গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
পর্ব কুড়ি
- জীবনে অনেক কিছুই দেখলাম ডক্টর বসু ! এটাই বাকি ছিল - আপনার প্রচেষ্টায় তাও সম্ভব হল ।
রুম থেকে বেরোনোর সময় বললেন ডক্টর বৈশ্বানর মুখোপাধ্যায়।
- আপনার পরিচ্ছন্ন পোষাকে কালির দাগ তুলতে এ' ছাড়া আমার অন্য উপায় ছিল না স্যার ।
ডক্টর সৃঞ্জয় বসু অতি বিনয়ের সঙ্গে কথাগুলো বললেন ।
মি. সেনশর্মা সাধিকাকে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করতে একটা হলুদ ট্যাক্সি ডাকলেন ।
সাধিকা গাড়িতে উঠতে যাবেন ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - কোন ব্যাপারে প্রয়োজন হলে এই হাসপাতালে অবশ্যই আসবেন ম্যাডাম । আর পুলিশি সাহায্য লাগলে অবশ্যই মি. করালীপ্রসাদ সেনশর্মাকে স্মরণ করবেন ।
কৃতজ্ঞতা জানালেন সাধিকা । ডক্টর বৈশ্বানর মুখোপাধ্যায় তখন সাধিকাকে বললেন - একটা বিষয় আপনার কাছ থেকে জানবার ছিল, মা !
- কি বিষয় বলুন ?
- ডাকিনী বিদ্যার সঙ্গে এই প্রথম পরিচিত হলাম । দারুন ইন্টারেস্টিং। একটা প্রশ্ন করি - আপনার এই বিদ্যায় যদি তার কোন সমাধান থাকে তো অবশ্যই বলবেন ।
সাধিকা বললেন - বলুন।
- যে মেয়েটির গর্ভে আপনাদের মতে প্রেতাত্মার ভ্রুণ রয়েছে বলে দাবী করছেন ; এই ডাকিনী বিদ্যার সাহায্যে তা কি স্বাভাবিক করা যায় না ?
- দেখুন স্যার, আমরা যোগিন । মানুষের উপকারে কিছু করার চেষ্টা করি। ভুত-প্রেতের উপকার করা যায় না। তা- ছাড়া আপনাদের ডাক্তারী শাস্ত্রে এ বিষয়ে কি কিছুই করার নেই ?
- মা, চিকিৎসাশাস্ত্রে ভুত প্রেত ডাকিনী যোগিনী বলে কোন উল্লেখ নেই । যে শিশুটি মাতৃগর্ভে বিকশিত হচ্ছে সেটি অপূর্ণ ভ্রুণের অংশ মাত্র । তাকে পূর্ণতা দেওয়া যায় না ।
সাধিকা বললেন - তা'হলে ওটি যত শীঘ্র পারেন নষ্ট করে দেবেন । নতুবা তার জনকেরও মুক্তি নেই ।
হলুদ ট্যাক্সি চলে গেল । মি. সেনশর্মা বিদায় নিতে যাচ্ছেন । ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - নিজের চোখে সবই তো স্পষ্ট দেখলেন ; এবার আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে ।
মি. সেনশর্মা বললেন - ওদের গ্রেপ্তারের দায়িত্ব নিলাম স্যার । আমি নিজে তারাপীঠ যাব। ওখানকার পুলিশের সহযোগিতায় কাজ সেরে ফিরব ।
- একলা পুলিশ পারবে বলে মনে হয় না । এ কোন সাধারণ দুষ্কৃতি বা চোর গুণ্ডা খুনী নয় । এ এক আধিভৌতিক শক্তি যার বিজ্ঞান শাস্ত্রে কোন ব্যাখ্যা নেই!
সেনশর্মা গুরুত্ব বুঝতে পারলেন । একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে তিনি যখন সাবধান করে দিচ্ছেন তখন অযথা সাহস বা বীরত্ব দেখাবার প্রয়োজন নেই। বললেন
- ,স্যার কি তাহলে ওই ডাকিনী- বেদজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলছেন ?
ডক্টর বৈশ্বানর মুখোপাধ্যায় এতক্ষণ কিছু বলেননি । এবার বললেন - শুধু পুলিশ নিয়ে গেলে ওরা যদি টের পেয়ে যায় তবে সাবধান হয়ে পালিয়ে যাবে । তখন আবার যে কে সেই দশা হবে যা এতদিন হয়ে আসছে। অতএব যাই করুন ভেবে চিন্তে করবেন ।
সেনশর্মা বললেন - ডক্টর বসু কি বলেন ? ওই সাধিকাকে সাথে নিয়ে যাব ?
ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - উনি তো ডাকিনী বিদ্যায় পারদর্শীনী । ওই বিদ্যা আমার মনে হয় কাজে লাগবে না । আপনি বরং এক কাজ করুন । পুলিশ পার্টি নিয়ে তারাপীঠে যান । ওখানে অনেক তান্ত্রিকের দেখা পাবেন। ওদের কাছে সুলুক-সন্ধান নিয়ে কাজ করবেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ওদের কারও সহায়তা পান ।
ডক্টর বৈশ্বানর বললেন - যুক্তিটা মন্দ নয় । তবে ওনারা কি রাজী হবেন? কেন না কে আসল তান্ত্রিক আর কে ভণ্ড - একা বোঝাও তো বিশাল ব্যাপার , তাই না ?
ওখানে অনেকেই আছেন যারা তান্ত্রিকের ভেক ধরে উপার্জন করতে থাকেন । আমি বলি কি সুযোগমত টাকা পয়সার অফার দিয়ে পরখ করে নেবেন । যদি রাজী হয় তো জানবেন ওরা ফেক - কিছুই করতে পারবেন না। আর যদি এমন কেউ থাকেন যিনি সত্যিই তারা মায়ের ভক্ত এবং জনকল্যাণের জন্য কাজ করে যান ; দেখবেন তিনি বা তাঁরা কখনই অর্থের বশীভূত হবেন না ।
ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - চলুন , দিন ঠিক করুন আমরাও যাব আপনাদের সঙ্গে ।
মি. সেনশর্মা এতে খুব খুশি হলেন । কিন্তু ডক্টর মুখোপাধ্যায় বললেন - কতখানি সময় লাগবে - বলা তো যায় না । ইণ্ডিফিনাইট পিরিয়ড হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকা কি ঠিক হবে ?
ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - ও নিয়ে চিন্তা করবেন না স্যার । আমার সাথে হসপিটাল সুপারের কথা হয়ে আছে। উনি জানেন আদালতের নির্দেশে এই কেসের তদন্তের আমিও একজন সদস্য । আপনার মন পাল্টানোর জন্য আপনাকে কলকাতার বাইরে কিছু দিনের জন্য রাখার প্ল্যান করে রেখেছি । উনি সায় দিয়েছেন । সেটা না হয় তারাপীঠই হোক। ভালো হবে মায়ের দর্শণ লাভ করে ।
ডক্টর মুখোপাধ্যায় আর কোন আপত্তি করলেন না।
মি. সেনশর্মা বললেন - তাহলে স্যার আগামীকাল সকালেই আমরা যাত্রা করি । শুভস্য শীঘ্রম্ ।
( চলবে )