Biswajit Mridha

Classics Thriller

2.0  

Biswajit Mridha

Classics Thriller

মায়া পুতুল

মায়া পুতুল

14 mins
796


কলমে ✍️ Biswajit Mridha


গ্রামের এই নির্জন প্রান্তে আগে কখনো হাঁটতে আসেনি অনিল ।বিকেলে এদিকে

হাঁটতে বেরিয়ে কালো কাপড় পরা একটা রোগা লিকলিকে কাপালিক গোছের লোক কে দেখতে পায় । লোকটি কালো কাপড় পরা, মাথাভর্তি জটা এবং মুখে লম্বা লম্বা দাড়ি। এই নির্জন স্থানে একটা ঢিপির পাশে ছেঁড়া মাদুর পেতে বসে আছে।,, সামনে কি সব গাছ-গাছরা ,,মড়ার মাথার খুলি, জন্তু-জানোয়ারের হাড়গোড় ,,আরো ছোট ছোট ধাতু র জিনিস নিয়ে বসে থাকতে দেখে দাঁড়ায় অনিল। এমন পোশাক এবং জিনিসপত্র দেখে অনিল বুঝতে পারল এ কোন কাপালিক। আরো কিছুটা কাছে যেতেই অনিল দেখতে পেল , লোকটির ঠিক সামনেই যেই ঝুলি রয়েছে তার ঠিক সামনেই রাখা সাদাটে মসৃণ গড়নের একটা 7 ইঞ্চির মত সাইজের ছোট একটি মেয়ের পুতুল।



লোকটিকে উদ্দেশ্য করে অনিল বলে ওঠে 

  এই পুতুলের দাম কত?




কাপালিক টি অনিলের কথা যেন শুনতেই পাইনি। অনিল এবার লোকটির

কাছে গিয়ে আবার বলল "এই পুতু লটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে,, এটাকে

কি আমার কাছে বিক্রি করবেন???""লোকটি তার দিকে না তাকিয়ে অন্য

দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ বলে উঠলো ""এই পুতুলটি বিক্রির

জন্য নয়।""


অনিল ইতিহাসের শিক্ষক তার এসব পুরোনো অ্যান্টিক জিনিস খুব শখ ছিল। সে যখন স্কুলে পড়তো তখন থেকেই পুরনো জিনিসের সংগ্রহ করার একটা শখ জন্মায়,,, সেই তখন থেকে আজ অব্দি অনেক ধরনের পুরনো পুরনো জিনিস জমিয়েছে সে। এবং এই সব পুরনো জিনিস পত্রগুলো বন্ধুদের দেখিয়ে বেশ বাহবা শোনা যায় । এগুলির প্রতি যেন একটা অন্যরকমের ভালোবাসা কাজ করে তার।

পুতুলটি তার খুব পছন্দ হয়েছে বলে সে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল

""সবকিছু রই একটা নির্দিষ্ট দাম থাকে..

টাকা দিয়ে পাওয়া যায়না এমন কিছু হয় না।....""""

এবার লোকটি অনিলের দিকে তাকায়

এবং বলে"""" "পুতুলটি ভালো নয়। যদি ভয় না পাও তাহলে বিনামূল্যে এটি দিতে পারি"তবে আজ অবধি আমার থেকে এটা কখনো আলাদা হয়নি। কিন্তু যদি তুমি এটা নাও এটা কিন্তু আমি আর ফেরত নেব না।""

অনিল অবাক হয়ে যায় তার কথায়।

সে মনে মনে ভাবল এ আবার কেমন পাগলের মত কথা। এই ছোট একটা

পুতুলকে ভয় পাবার কি আছে।?

এখনকার সময়ে কেউ বিনামূল্যে কোন জিনিস দিয়ে দেবে এটা সে আশায়

করেনি ।

অনিল বলল ""এটা না রাখার কি আছে?? খুব বড় না পুতুলটা যে রাখতে

অসুবিধা হবে বাড়িতে।?


"""নিয়ে যাও তবে পুতুলটি , সাবধানে যত্নে রেখো।"""


অনিল খুশি হয়ে পুতুলটি তার হাত থেকে নেয়।

পড়ন্ত বিকেলের আলোয় সে প্রথমবার পুতুলটিকে হাতে নিয়ে ভাল করে দেখল।

মসৃণ ভাবে হাড়ের তৈরি একটা মেয়ের পুতুল।


পুতুলটি চোখগুলি এত নিখুত ভাবে বানানো যে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয় যেন পুতুলটিও তার দিকেই তাঁকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত সুন্দর এই

পুতুলটি ,,

অনিল লক্ষ্য করে পুতুলটি সাধারণ দেখতে হলেও পুতুলটি বেশ ঠান্ডা।

একটি গ্রামের মেয়ের প্রতিরূপে বানানো এই পুতুলটি । খুব সুন্দর তার দেহের গঠন।

অনিল লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে । পুতুলটিকে পকেট এ ভরে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। এবং কিছুদূর পা বাড়ানোর পরেই ,পিছন থেকে শুনতে পায় একটা রিন রিনে এবং খনখনে মেশানো গলায় কে যেন জোরে জোরে অট্টহাসি করে উঠলো। পিছনে ঘুরে তাকাতেই শেষেই কাপালিক গোছের লোকটিকে আর দেখতে পেল না। অনিল কিছুটা অবাক হয়ে যায় এত তাড়াতাড়ি একটা মানুষ এখান থেকে গেল কিভাবে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সন্ধ্যা নামতে দেখেই সে তড়িঘড়ি করে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।

আজ অনেকদিন পরে নতুন কিছু সংগ্রহ করে মনটা তার খুশিতে ভরে ওঠে।


সে তাড়াতাড়ি পা চালাতে থাকে যাতে বাড়ি গিয়ে সে ভালোভাবে পুতুলটিকে

পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

___________


অনিল স্কুল শিক্ষক। তার বাবা-মা খুব অল্প বয়সে মারা যায়।


সে তার কাকা বাড়িতে মানুষ হয় এবং সেখান থেকেই পড়াশোনা শেষ করে।

কাকীর সাথে তেমন বনিবনা না থাকায় সে চাকরি পেয়ে এই দূরে চলে আসে.

এবং একাই একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। সে এখনো বিবাহ করেনি। তাই রান্নাবান্নায় একটা ঝামেলা হতো। রাতে সে নিজে রান্না করতো। সকালে স্কুলে যাবার আগে সে বাজারের একটা দোকান থেকে খাবার খেয়ে নিত।

_______

বাড়ি এসে হাত পা ধুয়ে পুতুলটিকে শোয়ার ঘরের মাথার কাছের টেবিলের উপর রাখে । এবং নিজের জন্য কিছু রাতের খাবার বানাতে রান্নাঘরে যায় অনিল।

রাতের খাওয়া শেষ করেই অনিল বিছানায় বসে। যত্নসহকারে পুতুলটিকে হাতে নিয়ে ইলেকট্রিক বাল্বের আলোয় ভালো করে মনের মত করে পুতুলটিকে দেখতে থাকে।

প্রায় ১০ /২০ মিনিট পুতুলটিকে দেখার পর অবশেষে সারা দিনের ক্লান্তিতে

তার চোখে ঘুম আসে সে পুতুলটিকে টেবিলের উপর রেখে শুয়ে পড়ে। কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল ঠিক নেই।।। কিসের একটা খসখস শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘরে একটা মৃদু নাম না জানা ফুলের গন্ধ তার নাকে এলো।ঘরের জানলায় থেকে বাইরের জোস্নার আলো ঘরের মেঝেতে রুপালি চাদরের মতো ছড়িয়ে আছে। অনিলের মনে হলো বাথরুম থেকে একটা মেয়েলি গলার স্বর ভেসে আসছে ।কেউ যেন গুন গুন করে একটা গান

করছে ।

"হুমমমমমম হুমমমম ............"

 অনিল কান খাড়া করে শুনতেই ,,,হঠাৎ করে আওয়াজ থেমে যায় । কিছুক্ষণ সব নিস্তব্ধ । অনিল আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসে এবং ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে চাঁদের আলোয় কিছু দেখতে পাই কিনা। হঠাৎ কে যেনো খিলখিল করে হেসে উঠলো,,, অনিল কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে তড়িঘড়ি করে আলো জ্বেলে সন্তর্পনে বাথরুমের কাছে এগিয়ে যায় ।

তখনো বাথরুমের শাওয়ার থেকে জলের শব্দ আসছে,,,। বাথরুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ । কিন্তু অনিলের ঠিক মনে আছে শুতে যাবার আগে সে বাইরে থেকে দরজাটা আটকে ছিল।

অনিল খুব সাহসী ছেলে তাই সে ভয় না পেয়ে।ভিতরে অজানার ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে

 "" কে আপনি আর কিভাবেই বা ঘরে ঢুকলেন .??!


ভিতর থেকে কোন শব্দ এলো না । অনিল কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করল কোন শব্দ হয় কিনা। 

শুধুমাত্র বাথরুমের ভিতরে শাওয়ার থেকে

জলের আওয়াজ কানে এলো তার ।


ধীরে সন্তর্পনে হাত দিয়ে বাথরুমের দরজাটা ঠেলে দিয়ে ভিতরে উঁকি মারে সে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না । 

তখনো শাওয়ার থেকে অবিরাম জল পড়ে চলেছে। অনিল এবার ধীরে ধীরে বাথরুমের ভেতরে ঢুকে

 তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোন কিছুই পেল না । 

তবে কি কাপালিকের সেই কথাগুলোর জন্য সে ভয় পাচ্ছে , আর ভুলভাল গল্প বুনে চলেছে তার মস্তিষ্ক। " ধুর কি সব ভাবছি আমি এইসবই ওই কাপালিক এর কথা গুলোর কথা বেশি ভাবতে ভাবতেই হয়তো এসব হয়েছে। হাত দিয়ে শাওয়ার টি বন্ধ করে

নিজের মনের ভুল ভেবে বাথরুম থেকে বেরিয়ে যাবে ঠিক এমন সময়

পায়ের কাছে এক গোছা ভেজা চুল তার চোখে পরলো। এত বড় চুল তার তো মাথায় নেই অতএব এটা কোন মেয়েদের চুল।

এই বাড়িতে তো আমি একাই থাকি তবে এত বড় চুল এলো কিভাবে??? !


নিজের মনকে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো সে।

 "হয়তো হাওয়ায় উড়ে এসেছে"

তবে এতে রাতে শাওয়ার কে চালালো।

" আমার ঠিক মনে আছে যে শেয়ার আগে সবকিছু বন্ধ করে গিয়েছিলাম। 

হয়তো মনের ভুলে কখনো খুলে রেখে দিয়েছি এইসব ভাবতে ভাবতে 

বাথরুম থেকে বেরিয়ে শোয়ার ঘরে এলো অনিল। 

ঘরে ঢুকতেই সে দেখতে পায় পুতুলটি তার বিছানার উপর শুয়ে আছে। এবার অনেকটা অবাক হয়ে যায় অনিল কারণ তার ঠিক মনে আছে পুতুলটিকে টেবিলের উপর রেখেছিল।


পুতুলটিকে হাতে নিতে সে বুঝতে পারে পুতুলটা পুরো জলে সপসপ করছে।

পুতুলটি বা ভিজলো কিভাবে ।??


এইসব ভাবতে ভাবতে তার মনে হলো সে হয়তো অজান্তেই এসব গুলি

করেছে এখন এগুলো আর মনে পড়ছে না। আজ হয়তো অনেক খাটাখাটনির ফলে সে সব ভুলভাল কাজ করছে। তাড়াতাড়ি আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে।


 

সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে রেডি হয়ে স্কুলে বেরিয়ে যায় অনিল ,,,,,

সারাদিন স্কুলে ক্লাসে পড়াতে পড়াতে পুতুলটির ব্যাপারে এটা সেটা ভাবতে থাকে সে। পড়াতে পড়াতে বারবার মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিল সেদিন। স্কুল ছুটির বাড়ি চলে আসে। বাড়ি এসে হাতমুখ ধুয়ে সে বাজারে গেল রাতের খাবারের জন্য কিছু কিনে আনতে। কিছুক্ষণ পর বাজার থেকে ফিরে এসে রান্না করে খেয়ে নেয়।


বিছানায় শুয়ে একটা প্রেমের গল্পের বই পড়তে লাগলো অনিল।

পড়তে পড়তে অনেক রাত হয়ে গেছে।

রাত যত গভীর হলো অনিলের মনে একটা গভীর কামনা জেগে ওঠে।

সে ভাবতে থাকে যদি আমার এই মরুভূমির মতো শুষ্ক প্রেমহীন মনে,

একজন নারীর পদচিহ্ন আমার এই নিঃসঙ্গ জীবনে থাকতো কতটাই না ভালো হতো ।

কেউ নেই নেই যে আমার হাতটা একটু আলতো করে ধরে তার বুকের উপর

ধরে বলবে।

"দেখো কত বেশী ভালোবাসি তোমায়"।

কেউ নেই নেই যে আমার বুকের উপর শুয়ে জরিয়ে ধরে আমার ভিতরের অগ্নি জ্বালা নিভিয়ে দেবে ।

কেউ নেই যার মিষ্টি ভেজা ঠোটের চুম্বনে রোজ সকালে আমার ঘুম ভাঙাবে।

ভেজা চুলের গন্ধটা নিতে ইচ্ছে করে তার ।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে তার শরীরে একটা কামুক ভাব অনুভব করে ।গরম হয়ে যায় তার সারা শরীর।

তার শরীর খোঁজে অন‍্য একটি নারী দেহ ।

এইসব ভাবতে ভাবতে ঘামে ভিজে যায় সে। তার বিছানার চাদর ভিজে গেছে।এই ভাবে কিছুটা সময় এপাস ওপাস করে উঠে বসে ।

টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায় । ১:৩৬ বাজে।

এমনি তেই গরমের রাত সে ঠিক করলো, একটু স্নান করে নেবে।

সে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার চালিয়ে দিল।

ঠান্ডা জলের স্রোতে তার গরম শরীরের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে,, তাও যেন

শরীরের ভেতরের গরম টা কমছে না।

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরল।

আঁতকে উঠল সে। চিৎকার করে ওঠে সে, পিছন ফিরে তাকিয়ে কাউকে

দেখতে পেল না ।

ভাবতে থাকে প্রচণ্ড গরমে মাথা আর শরীরে হয়তো এমন অনুভব হলো তার।


কিন্তু সেই স্পর্শ টা সে বুঝতে পেরেছিলো কোন নারীর শরীরের। এমন কি সে

এটাও বুঝতে পেরেছিল সেই নারী শরীরে কোন কাপড় ছিলনা সম্পূর্ণ নগ্ন দেহ ছিল।

অনিল তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘরে চলে আসে। ঘরে ঢুকতেই আগের দিন রাতের সেই অচেনা মিষ্টি গন্ধটা তার নাকে আসে । সে দেখে বিছানার উপর পুতুলটি আবার

শুয়ে আছে।


আধো আলো তে পুতুলটির চোখ দুটো কেমন যেন জ্বলছে। সে ইতস্তত ভাবে তাড়াতাড়ি পুতুলটিকে হাতে নেয় এবং দেখতে পায় পুতুলটির গা ভিজে

সপসপে হয়ে আছে।

প্রচণ্ড সাহসী হওয়া সত্ত্বেও তার ভেতরে একটা ঠান্ডা শিহরণ খেলে গেল,,

সে পুতুলটি কে মাথার কাছে রেখে ভয়ে ভয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

সে ভাবলো এবার আলো জ্বালিয়ে শুয়ে পড়বে। হঠাৎ ইলেকট্রিকের বাল্বটা দুবার দপ দপ করে জ্বলে উঠে নিভে গেল । কারেন্ট চলে গেল?! ধুসসস এই গরমে এবার আর ঘুমই হবে না। তার নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ মনে হতে লাগলো।

চোখ বুজে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে সে।

এভাবে কিছু ক্ষন থাকার পরে তার চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে।

হঠাৎ তার মুখের উপর ঠান্ডা একটা স্পর্শে তার ঘুমটা ভেঙে যায়।

আঁতকে উঠে সে।

তার হাত পা ও সারা শরীর অবশ হয়ে গেছে চাইলেও সেটা নাড়াতে পারছে না।অন্ধকারে সে এবার অনুভব করলো একটা ঠান্ডা নরম ঠোট তার গালে চুম্বন করছে। কেঁপে উঠল তার অন্তরাত্মা। মুখ থেকে তার একটা """গোঁ গোঁ শব্দ বেরিয়ে এল শুধুমাত্র।

খুব মিষ্টি গন্ধে সারা ঘর ভরে আছে।

এত ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে তার শরীর ধীরে ধীরে গরম হতে লাগলো।

কিন্তু সে নিথর ভাবে পরে রইলো।

অনিল বুঝতে পারল সে স্বপ্ন দেখছে না এটা সত্যি হচ্ছে তার সাথে।

কোন এক নগ্ন নারী দেহ তার সারা শরীরে চুম্বন করতে লাগলো।

তার সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে।

নারী দেহটি এবার তার গায়ের উপরে বসে তার দু দিকে পা দিয়ে ।এবং চুলগুলি তার মুখের কাছে এনে চুম্বন করছে তার ঠোঁট।

  ওই অবস্থাতেও অনিলের বুকের ভিতরটা কেমন একটা করে উঠলো, প্রচন্ড ভয় এর মধ্যেও

তার মনে একটা দীর্ঘদিন ধরে চেপে রাখা কিছু ইচ্ছা জেগে উঠল।সেই মেয়েটি পাগলের মত অনিলের শরীর ভোগ করতে থাকলো।

এভাবে কতক্ষন চলল তার ঠিক নেই।

  হঠাৎ সে তার ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে। হঠাৎ বৈদ্যুতিক বাল্বের আলোয়

সম্বিৎ ফিরে পায় সে। কারেন্ট চলে আসে , সে এক মুহূর্তের মধ্যে দেখতে পায়,, একটা নারীর অবয়ব নগ্ন দেহ। সারা মুখে তার ক্ষত-বিক্ষত।

সেই নারী দেহ হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায় ।

 সম্ভিত ফিরে পেয়ে সে এক দৌড়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে। সে ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখে সেখান থেকে রক্ত ঝরছে।

বাড়ির বাইরে এসে হতভম্বের মত এদিক ওদিক তাকাতেই, রাস্তার ওপারে

টিমটিম করে জ্বলতে থাকা ল্যাম্পপোস্টের পাশের শিমুল গাছটার নিচে

আধো আলো অন্ধকারে একটা স্থির মূর্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায় ।

সেই আগের দিনের কালো কাপড় পরা সেই কাপালিক। বাড়ির সামনে

দাঁড়িয়ে আছে সে,

অনিল জোরে জোরে চিৎকার করে তাকে বলে ওঠে "চাইনা তোমার ওই পুতুল,,,নিয়ে যাও তোমার এই পুতুল,, বাঁচাও আমাকে।

?!"


সে আধো আলো অন্ধকারে কাপালিকটি অদ্ভুত অট্টহাসি হেসে ওঠে । যেন মেঘের গর্জনের মতো আওয়াজটি চারিদিকে ছড়িয়ে পরলো। 

এবং হঠাৎ করেই অনিলের চোখের সামনে উধাও হয়ে যায়।

অনিল চমকে ওঠে ,তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে বাড়ির সামনে যায় ।যেখানে

কাপালিক টা দাড়িয়ে ছিল ওখানে গিয়ে এদিক সেদিক তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কাউকে পেল না। তার মনে আগের দিনে কাপালিকের সেই কথা মনে আসে।

কাপালিক কি বলেছিল "এই পুতু লটি ভালো নয়"।


অনিলের মনে একটা জেদ চেপে বসে।


সে ঠিক করে যাই হোক পুতুলটিকে তার হাত থেকে হাতছাড়া করবে না।

সে মাথা ঠান্ডা করে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।

দেয়াল ঘড়িতে সকাল সাতটা বেজে গেছে।

সে তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে স্নান করে নেয়।


সকালে স্কুলে যাবার আগে সে কিছু খেত না।


স্কুলের সামনের হরি কাকার দোকান থেকে কিছু একটা খেয়ে নিত । তাই

তার সকালে রান্না করার কোনো ঝামেলা ছিল না।


অনিল স্কু লে যাবার আগে পুতু লটিকে স্টোর রুমের একটি বাক্সের মধ্যে বন্ধ

করে রেখে যায়।


সারাদিন স্কু লে ক্লাস করাতে করাতে তার আগের দিনের রাতের কথা বার বার

মনে পড়তে থাকে, সে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে।


প্রথমটা সে ভেবেছিল তার সহকর্মী রবিনকে ব্যাপারটা বলবে। কিন্তু সে যদি

ঠাট্টা করে তাই সে আর কিছু বলল না।


বিকেল সাড়ে চারটের পর তার ছু টি হয়।


বাড়ি ফিরতে ফিরতে পাঁচটা কু ড়ি বেজে যায়।


তার।


বাড়ি এসে সে ঘরে ঢু কতেই দেখে ঘরটি পরিষ্কারভাবে ঝাঁট দিয়ে মুছে

রেখেছে কেউ। এমনকি ঘরের সিলিংয়ের মাকড়সার জালের ঝু লকালি

যেগুলো লেগেছিল তাও পরিষ্কার করে দিয়েছে।


অনিল ঘর তালাবন্ধ ঘর করে গিয়েছিলো।সে ভাবতে থাকে এটাও কি

কোনদিন ও সম্ভব ।


সে ধীরে ধীরে ঘরের ভিতরে ঢোকে। সে খেয়াল করে আগের দিনের রাতের

মত আবার

 ঘরের বাথরুম থেকে একটা মেয়েলি মিষ্টি গলায় গানের আওয়াজ শোনা


যাচ্ছে।


 সে চমকে ওঠে ভাবে তার তালা বন্ধ ঘরে কেউ কিভাবে ঢু কে গেল।


সে সন্তর্পনে ধীরে ধীরে বাথরুমের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজা ভেতর থেকে

বন্ধ, দরজায় নক করে সে। অনিল জোরে জোরে বলে উঠে কে ??কে

আপনি?? কি ভাবে এলেন ঘরের ভেতরে???? বাথরুমের ভিতরে গানের

আওয়াজ থেমে যায়।

কেউ কোনো সাড়া দিল না,,,


ভয় পায় সে দরজা আবার নক করতেই দরজা খুলে যায়। কেউ নেই

বাথরুমে,। বাথরুমের ভেতরে সাওয়ার থেকে তখনও জল পরছে।

সে তো স্পষ্ট কারোর গলা শুনতে পেয়েছিলো!!!!?

সে কি দিনের বেলাতেও স্বপ্ন দেখছে।!!?


এ কি হয়েছে তার কিছু ই বুঝতে পারছে না সে।


রান্নাঘরে একটি মেয়েলি হাসি শুনতে পায় সে। কে যেনো দৌড়ে রান্নাঘর

থেকে বাইরের দিকে চলে গেল তার পায়ের নুপুরের আওয়াজ শুনতে পেল

সে।


তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে ঢু কে সে কাউকে দেখতে পায় না ।দেখে তার পছন্দের

সরষে ইলিশ ,পাঁঠার মাংস আরো বিভিন্ন রকমের রান্না কেউ করে সাজিয়ে

রেখেছে।


এখনো গরম রয়েছে খাবারগুলি।


এগুলি একটু আগেই রান্না হয়েছে তা ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে।

সে তার শোয়ার ঘরে যায়। সে দেখলো পুতু লটি আবার তার বিছানার উপর

শুয়ে আছে।

সে বুঝতে পারে ,নিশ্চয়ই পুতু ল টির মধ্যে কোন অশরীরি আত্মা আছে যে

এইসব কাজ গুলি করছে।

তার মনে মনে রাগ হয়,, জীবনে সে কোনদিনও কোন নারীসঙ্গ পায়নি

অবশেষে পেল তাও আবার এক অশরীরী।


সে পুতু লটিকে হাতে নেয়। দেখে পুতু লটির গা ভেজা ।


পুতু লটির মুখে একটা মিষ্টি হাসি লেগে রয়েছে।


সে পুতু লটিকে তার মুখের কাছে এনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকে।

অনিল বলতে থাকে..


 কে তু মি এভাবে আমার জীবনে এলেই বা কেন???


কি চাও তু মি আমার থেকে??

তু মি অশরীরী হলেও এত ভয় কেন পাও আমাকে।??


হঠাৎ করে তাকে চমকে দিয়ে পুতু লটি হিহিহিহি করে হেঁ সে বলে ওঠে আমি

মায়া , আচমকা এমন হবার কারণে হাত থেকে পড়ে যায় তার পুতু লটি।


দেখে পুতু লটি মাটিতে পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।


সে একটু ইতস্তত ভাবে ধীরে ধীরে পুতু লটিকে আবার হাতে নেয় ‌সে।


দেখে পুতু লটি আবার আগের মত মিষ্টি একটা হাসি মুখ করে স্থির ভাবে তার

দিকে তাকিয়ে আছে। এত কিছু হবার পরে অনিলের মনে থেকে ভয়টা একটু

কমে গেছে।

হঠাত তার ফোন বেজে ওঠে, দেবাশীষ ফোন করেছে,,

(দেবাশীষ তার ছোটবেলার বন্ধু , একসাথে তারা দুজন স্কু লে পড়েছে।)

দেবাশীষ বললো 

  অনিল আজ চলো একটু আড্ডা মারি এক সথে।


অনেকদিন পর দেবাশীষ কলকাতায় ফিরেছে।।


অনিল বলল ঠিক আছে তু ই বাড়িতে থাক আমি আসছি।

অনিল পুতু লটিকে টেবিলের উপর রেখে,


বাথরুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে। জামা চেঞ্জ করে বেরিয়ে পড়ে বাড়ি থেকে।


দেবাশিষের সাথে অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় অনেক গল্প করতে করতে

রাত বারোটা বেজে যায়।রাতে দেবাশীষ তার বাড়িতেই তাকে খেতে বলে।

অনিল অনেক মানা করে । দেবাশীষ খুব জোর করাতে শেষ পর্যন্ত

দেবাশীষের বাড়ি থেকে খেয়ে বাড়ি ফেরে সে।


বাড়ি আসার সময় মনে পড়ে তার তার ঘরে সে রান্না করা খাবার দেখে

এসেছিল।


সে ধীরে ধীরে ঘরের ভিতরে ঢোকে


সে দেখতে পায় পুতু লটি মুখ কেমন একটু কালো করে টেবিলের উপরই

শুয়ে আছে।

খারাপ লাগে তার। অনীল বলে sorry আমি বুঝতে পারিনি এত দেরি হবে।

আমি খেয়ে এসেছি।


কোন উত্তর পেল না সে।


অনিল বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নেয়। এবার ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে

পড়ে।

সে পুতু লটিকে হাতে নেয় ,, সে দেখে পুতু লটির চোখ ছল ছল করছে জলে।


অনিলের মনটা কেমন একটা মায়ায় ভরে গেল।

সে বলল আর কখনো এরকম করবো না।

অনেক রাত হয়ে গেছে এবার আমি শুয়ে পরি??

পুতু লটি নির্বাক হয়ে একদৃষ্টিতে অনিলের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

অনিল লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে।


   কতক্ষণ ঘুমিয়ে পরেছিল অনিল তার খেয়াল নেই। যখন ঘুম ভাঙ্গে তার


অনুভব করে তার শরীর গতকাল রাতের মত অবশ হয়ে গেছে।

সে তার হাত পা নাড়াতে পারছে না।

একটা শীতল উলঙ্গ নারী দেহ তার বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে তার লোমশ

বুকের উপর ঠান্ডা একটি ঠোঁট দিয়ে চু ম্বন করছে।নারীটির লম্বা চু ল অনিলের

বুকের উপর এলিয়ে রয়েছে।

সে অনুভব করে তার শরীর ঠান্ডা নারী দেহটির স্পর্শে ঠান্ডা হয়ে উঠেছে।

এবার নারী দেহটি অনিলের শরীর এর উপর উঠে বসে।

অনিল এর শরীর পাগলের মত ভোগ করতে থাকে নারী শরীরটি।

এভাবে কিছু ক্ষন চলার পর অবশেষে অনিলের সারা দেহ ঘামে ভিজে যায়,

নারী মূর্তি তার বুকের উপর মাথা রাখে।অনিল অনুভব করে তার বুকের

উপর একটা গরম জলের ধারা নারী মূর্তিটির চোখ থেকে তার বুকের উপর

পড়ছে।


সে অনেক কষ্ট করে সাহস সঞ্চার করে অনিল বলে ওঠে তু মি কি চাও??

নারীটি বলে ওঠে __আমার নাম মায়া ,আমি এর পাশের গ্রামেই থাকতাম।

আমার 19 বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়।

আমার যার সাথে বিয়ে হয় সে ছিল মাতাল।

রোজ বাড়িতে মদ খেয়ে আসতো। আমি বাড়ির সব কাজ করে রাখতাম

তবুও সে বাড়ি ফিরে আমাকে গালিগালাজ করতো আর আমায় খুব

মারতো।


ছোটবেলা থেকেই আমি বাবা-মাকে হারিয়ে মামার কাছে বড় হয়েছি।


কোনদিনও কারোর ভালোবাসা পাই নি। মামা বাড়ি থাকতে ও মামি আমার

সাথে খারাপ ব্যবহার করতো।


আমাকে ঠিকভাবে খেতে দিত না।


অতিরিক্ত বাজে পয়সা খরচ হবে বলে আমার পড়াশোনা ও বেশি দূর করতে

দেয় নি।


ভেবে ছিলাম তখন হয়তো বিয়ে হয়ে যাবে যে আমার স্বামী হবে আমাকে খুব

ভালবাসবে। আমাকে আগলে রাখবে।


কিন্তু বিয়ের এক মাসের মধ্যে আমি বুঝতে পারি আমার চাওয়া পাওয়ার

কোনো দাম নেই কারো কাছে।


একদিন আমার প্রচন্ড শরীর খারাপ হয়।


আমি বাড়ির কোন কাজ সেদিন করতে পারিনি। বাড়িতে শুয়ে ছিলাম আমার

স্বামী মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে ,আমাকে শুয়ে থাকতে দেখে আমাকে একটি

মোটা কাঠ দিয়ে প্রচন্ড মারে।


আমি তার মার খেয়ে বাড়ি থেকে গভীর রাতে বের হয়ে আসি।


রাতে ঠিক করি আমি আত্মহত্যা করব।


তারপর বাড়ি থেকে হাঁটতে হাঁটতে একটি পুকু র দেখতে পাই,,ওই পুকু রে ঝাঁপ

দিয়ে আত্মহত্যা করি।


আমার শরীর পরেরদিন ভেসে ওঠে পুকু রটি গ্রামের এক কোনায় ছিল।

এদিকে মানুষজন কম আসতো তাই আমার শরীর কেউ দেখতে পায়নি।

আমার স্বামী আর খোঁজ করেনি আমার।

পরের দিন একটি কাপালিক আমার শরীর জল থেকে তোলে। আমার শরীর

থেকে সব কাপড় খুলে সে আমার দেহকে তার ধারালো ছু রি দিয়ে কেটে

টু করো টু করো করে। আমার ভেতরের হাঁড় বের করে নিয়ে নেয়।এবং

ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহটাকে রাস্তার ধারে ফেলে চলে যায়।

আমার শরীরের বাকি অংশগুলি কু কু রে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।

আমার হাঁড় গুলি দিয়ে কাপালিক টি একটি পুতু ল তৈরি করে।

তারপর থেকে ওই পুতু ল টার মধ্যেই আমার আত্মা থেকে যায়।

আমার দেহ সৎকার হয়নি তাই আমি মুক্তি পাচ্ছি না।

কাপালিক টি যখন তোমাকে আমার পুতু ল টি দিয়ে দেয়। সেদিন থেকে আমি

বুঝতে পেরেছিলাম তু মি খুব ভালো মানুষ।

আমি মুক্তি চাই। দয়া করে আমার মুক্তির ব্যবস্থা করে দাও।

আমি সারা জীবন অনেক কষ্ট পেয়েছি মরেও অনেক কষ্ট পেয়েছি এবার

আমি মুক্তি চাই।


   হঠাৎ শরীর কি উধাও হয়ে যায়।


অনিল সম্ভিত ফিরে পেয়ে হাত দিয়ে চারিদিকে খুঁজতে থাকে কাউকে পায় না

সে।

এদিকে ভোর হয়ে এসেছে।

অনিল ঠিক করল মায়ার আত্মাকে সে গয়ায় গিয়ে মুক্তি দিয়ে দেবে।


  অবশেষে অনিল একদিন ছু টি নিয়ে গয়া গিয়ে মায়ার নামে পিন্ডি দিয়ে


আসে।


  এবং পুতুলটিকে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে আসে।


  

কলমে ✍️ Biswajit Mridha




Rate this content
Log in

More bengali story from Biswajit Mridha

Similar bengali story from Classics