KAJOL MANDAL

Children Stories Comedy

3.8  

KAJOL MANDAL

Children Stories Comedy

দিনদুপুরে

দিনদুপুরে

3 mins
267


রবিবারের বিকাল।আমরা পাড়ার কয়েকজন এসেছি রাঙাদাদুর বাড়ী।আড্ডা দিচ্ছি।ক্যারাম পিটাচ্ছি।আর রাঙাদাদু কখন ঘরে আসে তার জন্য মনে মনে মুখিয়ে আছি।দাদু যে আমাদের রবিবার রবিবার করে একটা গল্প বলেন।যে গল্প কোনো বইতে লেখা থাকে না।দাদুর একদম নিজের বানানো।ঢং-ঢং- করে ঘরের মস্ত গ্রাণ্ডফাদার ঘড়িটাতে পাঁচটা বাজলো।আর দাদু আমাদের ঘরে ঢুকে হাসি হাসি মুখে বেতের চেয়ারে বসলেন।আমরা সব খেলা টেলা ছেড়ে দাদুর কাছে এসে বসলাম।          


''তখন আমি ক্লাস - এই ফাইভ সিক্সে পড়ি।'    রাঙাদাদু বেতের চেয়ারটাতে পা মুড়ে বসে গল্প বলতে শুরু করে দিয়েছেন।   ' গরমের ছুটি চলছে।আমি মামার বাড়ী বেড়াতে চলে গেছি।তো একদিন দুপুর বেলায় লাল্টু মামার সাথে গেছি গাঁয়ের এক আমবাগানে।লাল্টুমামা পাড়া সম্পর্কে মামা হয় আমার।আমার থেকে বড়জোর দু' এক বছরে বড় হবে।                


তো সেদিন সেই লাল্টুমামার সাথে গিয়েছি আমবাগানে।আম পারতে।দুপুর বেলা।একদম শুনশান আমবাগান।খাঁখাঁ দুপুরের মধ্যে ঘুউ-ঘুউ-ডাক কানে আসছে একটা।আশেপাশে কোথাও ঘুঘু ডাকছে।দেখা যাচ্ছেনা। কোনো গাছের পাতার আড়ালে বসে বসে হবে।আমরা টুক টাক করে দিব্যি কাঁচা আম পারছি।আর বাড়ী থেকে কাগজে করে আনা বিটলবণ ও লঙ্কাগুঁড়োয় মেশানোতে ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে খাচ্ছি।মজাসে।এমন সময় 'ধর-ধর- ' কথা কানে এলো।           


  'পালা রাঙা-'বলে লাল্টুমামা চোঁ চোঁ করে দৌড়ে কোথায় হারিয়ে গেল।                     


  আমিও দৌড়াতে শুরু করে ছিলাম।কিন্তু দু'টো লম্বা লম্বা লোক বড় বড় পায়ে দৌড়িয়ে এসে আমাকে খপাৎ করে ধরে ফেললো  'বেটাকে গাছের সাথে বেঁধে মারবো।আম চুরি করা বার করবো।  ওই লম্বা লোকদুটির একজন বললো।  

 'হ্যাঁ,নিয়ে চল।পুকুরের পাশের আমগাছটার সাথে বাঁধবো।ওখানে দড়ি আছে অনেকটা।'  আর একজন বললো।    বলে আমার দু'হাত দু'জনে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।             

 আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বলছি, আমাকে ছেড়ে দাও।আর কখনো তোমাদের গাছের আম পারবো না।আমার পকেটে পারা আমগুলি আছে।ছেড়ে দাও।দিয়ে দিচ্ছি সব।  

'হাত ছেড়ে দি।আর পালাবি।ওসব চালাকি চলবে না।হরি বেটাকে ছাড়বি না একদম।'    বলতে বলতে এক হাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেই আরেক হাত দিয়ে আমার প্যান্টের পকেটে রাখা আমগুলি বার করে নিল লোকটা।    আমি কী করবো আর।ওদের সাথে সাথে মাটিতে ছ্যাচরাতে ছ্যাচরাতে আমবাগানের পায়ে চলা পথে চলছি।আর লাল্টুমামার কথা ভাবছি।আমাকে এভাবে ছেড়ে কেন যে পালালো মামা !     

 এমন সময় গর্-গর্-করে একটা অদ্ভুত শব্দ কানে এল।শব্দ শুনে পাশে তাকাতেই দেখি একটা কাকতাড়ুয়া।তার সারা গায়ে কাদা মাখা।তবে অন্যান্য কাকাতাড়ুয়ারা মতো এ চুপচাপ দাঁড়িয়ে নেই।বরং কাদামাখা দু'হাত ওপরে তুলে নাচছে।আর কেমন একটা গর্-গর্- করে অদ্ভূত শব্দ করছে।এমন দৃশ্য আমি আগে কখনো দেখিনি।আমার দু'হাত ধরে থাকা লোক দু'টিও মনে হয় আগে দেখেনি।ওরা থেমে গেছে একদম। আর তার ফলে আমিও থেমে গেছি।ওদের হাতের মুঠিও আলগা হয়ে গেছে।আমার দু'হাতের চাপ কমে গেছে একদম।এমন সময় 'ভূত-ভূত-' বলে লোকদু'টি আমাকে ছেড়ে ছুড়ে চোঁ-চোঁ- করে দৌড় দিলো।আর চোখের পলকে আমবাগানে হারিয়ে গেল।আমি তখন ওদের হাত থেকে মুক্ত।কিন্তু ওই অদ্ভূত কাকতাড়ুয়া দেখে আমি ভয়ে ছুটে পালাতেও ভুলে গেছি।এমন সময় দেখি কাকতাড়ুয়াটা ওর মুখের হাঁড়িটা দু'হাত দিয়ে খুলে ফেললো।আর লাল্টুমামা হয়ে গেল।আমি ভয় ভুলে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেছি।   আরে হাঁদা পালা-'বলতে বলতে লাল্টুমামা হাঁড়িটা পাশের ঝোপে ফেলে ছুটতে লাগলো।    আমিও নিজের মধ্যে ফিরে এসে ছুটতে শুরু করলাম। একছুটে আমরা পাড়ায় ফিরে এলাম। দু'জনেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। লাল্টুমামা পাড়ার পুকুরে নেমে গায়ের কাদা ধুয়ে ফেললো।     এরপর থেকে লাল্টুমামা আমার গুরু হয়ে গেল।''                   




Rate this content
Log in