Krishna Banerjee

Abstract Fantasy Others

3  

Krishna Banerjee

Abstract Fantasy Others

কিছু চাওয়া না পাওয়াই থাক

কিছু চাওয়া না পাওয়াই থাক

4 mins
12



                           আমার দেহটা আখন আর আমার নেই । ডাক্তারি ভাষায় ওটা বডি । কেউ কেউ আবার লাশ বলেও সম্বোধন করছেন ।আমি কিন্তু আমার জায়গাতে ঠিক রয়ে গিয়েছি । বডিটাকে সর্টিভাইট করতে এখন চার ঘণ্টা সময় লাগবে । তারপর সর্গ রথের পালা । আমার আখন উপলব্ধি হচ্ছে মৃত্যুটা আসলে কিছুই নয় । দীর্ঘ পথ চলার পর একটা গভীর নিদ্রা। যাক সেসব কথা সর্গ রথে চেপে সর্গে যাবার আগে তোমাদের একটা ছোট্ট প্রেমের গল্প বলি । তার আগে বলি প্রেম বলতে মানুষের একটা বাজে ধারনা রয়েছে । অনেকেই মনে করেন একটা ছেলে আর একটা মেয়ের দেহের মিলন হলো আসল প্রেমের প্রেক্ষাপট । এই ভ্রান্ত ধারনাটা আমার মধেও ছিলনা বললে ভুল হবে । সেটা বদলে দিয়েছিল তমালিকা ।

                          তমালিকা আমার অফিস কলিক ।

নতুন জয়েনিং । ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগের কথা বলছি । আমার কর্ম জীবনের প্রায় 25 বছর হয়ে গিয়েছে । মোটের উপর একটা ভালো পরিচিতি রয়েছে সকলের সাথে । আমার রুমটা হলো অফিসের গেটের ঠিক ডান পাশে । অফিসের ভিতরে ঢুকতে গেলে ওটাকে অতিক্রম করে যেতে হবে । আমি কাগজপত্র সাজিয়ে নিয়ে টেবিলে বসেছি , এমন সময় 

আমার দরজাটা হালকা করে খুলে একটা মিষ্টি মুখ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো স্যার আসতে পড়ি । আমি মজাকরেই বললাম গলাটাতো ঢুকিয়েই ফেলেছেন দেহটা নিয়ে এবার চলেই আসুন । মেয়েটি অদ্ভুত ভাবে বাচ্চাদের মতো ভিতরে আসে বললেন আমি এই অফিসে আজি জয়েন্ট করেছি ,কিছুই চিনিনা । দয়া করে যদি বলেদেন আমি ঠিক কোথায় যাবো ? 

হাত থেকে জয়েনিং লেটার টা নিয়ে দেখলাম ম্যানেজারের রুমে পাঠাতে হবে ওনাকে কিন্তু বলেদিলে উনিকি যেতে পারবে । একেবারে শেষ প্রান্তে বসেন ম্যানেজার । মাঝখানে গোটা পনের রুম তার উপর আবার গলি গলি রাস্তা , প্রথম সপ্তাখানেক আমি নিজেই হোঁচট খেয়েছি । বললাম বলেদিলে যেতে পারবেন , মেয়েটি মিষ্টি হেঁসে বলল হ্যাঁ। আমার মেয়েটিকে অকারণে খাটাতে কেমন যেনো মায়া লাগলো । বললাম যেতে পারবেন না আপনি একটু দাড়ান লকারটা বন্ধ করে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি আপনাকে । কমলিকা হটকারী মেয়ে নয় , যেখানে ওকে দাঁড়াতে বলেছিলাম 5 মিনিট ও একভাবে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো , উল্টে আমি আসে ওনাকে বললাম আপনি দাঁড়িয়ে কেন? বসতে পারেননি । তখনো কিছু বলল না সে , একটা অপূর্ব মিষ্টি হাঁসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন না ঠিক আছে । তারপর আমি ওনাকে ম্যানেজারের রুমে পৌঁছে দিলাম । 

                            সেদিন আমি একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসার কারণে ওনার সাথে দেখা হোলনা। পরের দিন অফিসে ঢুকেই সোজা চলে এসেছিল আমার রুমে । কথাগুলো এমন ভাবে বলতে শুরু করলো জানো আমি ওনার কত দিনের পরিচিত । কালকে টিফিনের সময় কোথায় ছিলেন ? জানেন আমি আপনাকে কত খুঁজেছি । আমি বললাম আমার স্ত্রীর ডাক্তার দেখানো ছিলো , তাই একটু আগেই চলে যেতে হয়েছিলো আমাকে , এবার একটু অভিমানী হয়ে বললেন আবার থেকে কোথাও জবার আগে জানিয়ে যাবেন আর আজ টিফিনের সময় একা একা খেয়ে নেবেন না কমন । আমি ঘর নেড়ে সম্মতি জানালাম ।

                           এভাবে বেশ কিছুটা সময় কাটলো , মাস তিনেকের মধ্যেই কমলিকা আমাকে আপনি থেকে তুমিতে অনে ফেলল । আমি যদিও কোনদিন ওকে তুমি বলতে পারিনি , একেবারে আপনিথেকে চলে এসেছিলাম তুই তে । তাতে অবশ্য ওর কোন আপত্তি ছিলনা কোনকালেই । আমি আমার পরিবার নিয়ে খুব খুশি কিন্তু তার মাঝখানে কমলিকা আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিল , ওর আমার কাছে করা আবদার , ওর ভালো মন্দ সব কিছুই আমাকে জানতো । কোন কারনে কষ্ট পেলে , বাচ্চাদের মত ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদত সে । আমার কমন জানো একটা অভ্যাসে দাড়িয়ে গিয়েছিল কমলিকা । জানিনা এটা প্রেমের কোন অংশ কিনা ? এটাও জানিনা ও আমার মধ্যে কি এমন পেত ? ওর সাথে নাছিল রক্তের সম্পর্ক নাছিলো দেহের সম্পর্ক । যেটা ছিল সেটা হয়তো মনের সম্পর্ক ।

                              একদিন কমলিকার বিয়ের ঠিক হল , এটাই স্বাভাবিক । আমাদের সকলের আমন্ত্রণ ছিলো ওর বিয়েতে । বিয়ে করে পচিমের মেয়েটা চলেগেল উত্তরে । তার পরথেকে অনেকেই এসেছে অনেকেই গিয়েছে , করসাথে কমলিকার মত বন্ডিং হয়নি । আখন আর খুব বেশি কথা হয়না ওর সাথে , এটাও স্বাভাবিক কমলিকা এখন পূর্ন সংসারী । সকালে good morning লিখে পাঠালে কোনদিন দুপুরে লিখে পাঠায় good afternoon, আবার কোন কোন দিন রাতে লেখে good night । হসপিটালে ভর্তির দিন তিনেক আগে ওর সাথে প্রায় এক ঘন্টা কথা হয়েছে । আমার শরীরটা খারাপ শুনে কত শাসন করলো আমাকে । কমলিকা হয়তো জানতেও পারবেনা আজ আমি আর এই পৃথিবীতে নেই । ডাক্তার এসে গিয়েছে আমাকে টেপাটিপি করে লিখে দেবেন ডেথ সার্টিফিকেট ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract