Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

3  

Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

বৃত্তের বাইরে পর্ব আটত্রিশ

বৃত্তের বাইরে পর্ব আটত্রিশ

6 mins
9


পর্ব আটত্রিশ

রাজদীপের যে বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে - তা বিভূতিভূষণ জানেন , কিন্তু সে কথা বাড়িতে না শুভমিতা দেবীকে না মেয়েকে জানিয়েছেন । 

আসলে তিনি এত প্রফুল্লিত হয়েছিলেন যে ভেবেছিলেন এ যাত্রা ফিরে না এলে তিনি একজন বিখ্যাত ডাক্তারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন ।

সেদিন শম্ভু যখন গাড়ি বের করছিল একটি নীল রঙের গাড়ি শম্ভুর গাড়ির পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ল ।

বিভূতিভূষণ সদরে এসে দেখেন এক যুবক এবং এক বিধবা রমণী হনহন করে বাড়িতে ঢুকছেন ।

বিভূতিভূষণ নিজস্ব ভঙ্গিতে বলে উঠলেন - কে আপনি ?

বিধবা তার কোন উত্তর না দিয়ে বললেন - আপনার মেয়েকে ডাকুন । যা বলার ওকেই বলব ।

বিভূতিভূষণ বললেন - কিন্তু আপনি কে ? 

- তার আগে আপনি বলুন আপনি কে !

বিভূতিভূষণ বললেন - আমি মেয়ের বাবা ।

বিধবা রমণী বললেন - তাই তো দেখছি , মনের অনন্দে বেড়াতে চলেছেন । বলি মেয়েকে দিয়ে এমন কাজ না করালেই তো পারতেন ! অবশ্য গোডাউনে যা থাকে তাই তো শো রুমে আসে !

বিভূতিভূষণকে মাথা ভোঁ ভোঁ করে উঠল । ভদ্রমহিলার এত স্পর্ধা যে চোখ রাঙিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন ।

শুভমিতা দেবী ব্যাপার বুঝে বলেন - আপনি বোধ করি রাজদীপের মা ! নিজের ছেলেকে সাবধান না করে চলে এসেছেন কোমর বেঁধে ঝগড়া করতে ?

রাজদীপের মা মঞ্জরী দেবী বললেন - দেখুন, আপনার মেয়ে আমার ছেলেকে না ফুঁসলালে আজ এত বড় কাণ্ড ঘটত না ।

শুভমিতা দেবী ফোঁস করে উঠলেন - আপনার ছেলেই তো আমার মেয়েকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে পালিয়েছে ! সেইজন্য থানায় রিপোর্ট করতে যাচ্ছি ।

রাজকুমার বলল - আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে ম্যাডাম । আমার ভাই রাজদীপ বাইক এক্সিডেন্ট করে এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে । আর আপনি বলছেন ....

মঞ্জরী দেবী কেঁদে ফেললেন - হায় রে কপাল !

শুভমিতা দেবী স্বামীকে বললেন - এমন ঘটনার কথা তুমি শুনেছ ?

বিভূতিভূষণ চুপ করে রইলেন । মহিমকে যখন বলেছিলেন ' রাজদীপকে এখনই আমার সামনে হাজির কর ' ।

মহিমই বলেছিল - হবে না স্যার । ও তো সিরিয়াসলি ইঞ্জিউরড হয়ে এখন হাসপাতালের বেডে ।

মনে পড়ল বিভূতিষণের। আর মনে পড়তেই তাঁর মাথা ঘুরে গেল । ' মেয়ে তাহলে কিডন্যাপ হয়ে গেছে '!

হাত জোড় করে মঞ্জরী দেবীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন - দেখুন , তাহলে আমার মেয়েকে কেউ কিডন্যাপ করেছে ।

মঞ্জরী দেবী বললেন - হাতে নাতে ফল পেলেন তো ! এবার বুঝুন সন্তান কি জিনিস !

শুভমিতা দেবী অচৈতন্য হয়ে পড়ে গেলেন । তাঁর নাকে ব্লটিং পেপার পুড়িয়ে ধোঁয়া দিলে তাঁর জ্ঞান ফিরল ঠিকই, তিনি যেন তখনও ধাতস্থ হতে পারেননি ।

বিভূতিভূষণ বললেন - প্লীজ আমাদের যেতে দিন । নইলে একটা ভয়ঙ্কর অবস্থায় পড়ে যাব । 

রাজকুমার মাকে নিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেল । বিভূতিভূষণ শম্ভুকে বললেন - সোজা থানায় চল ।

কোক-ওভেন থানায় ঢোকার মুখে বিভূতিভূষণ দেখলেন তাঁর মোবাইলে প্রচুর ম্যাসেজ এসেছে । সব ম্যাসেজ পড়ে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে বললেন - এ কেস অফ পারফেক্ট কিডন্যাপ । প্লীজ আপনি ফোর্স নিয়ে আমাদের সঙ্গে চলুন ।

পুলিশ বুঝে গেল মহিম নামের সামওয়ান ক্রিমিনাল ম্যাসেজগুলো করেছে । বললেন - মুক্তিপণ চেয়ে কোন ফোন আসেনি ?

বিভূতিভূষণ বললেন - না । তাছাড়া মহিম বলে যে ছেলেটি ম্যাসেজ করেছে সে আমার পরিচিত । 

পুলিশ অফিসার বললেন - ও তাই বলুন । তাহলে ও ব্যাটাই এই কিডন্যাপের নায়ক!

বিভূতিভূষণ বললেন - হতেই পারে না । আমার অতি বিশ্বস্ত লোক । আমাকে এ ভাবে ঠকাতে পারে না ।

- ক্রাইমের বিষয়ে আপনি কতটুকু জানেন স্যার । কথায় বলে চেনা চোরে পরাণে মারে । 

শুভমিতা দেবী বললেন - যা করার শিগগির করুন স্যার । ওরা এখনও বেশী দূরে যেতে পারেনি।

অফিসার মহিমের নাম্বারে ফোন করলেন । মহিম বারবার ফোন কেটে দিল । বিভূতিভূষণও ফোন করলেন - তাঁর ফোনও কেটে দিল মহিম ।

অফিসার বললেন - দেখলেন তো ! ক্রিমিনাল কেমন হয় ।

বিভূতিভূষণ বললেন - আপনি সময় নষ্ট না করে যাবেন কি না বলুন ?

পুলিশ অফিসার বললেন - ইন্টারেস্টিং কেস - যেতে তো হবেই । 

বিভূতিভূষণ এবার মহিমকে ম্যাসেজ করলেন - ওরা কোথায় আছে এবং কোথায় যাবার প্ল্যান করছে ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তর এল ধানবাদের দিকে যাচ্ছি , ওখান থেকে হাজারীবাগ কোডার্মা দিয়ে ট্রেন ধরে দিল্লী যাবার মতলব আছে । হাজারীবাগে আরও দু'জন উঠবে ।

শুভমিতা দেবীকে না জানিয়ে মহিমের ম্যাসেজ অফিসারকে দেখালেন । 

চিন্তা করতে লাগলেন এমন ক্রিমিনাল এর আগে কখনও 

শুনিনি , যে মুক্তিপণ চাইতে ফোন না করে ম্যাসেজে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেয় । লোকটা হয় নতুন, আনপোড়, কিম্বা ধরতে পারছে না পুলিশ ওদের পিছু নিয়েছে ।  

তিনি শুভমিতা দেবীকে বললেন - আপনার মেয়ে নিশ্চয় বেশ কিছু টাকাপয়সা নিয়ে গেছে । 

শুভমিতা দেবী বললেন - ঠিক জানি না । আমরা তো কিছু চেক অরে আসিনি !

ফরচুনার ধানবাদ ছাড়িয়ে হাজারীবাগের পথে চলল ক্ষিপ্র গতিতে । শম্ভু দক্ষ ড্রাইভার । কি সুন্দর ভাবে দুর্ঘটনা এড়িয়ে এক একটা গাড়ি অতিক্রম করতে লাগল ।

পুলিশ অফিসার মহিমকে ম্যাসেজ করলেন - গাড়ির রঙ এবং নাম্বার কি ?

আবার কিছু পরেই উত্তর এল - আরবান ব্লু এবং নাম্বার জে এইচ ৬২ বি ৬৩৩৭ ।

পুলিশ অফিসার জেনে গেলেন ঝাড়খণ্ডের নাম্বার । অবশ্য ওরা ঘন ঘন নাম্বার প্লেট চেঞ্জ করে দেয় । যাই হোক এতেও কাজ দেবে । আরবান ব্লু তো নিমেষে রেড বা পিঙ্ক হবে না ।

বিভূতিভূষণের নিকট আরও ম্যাসেজ এল - হাজারীবাগ নিউ বাস স্ট্যাণ্ডের আগে হোটেল নীলকান্ত বলে যে থ্রিস্টার হোটেল আছে ; ঠিক তার বিপরীতে একটা রেক্সিন ঢাকা দেওয়া রুটি তরকারির দোকানে রুটি খেতে নেমেছি । আপনার মেয়ে গাড়িতে অচৈতন্য হয়ে আছে , ওকে ক্লোরোফর্ম দিয়েছি অরুণ ।

শম্ভু এত জোরে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যে ঠিক সময়ে ওই নীল গাড়িটার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে গেল । পুলিশ অফিসার রঙ ও নাম্বার মিলিয়ে নিশ্চিত হলেন এই সেই গাড়ি ।

ফরচুনার তাদের গাড়ির পিছনে আসতেই অরুণ মহিমকে ছেড়ে ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিল । মহিমের কাছেও পিস্তল ছিল - হয়তো অরুণ জানত না , মহিম পা লক্ষ্য করে গুলি করল । পা থেকে রক্ত ঝরতে লাগল । তথাপি অরুণ যন্ত্রণা সহ্য করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়াতে লাগল । মহিম চিৎকার করে বলল - ওকে ধরুন স্যার । পালিয়ে না যায় । ওর কাছে প্রচুর গয়নাগাটি এবং টাকাকড়ি আছে পিঠের ব্যাগে ।

পুলিশ অফিসার অরুণকে সহজেই ধরে ফেললেন । কিন্তু সাহিল ও লালা পালিয়ে গেল । হাজারীবাগ থানায় ফোন করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশের একটি দল পৌঁছে গেল । তারা গাড়িটি আটক করল এবং বাকি দুজনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করল ।

পুলিশী তৎপরতায় এ যাত্রা সম্পাতি বেঁচে গেল । বিভূতিভূষণ এবং শুভমিতা দেবী মেয়েকে পেয়ে খুশী হলেন ঠিকই, কিন্তু ঘটনার কথা জানাজানি হয়ে গেলে গোপালপুরে যে মেয়ের বিয়ে হবে না - এক প্রকার জেনে গেলেন ।

এই অবস্থায় ওঁরা চুপ করে থাকা ব্যতীত অন্য উপায় পেলেন না । 

বিভূতিভূষণ বললেন - মেয়ে যদি নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারে - আমরা আর কি করতে পারি !

ক্লোরোফর্মের ঘোর কাটাতে সম্পাতিকে একটি স্থানীয় নার্সিং হোমে এডমিট করা হল ।

নার্সিং হোম প্রথমে ভর্তি নিতে চায়নি । ওয়ার্ডেন বলল - পুলিশ কেসে , কি করে নিই বলুন ।

তখন পুলিশ অফিসারটি তাঁর পরিচয় দেখিয়ে ভর্তি করতে চাইলে হাসপাতালের তরফ থেকে পরিস্কার জানিয়ে দেওয়া হল, লোকাল পুলিশ না বললে আমরা এ ধরণের কেস হাতে ধরি না ।

বিভূতিভূষণ বললেন - ঠিক আছে আমরা লোকাল পুলিশ ডেকে দিচ্ছি । ইট ইজ এ কেস অফ চিটিং । বুঝলেন মেয়েকে কিডন্যাপ করে আনা হয়েছে ।

ওয়ার্ডেন বলল - ওরে বাবা । আপনি স্যার থানায় খবর দিন আগে ।

পুলিশ অফিসার বললেন - দেওয়া হয়ে গেছে । এখনই ওঁরা এলেন বলে । ততক্ষণে এটলিস্ট প্রাইমারি ট্রিটমেন্ট শুরু করুন যাতে মেয়েটার জ্ঞান ফেরে ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance