Śûvöđįp Bïšwãś

Classics Inspirational Others

4  

Śûvöđįp Bïšwãś

Classics Inspirational Others

মায়ার বাঁধন

মায়ার বাঁধন

9 mins
1.3K


এক


দেবু আর হরি দুই বন্ধু সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিতাইবাবুর আম বাগানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তারা ভাবলো আজকে আম বাগানে ঢুকে কিছু আম নিতেই হবে। রোজই তারা চেষ্টা করে কিন্তু ঢোকার সাহস হয়না কারণ, ওখানে রঘু কাকু সবসময় পাহারা দেয়।

কিন্তু আজকে বাগানটা ফাঁকা কেউ নেই ওখানে তাই তারা ঠিক করলো আজকে আম তারা পাড়বেই।

এদিকে বলে রাখা ভালো নিতাইবাবু মানুষ টা একটু বদমেজাজি আর কৃপণ ধরনের। সে তার বাড়িতে একাই থাকে আর থাকে এই রঘু নামক চাকরটা। সে বাড়ির কাজও করে আবার বাগানটাও পাহারা দেয়। নিতাইবাবু বাগানের আমগুলো নিজেও খায়না আর অন্যকেও দেয়না। গাছেই আম পাকে আর সেখান থেকে মাটিতে পড়ে আমগুলো নষ্ট হয়। এমনকি তার কৃপণতা ও বদমেজাজির জন্য তার গাছের ওপর কোনো কাক পক্ষীও বসেনা।

তাই নিতাইবাবুর সাথে গ্রামের মানুষের সম্পর্ক অত ভালোনা। সবাই তাকে এড়িয়ে চলে।

তো সেবার দেবু আর হরি দুজন মিলে চুপি চুপি বাগানে ঢুকলো। বাগানের গেট টা প্রায় খোলাই ছিল কোনো তালা দেওয়া ছিলোনা। একটা গাছের সামনে এসে তারা দাড়ালো। দেবু নিচে থাকলো আর হরি গাছের ওপর উঠলো। অনেকগুলি আম তারা পারলো। কয়েকটা তাদের স্কুল ব্যাগে পুড়ে নিলো আর দুজনে দুটো আম পেড়ে খেতে লাগলো।

কিন্তু এর পরেই ঘটলো বিপদ। তারা যখন সেই আম বাগান থেকে বেরোতে গেলো রঘু তাদের দেখতে পেলো আর তখন চোর চোর বলে চিল্লাতে শুরু করলো। ধরতে গিয়ে তাদের দুজনকে আর ধরতে পারলোনা। দেবু আর হরি খুব দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।

এদিকে রঘুর আওয়াজ শুনে নিতাইবাবু বেরিয়ে এলেন। সে এসে হরির মুখে চুরির কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন এবং সে প্রায় কেঁদেই ফেললেন তার সাধের আম গুলো চুরি যাওয়ার জন্য।

পরদিন সকালবেলা নিতাইবাবু , হরি আর দেবু দুজনের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়। তাদের দুজনের মায়ের কাছে গিয়েই ওই দুই বন্ধুর কীর্তিকলাপ ব্যাক্ত করেন। তখন ছেলেরা বাড়িতে ছিলোনা। তারা স্কুলে গেছিলো।

নিতাইবাবু ওই দুজনের মাকে খুব ভালো করেই হুমকি দিয়ে যান এবং বলে এর পর যদি তারা এরম করে তাহলে খুব খারাপ হবে। এই বলে সেখান থেকে নিতাইবাবু চলে যান গজগজ করতে করতে।

এই শুনে তাদের মায়েরাও খুব রেগে যায়। অপেক্ষা করে ছেলেরা কখন স্কুল থেকে ফিরবে তারপর তাদের খুব করে শাসন হবে। কিন্তু সে অপেক্ষা আর শেষ হয়না।

এর পরেই শুরু হয় মূল ঘটনার সূত্রপাত


সেদিন বিকালের পর ছেলেরা আর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলোনা। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। কিন্তু তারা এখনও বাড়ি ফিরলোনা। দুজনের বাড়ির লোকই চিন্তা করতে লাগলো। তারা ভাবলো যে হয়তো তারা জানত যে চুরি করেছে বলে সেই ভয় পেয়ে অন্য কোনো বন্ধুর বাড়ি চলে গেছে। মার খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।

কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো ছেলেরা তবু ঘরে ফিরলোনা। এবার সবার মনে চিন্তা হলো এর আগেও তো অনেক বকা মার তারা খেয়েছে কিন্তু এরম ঘটনা তো কোনদিন হয়নি। এতো রাত করে কোনো ছেলেই স্কুল থেকে বাড়ি ফেরেনি। এবার সবার মনে ভয় হতে শুরু করলো। বাড়ির সবাই কান্নাকাটি করতে লাগলো। কিন্তু ছেলেদের কোনো পাত্তা নেই।


খাওয়া দাওয়া, ঘুম সব লাটে উঠলো। সারারাত এভাবেই কান্নাকাটির মধ্যেই কেটে গেলো। সবার বাড়িতে খোঁজ নেওয়া হলো। রাত পেরিয়ে সকাল হলো কিন্তু তবুও ছেলেদের খুঁজে পাওয়া গেলোনা। তারা দুজন গেলো কোথায়।

আম চুরির অপরাধে কি এবার সত্যি সত্যি কোনো চোর তাদেরই চুরি করল? এটা এখন অনেক বড়ো রহস্য।

বাড়ির লোকেরা এবার গ্রামের লোকাল থানায় গিয়ে হাজির হলো। সমস্ত ঘটনটা তারা দারোগাবাবুকে বললেন।

কিন্তু দারোগা বাবু এবার সব কথা শুনে নিতাই বাবুর ওপর সন্দেহ করতে শুরু করলেন। কারণ নিতাই বাবু আম চুরির ঘটনার দিন তাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছিলেন।


তখন দুই পরিবারের লোক এবং তার সাথে দারোগাবাবু, নিতাইবাবুর বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন।

নিতাইবাবু তো এসব শুনে একেবারে হতবাক হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন সে এসবের কিছুই জানেননা। তাদের ছেলেরা কেনো বাড়ি ফেরেনি তার উত্তর নিতাইবাবুর কাছে সত্যি নেই।

তার গ্রামের লোকের সাথে তেমন সম্পর্ক নেই বলে, উনি একটু বদমেজাজি মানুষ বলে পুরো সন্দেহটা তার ওপরেই পড়েছে।

অনেক জেরা করার পর দারোগাবাবু এবার চুপ করলেন। কোনো প্রমাণ নেই বলে তাকে কোনোভাবে হেনস্থা করা যাবেনা সেটা আইন বিরুদ্ধ কাজ হবে। এই ভেবে দারোগাবাবু সেখান থেকে চলে গেলেন সবাইকে নিয়ে। কিন্তু যাওয়ার আগে এও বলে গেলেন যে পুলিশের নজর তার ওপর থাকবে।


দুই


এইভাবে দুদিন কেটে গেলো কিন্তু ছেলদের খোঁজ পাওয়া গেলনা। গ্রামে প্রায় কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেলো।

এদিকে নিতাই বাবুরও একটু এবার চিন্তা হলো। তিনি ভাবলেন হঠাৎ ছেলে দুটো গেলো কোথায়।

তাঁরও যেন মন টা একটু খারাপ হয়ে গেলো। যতই হোক তাঁর মনেও দয়া মায়া আছে অবশ্যই। তিনি একটু বদমেজাজি ঠিকই কিন্তু তাঁরও বিবেক বলে একটা জিনিষ আছে। যতই হোক দেবু ও হরি এই গ্রামেরই তো ছেলে।

এবার নিতাইবাবু নিজেই বেরোলেন তাদের খুঁজতে। এদিকে দারোগাবাবুও এখনও কোনো খবর দিতে পারেননি।

এদিকে হরি আর দেবুর মা প্রায় খাওয়া দাওয়া লাটে তুলে দিয়েছেন। সারাদিন সবাই কাঁদে।

সবাই ওই দুটো ছেলের খোঁজ করতে থাকে কিন্তু কোন লাভ হয়না।

এভাবে এক সপ্তাহ কেটে যায় কিন্তু তাদের কোনো পাত্তা নেই। সবাই যেনো একটা পাগলের মত হয়ে গেছে।

এবার আসা যাক নিতাই বাবুর কথায়। নিতাই বাবু রোজ ভোর বেলা হাঁটতে বেরোন। সেদিনও তিনি হাঁটতে বেড়িয়েছেন। তাঁরও মন মেজাজ অত ভালো নয়। উনিও সারাদিন ভাবে যে ছেলে দুটো কোথায় যেতে পারে?

হঠাৎ দুটো লোকের দিকে নজর পড়ে নিতাইবাবুর। তারা একটি খাবারের দোকানে খেতে এসছে। লোক দুটো যেনো কেমন ধরনের। এই গরম কালেও গায়ে চাদর দিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছে। মুখ দুটো ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছেনা। নিতাইবাবুর ঠিক ব্যাপার টা ভালো লাগলোনা তাদের দেখে। তিনি এবার একটু সামনে এগিয়ে গেলেন একটা দোকানের দিকে। তার উল্টোদিকের ওই খাবার দোকানটায় ওরা দুজন বসে আছে। তারা একে অপরের সঙ্গে কি যেনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।

তারা একে অপরকে বলছে। "ছেলেমেয়ে গুলোকে আরো বেশি করে কাজ করাতে হবে নাহলে আমাদের পেট চলবেনা। পুলিশ নিশ্চই এতদিনে সব খোঁজ খবর শুরু করে দিয়েছে। এখন কথা হলো আমাদের এই ডেরায় থাকলে হবেনা অন্য কোথাও যেতে হবে নাহলে সব ভেস্তে যাবে।"

এই সব কথাটা শুনেই নিতাইবাবুর যেনো এক মুহূর্তের জন্য মাথাটা ঘুরে গেলো। তিনি খারাপ কিছু একটা আন্দাজ করতে পারলেন।

সাথে সাথে যেনো নিতাইবাবুর মাথায় রাগ চরে গেলো। ভাবলো তাদের কে গিয়ে দু চারটে কষিয়ে দিক। কিন্তু না সেই ভুল তিনি করলেন না।

এদিকে বলে রাখা ভালো নিতাইবাবু একসময় কুস্তিগীর ছিলেন তাগড়াই চেহারা তাঁর। এখন বয়স হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাঁর গায়ে শক্তি এখনও কম কিছুনা। অনায়াসে দু তিনজন কে ঘায়েল করতে পারেন। বয়সের জন্য কি জানিনা কিন্তু তার সাথের সবসময় একটি লাঠি থাকে। যাকে বলে দাদুর লাঠি।

খানিকক্ষণ পর লোক দুটো দোকান থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। নিতাইবাবু তাদের অনুসরণ করে। পিছন পিছন একটু আড়াল করে যেতে থাকলো।

যেতে যেতে তিনি বুঝতে পারলেন বাজারের থেকে জায়গা টা অনেকটাই ভেতরে।

এবার লোক দুটো একটা বাড়ির ভেতর গিয়ে ঢুকলো। ভেতরে গিয়ে তারা দরজা বন্ধ করে দিল। কিন্তু পিছনদিকে একটা জানলার ফাঁক দিয়ে নিতাইবাবু দেখতে পেলো সেখানে হরি আর দেবুকে আর তার সঙ্গে আরও ১০ ১৫ জন ছেলে মেয়ে তাদেরই সমবয়সী।


তিন


নিতাইবাবু আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেন না। সজোরে এক লাথি মারে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লেন।

কিন্তু সেখানে ঢুকে তিনি দেখলেন ওই দুজন লোক বসে বসে তাস খেলতে শুরু করেছে। ওরা ছাড়াও আর একজন আছে সে হয়তো তাদের মাথা।

এবার লোকগুলো হঠাৎ ওইভাবে নিতাইবাবুকে ঢুকতে দেখে প্রথম টা একটু থতমত খেয়ে যায়।

তারপর নিতাই বাবুর দিকে তেড়ে আসে মারতে। শুরু হয় তুমুল লড়াই।

ওইদিকে ছেলেমেয়েগুলো শুনতে পায় যে কিছু একটা হচ্ছে সামনের ঘরে কিন্তু কিছু বুঝতে পারেনা।।

এবার লোক গুলো মারমুখী হয়ে তেরে আসে নিতাইবাবুর দিকে। তাদের হাতে ধারালো সব অস্ত্র কিন্তু নিতাই বাবু তার সেই লাঠি দিয়ে ওদের ৩ জনকে একেবারে ধরাশায়ী করে ফেলেন।

অবশ্যি নিতাই বাবুর শরীরেও অনেক জায়গায় আঘাত লেগেছে ওই বয়সে।

কিন্তু শুধু আঘাতই লাগেনি তাঁর বুকে ও পেটে ছুরির কোপ টাও বসেছে একদম জোরালো হয়ে।

নিতাইবাবু বাবু তখন প্রায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়েছেন।

ওই রক্ত মাখা গায়ে তিনি এগিয়ে যান পিছনের দরজার দিকে। শিকল টা খুলে দেন কোনরকম ভাবে।

সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল দেবু সে দেখে একবারে চমকে ওঠে। তখন হরি কে ডেকে বলে 'ইনি তো আমাদের নিতাই বাবু।"

তখন নিতাই বাবু ওই রক্ত মাখা গায়ে হরি আর দেবু কে বুকে জড়িয়ে ধরেন। আর কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন "তোমরা শীঘ্রই দারোগাবাবুকে খবর দাও উনি এসে তোমাদের উদ্ধার করবেন।"

তারপর একটা ছেলে বাইরে গিয়ে সাথে সাথে পুলিশ কে খাবার দেয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে হাজির হয়। আর দারোগাবাবু এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে যান। তাড়াতাড়ি নিতাইবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

তারপর ঐ ৩ জন লোককে অ্যারেস্ট করা হয় এবং পুলিশ ভ্যানে করে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ছেলেমেয়ে গুলোকে এবার তাদের গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।

তারপর ছেলে মেয়েদের পরিচয় নিয়ে। তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

হরি ও দেবু ওরাও তাদের মা বাবার কাছে সুস্থ অবস্থায় ফিরে যায়।

চার

এদিকে নিতাইবাবুর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। তার এখন আর কোনো জ্ঞান নেই। ডাক্তার বলে দিয়েছে আর হয়তো কিছু ঘণ্টা উনি থাকবেন পৃথিবীতে।

একদিন পর দারোগাবাবু হাসপাতালে যান তাঁর ওই রঘু নামক চাকরটিকে নিয়ে । রঘুর ওনার অবস্থা দেখে খুব কাঁদতে শুরু করে। নিতাইবাবুর অবস্থা একটু ভালো হয়েছে তাঁর জ্ঞান এসেছে। কিন্তু কি ঘটেছিল সেইদিন সেটা জানা খুব জরুরী পুলিশ এর কাছে।

কোনরকম ভাবে কাঁপা গলায় নিতাইবাবু পুলিশের কাছে তার সব ঘটনা খুলে বলেন। তারপর দারোগাবাবু ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করেন।

ওইদিন এবার দারোগাবাবু, নিতাইবাবুর সব কথা শুনে হরি ও দেবুর গ্রামে যান এবং তাদের সব জিজ্ঞেস করেন তিনি যে সেদিন কিভাবে তারা হারিয়ে গেছিলো।

তারা উত্তর দেয় যে "সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দুজন কালো মতো লোক নাকি তাদের মুখের মধ্যে রুমাল চাপা দিয়ে ধরে আর একটা মিষ্টি গন্ধতে তাদের নাকি জ্ঞান হারিয়ে যায়। তারপর আর কিছুই মনে নেই তাদের। জ্ঞান ফেরার পর তারা দেখে একটা ঘরের মধ্যে শুয়ে আছে। তারপর কয়েকটা লোক তাদের খাবার জল দেয়।

তারপর একটা ছেরা জামাকাপড় পড়িয়ে দেয়। রাস্তায় কিভাবে ভিক্ষা করতে হয় সেটা একজন শিখিয়ে দেয়। তারপর তারা ভিক্ষা করতে বেরিয়ে যায়। তাদের ওপর সবসময় কোনো না কোন লোক যেনো পিছন করতো। তাই তারা পালিয়েও আসতে পারেনি কোনোভাবে। এই কাজ প্রতিদিনই তাদের করতে হতো। আর তাদের কথা না শুনলেই মারধর করতো"

এই পর্যন্ত বলে ছেলে দুটো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।


পাঁচ


খানিকক্ষণ পর হাসপাতাল থেকে খবর আসে যে নিতাইবাবু আর নেই। উনি গত হয়েছেন। বুকে পেটে এত জোরালো ভাবে ছুরির আঘাত করা হয়েছিল তাই অনেক রক্ত বেরিয়েছে গেছে সেই কারণে আর ওনাকে বাঁচানো যায়নি।

এইবার হরি ও দেবুর পরিবার এটি শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলো তারা বলল যে "এই ঘটনার মধ্যে নিতাইবাবু কিভাবে এলো আর ওনার ওই অবস্থা হলো কিকরে?"

এবার দারোগাবাবু সব প্রশ্নের জবাব খুলে বললেন,

"এই গ্রামের ঠিক শেষ প্রান্তে ওই লোকগুলো থাকতো। একটা বাড়ির ভেতর ওদের কারবার চলতো। ওটা ওদের ডেরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে বাচ্চাদের ধরে এনে তাদের দিয়ে অর্থ উপার্জন করাতো। কাউকে ভিক্ষা করাতো আবার কাউকে চুরি। তাদের মন মতো অর্থ উপার্জন না করলেই তাদের ওপর মারধর করা হতো। "

"নিতাই বাবু একদিন সকালে হাঁটতে বেরিয়ে তাদের দেখেন এবং তাদের কথা শুনতে পান। তখন তাদের অনুসরণ করে তাদের ডেরায় পৌঁছান। সেখানে গিয়ে দেবু আর হরিকে দেখতে পেয়ে তিনি আর মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেনা না। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। উনি নিজের প্রাণের পরোয়া না করে শুধু তার ওই লাঠি নিয়ে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলেমেয়েগুলোর প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তারপর উনিও ছুরির আঘাতে লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। আর আজ উনি গত হয়েছেন।"

দারোগাবাবুর কথা শুনে দেবু ও হরির মায়েরও চোখে জল চলে এল। তারা শুধু এটাই বললেন "নিতাইবাবু মানুষ নন উনি ভগবান যিনি এতগুলো শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছেন।"

এইদিকে ওই লোকগুলোর তদন্ত করতে গিয়ে ছেলেমেয়েদের দিয়ে এসব কাজ করানোর জন্য তাদের আদালতে হাজির করা হলো এবং আদালত রায় দিয়ে তাদের পাঁচ বছরের জন্য সস্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলেন।

এই হলো ঘটনা

সবশেষে এটাই বলা চলে যে প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরে ভালোবাসা, আবেগ সবই আছে, আসলে সবই একটা মায়ার বাঁধনে বন্দী।

নিতাইবাবু মানুষটিও সেরকম একজন। যিনি কিনা তার বাগানের আম চুরির অপরাধে হরি ও দেবুর প্রতি রাগ দেখিয়েছিলেন আবার তার পরিবারের কাছে গিয়ে হুমকিও দিয়ে এসেছিলেন। আজ তিনি কিনা নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে ওই দুটি ছেলের প্রাণ বাঁচিয়ে গেলেন। আর শুধু ওরা নয় আরো অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ের প্রাণ তিনি বাঁচিয়ে গেলেন।

একসময় তাঁর বদমেজাজির জন্য কেউ তাকে দেখতে পারতোনা। সবার সাথেই তিনি একটু রেগেই কথা বলতেন। বেঁচে থাকার সময় সবাই তাঁকে নিয়ে কু মন্তব্য করতেন এমনকি গ্রামের ছেলে ছোকরা রাও তাঁর পিছনে লাগতেন। আজ যখন তিনি গত হলেন তখন প্রায় গোটা গ্রামের মানুষের চোখেই জল ঝরে পড়লো।

এটাই হয়তো সেই মনের ভিতরে জমে থাকা এক মায়ার বাঁধন।।

সমাপ্ত।।

____________________***__________________



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics