যে যে ছোটখাট দুএকটি নিন্দনীয় কাজ করেছিলাম তা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে তেমন কোন কঠিন অভিযোগ আনীত হয়নি কিংবা আমি শুধু ফ্রান্সিসের প্রতিহিংসা ও বার্কের শত্রুতার শিকার হয়েছিলাম এমন যুক্তিও অচল। ইমপিচমেন্টের সময় আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, বিশেষ করে বেনারস ও অযোধ্যার ব্যাপারে আমার স্বেচ্ছাচারিতা এবং কর্মজীবনে আমার বিপুল পরিমাণ সঞ্চিত অর্থ ছিল উনিশ শতকের নৈতিকতা পরিপন্থি।


ইমপিচমেন্টে আনীত অভিযোগের ক্ষেত্রসমূহ ব্যতীত ভারতে আমার অন্যান্য অসাধারণ কৃতিত্বকে স্বীকার করতেই হবে। ভারতীয় প্রশাসনে আমি উঁচু মাত্রার দক্ষতা আনয়ন করেছিলাম। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আমার ছিল গভীর শ্রদ্ধা এবং ভারতের ব্যক্তি বিশেষের প্রতিও আমি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতাম। ভারতে উচ্চপদে আসীন ব্রিটিশ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এমনটি আর কখনও দেখা যায়নি। অংশত আমার পরিণাম দেখেই ভারতে ভবিষ্যৎ ব্রিটিশ প্রশাসন নিগুঢ় আইনের আওতায় থেকেছে এবং ভারতীয়দের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে।


১৭৯৫ সালে ইমপিচমেন্ট থেকে নিষ্কৃতিলাভের পর আমি আরও ২৩ বছর বেঁচে ছিলাম কিন্তু আমার দেশের মানুষদের থেকে আমি যে ঘৃণা ও খারাপ আচরণ পেয়েছি তা আমি আজও ভুলতে পারিনা"।

নিধি নিশ্চুপ হয়ে গভীর কথাগুলোর অর্থ বোঝাল চেষ্টা করলো‌। অবশেষে ওর এটাই বোধগম্য হলো যে মানুষটা নিজের দেশের মানুষদের উপর অভিমান করে রয়েছে, তাদের লাঞ্ছনা মেনে নিতে না পেরে আজও কষ্ট পাচ্ছে।

হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে নিধি নিজের ভাবনা ছেড়ে বেরিয়ে এলো এবং দেখল সামনের চেয়ারটা খালি। নিধি এদিক ওদিক তাকিয়ে অনেক চেষ্টা করলো কারোর অস্তিত্ব সন্ধান করার কিন্তু পেলো না। টেবিলের উপর থাকা বইটা সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো নিধি। বইটা আর পড়ার দরকার নেই, অনেক কিছু এমনিতেই জানা হয়ে গেছে। নিধি ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে চলে গেল লাইব্রেরী থেকে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract