Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

3  

Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

বৃত্তের বাইরে পর্ব সাতষট্টি

বৃত্তের বাইরে পর্ব সাতষট্টি

5 mins
6


পর্ব সাতষট্টি

করালীকিঙ্কর, দিব্যেন্দু এবং রাজদীপ তিন জনই একই সঙ্গে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়েছিল । তখন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেলের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা একই সঙ্গে হত ।

তিনজনই রীতিমত প্রিপেয়ারেশন নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিল । মেডিকেলের জন্য ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি , ম্যাথের পর আর একটি সাবজেক্ট বায়োলজি পরীক্ষা দিতে হত ।

রেজাল্ট বেরোলে দেখা গেল করালী এবং দিব্যেন্দু মেডিকেলে ভালো রাঙ্কিং করেছে কিন্তু রাজদীপ মেডিকেলে চান্স না পেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছে।

তখন থেকেই এদের মধ্যে একটা রেষারেষি শুরু হয়ে যায় । পরে অবশ্য ওরা মেডিকেল পড়তে কলকাতায় চলে গেলছ রাজদীপ দুর্গাপুরেই পড়াশোনা করতে থাকে ।

কুমারমঙ্গলম পার্কে সম্পাতির সঙ্গে রাজদীপকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে করালী স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে শুভকামনা জানায় । কিন্তু মনে মনে একটা ভাবনা তাকে অস্থির করে তুলে যে সম্পাতি স্রেফ তার নাম করালী বলে তাকে প্রত্যখ্যান করে । 

শুরু হয় সম্পাতি ও রাজদীপের সঙ্গে তার মনোমালিন্য। সাথ দেয় অভিন্নহৃদয় বন্ধু দিব্যেন্দু । দিব্যেন্দু দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চাকরি পেলেও তাদের মধ্যে যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ ছিল ।

তার ঠাকুর্দা কামদাকিঙ্কর সম্পাতির সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা পাকা করার পর করালী পরিবারের আনন্দে যোগ দিতে ঘন ঘন দুর্গাপুরে আসে এমনকি দূর দূরান্তে বেড়াতেও যায় । সবই দাদুর প্রতি দুর্বলতায় ।

করালী খুব ভালো ভাবে বুঝে গিয়েছিল যে সম্পাতি তার প্রতি প্রসন্ন নয় । কেমন যেন কথা বললেই নয় - এমনি এক ভাব তার মধ্যে ।

করালী মনের কথা দিব্যেন্দুকে খুলে বলে । দিব্যেন্দু বলে - আমারও মনে হচ্ছে এ' বিয়েটা হবে না । হয়তো মেয়েটার কোন বয়ফ্রেণ্ড আছে । আমি খোঁজ নিয়ে দেখব ।

কিছুদিনের মধ্যে করালী জানতে পারে সম্পাতির রাজদীপের সঙ্গে একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু বিয়ের হোতা কামদাকিঙ্কর এবং সুরঞ্জনের প্রতি গভীর মমত্ববোধ তাকে প্রতি পদে বাধা দেয় বিয়েতে না বলতে ।

নানারকম ছলচাতুরি করেও যখন কোন ফল পায় না - একদিন দিব্যেন্দুর সঙ্গে পরামর্শ করে বিভূতিভূষণ সম্পর্কে খবর নিতে থাকে ।

বিভূতিভূষণ যে মহানাগরিক প্রথম থেকেই করালী জানত । আর জানত বলেই চেষ্টা করেছিল তাঁর কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে । 

একদিন তাও জেনে যায় । দিব্যেন্দুই খবর দেয় বিভূতিভূষণ প্রভাব খাটিয়ে স্টেশন সংলগ্ন বিশাল খাস জমি নিজের নামে করিয়ে নেন । যথারীতি মিউটেশনও পেয়ে যান। তারপর সেখানে উদ্যানসহ বিশালাকার অট্টালিকা তৈরী করেন । এই অর্থের উৎস ছিল ঘুষ এবং চুরি ।

এছাড়াও তিনি গুণ্ডা মস্তান পুষে তোলা আদায় করাতেন এবং তার ফিফটি পার্সেন্ট ভাগ নিতেন । সবই তো জানা ও শোনা কথা । তা' নিয়ে তো কোথাও কেস দেয়া যায় না ; ডকুমেন্ট বা সাক্ষীসাবুদও নেই । 

দিব্যেন্দু বলে - ছাড় ও সব । ডাক্তারীতে মনোযোগ দে। 

দিয়েও ছিল এবং তার ফলও হাতে পেয়েছে । এখন সে যশস্বী চিকিৎসক - যা দিব্যেন্দুর চেয়ে কোন অংশে কম নয় ।

দিব্যেন্দু বলেছিল - সময় একদিন আসবেই, তার জন্য অপেক্ষা করতে হয় । ততদিনে সম্পাতি এবং রাজদীপের প্রেয অনেক দূর গড়িয়ে গেছে ।

পাশের বাড়িতে থাকার সুবাদে দিব্যেন্দু একদিন জানতে পারে রাজদীপের বাবা রাজশেখর লাহা মহাশয় এবং তার মা এই অসবর্ণ বিয়ের বিপক্ষে । রাজশেখর নাকি বলে দিয়েছেন বিভূতিভূষণ নিজে সেই বাড়িতে এসে যদি তাঁর মেয়ের বিয়ের কথা পাড়েন তবে ভেবে দেখবেন ।

করালী ভেবেছিল ওঁরা কখনই ওদের বাড়ি যাবেন না । ঘটনাচক্রে বিভূতিভূষণ সস্ত্রীক সেখানে গিয়েছিলেন নিজেদের বিপন্মুক্ত রাখতে; অথচ রাজদীপৈর বাড়ির লোকেরা ভেবে নিল ওঁরা বিয়ের ব্যাপার নিয়ে এসেছেন । 

বিভূতিভূষণ সেই সময় অসুখের ভাণ করে স্ত্রীকে চোখ টিপে জানিয়ে দিলেন এই হল প্রকৃষ্ট সময় দুর্গাপুর থেকে পালিয়ে যাবার । হলও তাই । রাজকিশোর এম্বুলেন্স এনে ওঁদের কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করে দিল ।

তবুও শেষ রক্ষা হল না । মেয়েকে ফোন করতে যেয়ে নিজেরাই আরও মারাত্মক বিপদে পড়লেন । সব কিছুই ঘটে গেল যার নির্দেশে সে স্বয়ং করালীকিঙ্কর ।

কিন্তু কি ভাবে ? 

ব্যানার্জী ভিলায় যাতায়াতের সময় মহিমের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল করালীর । মহিম জানত এই ডাক্তার বাবুর সঙ্গেই দিদিমণির সম্বন্ধ পাকা হয়ে আছে ।

সেই সুবাদে দু'চারটে কথা হত । একবার করালী বলেছিল - আর হয়তো এই বাড়িতে আসা হবে না ।

- কেন স্যার ?

- আমার মনে হয় মেয়েটি কারও সাথে জড়িয়ে আছে। ওর কথাবার্তায় আমি আন্দাজ করতে পারি ।তুমি ভাই আমার হয়ে একবার ওকে জিজ্ঞেস করবে তো , সে বিয়েতে রাজী আছে কি না ।

মহিম বিলক্ষণ জানে রাজদীপ ও সম্পাতির প্রেম কোন পর্য্যায়ে আছে । তথাপি বলল - স্যার, আমার কি এ নিয়ে কিছু বলার অধিকার আছে ? বাবু জানতে পারলে প্রাণে মেরে ফেলবেন।

- দেখ ভাই, আমি তো আর প্রচার করে বেড়াব না যে তুমি বলেছ । তা-ছাড়া তিনি তোমার মত কর্মনিষ্ঠ লোককে মারবেন কেন ? এত কাঁচা কাজ করার মত লোক তিনি নন।

মহিম বলল - চাকরিটাও যাবে । এমনকি বউ যে এখানে রান্না করে সে কাজও যাবে ।

- এত ভয় কেন ? আমাকে তো চিনতে পেরেছ । তোমাকে হসপিটালে চাকরি করে দেব । চাইলে তোমার বউয়েরও একটা...

মহিমের চোখ চকচক করে উঠল । এই নচ্ছার কাজ কি কেউ সাধ করে করতে আসে । পেটের দায়ে করতে হয় ।

কথায় কথায় করালী মহিমকে এমন ভাবে ইমপ্রেসড করে দেয় যে মহিম রাজদীপের কথাটা বলে দেয় । 

করালী মহিমকে মোটা বখশিস দেয় এবং বলে তোমার কোন দরকার পড়লে দিব্যেন্দুর কাছে যেও । সে আমার বন্ধু । দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের ডাক্তার । আমি ওকে বলে দেব তোমার দরকারে সে যেন উপকার করে ।

- স্যার ! আমার একটা নিবেদন ছিল ।

- বলে ফেল । 

- শম্ভুকে আপনি চেনেন নিশ্চয় !

- বেশ চিনি । আরে ও তো আমাদের বাড়িতে কাজ করছে এখন !

- তাই নাকি ! খুব ভালো । শম্ভু আমাকে বলেছিল আপনার ঠাকুর্দাকে মারার পিছনে স্যারের হাত ছিল । 

করালী মুখে আঙুল তুলে কিছু বলতে নিষেধ করল । বলল - ও সব জানি । এ নিয়ে কিছু বলতে হবে না । আমি একটা ফোন নং দিচ্ছি এই বাড়ির গতিবিধি জানাতে ওই ফোনে কল করবে । এর জন্য তুমি যা চাইবে আমি দেব । আর হ্যাঁ, দিব্যেন্দুর সঙ্গেও দেখা করবে কিন্তু । আমার অবর্তমানে বা আমাকে কোন কারণে না পেলে ওকে সব কথা জানাবে ।

মহিম যেন হাতে স্বর্গ পেল । এই বাড়ির রিস্কি কাজের চেয়ে এই কাজ অনেক ভালো ।

সেদিনের পর এই প্রথম কথা হল মহিম এবং করালীর মধ্যে । 

রাঁচি থেকে প্রথমে সম্পাতি এবং পরে মহিমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিভূতিভূষণ ও শুভমিতা দেবী দু'জনেই । 

সম্পাতি যে রাজদীপের সঙ্গে রাত্রিযাপন করছে সে কথা করালীকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল । স্যার এবং ম্যাডাম যে তাদের ধমক দিয়েছেন এবং শতাব্দী এক্সপ্রেসে দুর্গাপুরে ফিরছেন তাও বলে দিল ।

করালী সুযোগের সদুপযোগ করে মিঃ মাইতি এবং বর্ধমানের এস পি সাহেবকে তা জানিয়ে দিল । এস পি সাহেব কাঁকসা ও কোক ওভেন থানায় নির্দেশ দিলেন বাড়ি ঘিরে রেখে ওঁদের গ্রেপ্তার করতে । 

শুভমিতা দেবী কামদাকিঙ্করকে ফোন করার পর যখন বললেন ' আমি ততক্ষনে মিঃ মাইতিকে জানিয়ে দি যে তোমরা বাড়ি ফিরে এসেছ ' - শুভমিতা দেবী শিউরে উঠলেন । 

কামদাকিঙ্কর আরও বললেন - আমিও আসছি তুমি কেঁদো না মিতা ।

কামদাকিঙ্কর মাইতির মুখ থেকে যখন শুনলেন তিনি আগেই খবর পেয়েছেন এবং বর্তমানে ব্যানার্জী ভিলায় অবস্থান করছেন তিনি অবাক না হয়ে পারলেন না ।

নাতিকে নিয়ে আরও একবার তিনি গর্ব বোধ করলেন ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance