aftab hossain

Abstract Others

4.3  

aftab hossain

Abstract Others

অভিনয় (শারদ সংখ্যা )

অভিনয় (শারদ সংখ্যা )

4 mins
142



রাত থেকেই ডা: রয় খুব টেনশনে,15 বছরের মেডিক্যাল হিস্ট্রি,এতটা টেনশন আগে কখনো হয়নি,কাল হাসপাতালের চার নম্বর বেডের পেসেন্টের কাছ থেকে আসার পরই মেজাজ খিঁচড়ে আছে,রুটিং রাউন্ড ছিল কাল রাতে,চাকরি জীবনের প্রথম প্রথম বেশ একটা ভগবান ভগবান ফিল হলেও এখন বউ বাচ্চা নিয়ে ভরা সংসারে ভগবানের চেয়ে যমরাজ কে বেশি শ্রদ্ধা হয়,, মাঝে মাঝে নিজেকে ভিন্ন ঘরের প্রাণী বলেও মনে হয়, ইমোশনলেশ ইমোশনাল ক্যারেক্টার,এখন পেশেন্ট দেখে সেই মজা আর নেই,,চেম্বারে গেলে ঘুরে আত্ন গ্লানি তে ভুগতে হয়,,এমন কিছু পেশেন্ট থাকে যার জন্য মনে হয় কেন 7 টা বছর কষ্ট করে পড়লাম,এই যেমন কাল বিকেলের চেম্বারের ঘটনা,এক পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞাসা করলেন ডাক্তার বাবু আমি পলিটিক্সের লোক (হাড়ে হাড়ে চিনি মালটাকে),,এমন কিছু ওষুধ দেন যাতে করোনার ইনফেকশন না হয়,বুঝতেই পারছেন জনসেবা করতে হচ্ছে,,রোজ গাদা গাদা লোককে ত্রাণ দিচ্ছি,, একটু সেফ থাকতে চাই, খারাপ কথা ঢোক গিলে বললাম দাদা ও রোগের কোন মেডিসিন এখনো নেই,একটু সেফ থাকবেন আর কি,সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টার,,আচ্ছা বাতের ওষুধ খাবো ? ট্রাম্প বলেছে বাতের ওষুধে করোনা মরে,(তা ট্রাম্পকেই দেখাগে যা ) ,আবার ঢোক গিলে বললাম না দাদা প্রচুর সাইড এফেক্ট ,, কিছু না হলে খাবেন না,,সিক্স সেন্স বলছিল লোকটা আরো কিছু বলবে,,তাই আগে ভাগেই প্রেসার চেক করে একটা multivitamin আর omeprazole লিখে বললাম,,এগুলোই খান 15 দিন,,সমস্যা হলে আবার আসবেন,,

ভিসিট দেবে কিনা ভাবছিলাম কিন্তু উনি যা বললেন তার জন্য একদমই তৈরি ছিলাম না,,ভিসিটের বদলে বললেন ডাক্তারবাবু একটু অন্য কারনে এসেছিলাম,,মানে কমিউনিটি কিচেন টাইপের একটা idea আছে,,যদি কিছু স্পনসর করেন আরকি ,আপনার এত মার্কেট,,মানে ওটাই জন্যই এসেছিলাম ভাবলাম একবার দেখিয়ে নি,,আপনি সাক্ষাৎ ভগবান,,আবার ঢোক গিললাম,,


লকডাউনে পেশেন্ট প্রায় নেই,,যারা অপেক্ষা করছেন তারা সত্যি খুব সিরিয়াস,,কথা বাড়ালাম না,,নেক্সট বলতে যাবো,,তখনই ফোন,,হাসপাতাল থেকে হারুন দা,, দাদা একজন পেশেন্ট আছে,,মহিলা ,,সিরিয়াস,,অজ্ঞান,,শ্বাসকষ্ট সঙ্গে বমি,আসতেই হবে,,শিফটে আপনার নাম দেখলাম,,

বাকিটা শুনলাম না,,মেডিক্যাল লাইনে আসার পর ভয়ডর অনেকটা কমে গেছে,,শুধু 2 বছরের মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে একটু বুকটা চিনচিন করে,,

লকডাউনের পর থেকে হাসপাতালের চেহারাটা কেমন যেন বদলে গেছে,, একটা গমগমে হাসপাতাল হঠাৎ করে মর্গ মর্গ হয়ে উঠেছে,,,আমাকে আসতে দেখেই হারুন আর নিবেদিতা এগিয়ে এলো,,নিবেদিতা জুনিয়র নার্স,,ভালো মেয়ে,,নিবেদিতাকে বললাম কি ব্যাপার,, নিবেদিতা বললো স্যার মেয়েটার শরীরটা ঠান্ডা কিন্তু সেন্সলেস,,মাঝে মাঝে আঁতকে উঠছে আর সাথে কেউ নেই,,আমি স্যালাইন দিয়েছি আর অক্সিজেন মাস্ক হালকা করে পরিয়ে রেখেছি,,

একাই হাসপাতালে এসেছিল,,এসেই কিছু বলার আগেই সেন্সলেস,,আপাতত চার নম্বর বেড খালি ছিল,,রেখেছি,,


জুনিয়র সিস্টার গুলোর আক্কেল দেখলে মাঝে মাঝে গা রি রি করে,,রাগের সুরের বললাম,,তুমি কি নতুন নিবেদিতা,,এই প্যান্ডামিক সিচুয়েশনে তুমি প্রটেকশন ছাড়াই যাকে তাকে বেডে তুললে কেন,,আর পেশেন্ট পার্টি নেই ,,রিস্ক নিলে কেন,,পুলিশে খবর দিলে না কেন,,নিবেদিতা আর হারুন আমতা আমতা করে বললো,,স্যার গ্রামীন হাসপাতাল,,এদিকে এখনো করোনার কোন খবর নেই,,তাই আরকি,,এছাড়া স্যার ppe এখনো supply নেই,,মেয়েটাকে কি চোখের সামনে মরতে দেব স্যার,,,আরো একটু জোরে ধাতানি দিতে যাচ্ছিলাম,,4 নম্বর বেডের পাশ থেকে আয়াদিদি ডাক দিল,,ডাক্তারবাবু পেসেন্টের জ্ঞান এসেছে,,


যা ভাবছিলাম তাই,,মালতি কুজুর,,মহারাষ্ট্র থেকে 2 দিন আগে ফিরেছে,,মাথাটা খালি খালি লাগছিল,,,যতটা পারি সামলে বললাম বেড আলাদা করার ব্যবস্থা কর,,সোয়াব স্যাম্পল কালেক্ট করার জন্য লোক আনতে হবে,,cmoh কে ফোনে পুরো ডিটেলস দিয়ে খালি মাথায় বাড়ি ফিরতে ফিরতে মনে হল মেয়েটা বড্ড মাংস ভক্ত আমার,,এত রাতে মনে হয় মাংস আর পাবো না,,অনেকদিন থেকে একটা বার্বি আনতে বলেছে,,আজকেই সব মনে পড়ছে কেন কে জানে ,, মনটা বড্ড কু ডাকছে,,



রাতে নিজেকে একাই রেখেছিলাম,,,সোনা মা আমার কেঁদে ফাটিয়ে দিয়েছিল,,বাবা কেন রাগ করে আছে এই বায়নায়,,কান চেপে দরজা বন্ধ করে এক প্যাকেট ধুম্র শলাকা শেষ করেছি,,সকালে মেয়েওঠার আগেই পালিয়ে এসেছি,,বউকে বললাম একটু সামলে নিতে,,ভাড়ায় থাকি,,বাড়িবালি খুব সুবিধার না,,হাসপাতালে ইনফেকশন শুনলে আগে ভালোমন্দ শুনিয়ে যাবে,,হয়ত বা বাড়ি খালি করারও অর্ডার আসবে,এই লকডাউনের মার্কেটে ওদের কোথায় সরাব সেটাও চিন্তার,,নাঃ,, মাথা আর কাজ করছে না,,হাসপাতালে ঢুকেই খোঁজ নিলাম মালতি কুজুরের,, জানতাম কাল রাতেই ওকে কোয়ারেন্টাইন নিয়ে গেছে,,তাও টেস্টের রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত্য টেনশন চিরচির করছিল,,এর মাঝে একটা অজানা নম্বরের ফোন,,সেই নেতামশাই,,ফোন করে জিজ্ঞাসা করলো কাল পেশেন্ট ছোঁয়ার পর ওনাকে দেখেছিলাম না আগে,,?

উত্তর না দিয়েই কেটে দিলাম,, হারুন এসে বললো স্যার টেনশন নেবেন না,,আমি কাল রাতেই হোমিওপ্যাথি মেরে দিয়েছি,,সিস্টার দিদিকেও বলেছি ,, স্যার আপনি একটু নেবেন,,


Cmoh কে অনেকগুলো ফোন করেও পেলাম না,,নিবেদিতা মাঝে ফোন করছিল,,মনে হয় বেচারির বিয়েটা আরো পেছাবে,,,ফেসবুক খুললাম,,গ্রামের ফেসবুক বিপলবীরা নিজেদের মার্ক সেফ মারা পোস্ট দেওয়া শুরু করেছে দেখছি,,আমিই শুধু বুঝি না এত তাড়াতাড়ি এ সব খবর ছড়ায় কি করে,,সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সৈকতের ফোন,, ওই জাতীয় মানুষদের আমি একদমই পছন্দ করি না,, আঁতেল বুদ্ধজীবী ডাক্তার,,পাশের ব্লকেই পোস্টিং,,বুঝতে পারছি হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙ ও লাথি মারে এই প্রবাদটা কতটা সত্যি,,,ফোন রিসিভ করে বললাম বল ₹?? ও পাশ থেকে চ্যাবলা আওয়াজ,,কাকা বাঁশ খেয়েছো তো ? ,চিন্তা নেই আমি আছি তো নাকি ,যাচ্ছি কাকা ,,10 মিনিট অফিসে থেক,,



30 মিনিট পর সৈকত হাজির,,যাকে নিয়ে এলো তাকে দেখে শক খেলাম,,কাল রাতের মালতি কুজুর,,আমতা আমতা করে বললাম এটা কি হলো,,সৈকত বললো কাকা এটা জাবিনা বিবি,,কার বিবি কেউ জানে না,,ভিক্ষা করে কাটাত,, লকডাউনে নতুন ফন্দি,,মহারানী অজ্ঞান আর জ্বর হবার ভান করে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যেয়ে 15 দিন ধরে ফ্রি খাবার খায় আর একটা করে টেস্ট কিট নষ্ট করে,,আগেরবার আমার এখানে গিয়েছিল সুলেখা মাঝি হয়ে,,এবার তোমার ওখানে এসেছে মালতি কুজুর হয়ে,,এই এরাই সরকারের বাঁশ দেয় ,,আমি দেখেই চিনেছি,,তাই ধরে নিয়ে এলাম,,নাও রিলিজ কর কাকা,,আর সাথে এক প্যাকেটে নেভি কাট পাওনা,,



বাড়ি যাবার সময় মেয়ের জন্য বার্বি ডল কিনলাম,,সঙ্গে দু জায়গায় ফুল প্লেট মটন বিরিয়ানি,,এক প্লেট মেয়ের জন্য,,আর এক প্লেট জাবিনা বিবির,,

15 বছরের ডাক্তারিতে ভালোভাবেই জানি নাকে জল নিয়ে হয়ত করোনার অভিনয় করা যায় কিন্তু ক্ষিদের চোটে অজ্ঞানের অভিনয় করা যায় না ।





Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract