Supratik Sen

Abstract

2  

Supratik Sen

Abstract

বাগানের সুর

বাগানের সুর

5 mins
4.1K


কারা যেন আমার বাগানের সব ফুল তুলে নিয়ে গিয়েছে | ফুল তুলতে গিয়ে বাগানের এই শূন্য রূপ দেখে মনটা কিরকম ফাঁকা হয়ে গেলো | নীল, লাল, সাদা জবাফুলের গাছ বেলফুল, হাস্নুহানার ঝাড়ি, দোপাটি, লিলি,জুঁই, সব যেন খাঁ খাঁ করছে | মাটিতে কোনোফুলের চিহ্ন নেই | এই ভাবে বাগান সাফ করা কি একজনের পক্ষে সম্ভব? বাগানের গেটও খোলা,বুকের ভিতরটা চোর এসেছে এই ভয় অসাড় হয়ে গেলো,ফুল তো ফুল,বাড়ির ভিতরের জিনিসগুলো তো এবার দেখতে হবে| গতকাল সন্ধে থেকে একটা চেনা গান কিছুতেই মনে পড়ছেনা,খালি এসে ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছে,ধরা দিচ্ছে না।এইমাত্র এতকাণ্ডের মধ্যেও এসে পালিয়ে গেলো,চোরের মতো,কিন্তু এখন তো ফুলচোরেরহদিশ করতে হবে| বহুদিন হাঁটুর ব্যাথায় ভুগছি,তাই কাঁপা কাঁপা পায়ে ঘরের দিকে দেখলাম দালানের পাশে রাখা ফুলতোলার দুটো ঝুড়িই নেই|আজ বৃহস্পতিবার,কি দিয়ে পুজো করবো তাই ভাবছি আর পায়ে পায়ে ঘরগুলো দেখছিনাঃ,কোনো জিনিস সরানো হয়েছে বলে তো মনে হলোনা, তবে কে এলো! বাপনকে কত হাজার বার বলেছি পাকা দেওয়াল তুলে তালা দেওয়া গেট করে দিতে, কিছুতেই ও তা করবে না, ও বলে তালা দিলেই নাকি চোর আসবে, আমাকে কোনো ওষুধপত্র ও বিশেষ কিনতে দেয় না, ওষুধের বাক্স ভর্তি করলেই নাকি অসুখ হয়, তা আমি তো হাঁটু ব্যাথায় ভুগছি, আমি কি তার ওষুধ কিনেছিলাম আগের থেকে? যত সব আজগুবি কথা... বলে ওটা নাকি আমার মনের ব্যাথা...নে এবার দেখ, গেট করা হয়নি তাও তো তোর মার্ এতো সাধের সাজানো বাগান সাফ করে দিয়েছে,তার ওপর বৃহস্পতিবার, আর একবার যখন শুরু হলো,এর আর শেষ হবে না৷মাগো,ধুত্তোর!আবার সুরটা মাছির মতো ভোঁ করে এসে ঠোঁটে বসেই পালিয়ে গেলো|বুক ঢিপ ঢিপ করছে,হাঁটুর ব্যাথাটা বাড়ছে, মিথ্যে বলবো না, ও আমাকে সুন্দর একটা ওষুধ বলে দেবার পর আমার ব্যাথাটা অনেক কম, ও অফিস থেকে ফিরে এসে আমার সাথে চা খায় আর আমার হাঁটুর ওপর হাতটা দিয়ে রাখে খানিকক্ষণ আর আমাকে বলে আজ মন্ত্রওষুধ বলেছো? আমি বলি হ্যাঁ বলেছি-ওর এই মন্ত্র হলো,আমার হাঁটু সেরে গেছে চোখ বন্ধ করে হাঁটুর ওপর হাত রেখে যতবার ইচ্ছে বলতে হবে আর বিশ্বাস করে বলে যেতেই হবে আমার হাঁটু সেরে গেছে| প্রথমে এটা শুনে আমি হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম, তারপর যখন ঔষধ খেয়ে কিছুতেই কমছিল না,তখন শুরু করলাম সেই মন্ত্রওষুধ, একসপ্তাহের মধ্যেই খাট থেকে নেমে বসলাম নিজের অকেজো পা গুলো নিয়েই|এই অবিশাস্য পায়ের কথা ভাবতে ভাবতে ঠাকুর ঘরের দিকে এসে দেখি কাঁচা মাটির পায়ের দাগ, আমার সারা গা ঠান্ডা হয়ে গেলো, তবে কি আমার ঠাকুর ঘরের সব সাফ হয়ে গেছে, কিছু দূরে দেখলাম কাটারি'টা পড়েআছে৷মাগো মা,বেস্পতিবার এ কি কান্ড!এ কি অন্য কোনো বিপদের পূর্বাভাস! চারদিন হলো বাপন ওর পরিবারকে নিয়ে  দার্জিলিং এ গেছে।ওরা ঠিক আছে তো ! টিকলি,আমার পাঁচ বছরের নাতনীটা ওর কোনো ক্ষতি হয়নি তো! ঠিক এই সময় ফোন বেজে উঠলো।আমি সব কিছু ভুলে ছুট্টে গিয়ে খাটের ওপর রাখা মোবাইল টা নিলাম, দেখি বাপনের ফোন, আমি হাউহাউ কোরে কেঁদে ফোন নিলাম, নিশ্চই ওদের কিছু হয়েছে, হয় ধ্বস নেমেছে, নয়তো কোনো চুরিচামারি হয়েছে, নয়তো জঙ্গিদের হামলা হয়েছে... বাপন! তোরা ঠিক আছিস তো? আজ সকালে বাগানের সব ফুল চুরি হয়ে গেছে। ঠাকুর ঘর খোলা, গেলো গেলো আমার সব গেলো।টিকলি কোথায়!!ঠাম্মি আমি টিকলি,আমাদের কিছু হয়নি গো,আমরা সবাই ভালো আছি বাবা খুব সুন্দর হোটেল বুক করেছে, আমি নিজের কান্না সামলে টিকলিকে অনেক হাম্মি দিয়ে বললাম, ''তোর বাবাকে দে তো'' 'হ্যাঁ, এই নাও'বলে টিকলি বাপনকে ফোনটা দিতেই আমি হামলে পরে ওকে সব কথাটা জানালাম।ফিরে গিয়েই ও দেওয়াল তুলে গেট করে দেবে বললো।আমি দৌড়ে এসেছি শুনে ও হেসে বললো তাহলে আমার পা সেরে গেছে। এই সময়েও ঠাট্টা আসে!যাক,ওদের কিছু হয়নি শুনে আমি নিশ্চিন্ত হলাম আর শোবার ঘর ছেড়ে ঠাকুর ঘরের দিকে এগুলাম।আবার ফোন,বাপন থানায় ফোন করায় থানা থেকে ফোন করেছে।আমি বললাম পুলিশ পাঠিয়ে দিতে।কেননা চুরি তো নিশ্চই হয়েছে।নাঃ ছেলেটা আমার তৎপর বলতে হবে।সঙ্গে সঙ্গে থানায় ফোন করেছে।অনেক বল নিয়ে এবার ঠাকুর ঘরের দিকে এগুলাম। আশ্চর্য!এই যে আমার দুটো পা যেন অনেক প্রাঞ্জল মনে হচ্ছে।এই অবিশ্বাস্য পা নিয়ে আমার হাঁটু সেরে গেছে এই মন্ত্রওষুধ আওড়াতে আওড়াতে ঠাকুর ঘরে ঢুকলাম হাতে মোবাইলটা নিয়েই|কে মজাবে আমার সুন্দর পুষ্পসজ্জিত মা লক্ষ্মীর আসন!দেখলাম অপরূপ ভাবে আমার বাগানের তোলা ফুল দিয়ে আমার ঠাকুর ঘর সুসজ্জিত। যেন আমার অন্তরদর্শন হলো।এইরকম করে তো একমাত্র সেই সাজাতে পারে। তবে কি আজ এতো বছর পরে সে এসেছে!শান্তি,হ্যাঁ হ্যাঁ,এ আমার শান্তি না হয়ে যায় না।হায়দ্রাবাদে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়ে গোকুল চাটের দোকানে বোমা বিস্ফোরণ!চাট খেতে খেতে রক্তাক্ত দেহে শাহিদের কোলে লুটিয়ে পড়া... তারপর দুজনে দুজনকে জাপটে জড়িয়ে ধরা,রক্তাক্ত মাটির ওপর শাহিদের শান্তিকে দুহাতে আগলে রাখা,প্রেম আর বিয়ে!2007 এই বিয়ে হয়েছিল ওদের। ওই হিংস্রতা থেকে জন্ম নেওয়া এই প্রেম যেন সকলের মন ছুঁয়ে গিয়েছিলো।দুই বাড়ির থেকে কেউই আপত্তি করেনি।কলতলায় বাসন মাজার আওয়াজ পেলাম আমি পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি হাসিমুখে মাজা বাসন হাতে নিয়ে শান্তি আসছে। শান্তি ওর হাত ধরে দেখি রওশন আর পৃথা, ওর পাঁচ বছরের ছেলে আর  চার বছরের মেয়ে হাতে ছোট ছোট বাসন নিয়ে দুলতে দুলতে আসছে।আমার সঙ্গে সঙ্গে গানটা মনে পড়ে গেলো।সেই গুনগুন সুরে গান করতে করতেই বাপন কে ফোন করে বললাম ও যেন সামনের বার আমাকে পুরী নিয়ে যায় কেননা আমার হাঁটু সেরে গেছে।এও বললাম বাগানে দেওয়াল তোলার কোনো প্রয়োজন নেই।ও হো হো করে হেসে বললো যে ওরা সামনের বৃহস্পতিবার সকালে ফিরবে।সেইদিন ফুল আমি, শান্তি আর পূর্ণিমা, আমার বৌমা, মিলেই তুলবো।এই ভেবে আমিও আচ্ছা বলে ফোন টা রেখে দিলাম।পুলিশদেরও হতাশ হয়ে ফিরতে হলো।আমি গেয়ে উঠলাম..'পুষ্প বনে পুষ্প নাহি, আছে অন্তরে'... শান্তি ঠাকুরঘর থেকেই খানিকটা চিৎকার করেই বললো, তোমাকে দেখতে যাবার দিন এই গানটা গেয়েই তো দাদাকে আর আমাদের সবাইকে মজিয়েছিলে।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, জানিনা...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract