Aniruddha Goswami

Fantasy

5  

Aniruddha Goswami

Fantasy

আ পারফেক্ট প্যাসিফায়ার

আ পারফেক্ট প্যাসিফায়ার

4 mins
738


দ্য ক্যাট এন্ড মি 

 

আ পারফেক্ট প্যাসিফায়ার 

অনিরুদ্ধ গোস্বামী


-----------------------------------

বিড়াল অবাক হয়ে বললো তুমি হটাৎ সন্ধান পেয়ে গেছো এক অমূল্য রতন ,মন শান্ত করার সুলুক -এ পারফেক্ট ট্রাংকুলাইজার আমি বললাম না না ঠিক হলো না ট্রাংকুলাইজার বললে মনে পড়ে আলপ্রাজোলাম ট্যাবলেট, ভালো হয় বললে প্যাসিফায়ার।

পন্ডিচেরি আমার খুবই পছন্দের জায়গা। এইতো সেদিন দুদিন এর ছুটি তে সেখান থেকে ফিরে এসে ডি এস এল আর ক্যামেরা তে তোলা ছবি গুলো দেখছিলাম। সন্ধ্যেবেলা ,একটু আগেই ফিরেছি। সন্ধ্যে তে বিড়াল ও উদয় হয়েছে। সিক্সটি সেভেন্টি র ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক চলছিল সোনি মিউজিক সিস্টেম এ। ডিসপ্লে তে ঢেউ খেলানো সোনালী চুলের এক সুন্দরীর ছবি ছিল। অবাক কান্ড রেম্প এ হেটে আসার মতো বিড়াল নেমে এলো ডিসপ্লে থেকে লেসার রে বেয়ে। সোজা মুখোমুখি বসে পড়ল ডান দিকে হেলান দিয়ে। পা ছড়ানো রইলো আমার এল আকৃতির সোফা তে। লাল রঙের গাউন পায়ের শেষ অব্দি পৌঁছায় নি। সাদা পায়ে চেরি লাল রঙের পেন্সিল হিল এর জুতো পরেই অর্ধ শায়িত |ক্যামেরার ফোকাস ঠিক আছে কিনা দেখছিলাম। তাতে দেখি বিড়াল এসে বিরাজমান। সেই মোহময়ী আবেদন এ চেয়ে আছে। সোনালী চুল সুবিন্যস্ত হয়ে পাটে পাটে নেমে এসেছে কাঁধ অব্দি। মতি গতি ভালো নয় ,যদিও বলল গল্প করতে এসেছে। যখন তখন উদীয়মান হওয়া তার একটা স্বভাব।

হাত থেকে ক্যামেরা টি জোর করে নিয়ে ফটো গুলো দেখতে লাগলো। প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলো এইতো কদিন আগে পন্ডিচেরী থেকে ঘুরে এলে না? বার বার যাও কোনো নীল। একবার ও তো নিয়ে গেলে না কপট রাগ করে বললো বিড়াল।

আমি বললাম বাম দিকে সমুদ্র কে রেখে ই.সি.আর রোড ধরে ড্রাইভ করার মজাই আলাদা। তার সাথে আছে পন্ডিচেরির স্টোন বিচ। সন্ধ্যে তে ঘুরে বেড়ানো সাথে গেল্যাটেরিয়া মন্টেকাতিনি টের্রমে র আইসক্রিম আর সেলিনাস কিচেনের হাতে তৈরী পিজ্জা। প্রতিটার অনুভূতি স্বৰ্গীয়। আর তার জন্য বার বার যাওয়া যায়।

বিড়াল বললো আমার তো মনে হয় হাই রোডে স্পীড তোলার উত্তেজনা আলাদা | আমি বললাম সেটা হয় রোডের ভাষা বুঝে চালালে। আর সেই ভাষা বোঝা যায় রাস্তাতে নামলেই। বিড়াল বললো একবার ও তো নিয়ে যাওনি তো বুজবো কি করে ?

-দেখো গাড়ি চালানো আর ধ্যান করার মধ্যে বিশেষ তফাৎ নেই।

বিড়াল বললো ,ধ্যান ভেঙে যায় যখন বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে কেউ সামনে এসে পরে।

আমি বললাম তখন মনে হয় ওরে আমাকে হারিয়ে দিলি ,দাঁড়া দেখাচ্ছি বলে এক্সেলেরেটর এ পুরো জোর দি। এই রেষারেষি মনের ভারসাম্য নষ্ট করে ,এইসময় যে এড্রেনালিন পাম্প হয় সেটাই থ্রিল।

তবে আরেকটা সোজা উপায় আছে,জিজ্ঞাসা করলাম কি সেটা ?বিড়াল বললো যেতে দাও ,আমি বললাম না না শুনি না। বিড়াল বললো বললাম তো "যেতে দাও " যে যাচ্ছে যেতে দাও। আমি কম্পেটিশন এর মধ্যে নেই। স্বভাবতই তাড়াহুড়ো আর থাকবে না। আর না হলে আমাকে নিয়ে চলো।

আমি বললাম লাগবে না ,এবার আমি পেয়ে গেছি এক ব্রম্হাস্ত্র-একটি অবর্থ্য মন শান্ত করার টোটকা।

বিড়াল সোনালী চুলগুলোর মধ্যে একবার বাম হাত চালিয়ে নিলো আর ঘাড় ঈষৎ হেলিয়ে আদুরে স্বরে জিজ্ঞাসা করল কি ভাবে পেলে নীল ?

আমি বললাম এ পাওয়া হটাৎ করে হয় ধরো কন্যাকুমারী গেছ , উদ্দেশ সমুদ্রতটে যাবে। অলি গলি দোকানপাট এর মধ্যে দিয়ে হাটছো। ঠিক একটা বাঁক ঘুরলে আর দেখলে বিশাল জলরাশি।মন আপনা থেকেই অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে কারণ মন আর তখন এই বিশালতার সামনে আর দৌড়াতে পারে না। সে এমনি তখন ঠান্ডা হয়ে যায়।

বিড়াল বললো ধুর ,কন্যাকুমারী ছেড়ে পন্ডিচেরী র কথা বল নীল। আমি বল্লাম হে যেটা বলছিলাম হাইরোডে গাড়ি চালানোর সময় মন ঠান্ডা রাখা দুস্কর ব্যাপার। পন্ডিচেরি তে ফোর ওয়ে লেন এক ডিভাইডার দিয়ে ভাগ করা থাকে।যেকোন হাই রোডেই এটা দেখা যায় আর ডিভাইডার এর মাঝে রাস্তা এপার ওপর করার জন্য জায়গা করা থাকে যাতে স্থানীয় লোকের সুবিধা হয়। অধৈর্য বিড়াল জানতে চাইলো কি এমন দেখলে যে এতো বিশদ করে বলছো।

সেটা শুনলেই বোঝা যাবে। আমার গাড়ির স্পিড তখন ৮০র ওপর। সামনে একটি জনপদ আছে। পিছনে থেকে এক “ ইনোভা “বেপরোয়া ভাবে বেরিয়ে গেল। মনে মনে তার চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছি। এমন এক ব্যস্ততম রোডে র ওপর ডিভাইডার এর মধ্যে এ দেখলাম এক কিশোরী কে। চকিত সে দেখা। এক পা তার লাল লেডিস সাইকেলের পেডেলে আর এক পা মাটির ওপর। গোলাপি সালোয়ার চুল গুলো হাওয়ায় উড়ছে। বাম দিকে চেয়ে গাড়ি গুলো আসা লক্ষ্য করে যাচ্ছে আর অপেক্ষা করছে রাস্তা পেরোবার জন্য উপযুক্ত সময়ের।কিন্তু তার মুখে কোনো ব্যাস্ততার ছাপ নেই নেই কোনো তাড়া রাস্তা পেরোনোর। সে যেন যুগ যুগ ধরে একই ভাবে অপেক্ষা করতে পারে কাঙ্খিত মুহূর্তের জন্য। তারপর রাস্তার ব্যস্ততা কমে গেলে হয়তো ধীরে সুস্থে পেরোবে রাস্তা টা। আর সে সময় হয়তো গাড়ি গুলো থেমে যাবে।

বিড়াল জিজ্ঞাসা করলো এতো কিছু দেখে ফেললে ওই কয়েক মুহূর্তে ?

জায়গাটা পেরোতে হয়তো পাঁচ সাত সেকেন্ড লেগেছিলো ,আর তার দিকে দেখে মনে হয়েছিল কি আশ্চর্য এক মন শান্ত করার দৃশ্য !

নীল ইটস এ পারফেক্ট প্যাসিফাইয়ার। আমি বললাম ঠিক বলেছো | এরপর থেকে গাড়িতে স্পিড তুললেও সেই দৃশ্য ভাসে আমার মনে " দুটো হাত সাইকেলের হ্যান্ডেলে ,ঋজু ভাবে বসা ,হাওয়ায় ঢেউ খেলা চুল ,এক পা পেডেল এ আর এক পা মাটিতে আদি অনন্ত কাল অপেক্ষারত একটি রাস্তা পেরোবার জন্য উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষারত এক কিশোরী ।বিড়াল গুটি গুটি পায়ে আমার কোলে চলে এলো। আমি তার গলায় হাত বুলিয়ে দিতে আবেশে কিছু একটা শব্দ করতে লাগলো |কিন্তু আমি যেন শুনলাম " উঃ আন্টাবা মামা , উঃ উঃ আন্টাবা মামা "

গানের দৃশ্যটা মনে প্রতিটা করে রোম কূপে আগুন ধরানোর আগেই মনে মনে ভাবলাম এই রাস্তাটাও পেরোতে হবে আর সাথে থাকবে স্মৃতি- সেই সকালের "এ পারফেক্ট প্যাসিফায়ার ".


সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy