Krishna Banerjee

Romance Crime Others

3  

Krishna Banerjee

Romance Crime Others

আর কত নিচে ?

আর কত নিচে ?

5 mins
10


              রাত টা যেভাবে কাটলো সেটা বলবার আরকিছু নেই । টাকাটা একধারে যেমন একটা বিষয় ছিলো, তার চাইতে অধিক আকর্ষণ ছিল ওই মহিলার পতি। চটবেলাথেকে মেয়েদের থেকে দূরে দূরেই থাকতাম । বাড়ির বড়রা বলতেন মেয়েদের পাল্লায় পড়লে মানুষ নাকি বকে যায় , তার পড়াশুনা লাটে ওঠে , আর পড়াশুনা না শিখলে বড় স্থানে ঠাঁই মিলবেনা । বাবা আগেকার সময়ের মেট্রিক পাস । শুনেছি না শুনেছি বললে ভুল হবে বাবার মার্কশিট দেখেছি , প্রতিটা বিষয়েই আশির উপর নাম্বার ছিলো কিন্তু অর্থের অভাবে আর আগুতে পারেননি তিনি । তারপর থেকেই উপার্জনের লড়াই , কোন একজন ছিলেন পাশের গ্রামে তিনি সুধে টাকা খাতাতেন । বাবা তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চাষের ব্যাবসা শুরু করেন । চাষ করা , ফসল তোলা আবার সেগুলো হাটে নিয়ে গিয়ে বেচে আসা , সবটাই তিনি নিজের হাতে করতেন প্রথম অবস্থাতে । তারপর ধীরে ধীরে জমি বাড়লো , চাষ বাড়লো সাথে সাথে বাবার বয়স।এভাবে অনেকটা সময় কাটলো । আমার এতদিনের জীবনে মাত্র 3 বার গিয়েছিলাম চাষের মাঠে । তখন এতো উন্নত ব্যাবস্থা ছিলোনা , বলদ দিয়েই মাঠ চষা হতো। শেষ বার আমি হাল দিতে গিয়ে বুঝে গিয়েছিলাম এটা আমার কাজ নয় । আর কোনদিন যাইনি।আমি সবসময় চাইতাম পড়াশুনা করে অমন কাজ করবো যে বাবার থেকেও কম সময়ে বেশি ইনকাম করবো । ভগবান হয়তো আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছিলেন । আমার এটা ভেবে অবাক লাগছে , জীবনে প্রথমবার যে মহিলাকে পছন্দ হল তাকে ছুঁয়ে , সরি শুধু ছুঁয়ে বললে ভুল হবে , তার দেহটা পুঙ্খানু পুঙ্খ ভাবে উপলব্ধি করতে পারবো ভোগ করতে পারবো তার সুঠাম , নিটোল দেহটাকে। মনে মনে ভেবে দেহের মধ্যে কেমন যেনো শিহরণ জন্মাচ্ছে। একটা চাপা উত্তেজনায় সারাদেহ ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চাইছে আমার পৌরসত্ত । টার্চ ফোনের দৌলতে একটা ছেলে একটা মেয়ে একঘরে খোলা মেলা থাকলে কি হতেপারে সেটা হয়তো আজকালকার সপ্তম , অষ্টম হয়তো এটাও আমি ভুল বলছি তার থেকেও ছোট বাচ্চারাও জেনে গিয়েছে দেহের পিপাসার কথা । আমি যেন লোকটির চুক্তিতে আবদ্ধ হবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছি কিন্তু ওনারা বিত্তশালী মানুষ আর একটু বেলা করে ফোন করলে ভালো হয়না । কয়েক মুহূর্ত ভাববার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলামনা । ফোনটা করেই বসলাম , কয়েক সেকেন্ড রিং হবার পড় লোকটি ফোন ধরলেন আমি বললাম স্যার আমি বলছিলাম —- আমি —------ আর কিছু বলবার সুযোগ দিলেননা উনি ।বললেন তাহলে কি সিদ্ধান্ত নিলে? আমি জানলাম আমি রাজি । আবার লোকটি বলল তোমার বাড়ির সামনে আমার লোক পৌঁছে গিয়েছে , কথা মত টাকা , দলিল আর চুক্তি পত্র তোমাকে দেবে , তুমি ওটা পড়ে একটা সিগনেচার করে দেবে । তারপর রাত ঠিক 10 টার সময় কাজে চলে আসবে —---- কথা শেষ হতে পারলনা আমার দরজার বাইরে কনিং বেলটা বেজে উঠলো , তাতে রবি ঠাকুরের একটা গান দেওয়া আছে , “ পুরনো সেই দিনের কথা ভলানোকি যায় “ । আমি বললাম উনি বোধহয় এসে পড়েছেন ? ওপার থেকে ভদ্রলোক বললেন তাহলে কাজগুলো সেরে ফেলো ,আমি এখন রাখি । ফোনটা ডিসকানেক্ট হয়ে গেলো , আবার গানটা বেজে উঠলো । আমি বললাম এক মিনিট আমি এক্ষুনি আসছি ।

                     দরজা খুলতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম 5 ফুট উচ্চতার একজন নিপাট, বাঙালি মানুষকে । মাথাতে চপচপে করে সুগন্ধি তেল লাগানো , পড়নে পাজামা - পাঞ্জাবি , চোখে একটা কালো মোটা ফ্রেমের চশমা , পেয়ে মধ্যবিত্তের পড়ার মতোই একখানি চপ্পল , ডান হাতে একখানি এটাচি আর বামহাতে একটি ফাইল । পাজামার উপর একটি কালো কোর্ট। ওটা দেখেই বুঝলাম উনি একজন উকিল । বয়স হবে পঞ্চান্ন আর সাটের মাঝা মাঝি । বেশ নরম ভেবেই বললেন আসতে পারি । আমি অনুমতি দিলাম , লোকটি ঘরে আসে চারদিকটা একবার ভালোভাবে দেখলেন । আমি তাকে বললাম বসুন । লোকটি বলল হ্যাঁ বসছি । তারপর আমরা মুখমুকি বসতে লোকটা জানতে চাইলেন আপনি দেবব্রত । আমি বললাম হ্যাঁ। লোকটি বললেন আপনি সবটুকু জেনে রাজি হয়েছেন ? আমি বললাম হ্যাঁ। লোকটি একটু হেঁসে বললেন এতে আপনার কোন দোষ নেই , আজকালকার দিনে শর্টকার্ট বিষয়টাই বেশি । শুনলাম বেশ ভালোই পড়াশুনা করেছেন যদি এটাই করতে হাত তাহলে ব্যাপার টাকা নষ্ট করতে গেলে কোনো ? এবার আমার একটু বিরক্ত লাগলো বললাম দেখুন জীবনটা আমার তাই আমাকেই ঠিক করতে দিন । লোকটি আবার একটু হাসলেন —--- বললেন টা ঠিক তারপর  এটাচি আমার সামনের টেবিলে রেখে বললেন , এতে অর্ধেকটা আছে বাকিটা কাজের শেষে দেওয়া হবে ওর মধ্যেই রাজার হাটের বাড়ির দলিলটা রয়েছে একবার দেখেনিন । এটাচি খুলে দেখলাম টাকার উপরেই রাখা রয়েছে দলিলটা , আমি এটাচি বন্ধ করে বললাম কই এগ্রিমেন্ট টা দিন । উনি আবার বললেন আচ্ছা দেবব্রত বাবু আপনার একটু অবাক লাগছেনা । আমি বললাম কিসের ? উনি বললেন এইযে একটা বাচ্চার জন্যে কোন মানুষ এতগুলো টাকা দিচ্ছেন কেনো ? আমি বললাম ওসব বড়লোকদের খেয়াল আপনি আমি কি বুঝবো ? কোথায় সই করতে হবে বলুন ? আমি বললাম একটিবার চুক্তিপত্র টা পড়ে নিন । টাকা নিচ্ছি তার বিনিময়ে অনার কাজ করেদেবো ব্যাস। একবছর পর আমি মিক্ত , বলুন কোথায় সই করতে হবে ?

লোকটি আমাকে গোটা তিনেক জায়গা দেখিয়ে বললেন এখনে এখানে সই করুন । আমি সই করে দিতেই কাগজটা আমার হাত থেকে নিয়ে ফাইলে ঢুকিয়েই উঠে দাঁড়ালেন, বললেন তাহলে এখন আমি আসি । আমি বললাম এক কাপ চা খাবেন না ? লোকটি বললেন না আমি বাইরে কিছু খাইনা কথাটা শেষ করে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন , কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে পকেট থেকে একটা কার্ড বারকরে আমার হাতে দিয়ে বললেন কখন যদি দরকার হয় ফোন করে নেবেন । এবার তিনি মুহূর্ত বিলমব না করে বেরিয়ে গেলেন আমার রুমের বাইরে । আমি দরজা বন্ধ করে ফিরে আসলাম টেবিলের দিকে , এটাচি খুলে একসাথে এতগুলো টাকা দেখে নিজেকে কেমন যেনো পাগলের মত লাগছিল —---- বুঝে উঠতে পারছিলাম না এখন আমি ঠিক কি করবো ? খুব জোড়ে জোড়ে হেঁসে এই উপার্জনের আনন্দ নেবো , নাকি ছোটবেলার কষ্টে কাটা দিনগুলোর কথা ভেবে আর্তনাদ করে কাঁদব ?

                         সেদিন আমি ওনার কথাগুলো বুঝতে পারিনি ,না বুঝতে পারিনি বললে ভুল হবে বুঝতে চাইনি , যদি সেদিন একটি বারের জন্যে বুঝতে পারতাম যদি একটি বার পড়ে দেখতাম ওতে ঠিক কি লেখা রয়েছে তাহলে আজ আমার এই অবস্থা হতনা । লোভ , হ্যা লোভ আজ আমাকে এখানে এনে দারকরিয়েছে । এর জন্যে শুধু মাত্র আমি দায়ী।

                                          ……………………..


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance